টান BY (ডিমপুচ) (পর্ব-১৯)

টান

লেখক – ডিমপুচ
পর্ব-১৯
—————————

এপ্রিল মাসের শেষ দিকে তপুর পরিখ্যা। তার এক স্বপ্তাহ আগে দিপু আর কৌশিক তপুকে নিয়ে কলকাতা এলো। সঞ্জীব, আশ্চর্য, তপুকে শুয়ে শুয়ে জড়িয়ে ধরে কেবল একটি মাত্র কথা বলল। “” তপু, আমি মন থেকে চাই তুই ওখানে চান্স পাস, আর নিজের বাড়িতে থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িস। তোকে দেখতে না পেলে খুব কষ্ট হবে, কিন্তু তাতে কিছুটা পাপের প্রাস্চিত্ত্য হবে।”” .প্রথম দর্শনে প্রতিবেশীরা তপুকে দেখে হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো।কলকাতার অন্যতম পয়সাওলা এলাকা, ” পৃথিবীর সর্বস্রেঠ সুন্দরী দেখতে পাওয়া যায়, গড়িয়াহাট মোড়ে”. (বুদ্ধদেব বসুর উক্তি) সেইরকম এলাকাতেও তপু অনন্যা। সুন্দরীদের অভাব নেই, কিন্তু তপুর রূপ তাদের অবাক করে দিল। দিপু তপুকে নিয়ে লেকের সেই রেলিং দেখালো আর হজমিবালা কে। সে দীপুকে দেখে আবেগে কথাই বলতে পারছিল না প্রথমে।
………সাহেব আপনি কাকাকে দেখতে গেছিলেন, ভাবতেই পারছিনা। কাকা বলেছে আপনি তাকে অনেক টাকা দিয়েছেন। আপনি অন্যরকম, সাহেব।
………ঠিক আছে আমি অন্যরকম। এই আমার বোন্, প্রথম কলকাতা এসেছে তুমি ভালো করে মশলা বানিয়ে দাও। দুটো বানাবে একটা আমার আর একটা ওর। হজমিবালা শুধু বানিয়েই দিল না পয়সাও নিল না, কিছুতেই। তপু মুখে নানা রকম শব্দ করতে করতে মশলা খেতে লাগলো। পরিখ্যার ঠিক ২ দিন আগে পূবা, দীর্ঘ ১৭ বছর ৫ মাস সময়ের ব্যবধানে এলো, তার ছেড়ে যাওয়া ভালবাসার বাড়িতে । দিপুর ঘর বা তার নিজের ঘরে ঢুকে কিছুটা বিব্হল হয়ে চুপ করে থাকলো। ধাতস্ত হলো ধীরে ধীরে । পরিখ্যার দুই দিনই দিপু, কৌশিক,পূবা সারা দিন পরিখ্যা কেন্দ্রের সামনেই কাটাল। শেষের দিন এর শেষ পরিখ্যা কেমিস্ট্রি, এক ঘন্টা বাদে দলে দলে ছেলে মেয়ে বেরুতে লাগলো হতাশ মুখে। ” ভিশন শক্ত প্রশ্ন, হবে না” তাদের মুখে শুনে দিপু আর পূবা একটু টেনশন এ পরে গেল কৌশিক
………ভয় নেই, তপুর ভালো হবে। কেমিস্ট্রি তে তপু সত্যি ভালো। ভয় পাবার কিছু নেই। পোর খাওয়া মাস্টার কৌশিক ঠিকই বলেছিল। তপু বেরুলো হাসতে হাসতে একবারে শেষে। মুখ দেখেই মা, ছেলে বুজলো চান্স পাবেই, খালি rank নিয়ে চিন্তা। বেশ খুশি তপু,কৌশিকের দিকে তাকিয়ে সুধু একবার হাসিমুখে বলল
…….থাঙ্কস। তুমি সত্যি ভালো বুঝিয়েছিলে। আমার কোনো অসুবিধায় হয়নি।

কৌশিক ওই বাড়িতেই আচ্ছে, যেহেতু তার বাবা মা এখন দিল্লিতে থাকে।২ দিন বাদেই চলে যাবে, নিজের পড়াশোনা আছে তাই। রাতে সবাই এক সাথে খেতে বসেছে, ডাইনিং টেবিল প্রণব এর দাদুর সময়কার। বার্মা টিক দিয়ে বানানো, ৮ জনের বসার মত। শিবুও সেই রাতে ওদের সাথে খাচ্ছে কিন্তু একটাও কথা বলছেনা। কনা, ছোট চিংড়ি মাছের বাটি চচ্চরি বানিয়েছে, দিপু চেটে পুটে খেয়ে উকি মেরে।
……………আর আছে? …একটু অবাক হয়ে চেয়ে কনা সম্পূর্ণ বাটিটা দিপুর পাতে ঢেলে দিল .
……..আরে কাকিমা কি করছ, তোমার তো থাকলো না ? …কনা এক অপূর্ব হাসি দিল সবার জন্য।
……….দিদি, জীবনে আজ প্রথম দিপু কিছু চাইল, না দিয়ে পারি, তুমিই বল ?
……….তুই ভাগ্যবতী কনা, তবুও তো চাইল,আমার ভিখ্যার ঝুলি এখনো ফাঁকা রে!
দিপু মুখে হাসি লেপ্টে মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে মন দিয়ে খেতে থাকল। তারপর চিতল মাছের ম্যুঠা।
………মা খেয়ে দেখো এটা মাছ, কি দারুন কাকিমা , জীবনে খাই নি ….তপু প্রথম ম্যুঠা মুখে দিয়ে আনন্দে চিত্কার করে উঠলো। পূবা নিজের পাত থেকে তুলে দিল তপুর পাতে
…….তুই আমার থেকে নে, দিপু চিংড়ি নিয়ে নিয়েছে, তুই যদি ম্যুঠা নিয়ে নিস, কনা সুধু ভাত খাবে
…….কি করছ দিদি, তুমি আমার জায়গায় থাকলে কি করতে, তুমি আমার থেকে নাও। …… কনার গলায় অনুযোগ
…….তুই যা করেছিস তাই করতাম …….পূবা, খুশি ঝরে পড়ছে স্বরে।
…….all mothers are alike ……বড় বৌদি তোমার মনে আছে, চার্লস বলে একটা জার্মান ছেলে বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় এসেছিল help নিয়ে, এখানে ছিল কয়েক দিন? ….প্রণব প্রথম মুখ খুলল, পূবাকে প্রশ্ন করে।
……..বুঝেছি, তুই কোন কথাটা বলছিস। শোন সবাই, বাড়ির তিন ছেলে আর চার্লস রাতে খেতে বসেছে। মা ছানার ডালনা করছিলেন,খেয়ে চার্লস বলেছিল, খুব ভালো খেতে, এটা কি দিয়ে বানানো? মাস্টারমশাই তখন মা কে বলে “” মা, খুব ভালো লেগেছে ওর, জানতে চাইছে কি দিয়ে বানানো””. শুনেই মা প্রায় সম্পূর্ণটাই চার্লস এর প্লেট এ ঢেলে দেয়। সে তো না না করছে, কে কার কথা শোনে, চার্লস তখন এক গাল হেসে বলেছিল “” আমার মাকে খেতে খেতে যদি একবার বলি এই রান্নাটা ভালো হয়েছে, বয়স , সম্পূর্ণটাই ঢেলে দেবে all mothers are alike,”” কি রে তাই তো?
……….বাব্বা, তোমার এখনো মনে আছে! আমি নিজের বলে চালানোর তালে ছিলাম, তা আর হলো না …..পুনুর কথায় সবাই হেসে উঠলো
………কনা তোদের দেশ কোথায় রে, ওপার বাংলায় নিশ্চই, না হলে এইরকম চিতল মাছের রান্না কি করে করলি?
……….ময়মনসিং। মাকে দেখেছি করতে, তখনি শিখেছি। আর ও খুব ভালো খায়। মেয়েরা তো এই পেলে, কিছু বলতে হয়না, চেটে পুটে খায়।
……..কি রে শিবু, তুই কিছু বলছিস না কেন ….. পূবা শিবুকে জিজ্ঞাসা করলো
……বলতে গেলে কেঁদে দেব জ্যাঠাই মা। আজ জীবনে এই প্রথম এই পাড়ার কোনো বাড়িতে এক সাথে খাচ্ছি, তাই কোনো কথা বলছিনা। চা পর্যন্ত খেতে বলেনি কেউ কোনদিন। কারণ কি জানো জ্যাঠাই মা, আমার বাবা মোটর গ্যারেজ এর মেকানিক। আরে বাবা , সেটাও তো কাজ তাই না ……
……..শোন হতভাগা, মন খারাপ করিস না। এইটাই আমাদের মত semi feudal societyর নিয়ম। বুঝিয়ে বলতে গেলে সময় লাগবে, বুঝেছিস। দিপু শিবুকে বন্ধুর মতই বলল
………সেটা কি আমার মাথায় ঢুকবে, পড়াশোনার ব্যাপার না হলে বুজব, আর তুই যে কথাটা বললি, বাবার মুখে অনেক বার শুনেছি। কিন্তু বাবা বুঝিয়ে বলতে পারেনি। জিনিষটা কি? স্বভাব সিধ্হ ভঙ্গিতে শিবু দীপুকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল
………শোন তাহলে, বড় বৌদি, কনা ভুল বললে ধরিয়ে দিয। feudal societyর আসল শক্তি হলো জমি। জমির মালিকের হাতেই সব ক্ষমতা। জমিতে যে ফসল উত্পন্ন হয়, তার মালিক জমির মালিক।কিন্তু যে ফসল ফলায় তাকে শুধু বেঁচে থাকার জন্য কিছু দেওয়া হয়, যাতে সে না মরে। বেঁচে থেকে মালিকের ফসল উত্পন্ন করে।১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে ইংরেজরা। তার আগে ভারতে একটি গ্রামের যত জমি থাকত তার মালিক হত সেই গ্রামের সবাই। অর্থাত ফসল উত্পন্ন হলে সবার তাতে অধিকার থাকত। কিন্তু চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে ইংরেজরা জমিদার সৃস্টি করলো, যারা ইংরেজদের বছরে নজরানা দেবে, আর ইংরেজদের হয়ে গ্রামে থাকবে। মানে, কোনো বিদ্রোহ বা আন্দোলন হলে যাতে গ্রাম থেকে ইংরেজদের কাছে খবর যায়,আর ওই বিদ্রোহ বা ইংরেজদের বিরুধ্যে লোকেদের ঠান্ডা করানোর কাজে সাহায্য করবে। । সমস্ত পৃথিবীতেই এই রকম ছিল, কিছু তফাত থাকত দেশ বিদেশে। কিন্তু মোটের উপর এই রকমই ছিল। একটা ভালো বাংলা বই আছে, না তোর্ ভয় নেই, লেখাপড়ার বই না , কিন্তু পড়তে ভালো লাগে।সুপ্রকাশ রায় এর লেখা, যদি পড়িস বুজতে পারবি, অসুবিধা হবে না , কাকিমার কাছে আছে, ইচ্ছা করলে নিতে পারিশ। এখন এই অবস্থায় মানুষ কে চিন্হিত করা হয়, তার সামাজিক অবস্থানে। জমিদার সবার উপরে, তারপর নায়েব, বড় জমির মালিক এই ভাবে। তাদের মাথায় কি আছে, তারা গাধা না গরু সেটা কোনো ব্যাপার না, সমাজে তার কি অবস্থা সেটাই আসল ব্যাপার। যেমন ধর আমার ব্যাঙ্ক এ আমার তলার কর্মচারীরা আমার সামনে সিগারেট খেলে সেটা আমাকে অসম্মান করা হবে। তার বিরুধ্যে ব্যাঙ্ক শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু সে তো তার শ্রম, লেখাপড়া, বুদ্ধি এইসব ব্যাঙ্ক এ দিয়ে রোজগার করছে আর তার থেকে সিগারেট কিনে খাচ্ছে, অন্যায় তো করছে না। কিন্তু সে পারবে না। এইটাই এই সমাজের নিয়ম। কিন্তু এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটল কি ভাবে জানিস। রেল গাড়ির ইঞ্জিন আবিষ্কার দিয়ে। ছোট করে বোঝাতে গেলে এটাই বলতে হয়। ওই আবিষ্কার জমি থেকে কারখানায় টেনে আনলো শ্রম আর পুঁজি কে, শ্রমিকের সৃস্টি হলো, বিপ্লব হলো পশ্চিম দেশে, ভারতেও তার ঢেউ লাগলো। প্রথমে কাপড় কল, চটের কল, ধীরে ধীরে আরো অন্য সব কারখানা হলো, নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার হলো, মানুষের সমাজ পাল্টে যেতে লাগলো। তার ফলে নতুন সমাজের জন্ম হলো, যেখানে পুঁজি আসল শক্তি। এই সমাজ ওই feudal societyর থেকে উন্নত সমাজ। যেমন দেখ, শোনা যায় , জাপানে কারখানার শ্রমিক থেকে ম্যানেজার সবাই একই জায়গায় খায়। শ্রমিক তার ম্যানেজার এর সামনে সিগারেট খেলে অসম্মান দেখানো হয়না। কারণ এই সমাজে শ্রমের মুল্য/সম্মান দেওয়া হয়। কোনো প্রফেসর এর ছেলে যদি আমেরিকা তে ট্যাক্সি চালায় সেটা অসম্মানের না।কারণ যা বললাম তাই। আমি যা বললাম , তা খুব ছোট করে বললাম। এই নিয়ে বিশাল বিশাল বই লিখছেন পন্ডিত এরা …একটানে অন্নেক্ষণ বলে পুনু থামল।
………একেবারে দাদার ভাইটি ….সপ্রসংসা দৃষ্টি তে বলল পূবা।
……..ছোটকা, আমি MP সাহেবের বাড়িতে .DD.KOSHAMBI বলে একজনের একটা দারুন বই পড়েছিলাম এই FEUDAL সমাজ নিয়ে।
……….দিপু, তুই তো আমাকে অবাক করে দিলি রে, কনার স্বরে বিস্ময় …… “” ভারতের এই ব্যবস্থা নিয়ে সব চাইতে ভালো লিখছেনRam soron Sharma , ওনার মতন ব্যক্তিরই ‘ভারত রত্ন’ পাওয়া উচিত। দেশের গর্ব উনি।পাটনায় থাকেন,।ওনার আর একটা বই আছে, যদি পারিস তো পড়িস SHUDROS IN ANCIENT INDIA , বিশাল মোটা বই, একবারে পড়া মুশকিল,কিন্তু খুব ভালো বই”
……….কাকিমা তুমি কি করে জানলে এইসব …এইবার তপুর প্রশ্ন।
………..আমি ইতিহাসের ছাত্রী রে, MA পাস করেছিলাম, কিন্তু এই ট্রান্সফার এর চাকরির জন্য আর কলেজে পড়াতে পারলাম না। কিন্তু পড়ি, এখনো পড়ি, সুধু জানার জন্য। আচ্ছা তুই তো কলকাতার সবচাইতে গর্বের জায়গা কলেজ স্ট্রিট দেখিসনি, তোকে আমি নিয়ে যাব, মেট্রো তে করে। আমার মাথায় এসেছে তোকে একটা বই উপহার দেওয়ার। দিপু যার নাম করলো, সেই DD.KOSHAMBI র “”MYTH AND REALITY “”. ওই বই পড়লে, TV তে মহভারত এরপর দেখলে হাসি পাবে।
….শিবু , পুনু খুবই ভালো করে বলেছে, তবে ছোট করে। কোনো জিনিস উত্পাদন করতে লাগে জমি, শ্রম,পুঁজি আর, ঝুকি। যেমন ধর এই এখন ১৯৯৪ সালে কম্পুটার নিয়ে হইচই হচ্ছে। ১০-১২ বছর আগে যারা ঝুকি নিয়ে এতে পয়সা ঢেলেছিল, তারা এখন আকাশ ছুতে পারে এমন লাভ করছে। এইটাই হচ্ছে ঝুকি, যেটা তারা ১০-১২ বছর আগে নিয়েছিল। এই ৪টেকে বলে factors of production. এক, এক অর্থনৈতিক অবস্থায় এই ৪ টের ভিতরের সম্পর্ক পাল্টে যায়। feudal societyর যেমন মূল চালিকা শক্তি জমি, capitalism এর মূল চালিকা শক্তি পুঁজি। কিন্তু capitalism উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থা, তাই এর মূল্যবোধ উন্নত। এর চাইতেও উন্নত সমাজের জন্য, শোষণ মুক্ত সমাজের জন্য, তোর্ বাবা, দিপুর বাবা লড়াই করেছিলেন। পারেনি, কিন্তু লড়াইটা ছিল। এই তোকে যে এ পাড়ার লোকেরা পাত্তা দেয়না, এইটাই পাল্টে যাবে, তোকে আমি কথা দিলাম, তুই আর আমি দুজনে ব্যবসা করব। প্রমোটারী, দেখবি, তোকে আপনি, শিবেন বাবু বলে লোকে ডাকবে, তুই শুধু আমার কথামত চল। ……………অবাক হয়ে শিবু পূবার কথা শুনতে শুনতে হঠাত চেয়ার ছেড়ে সোজা টেবিল এর তলা দিয়ে পূবার পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল l

……..জ্যাঠাই মা, তুমি আমার সাথে ব্যবসা করবে, তোমার সম্মানে লাগবে না? জ্যাঠাই মা তুমি যা বলবে তাই করব, যা বলবে, …….তিনটি কিশোরী, তো হেসে কুটোপুটি,
……আরে তুই পা ছার শিবু, পা ছার, উফ তোকে তো বলেও বিপদ, নে ওঠ বোস, ….পূবা প্রায় পড়ে যাওয়ার যোগার। দিপু আর কৌশিক হো হো করে হাসছে, পুনু আর কনা খাওয়া ভুলে শিবুকে দেখছে হাসি মুখে
……শোন শিবু, পাগলামি করিস না। আমি কাল নিতাই দার সাথে দেখা করব।তুই এসে আমায় নিয়ে জাবি। হাঁ, তোর্ সাথেই ব্যবসা করব কেন জানিস? ঋণ শোধ করার চেষ্টা।নিতাইদা দুবার দিপুর বাবার প্রাণ বাচিয়েছিলেন, দু বার, কিন্তু আমি কিছুই করতে পারিনি। তোর্ মা অকালে , বলতে গেলে বিনা চিক্ত্সায় মারা যায়, পঙ্কজ দিয়েছিল, কিন্তু বাচানো যায়নি। নিতাই দা তবুও পার্টি করা ছাড়েনি।কেননা তার বিশ্বাস ছিল পরের প্রজন্মের জন্য করছে। তাই এবার আমি করব।

পরেরদিন সকালে পূবা শিবুর সাথে নিতাই ডাকে দেখতে গেল। নিতাই পূবাকে দেখে দু হাত জড়িয়ে …
………বৌদি, মড়ার আগে তোমাকে দেখতে পাব ভাবিনি। আত্তীয় নই, কিন্তু তুমি দাদার স্ত্রী, আপনজনের থেকেও বেশি। শিবুকে বলেছি, আর যাই করিস ওই দেবতার পরিবারের কাউর সাথে বেইমানি করবিনা। ……পূবা চুপ করে নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকলো মনে মনে।
……..নিতাই দা, তুমি ওর জীবন বাচিয়েছ দুবার, তোমার সংসার ভেসে গেছে, কিন্তু পিছু হটনি, আমি ভুলিনি নিতাই দা, তুমি দেখবে শিবু কোথায় ওঠে, তুমি অনেক ত্যাগ করেছ।
……..বৌদি, কোনো ক্ষব নেই, মন থেকে বলছি, কোনো ক্ষব নেই। কোনো ভুল করিনি, পারিনি তাই, অনেকে বলে ভুল করেছিলাম কিসের ভুল, কোনো ভুল না। শুধু শরীর টা ভেঙ্গে গেছে, এইটাই আফসোস হয় আর শিবুর মার মৃত্যু সংসার টাকে ভাসিয়ে দিয়েছিল। ব্যাস, টাকা পয়সা নেই তো কি হয়েছে, তোমার মেয়ের কথা শিবু বলেছে, একবার দেখতে যাব তাকে,? মাস্টার দার মেয়েকে একবার দেখতে ইচ্ছা করছে …….পূবার চোখে জল এসে গেল।
……..যাবে নিতাই দা, আজি যাবে, শিবু তোমায় নিয়ে যাবে। শিবু ….ঘার ঘুরিয়ে শিবু কে দেখে ” তোর্ কত খরচা হয়েছে রে ওই ২লক্ষ্য ২০ হাজারে এই কাজ সম্ভব না, কত পাবি আর? বাথরুম এ ১ ইঞ্চি মার্বেল, গ্লাস টালি, বেস্ট কোয়ালিটির ফিটিংস, সিমেন্ট এর কাজ, নতুন ৩ টে বাথরুম , পিছনে গ্যারেজ ,পুরো বাড়ি ভিতর বাইরে রং,কত খরচা হয়েছে তোর্ ? খরচার উপর ১৫% লাভ রেখে বলবি।
….জ্যাঠাই মা, লাভ নেব না। তুমি আর ৪০ হাজার দিও, তাহলেই হবে।
……….না, লাভ নিবি, ঠকিয়ে বেশি নিবি না, কিন্তু নিবি।আমি তোকে ৭৫ হাজার দেব,
……….না, নিতে পারবনা,জ্যাঠাই মা,তোমার কাছ থেকে লাভ নিতে পারব না …..শিবুর গলার স্বরে পূবা একটু অবাক হয়ে গেল। স্মিত হাসি হেসে
…………ঠিক আছে, তুই ৫০ হাজার নিবি। না করবি না। কাল গিয়ে চেক নিয়ে নিবি। ..শিবু হেসে দিয়ে ঘার নাড়ালো
……জ্যাঠাই মা, একটা কথা বলব, তোমার পরামর্শ দরকার।
……কি বল, সংকোচ করিস না
…….তোমাদের বাড়ির থেকে কয়েকটা বাড়ি পর, মিত্তির দের যে বাড়ি আছে, ওরা আমাকে ডেকেছিল. তোমাদের বাড়ির কাজ ওদের খুব পছন্দ হয়েছে. ওদের বাড়ি ৪ কাঠার একটু বেশি জায়গা নিয়ে. ওই ধর ৩০০০ sq feet মত. আমাকে ওরা বলছে ওদের বাড়ি ভেঙ্গে, বাড়ি বানাতে. ওদের ৩ ভাই ৩ তিনটে ফ্ল্যাট নেবে আর ওদের বোন কে ১০ লক্ষ্য দিতে হবে. বাকি আমার. ওখানে কর্পোরেশন g + 3 বেশি পারমিসন দেবে না. তার মানে আমি তিনটে ফ্ল্যাট আর ৩ খানা গ্যারেজ পাব. বিক্রির জন্য.তুমি কি বল? …পূবা একটু চুপ করে ভাবলো
…….এখানে sq feet কত করে এখন? আর বাড়ি বানাতে sq feet কত করে পরে.?
……..এখন ওই ১৩৫০ থেকে ১৪০০ এইরকম sq ফুট.আর বানাতে ওই ধর ৩৫০-৪০০, যদি সব চাইতে ভালো জিনিস ব্যবহার করি, তাহলে পড়বে আর বাড়ি হবে খুব বেশি হলে ১৮০০ sq feet এর উপর.
…….তার মানে তুই পাচ্ছিস,২৭০০ SQ feet আর তিনটে গ্যারেজ. তার মানে ধরা যেতে পারে ,তুই গ্যারেজ নিয়ে বিক্রি করে পেতে পারিস, ৩৫-৩৬ লক্ষ্য. আমি ১৩০০ করেই ধরলাম. আর বানাতে লাগছে, কম করেও ২২ লক্ষ্য, ৪০০ করে ধরলে, জিনিসের দাম বাড়বে বানাতে বানাতে, কিন্তু তুই ফ্ল্যাট এর দাম বাড়াতে পারবি না, এর সাথে যোগ কর ১০ লক্ষ্য.দাড়ালো ৩২ লক্ষ্য. খুব কম লাভ হবে. তবুও তুই বানাবি, লাভ না হলেও বানাবি, আর বলবি আমি ওখানে ফ্ল্যাট কিনব. বানাবি তার কারণ তোর পা রাখার জায়গা চাই, সবচাইতে ভালো জিনিস দিয়ে বানাবি. ফাকি দিবি না. এক কাজ কর,তুই সন্ধ্যাবেলা নিতাই ডাকে নিয়ে আয়. আমার উকিল আজ আসবে,বাবার সম্পত্তি ভাগের জন্য আমি কেস করব, সে নিয়ে কথা বলার জন্য. ওখানেই পার্টনারশিপ দলিল হবে তুই আর দিপু করবি. টাকা আমি দেব. আমি ফ্ল্যাট নেব শুনলে অনেকেই নিতে চাইবে, কিন্তু নেব না. এইটার লাভ তোর, কিন্তু আমার টাকা তুই ফেরত দিবি বিক্রির পর. ঠিক আছে ? ..নিতাই দু হাতে জড়িয়ে
….বৌদি তুমি এত টাকা ঝুকি নিয়ে দেবে? পূবা একটু হেসে।
…….তুমি তোমার জীবন ঝুকি নিয়ে ধরতে পারো, আমার স্বামীর জন্য আর আমি এই টাকা দিতে পারব না, কি বলছ নিতাই দা! অবাক হয়ে দুজনে পূবার দিকে চেয়ে রইলো।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/JQGvUcs
via BanglaChoti

Comments