“কাজলদীঘি”
BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
ত্রিংশ কিস্তি
—————————
আজ রাতটা ডিসপেনসারিতে কাটান। কাউকে দিয়ে ফাইল পত্র আনিয়ে নিন। বাইরে বেরলে আপনার জীবন সংশয় হতে পারে। তার দায়িত্ব আমি নেব না।
তুমি যা বলবে, করবো।
তাহলে আপনার কোন বিশ্বস্ত অনুচরকে দায়িত্ব দেবেন বলুন।
সনাতনবাবু গেলে ভাল হয়।
আমি যাব না।
শুনছেন।
তাহলে অন্য কাউকে দাও।
আমরা কেউ যাব না। সবাই একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো।
শুনছেন।
হ্যাঁ।
তাহলে আমি যাব।
তুমি যাবে!
হ্যাঁ। আপনার অসুবিধে আছে?
না….মানে।
আপনার ঘরে যে ছেলেটি বসে আছে তাকে দিন।
নাও।
দাদা আমি আবিদ।
তুই! তুই ওখানে কি করছিস?
রতনদা এখানে ডিউটি দিয়েছে।
তোকে রতন ওখানে বসিয়ে রেখেছে!
হ্যাঁ দাদা।
মালপত্র সঙ্গে আছে না শুকনো হাতে বসে আছিস।
সব সাঁটান আছে।
বাইরে কারা আছে।
ও নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। সব আমার লোক। মাছি গলবে না।
এক কাজ কর তোদের গাড়িতে করে ডাক্তারকে নিয়ে ওর বাড়িতে যা। কাগজপত্র সব নিয়ে নিবি। ওর পাসপোর্ট পর্যন্ত। সব দেখে নিবি। তারপর তুলে নিয়ে গিয়ে তোদের ওই হোটেলে রেখে দে।
আচ্ছা দাদা।
ফোনটা কার?
ফোনটা আমার সিমটা ডাক্তারের।
এত বুদ্ধি তোর হলো কি করে বলতো?
তোমার পাল্লায় পরে।
আবার হো হো করে হেসে ফেললাম।
তুমি হেসো না। যা হুকুম করবে করবো।
ডাক্তার শুনছে?
সব রেকর্ডিং করছি।
এই তো তোদের মাথা খুলেছে।
রতনদা ফোন করছে।
ঠিক আছে ডাক্তারকে দে?
ধরো।
শুনলেন আমার কথা।
হ্যাঁ শুনছি।
তাহলে বুঝতে পারছেন।
পারছি।
প্ল্যানটা একটু চেঞ্জ করছি।
বলো।
ছটার মধ্যে সব কাগজপত্র নিয়ে অফিসে চলে আসুন। পালাবার চেষ্টা করবেন না। তাহলে কালকে সকালের সূর্য আর দেখতে পাবেন না। ওটা আমার হাতে নেই সব এখন ওদের হাতে।
তুমি বিশ্বাস করো আমি ঠিক ছটার মধ্যে চলে আসবো।
রাখছি।
ফোনটা কেটেই রতনকে ফোন করলাম।
হ্যাঁ দাদা।
ডাক্তারের ওখানে কে আছে?
আবিদ।
বাবাঃ তোর বুদ্ধি দেখছি এই কদিনে একেবারে পেকে আমসত্ব হয়ে গেছে।
সব তোমার আর্শীবাদ।
আবিদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তবু তুই ওকে একবার মনিটরিং কর।
ঠিক আছে দাদা।
কাজ হয়ে গেলে আমাকে ফোন করবি।
আচ্ছা।
অবতারকে কোথায় রেখেছিস?
আমাদের খাস ডেরায়।
ওর সঙ্গে রাতে বসবো। ফোন সুইচ অফ করবি না।
ঠিক আছে।
বস ফোন করেছিল?
হ্যাঁ। তুমি বেরিয়ে আসার পর।
ঠিক আছে পরে কথা হবে।
আচ্ছা দাদা।
আমি ফোনটায় সব রেকর্ডিং সেভ করলাম। ঘড়ির দিকে তাকালাম। বারোটা বাজে। বেরতে হবে। ঘরে পিন পরলে শব্দ শোনা যাবে। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। দাদার চোখ দুটো লাল ডগডগে। মল্লিকদা থম মেরে বসে আছে। আমি দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম, একটু চা খাওয়াবে।
দাদা সঙ্গে সঙ্গে বেলে হাত দিল।
তুমি এঁদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে বলো?
দূর করে দে।
এঁদের কাছে আমার ফোন নম্বর ছিল না। একজনও কেউ ফোন করতে পারেনি। এটলিস্ট তোমাকে জানাতে পারত।
কিরে চম্পক কবে থেকে এই ঘটনা চলছে?
মলের কেশটা যেদিন ঘটলো সেদিন থেকে।
আমাকে জানাস নি কেন?
জানাতে এসেছিলাম হরিদা ঢুকতে দেয়নি।
ফোন ছিল না।
যদি ট্যাপ হয়। আমাদের হাউসে এখন এর ফোন সে শোনে।
সনাতনবাবু?
আমার ভুল হয়ে গেছে।
আপনাদের?
সবাই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।
তুমি আবার এদের হয়ে আমাকে বলো। আমি বললাম।
আমি আজ প্রতিজ্ঞা করছি, আর কোনওদিন বলবো না।
পারবে না। পারবে না তুমি এদের মানুষ করতে। এরা সবাই মনুষ্যত্বহীন। বুঝতে পারছো কাগজটাকে এরা কোথায় নামিয়ে নিয়ে গেছে। একটা মেয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কি না করেছে এরা।
রনিতা ম্যাডামের দিকে তাকালাম। মাথা নীচু করে ফুঁপিয়ে যাচ্ছে।
ম্যাডাম।
ভদ্রমহিলা আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নীচু করলেন।
আমার ফোন নম্বর আপনার কাছে আছে?
না স্যার।
নিয়ে নিন। আপনার নম্বরটা বলুন।
উনি বললেন আমি ওনার মোবাইলে ডায়াল করলাম। সেভ করে নিন। কাউকে দেবেন না। আপনি মেয়ে মানুষ। পথে ঘাটে যেখানেই কোনও সমস্যা হবে একবার ডায়াল করবেন। আশা রাখছি আজ থেকে আপনার আর কোনওদিন সমস্যা হবে না।
আচ্ছা স্যার।
আর একটা কথা সবার সামনে বললে আপনি অপমানিত বোধ করবেন না?
না স্যার।
নিজেক সংশোধন করুন। আপনার অনেক মাইনাস পয়েন্ট আছে। আমি জানি। সবার সামনে বলছি না। নিজেকে বড্ডবেশি আল্গা করে ফেলেছেন।
রণিতা ম্যাডাম কেঁদে ফেললেন।
কেঁদে কোনও লাভ নেই। অন্য জায়গা হলে আজকে আপনাদের সকলকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দিত। আমি তা করছি না। লাস্ট চান্স দিলাম।
উঠে এসে আমার পা ধরে ফেললেন। আমায় ক্ষমা করুন।
এ কি করলেন আপনি, আমি একজন সাধারণ সাংবাদিক!
ম্যাডাম মাথা নীচু করে।
আমায় ক্ষমা করুন।
আমি ক্ষমা করার কে। দাদার কাছে ক্ষমা চান। উনি আপনাদের রক্ষা করছেন।
চম্পকদা?
আমি কিছু বলবোনা, তুই যা শাস্তি দিবি মাথা পেতে নেব।
এই নিয়ে কবার হলো?
জানি।
সনাতনবাবু?
চম্পক যা বললো আমারও তাই মত।
আপনারা এখন যান। আপনাদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না।
ছোটোবাবু আমরা কলুর বলদ হয়ে গেছি। কি করবো। সুনিতের ঘটনার পর সবাই তোমাকে দেখে তটস্থ।
তারমানে!
বিশ্বাস করো।
আপনারা সবাই দোষী? তাই অনির ভয়ে তটস্থ। সুনিতদার মতো কটা লোক এই হাউসে আছে?
জানাব।
নামগুলো দিন আমাকে। দেখি তাদের বুকের খাঁচাটা কতো ইঞ্চি।
চম্পক না বললেও আমি তার লিস্ট তোমাকে দেব।
দিন। তারপর দেখছি। আমি এখন বেরব। ঠিক ছটার মধ্যে ঢুকবো।
আচ্ছা।
সবাই একে একে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
দাদাকে বললাম, হরিদা চা দিল না।
দাদা বেল বাজাতেই হরিদা মুখ দেখাল। ঢালছি।
নিয়ে আয়।
হরিদা একে একে চা নিয়ে এলো। তিনজনেই থম মেরে বসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রার ফোন। ভয়েজ অন করলাম।
বল।
সত্যি অনি তুই আমার গুরু। ইসলামভাই বলে উঠলো।
মিত্রার ফোন থেকে ফোন করছো!
আমারটায় ভয়েজ নেই তাই।
পেছনে লোক লাগিয়েছিলে কেন?
ইসলামভাই হো হো করে জোড়ে হাসলো। ফোনটা যেন ফেটে যাবে।
সত্যি তোর চোখ।
অনেক কষ্টে বানাতে হয়েছে। মনে রাখবে যেদিন অনির চোখটা নষ্ট হয়ে যাবে, সেদিন অনি মরেগেছে।
তুই এই কথা বলিস না। আমরা তাহলে কোথায় যাব?
তোমার গাড়ির নম্বর, কোথা থেকে ফলো করছিল, বলবো।
না। আমি জানি।
সত্যি কথা বলো?
সকালে তুই যখন রতনের ফোন নম্বরটা জোড় করে চাইলি তখনই বুঝেছি তুই আজকে কিছু একটা খেলা খেলবি। তোর নেক্সট টার্গেট আমার জানা ছিল। তাই ঘুটি সাজালাম। অন্যায় করেছি বল?
না।
আমি বড়দিদের সব বলেছি।
কেন!
বড়দি মাথায় হাত রেখে বললো, বল অনি কেন আমার সঙ্গে কথা বললো না।
তখন সব গড়গড় করে বলে দিলে?
কি করবো বল।
হার্টবিটটা দেখেছিলে। ওখানে দশ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও ডাক্তার নেই!
কিছু হবে না। ইসলামভাই মরে যায়নি। আল্লা কসম।
রতনের সঙ্গে কথা হয়েছে?
আবিদ রওনা দিয়ে দিয়েছে।
তুমি মনিটরিং করো। অবতারকে এখন কিছু কোরও না।
তুই না বলা পর্যন্ত কিছু করবো না।
তোমরা এখন কোথায়?
তোর ঘরে।
আর কে আছে?
আমরা তিনজন।
ও। স্নান খাওয়া-দাওয়া হয়ে গেছে?
না। সবাই তোর শেষ রেজাল্টটা না জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করছে।
মিত্রার হার্টবিটটা ছোটোমাকে দেখতে বলো।
ফিক করে হাসির আওয়াজ হলো।
কে হাসলো?
মিত্রা।
বাবাঃ। খুব ফুর্তিতে আছে মনে হচ্ছে?
আমরা সবাই টেনসড ও একবারে নর্মাল। তুই এতদিনে ওর মনের মতো কাজ করছিস।
শেষ রেজাল্ট কাল সকালে জানতে পারবে।
কেন লেট করছিস?
এখন অনিমেষদার ওখানে যাব, সবার দুপুরে খাওয়ার নেমন্তন্ন।
তুই নিরঞ্জনদাকে বাঁচিয়ে দিলি।
ওকে মারার ইচ্ছে ছিল। বড়োমার জন্য এ যাত্রায় রক্ষা পেল।
এভাবে বলিস না। তুই এখন কোথায়?
দাদার ঘরে। তোমার কথা সবাই শুনছে।
বড়দির সঙ্গে কথা বল।
দাও।
কিরে এখনও রাগ করবি?
আমার ওপর তোমার বিশ্বাস নেই তাই?
চুপচাপ।
চুপকরে রইলে কেন?
তুই এভাবে বললি কেন, বড়োমা কাঁদছে। মিত্রার গলা।
কাঁদতে দে।
এভাবে বলিস না।
তাহলে কিভাবে বলবো?
মিত্রা সব বলেছে। আর কোনওদিন হবে না। আমি তিন সত্যি করছি।
বড়োমা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
দাদার সঙ্গে কথা বলো।
দাদার হাতে ফোনটা দিয়ে আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। হরিদা পেছন থেকে ডাকল।
ছোটোবাবু।
কিগো হরিদা।
হিমাংশু সাহেব অনেকক্ষণ এসেছে। দিদিমনির ঘরে বসিয়ে রেখেছি।
এমা আমাকে আগে বলবে তো।
তুমি ঘরের মধ্যে যা শুরু করেছিলে। দুবার গিয়ে ফিরে এসেছি।
চা দিয়েছো?
হ্যাঁ।
আমি মিত্রার ঘরের দিকে গেলাম। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই হিমাংশু উঠে দাঁড়াল।
আবার কি হলো!
আর বলিসনা। সব শালা হারামী।
হিমাংশু মুচকি হাসলো।
আমি ওর পাশে বসে সংক্ষেপে সব বললাম।
ও শুনে থ।
কালকেই রেষ্ট্রি করবো। সব ব্যবস্থা কর। আজ বিকেলে অফিসে একবার আয়।
তুই আমাকে মেরে দিবি।
কি করবো তুই বল। তুই ছাড়া কার কাছে গিয়ে হাত পাতবো।
সেও ঠিক, মালিক হওয়ার পর নিঃশ্বাস নিতে পারছিস না।
দাঁড়া। মিত্রার টেবিলের ফোনটা থেকে দাদার ঘরে ফোন করলাম।
হ্যালো।
দাদা নিরঞ্জনদার কাছে একটা দলিল আছে। হরিদাকে দিয়ে মিত্রার ঘরে পাঠিয়ে দাও।
ফোনটা রেখে দিলাম।
হরিদা কিছুক্ষণ পর এলো। এই নাও।
হরিদা তোমার ছেলে কোথায়?
দাদা নিউজরুমে ডিউটি দিয়েছে। বলেছে দিদিমনি এলে দিদিমনির ঘরে থাকবে।
তুমি খুশি হরিদা?
হ্যাঁ ছোটোবাবু। ছেলেটা একেবারে বকে যাচ্ছিল।
একবার কথা বলিয়ে দিও।
ঠিক আছে।
হরিদা চলে গেল।
হিমাংশুকে সমস্ত পরিকল্পনার কথা বললাম।
তুই কি করতে যাচ্ছিস, একবার ভেবে দেখেছিস!
আমি ভেবে চিন্তেই সব করছি।
এখানে আমার লোককে ফুল টাইম রাখতে হবে।
ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
তাই কর। না হলে আমার পক্ষে ম্যানেজকরা সম্ভব নয়।
বলছি তো তাই হবে। তুই এই দুটো আগে সাল্টা। বিকেলে একবার অফিসে আয়।
ঠিক আছে। এখন উঠি।
শোন স্টাম্পপেপার কিনে নে।
কতো টাকার কিনবো।
লাখখানেক টাকার। তোর আগের বিলগুলো পেয়ে গেছিস?
হ্যাঁ।
ঠিক আছে যা, টাকা লাগলে সনাতনবাবুর কাছে নিয়ে নে, আমি কিছু কাজ সেরে নিই।
হিমাংশুকে ছেড়ে সোজা নিউজরুমে চলে এলাম।
আমাকে দেখেই ঘরটা কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেল। সন্দীপ উঠে এলো। আর সেই ছেলে দুটো।
অনিদা শরীর খারাপ?
না।
তোমার মুখটা কেমন কেমন লাগছে।
আমি একটার পিঠ চাপরে বললাম, সব সময় অনিদার মুখটা ঝকঝকে থাকবে তা হয়। কি করি বলতো, চেষ্টা তো করি, হয় না।
দু-জনেরি মুখটা কেমন থম মেরে গেল।
চা নিয়ে আসবো?
খাওয়াবি?
তোমাকে চা খাওয়াব, এটা সৌভাগ্যের ব্যাপার।
যা বলে আয়।
ছুটে চলেগেল।
সন্দীপকে নিয়ে আমার টেবিলে এসে বসলাম। সন্দীপ বুঝলো জরুরি কথা আছে।
বল।
পর্শুদিন ব্যাক করে যাব। আমার সঙ্গে দাদা, মল্লিকদা যাবে। কাগজ সামলাতে পারবি?
এই কাজ।
সন্দীপ এমন ভাবে কথা বললো যেন কিছুই না। সাতদিন আগেও সন্দীপ কিছু বলতে গেলে সাতবার ভাবতো। দশবার ঢোক গিলতো। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
তাকিয়ে আছিস কেন! বিশ্বাস হচ্ছে না?
হাসলাম।
আমি কথা দিচ্ছি। তোর ওই দুটো পোলা যদি থাকে, আমার কাউকে দরকার নেই।
তৈরি করে নিয়েছিস?
কাজের ব্যাপারে দারুন সিরিয়াস। এরই মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে লেগে গেছে।
কেন!
ওরা রিপোর্টিংয়ে ভুল ধরে।
হাসলাম।
সলিড মাল।
নিজে হাতে আমার জন্য চা নিয়ে এলো।
কিরে তোরা ঝগড়া করছিস সিনিয়ারদের সঙ্গে?
সন্দীপদা বলেছে।
হাসলাম।
সন্দীপকে বললাম, জলের বোতলটা এগিয়ে দে।
ছেলাটা এগিয়ে দিল।
ঢক ঢক করে কিছুটা জল খেলাম। দেখলাম ওরা একটু দূরে গিয়ে চেয়ারে বসলো।
চায়ে চুমুক দিলাম।
দু-দিনের কাগজের খবর কি?
হট কেক। নো রিটার্ন।
কালকেরটা বেরতে দে।
বেরতে দে মানে। এতক্ষণে ছাপা হয়ে বাইরের কাগজ চলে গেছে।
ফলো আপ করে যাচ্ছিস?
তোর চেলা দুটো এঁটুলে পোকার মতো লেগে আছে। নাম ফাটছে না।
হরিদা এসে দাঁড়াল। দাদাবাবু ডাকছে।
কেন!
কোথায় যাবার আছে উনি ফোন করেছেন।
যাও যাচ্ছি।
সন্দীপের সঙ্গে কথা শেষ করে দাদার ঘরে এলাম।
অনিমেষ ফোন করেছিল।
তুমি কথা বলেছো।
হ্যাঁ। আমাদের জন্য তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে।
চলো বেড়িয়ে পরি।
মল্লিকদার মুখটা খুশি খুশি দেখাচ্ছে।
এতক্ষণ একটা বিষ কালো মেঘ মুখটা ঢেকে রেখেছিল। আমাকে দেখেই হেসে মুখটা নীচু করলো। বুঝলাম ছোটোমা, বড়োমার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছে।
এইনে তোর ফোন।
দাদার হাত থেকে ফোনটা নিলাম।
অফিসের গাড়িতে যাওয়া যাবে না। ট্যাক্সি করে যেতে হবে।
দাদা আমার মুখের দিকে তাকাল।
কেন?
সব কেনর উত্তর আমার কাছে নেই।
মল্লিকদা, নিরঞ্জনদা মুচকি হাসলো।
আমরা বেরিয়ে এলাম।
নীচে রিসেপসনিস্ট ম্যাডাম উঠে দাঁড়িয়ে মাথা নীচু করে নিলেন।
আমরা বাইরে এলাম। নিরঞ্জনদার ড্রাইভার এগিয়ে এলো।
নিরঞ্জনদা ওনাকে এখানেই অপেক্ষা করতে বললেন।
সিকুরিটির ছেলেটিকে বললাম, একটা ট্যাক্সি ডেকে আন।
ছেলেটি আমার কথা শুনে প্রথমে একটু অবাক হলো। তারপর একটা ট্যাক্সি ডেকে নিয়ে এলো। ইসমাইল এগিয়ে এসে বললো ছোটোদা আমি যাবো না?
হাসলাম। পিঠটা চাপড়ে দিলাম।
দিদিমনি কেমন আছে?
ভালো। তোর ছেলে কেমন আছে?
এখন একটু ভালো।
আমি ফিরে আসছি, একবার দেখা করিস।
আচ্ছা।
ট্যাক্সি আসতে আমরা চারজন উঠে বসলাম। আমি সামনের সিটে। দাদারা তিনজন পেছনের সিটে। অলি গলির মধ্যে দিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে অনিমেষদার বাড়ি পৌঁছলাম। দাদা আমার ওপর সারাটা রাস্তা সমানে গজ গজ করছে।
কলকাতা শহরে আর কি কোনও রাস্তা নেই। তুই কি আমাদের রাস্তা চেনাচ্ছিস?
আমি চুপচাপ। ট্যাক্সি ড্রাইভার আমার ওপর বিরক্ত হচ্ছে। মুখে কিছু বলতে পারছে না। অনিমেষদার বাড়ির সামনে এসে ট্যাক্সি ছেড়ে দিলাম।
পকেট থেকে ফোনটা বার করে রতনকে একটা ফোন করলাম।
বলো অনিদা।
আমাক আর পাহাড়া দিতে হবে না।
উঃ তুমি ধরে ফেলেছো!
কেন অলি গলি তস্য গলি দিয়ে ট্যাক্সি করে এলাম বুঝতে পারলি না?
দাদা আজ তোমার পেছন ছারতে বারন করেছে।
আমি তোকে বলছি, তুই যা। এখান থেকে বেরিয়ে তোকে জানাব। খাওয়া দাওয়া করেছিস?
হ্যাঁ দাদা।
তোর সঙ্গে যারা আছে, তাদের খাওয়া দাওয়া হয়েছে?
হ্যাঁ।
ওটাকে কোথায় তুললি?
আমাদের হোটেলে।
কাগজপত্র সব নিয়ে এসেছে।
আবিদ দেখে নিয়েছে। ব্যাটা সব নিয়ে আসতে চাইছিল না। আবিদ ওর আলমাড়ি ভেঙে সব কাগজ নিয়ে চলে এসেছে। তিনটে ভিআইপি স্যুটকেস ভর্তি।
করেছিস কি তোরা!
তোমার কোনটা দরকার কি করে জানব।
ঠিক আছে তুই এখন যা।
আচ্ছা দাদা।
দাদার দিকে তাকালাম। দাদা একবার চলতে চলতে থেমে আমার দিকে তাকাল। নিরঞ্জনদা দেখছে। মল্লিকদা মুচকি হাসছে।
দাঁড়ালে কেন, চলো।
তোকে দেখছি।
দেখে লাভ নেই। বাঁচতে গেলে এসব করতে হবে। মালিক বানিয়েছ অনিকে।
দাদা মাথা নীচু করে আমার পাশে পাশে হাঁটছে।
দোতলায় উঠে বেল বাজাতেই কাজের মেয়েটি দরজা খুললো।
আয় ভেতরে আয়, তারপর তোর পিঠ ভাঙছি। অনেক বড়ো রাইটার বনে গেছিস। ভেতর থেকে বৌদির গলা।
এখন পিঠ ভেঙনা আমার সঙ্গে অনেকে আছে। ভেতরে এসে জুতো খুলতে খুলতে বললাম।
বৌদিকে প্রণাম করলাম। আমার পেছন পেছন সবাই ভেতরে এলো।
আমি ছাড়া এই বাড়িতে সবাই প্রথম এলো।
দাদার সঙ্গে অনিমেষদার পরিচয় আছে। এই পর্যন্ত। কাজের তাগিদে পরিচয়।
সব কাগজের এডিটরের সঙ্গেই অনিমেষদার পরিচয় আছে।
আমি দাদার সঙ্গে, নিরঞ্জনদার সঙ্গে, মল্লিকদার সঙ্গে বৌদির পরিচয় করিয়ে দিলাম। দাদা ঘরের ভেতর ছিলেন বেরিয়ে এলেন।
তাহলে তুই এলি।
কেন সন্দেহ ছিল?
তুই এখন কাগজের মালিক। কোটি কোটি টাকা। আমার মতো নগণ্য মানুষকে পাত্তা দিবি কিনা সন্দেহ ছিল।
বৌদি আমি আসি, যেদিন কাগজের মালিক থাকবো না, সেদিন আসবো।
এ জম্মে হবে না। তুই যে ভাবে পাকে পাকে জড়াচ্ছিস।
মাথা নীচু করলাম।
আসুন দাদা, আমরা ভেতরের ঘরে বসি। ও এখানে থাকুক।
দাদারা সবাই অনিমেষদার সঙ্গে ভেতরের ঘরে চলে গেল। আমি বৌদির দিকে তাকালাম।
ছোটো ম্যাডাম কোথায়?
কলেজে। এসে পরলো বলে।
কি রান্না করেছো?
মন্ডা মিঠাই।
তাহলে খাব না।
তোর জন্য স্পেশাল রান্না আছে। আলুপোস্ত, ডাল ছাড়া তো এ বাড়িতে কিছু খাস না।
কে দেবে বলো। এখন তবু বড়োমার কাছে থাকি।
বিয়ে করছিস কবে?
তোমাকে সব বলবো।
তারমানে! করা হয়ে গেছে?
আমার আবার বিয়ে।
কেন মিত্রাকে পেয়েছিস তো?
পেয়েছি। এই যা।
বৌদির পেছন পেছন রান্না ঘরে এলাম।
তোর দাদার মুখ থেকে কিছু কিছু শুনি। কালকে তোর লেখাটা পড়ে বলেছি। এই বার অনির কলমের ধার অনেকটা কমে যাবে।
না বৌদি তা হতে দেব না। তুমি দেখবে।
হলেই ভালো।
এখন কি করবে?
খাবার গুলো একটু গরম করি।
তুমি সরো আমি করে দিচ্ছি।
না তোকে কিছু করতে হবে না। তুই কি এখন সেই অনি আছিস। বিজনেস ম্যাগনেট বলে কথা।
তুমিও বলবে।
আচ্ছা বাবা বলবো না।
সুরো কখন আসবে?
ওর বাবা ফোন করেছিল। বললো অনিদা আসবে, আমি বেরচ্ছি।
চলো জায়গা করে নিই খিদে লেগেছে।
কাকলী।
বৌদির ডাকে কাজের মেয়েটি রান্নাঘরের সামনে এলো।
জায়গা করেছিস?
হ্যাঁ।
আমি গিয়ে ডেকে আনি তুমি ব্যবস্থা করো। সবাই একসঙ্গে বসবো।
যা।
আমি ঘরে এলাম। ঘরের আবহাওয়া বলছে বেশ জটিল আলোচনা চলছে। সবার মুখ চোখ তাই বলছে।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। আসুন স্যার।
এইভাবে বললে আর আসবো না।
তোকে আসতে হবেই। তোর থেকে আমার ক্ষমতা বেশি।
দরকার নেই, ছেড়েছুরে পালিয়ে যাব।
পারতিস। যদি না বাঁধা পরতিস।
একথা বলছো কেন!
দাদার মুখ থেকে সব শুনলাম বলে।
ও শোনা হয়ে গেছে?
দেখ আমি বলিনি, অনিমেষ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, তাই বললাম।
তোমার দ্বারা কিছু হবে না। তুমি খোঁচাও দেখি, কিছু পাও কিনা।
অনিমেষদা হো হো করে হেসে ফেললো।
চলো টেবিলে বসে গল্প হবে। ওদিকে সব রেডি।
সবাই উঠে এলো।
বেসিনে হাতধুয়ে সবাই টেবিলে বসলো।
বৌদি একে একে সবাইকে খাবার থালা এগিয়ে দিল। আমার পাশের চেয়ারে বৌদি বসেছে। কাজের মেয়েটিকে বললো আমি সব দিয়ে দিচ্ছি তারপর যার যা লাগবে তুই দিস।
মেয়েটি মাথা দুলিয়ে পাশে দাঁড়াল।
আমরা খাওয়া শুরু করলাম।
বুঝলে সুতপা, অনিবাবু বিয়ে করেছেন। অনিমেষদা বললো।
অ্যাঁ। বৌদি মুখে ভাত নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
ভাতটা একবারে গিলে নিয়ে….
কিরে তুই যে এখুনি বললি আমার কপালে কি ওই সব লেখা আছে।
তারপর কি বলেছি, তোমায় সময় করে সব বলবো।
তোর দাদার মতো, এখানেও রাজনীতি।
দাদা, মল্লিকদা মুচকি মুচকি হাসছে। নিরঞ্জনদা গম্ভীর।
আরও আছে।
বাবু আরও অনেক কীর্তি করেছেন। পরে তোমায় বলবো। এখানে এসে মাস দেড়েক আগে তোমায় বলেছিল না বৌদি এবার আমার অনেক কাজ। বাবু সেগুলো সেরে ফেলেছেন। আমার কাছে জাস্ট পার্মিশন নিতে এসেছেন। সঙ্গে তিন সাক্ষী।
কিরে তোর পেটে পেটে এতো! তুই কি সাংঘাতিক? তুই তো তোর দাদার থেকে এক কাঁটা ওপরে।
এক কাঁটা কম বললে, দশ কাঁটা ওপরে।
একবারে হ্যাঁ বলবে না।
সেখানে আবার একটা প্যাঁচ মেরেছে। আমাদের পার্টির স্বার্থ লুকিয়ে আছে। না বলতে পারবো না।
উরি বাবা!
তবে অনির হিম্মত আছে। একা লড়ছে।
অনিমেষদা জলের গ্লাসে চুমুক দিল। গ্লাসটা নামিয়ে রেখে বললো।
সংঘবদ্ধ ভাবে নয়। ওর একার ক্ষমতায়। জীবনটা অনেক বেশি দেখেছে কিনা।
আমি শোনার পর হ্যাঁ বলবে। আগে ওর বৌকে নিয়ে আসবে, তারপর।
বৌ তো ওর মালকিন।
মিত্রা!
হ্যাঁ।
তাহলে ঠিক আছে।
ব্যাশ গলে গেলে।
যাঃ ওই ভাবে বলো না। ও তো আগেই বলেছিল।
দাদা, মল্লিকদার দিকে চোরা চাহুনি মেরে তাকালাম। অনিমেষদা বৌদির কথায় দু-জনেই খুব মজা পাচ্ছে। একজন অন্ততঃ পক্ষে আছে যে অনিকে ধমকাতে পারে।
অনিমেষদার ফোন এলো। ধরে বললো, মিটিং চারটের সময়। আমি তার পনেরো মিনিট আগে পৌঁছে যাব।
ফোনটা বন্ধ করে পকেটে রেখে দিল।
কিরে তুই কিছু নিবি না? বৌদি বললো।
না পেট ভরে গেছে।
কেন?
এত কথা শুনলাম দাঁড়াও আগে হজম করি।
তাহলে যে বড়ো বড়ো কথা বলিস। গ্রামের ছেলে বিড়াল ডিঙবে না।
বৌদির কথায় সবাই হো হো করে হাসছে।
বাইরে বেল বেজে উঠলো। কাজের মেয়েটি এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো।
সুরঞ্জনা ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকেই ব্যাগটা কোনও প্রকারে রেখেই আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
অনিদা ফার্স্টক্লাস কেউ রুখতে পারবে না।
সত্যি!
তোমার নোট।
তাই!
ড. রায় কি বললো জানো?
কি!
দশ বছর আগে এইরকম নোট পড়েছিলাম।
তুই কিছু বলিসনি?
পাগল। তাহলে আমার দর কমে যাবে না।
দেখ কিরকম গুরু মারা বিদ্যে শিখেছে। বৌদি হাসছে।
তোমার কথা ড. রায় এখনও আমাদের বলেন। গত দশবছরে কলেজ থেকে একটাও ফার্স্টক্লাস বেরোয়নি।
তুই পেয়ে দেখিয়ে দে।
পাবই। তোমার সব নোট জলবত তরলং।
বৌদি, অনিমেষদা হেসেই যায়।
তোমার কাগজে একটা লেখার সুযোগ দেবে?
ওই যে এডিটর সাহেব বসে আছেন।
উনি অমিতাভ চক্রবর্তী!
সুরঞ্জনা ছুটে গিয়ে প্রথমে দাদাকে প্রণাম করলো তারপর মল্লিকদা, নিরঞ্জনদা।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
বাবা হাসছে কেন গো অনিদা?
বাবাকে জিজ্ঞাসা কর।
দাঁড়াও না আগে তোমার মতো হই। তারপর বাবার পার্টির পর্দা ফাঁস করবো।
শেষ পর্যন্ত বাবাকে নিয়ে পরলি কেন?
তোমার লেখাটা পড়ে।
অনিমেষদা হাসতে হাসতে বলে উঠলো, অনি তাহলে একটা চ্যালা তৈরি করলো।
একটা কিগো অনিমেষ, অফিসেও দুটো চ্যালা তৈরি করেছে। দাদা বললো।
তাই নাকি?
আর বলো কেন।
অনিদা তুমি আমাকে তৈরি করোতো।
ঠিক আছে কালকে থেকে লেগে পর।
অমিতাভ জ্যেঠু পাত্তাই দিল না।
ঠিক আছে মালিক হুকুম করবে এডিটরকে। তোর লেখা ছাপা হবেই।
আবার সবাই হেসে উঠলো।
কলি আমার ভাতের থালা নিয়ে আয়। মা তুমি সরে বসো। আমি অনিদার পাশে বসবো।
সুরঞ্জনা একটা চেয়ার টেনে নিয়ে আমার পাশে বসলো।
আজ আমার পাত ফাঁকা। আমি বললাম।
তোর অনিদা বিয়ে করেছে। বৌদি বললো।
উঁ-উঁ-উঁ-উঁ, হুঁ-হুঁ-হুঁ-হুঁ অনিদা এটা তুমি কি করলে?
তুই বিশ্বাস কর।
ভেবেছিলাম তোমার বিয়েতে বেশ জমপেশ করে সেজে বরযাত্রী যাব।
আচ্ছা আমি বিয়ে করবো তুই জানতে পারবি না তা হয়?
মা বললো যে।
মিথ্যে কথা। তুই বিশ্বাস করিস?
তোর মিত্রাদিকে। বৌদি বললো।
কিগো?
আবার পাগলাম করে।
মিত্রাদি এখন কোথায় গো?
লুকিয়ে রেখেছি।
কেন!
বাবাকে জিজ্ঞাসা কর?
বাবা আমার সঙ্গে কথাই বলে না।
তুই এককাজ কর, বাবাকে নিয়ে একটা আর্টিকেল লেখ, আমি এডিট করে তোর আমার জয়েন্ট নামে ছেপে দেব।
বুঝেছি তুমি আমাকে টুকছো।
এই তো, ভালো কথা বললাম, ওমনি টোকা হয়ে গেল।
কলি মাছের ঝোল দে।
কানে তালা ধরিয়ে দিলি।
আমি বৌদির পাতের দিকে জুল জুল করে তাকালাম।
মায়ের পাতের দিকে তাকাবে না। ওটা আমার।
কতদিন বাদে এলাম তুই এরকম করিস না।
না একবারে না।
ঠিক আছে, বাকি নোটগুলো মাইনাস।
হাফ হাফ।
ভাগকর।
অনিমেষদা একবার মুখ তুলে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো।
খাওয়া শেষের পথে।
অনিমেষদা একটা ঢেঁকুর তুলে বললো, তাহলে সুতপা, হ্যাঁ বলে দিই।
আমি অনিমেষদার দিকে মুখ তুলে তাকালাম। মুচকি মুচকি হাসছি।
বলে দাও এই শেষ বার। আর নয়। এরপর বৌকে নিয়ে এলে কাজ হবে। নাহলে হবে না।
কিগো আনিদা মা কি কথা বললো?
উঃ ওটা মা বলেছে। আমি তোকে পাকা কথা বলেছি। তোর জমপেশ করে সাজার ব্যবস্থা করছি। একটু অপেক্ষা কর।
মনে থাকে যেন।
দাদারা সকলে উঠলেন। অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, একবার আয় তোর সঙ্গে একটু কথা আছে।
যাও যাচ্ছি।
আমি টেবিলে বসে রইলাম। সুরো খাচ্ছে।
আবার কবে আসবি?
দিন পনেরোর মধ্যে হবে না। বড়োমারা ওখানে আছে। এদিকটা একটু সামলে নিই তারপর।
তুই কতদিন পর এলি মনে আছে?
হ্যাঁ। মাস দেড়েক পর।
অফিসের সমস্যা মেটালি?
এত সহজে মেটে। একটা মেটাই তো আর একটা জায়গা দখল করে বসে।
এটা লেগে থাকবে।
মেনে নিয়েছি।
খাওয়ার পর্ব সাঙ্গ হলো। বেসিনে মুখ ধুয়ে অনিমেষদার ঘরে এলাম। অনিমেষদা আমাকে দেখে বললেন ওই ঘরে যা আমি যাচ্ছি। আমি দাদার বেডরুমে চলে এলাম। সুরঞ্জনা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। বেশ দেখতে হয়েছে সুরঞ্জনাকে। সেই কলেজ লাইফ থেকে ওদের বাড়িতে আসা যাওয়া শুরু, তখন ও ক্লাস থ্রির ছাত্রী। আজ অনার্স ফাইন্যাল ইয়ার। যেন মনে হচ্ছে এই সেদিনের কথা।
অনিদা।
বল।
মিত্রাদিকে দেখতে এখন কেমন হয়েছে?
যেমন ছিল তেমনি আছে।
একটুও বদলায়নি?
না। সেরকম দেখছি না।
মানি বাইরে যা, অনির সঙ্গে একটু কথা বলি।
সুরঞ্জনা আলমাড়ির সামনে থেকে সরে গিয়ে বাইরে চলে গেল। মুখে ব্যাজার ভাব।
অনিমেষদা আমার পাশে এসে বসলো। তোর কথা অমিতাভবাবুর মুখ থেকে শুনলাম।
আমি মাথা নীচু করে আছি।
তুই নিরঞ্জনকে মন্ত্রী বানাতে চাস?
আমি অনিমেষদার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
বল না তোর মনের কথা?
তুমি যা বললে তা ভাবিনি বললে মিথ্যে বলা হবে।
ও অনেক গন্ডগোল করে বসে আছে।
জানি।
পার্টিতে ওর সম্বন্ধে কিছু খারাপ কাগজপত্র জমা পড়েছে।
তাহলে!
আমি ওকে কথা দিইনি তবে চেষ্টা করবো বলেছি। বিধানবাবুর সঙ্গে কথা বলি আগে।
আমি যেগুলো ওখানে করতে চাই শুনেছো।
তোর বহুদিনকার স্বপ্ন। কর। সবরকম সাহায্য পাবি। জমির ব্যাপারটা নিরঞ্জনবাবুকে বলেছি। ওদের জেলার মিটিংয়ে কথা বলে আমাকে জানাতে।
তুমি আমাকে মাস ছয়েক সময় দাও আমি শুধরে দেব।
জানিস তো সব। নতুন করে তোকে কি বলবো। ওর অপনেন্টরা হ্যাঁ করে বসেছিল এতদিন। এখন বিধানবাবুর কাছে প্রত্যেকদিন ফোন করছে।
আমি তাহলে একটা আর্টিকেল ঝেড়ে দিই।
আবার কি আছে তোর ঝুলিতে!
যারা বেশি বাড়াবাড়ি করছে তাদের নিয়ে।
তুই এখন থাম, একটা আগে সামলে নিই, তারপর। তোকে একটা কাজ করতে হবে।
বলো।
তোদের জেলায় বাই ইলেকসন আছে পাঁচটা সিটে।
আমায় কি করতে হবে।
ইসলামকে একবার আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দে। বিধানবাবু সব আমার ঘারে ঠেলে দিচ্ছে। সেদিন বললো তোমার সঙ্গে অনির ভালো রিলেশন। অনিকে বলো।
আমাকে দিন সাতেক সময় দাও।
সে তুই সময় নে। কাজটা করতে হবে।
আর।
কিছু টাকা পাঠা। ইলেকসনের খরচ বাবদ।
কতো বলো।
তোর যা মন চায়।
ইসলামভাইকে বলি ওই পাঁচটা ও কভার করে দিক।
একা পারবে।
পারবে। আমি ওর দম জানি।
দেখ, হলে ভালো হয়। আমাকে একটু জানাস।
পর্শুরাতে তোমায় ফোন করবো।
ঠিক আছে।
মিঃ ব্যানার্জীকে কি করবো?
যা ডিসিসন নিয়েছিস, এতে আমার কিছু বলার নেই। সাবধানে পা ফেলিস। কোনও ফাঁক রাখিস না।
সে বিদ্যেটা তোমার কাছ থেকে রপ্ত করে নিয়েছি।
তোর বৌদির তোকে নিয়ে বড্ড ভয়। বারবার আমায় বলে বয়সটা কম। তুমি ওকে বারন করো।
আমি তোমায় কথা দিচ্ছি, আমার জন্য তোমার মাথা হেঁট হবে না।
আব্দুলকে আমি বলে রাখছি তোর জমির ব্যাপারে। দপ্তরটা ওর।
তুমি বলো, প্রয়োজনে আমি নিজে দেখা করবো।
টাকা পাবি কোথায়?
প্রোজেক্ট রেডি করতে করতে বছর তিনেক লাগবে। তোমাদের ইলেকসন চলে আসবে। সেই সময় কাজে লাগাব।
ছকটা ভালো কষেছিস।
হাসলাম।
চল আমার আবার মিটিং আছে যেতে হবে।
আমরা সবাই বেরিয়ে এলাম। বৌদির মনটা একটু খারাপ হলো। আসার সময় বললাম, আমায় সাতদিন সময় দাও, আবার আসছি।
নিচে নেমে এসে দাদাকে বললাম, তোমরা অফিসে যাও। আমি একটু কাজ সেরে যাচ্ছি। রাতে তাড়াতাড়ি ফিরবে। সেই ভাবে কাজ গোছাও। আমার মোবাইল বন্ধ থাকবে। ফোন করবে না।
দাদা আমার দিকে তাকাল।
দাদারা একটা ট্যাক্সি ধরে অফিসের দিকে গেল। আমি একটা ট্যাক্সি ধরে ফ্ল্যাটের দিকে চললাম।
হাতে একটু সময় আছে, ঝিমলিকে ফোন করলাম।
অনিদা! কোথায় তুমি?
তোমার চিঠি আজ পড়লাম।
তোমায় অনেকদিন আগে লিখেছি।
ডেটটা দেখেছি। এ্যাকচুয়েলি কলকাতায় ছিলাম না। তুমি কোথায়?
চ্যাট করছি।
আসতে পারবে।
তুমি ডাকলে যাব না তা হয়।
আমার ফ্ল্যাটে চলে এসো। ঘণ্টা দুয়েক তোমায় সময় দিতে পারবো।
ঠিক আছে চলে আসছি।
এসো।
ফোনটা কেটে দিলাম।
ফ্ল্যাটে যখন পৌঁছলাম তখন মোবাইলের ঘরিতে পৌনে চারটে বাজে।
রতনকে একটা ফোন করলাম।
বলো দাদা।
খবর কি?
সব ঠিক আছে।
বসের সঙ্গে কথা বলেছিস?
মিনিট পনেরো আগে কথা হয়েছে।
ওদিককার খবর?
মালটা হোটেলে শুয়ে আছে।
ঠিক আছে। তোকে আমি ছটার সময় ফোন করবো। তুই এখন কোথায়?
চায়ের দোকানে।
ফোনটা কেটে দিলাম।
ফ্ল্যাটের দরজা খুললাম।
একটা ভেপসানি গন্ধ নাকে এসে লাগলো। অগোছালো ঘর। অনেকদিন আসা হয়নি। জানলা দরজা খুললাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই গন্ধটা চলেগেল। ঝিমলি আমার এই ফ্ল্যাটে কখনও আসেনি। প্রথম আসবে। ঘরটা দেখে নিজেরই খারাপ লাগছে। চটপট খাটটা একটু গুছিয়ে নিলাম। একটা পরিষ্কার চাদর আলমাড়ি থেকে বার করে পাতলাম। হিমাংশুকে একটা ফোন করলাম।
বল।
রেডি করেছিস।
করছি।
শোন তিনট্রাঙ্ক কাগজ নিয়ে এসেছে।
হিমাংশু হো হো করে হেসে ফেললো।
কি করবি?
সব স্টাম্প পেপারে সাইন করিয়ে ছেরে দে। তারপর নিজের মতো করে গুছিয়ে নেব।
না এতটা অসৎ হবো না, আমার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু নেব।
তাহলে সতী হ।
সে তুই যা বলিস। তুই বরং ড্রাফ্টগুলো সব রেডি করে নে, ল্যাপটপ আর প্রিন্টারটা নিয়ে নে। রেজিস্ট্রার ম্যাডামকে ডেকে নিবি। আমার বাড়িতে সব কাজ হবে।
ঠিক আছে তাই হবে।
আমি বাড়িতে গিয়ে তোকে ফোন করবো। তুই তোর স্টাফেদের নিয়ে সাতটা নাগাদ চলে আয়।
বললি যে অফিসে।
মত বদলেছি।
আচ্ছা।
প্যান্ট-গেঞ্জি খুলে বাথরুমে ঢুকলাম সর্বাঙ্গে জল ঢেলে ভালো করে ফ্রেস হলাম। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছে। একটা পাজামা পাঞ্জাবী পরলাম। জানলার পাল্লাগুলো বন্ধ করলাম। আলমাড়ি খুলে তন্ত্রের বইটা বার করলাম। সুরঞ্জনার নোটগুলো বার করে একটা ব্যাগের মধ্যে ঢোকালাম। আমার এ্যালবামটা ঢোকালাম।
বেলটা বেজে উঠলো।
দরজার লক খুলতেই ঝিমলি ফিক করে হাসলো।
এসো।
ঝিমলিকে দেখতে খুব সাধারণ কিন্তু আসাধারণ ওর লুক। একঝলক তাকিয়েই একটু সরে দাঁড়ালাম।
আসতে আসুবিধে হয়নি।
সেলিব্রিটিদের খুঁজতে অসুবিধে হয় না।
ঝিমলি ভেতরে এলো।
একটা মেরুনকালারের শর্ট শালোয়াড় পরেছে। দুধে আলতা গায়ের রং-এর সঙ্গে এই কালারের শালোয়াড়টা বেশ মানিয়েছে। দু-মাস আগের দেখা ঝিমলির সঙ্গে এই মুহূর্তে দেখা ঝিমলির কোনও পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছি না। তবু মনে হচ্ছে ও যেন একটু স্লিম হয়েছে।
দরজা লক করলাম।
ব্যাচেলার্স কোয়ার্টার, অসুবিধে হলে বলবে।
বাবাঃ, এমন ভাবে বলছো যেন অপরিচিত কেউ এসেছে।
এই ফ্ল্যাটে অপরিচিত।
তোমার সঙ্গে পারবো না।
চা না কফি।
কে করবে?
আমি।
তুমি!
বিশ্বাস হচ্ছেনা।
তুমি পারো?
অফকোর্স।
আমরা দুজনে ভেতরের ঘরে এলাম।
ঝিমলি খাটে পা ঝুলিয়ে বসলো।
আমি রান্নাঘরে গিয়ে গ্যাস জালালাম। মিল্কমেডের কৌটটা খুলে আগে শুঁকলাম। ভালো আছে কিনা। শেষবার তনুকে কফি করে খাইয়েছিলাম। তারপর থেকে বেশ কয়েকবার ফ্ল্যাটে এসেছি ঠিক, তবে রান্নাঘরে ঢোকা হয়নি। দেখলাম সব ঠিক ঠাকই আছে।
কফির শিশি দেখলাম। একটু জমে এসেছে। ঠিক আছে গরম দুধে গুললে গলে যাবে।
কপাল ভালো, দেখলাম দুটো চিপসের প্যাকেট একটা কৌটর মধ্যে ইনট্যাক্ট পরে আছে। আমি সব রেডি করতে আরম্ভ করলাম।
ঝিমলি এসে রান্নাঘরের সামনে দাঁড়ালো।
বসো যাচ্ছি।
এখানে দাঁড়ালে অসুবিধে আছে?
একটুও না। ভাইজ্যাক কবে যাচ্ছ?
আগামী সপ্তাহে।
কি নিয়ে স্টাডি করবে চিনতা করেছো?
পেড্রিয়াটিক।
শুনেছি সার্জারির ডাক্তারদের দাম বেশি, পয়সাও প্রচুর।
আমার পয়সার দরকার নেই, শিশুদের মনস্তত্ব ভীষণ জটিল। আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে। এখানে পেয়েগেলাম। তাই অন্যদিকে আর তাকালাম না।
আমি দুধ গুললাম।
তোমার লেখা পড়লাম। চারিদিকে হই হই ফেলে দিয়েছো।
কি রকম?
যেখানেই যাচ্ছি তোমার লেখা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সবাই বলছে অনেকদিন পর একজন সাংবাদিক মার্কেটে এসেছে। ছেলটার দম আছে। বন্ধু-বান্ধবদের তোমার কথা বললেই কেমন বাঁকা চোখে দেখে।
হাসলাম।
সত্যি। সবাই ভাবে আমি গুল মারছি।
কফি রেডি করে ফেললাম। ট্রে-র ওপর রাখা দুটো কাপে কফি ঢাললাম।
দাও আমি নিয়ে যাই।
তুমি চিপসের প্যাকেট দুটো নাও।
ঝিমলি চিপসের প্যাকেট দুটো নিয়ে আমার পেছন পেছন এলো। কফির ট্রে-টা মাঝখানে রেখে দুজনে দুপাশে বসলাম। চিপসের প্যাকেট ছিঁড়ে কফি খেতে শুরু করলাম।
তোমাকে কতোদিন পর দেখলাম। একবার ফোন করতে পারতে। এটলিস্ট একটা ম্যাসেজ।
ভাইজ্যাক থেকে যেদিন ফিরলাম সেই দিন থেকে নিঃশ্বাস নিতে পারিনি। ওখানে থাকার সময়েই অফিসে একটা গন্ডগোল হয়। এই কটা দিন আমার ওপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে চলছে। এখনও সেই ঝড় থামেনি।
তোমার চোখমুখ সেই কথাই বলছে।
হাসলাম।
আমি কিছু কিছু জানি, মায়ের মুখ থেকে শুনেছি।
কি শুনেছো!
তুমি কাগজের মালিক হয়েছো।
ভুল শুনেছো।
আমাকে অন্ততঃ মিথ্যে কথা বোলো না।
হাসলাম।
যা শুনেছি সত্যি?
আমি মাথা নীচু করলাম।
ঝিমলি তড়াক করে লাফিয়ে উঠে এসে আমাকে জাপ্টে ধরলো। বিছানায় শুইয়ে ফেলে আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো।
আরে ছারো ছারো।
কেনো আমাকে মিথ্যে কথা বললে বলো?
এটাকী একটা বলার মতো কথা।
তোমার কাছে কোনটা বলার মতো কথা বলো?
কফির কাপ উল্টে পড়ে যাবে।
যাক। কতদিন তোমার ঠোঁটদুটো চুষিনি। উঁ উঁ উঁ উঁ উঁ উঁ উঁ উঁ উঁ।
আমি কোনো প্রকারে ঠোঁট সরিয়ে বললাম
কফিটা খেয়ে নাও আগে।
পরে খাবো।
তাহলে সরিয়ে রাখো এটলিস্ট।
কাপে আছে নাকি।
যতটুকু আছে।
তুমি একবারে উঠবেনা।
হাসলাম।
ঝিমলি উঠে কফির ট্রে-টা নিচে নামিয়ে রাখলো।
তারপর আমার বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো।
-উরিবাবা আমার বুক ফেটে যাবে।
-ফাটুক। মায়ের মুখ থেকে শোনার পর ভীষণ ভালো লাগছিল। যার সঙ্গে একরাত ট্রেনজার্নি করেছি। তার হোটেলের ঘর দখল করে পরীক্ষা দিয়ে এসেছি। সে কিন্তু আমার কাছে কিছু চায়নি।
আমি ঝিমলির চোখে চোখ রাখলাম। কি বলতে চায় ও। তারপর আস্তে করে বললাম।
চাইবো। সময় হোক।
আমি তোমার সম্বন্ধে মাকে বলেছি।
আমি ঝিমলির চোখ থেকে চোখ সরাই নি। বোঝার চেষ্টা করলাম কাগজের মালিক হওয়ার খবর যদি রাখে, তাহলে নিশ্চই মিত্রার খবর রাখবে। ওর মা তথ্য জনসংযোগ দফতরের অধিকর্তা। এই খবর তাদের কাছে আগাম পৌঁছে যায়।
কি দেখছো?
দু-মাস আগের দেখা ঝিমলির সঙ্গে দু-মাস পরের দেখা ঝিমলির অমিল খোঁজার চেষ্টা করছি।
কি বুঝছো?
দু-মাস আগের দেখা ঝিমলি একটু মুটিয়ে ছিল। এখন একটু স্লিম।
সত্যি তোমার চোখ অনিদা।
কেন!
আমার জিমে যাওয়া সার্থক।
তুমি আজকাল জিমে যাও নাকি?
মাস দেড়েক হলো যাচ্ছি। ওয়েট বেরে গেছিল।
কি হয় ওখানে?
জানো না! পাঞ্জাবীটা খোলো না।
হাসলাম।
-খোলাই তো ভেতরে কিছু পরা নেই।
-না তুমি খোলো।
-আগে তুমি খোলো।
ঝিমলি আমার পেটের ওপর উঠে বসে শালোয়ারটা খুলে খাটের একপাশে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বুকের ওপর আছড়ে পরলো।
আমার গালের দুপাশে হাত রেখে চকাত চকাত করে আমার ঠোঁটটা চুষতে শুরু করলো। ওর তীব্র চোষণে আমার সারাটা শরীর আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠলো। আস্তে আস্তে আমার হাতটা ওর পিঠের ওপর চলে গেলো। প্রথমেই ব্রার ফিতেটা আলগা করে দিলাম।
ঝিমলি আমার ঠোঁট থেকে ঠোঁট তুললো। মুচকি মুচকি হাসলো।
-ঘুম ভাঙলো।
আমি চোখের ইশারায় হুঁ বললাম।
-এবার এটা খোলো। আমার পাঞ্জাবীটা ধরে দেখালো।
আমি একটু উঠে পাঞ্জাবীটা খুলে ফেললাম। ঝিমলির বুক থেকে ব্রা খসে পরলো।
ফিক করে হেসে ফেললো।
ঝিমলির বুকের দিকে তাকালাম। এখনো সেই রকম টাইট। একটুও ঝুলে পরে নি। আপেল বাগান। আমি স্পর্শ করলাম। ঝিমলির চোখের রং বদলে গেলো। নিপিলে জিভ দিলাম। ঝিমলি আমার মাথাটা জাপ্টে ধরে বুকের মধ্যে ঠেসে ধরলো।
-তোমার দুধের ভারে আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে।
-যাক। কতদিন পর করছি জানো।
-কতদিন।
-সেই ভাইজ্যাকে লাস্ট।
-তোমার বয়ফ্রেন্ড।
-সব শালা ধ্বজভঙ্গ।
হেসে ফেললাম।
-তোমার সঙ্গে যারা একবার সেক্স করবে তাদের অন্য পুরুষের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কষ্ট আছে।
-কেনো।
-বলতে পারবো না।
-জামা কাপড় পরেই কি সেক্স হবে।
-দাঁড়াওনা খুলছি।
ঝিমলি আবার আমার ঠোঁট চুষতে শুরু করলো। আমি ওর কামিজের ওপর দিয়েই হাল্কা করে ওর পাছু টিপলাম।
-তর সইছেনা না।
হাসলাম।
-দাঁড়াও খুলছি।
ঝিমলি আমার বুক থেকে উঠে খাটের ওপর দাঁড়িয়ে পরলো। আমি ওর বুকের দিকে তাকিয়ে আছি। বেশ লাগছে।
-তাকাবে না। তোমার চোখটা বড় খারাপ।
ঝিমলি ওর কামিজের ফাঁস খুললো। কোমর থেকে কামিজটা খসে পরলো। বাসন্তী কালারের একটা প্যান্টি পরেছে। শুধু মাত্র ওর পুশিটুকু ঢাকা। আমি তাকিয়ে আছি। ঝিমলি বিছানায় ধপ করে বসে আমার পাজামার ফাঁসটা আলগা করলো। তারপর বুকে চলে এলো।
-আঃ কি শান্তি।
আমি ঝিমলিকে জাপ্টে ধরে আছি। ওর নরম বুক আমার বুকের সঙ্গে লেপ্টে আছে। ঝিমলির গরম নিঃশ্বাস আমার ঘারের কাছে ঘন হয়ে আসছে।
হাসলাম।
ঝিমলি?
উঁ।
মা জানে তুমি আমার কাছে এসেছো?
হ্যাঁ।
তোমার মায়ের সঙ্গে আলাপ করা হয়নি।
কবে যাবে বলো। সবাই খুব আনন্দ পাবে। মা প্রায় তোমার কথা বলে।
কেন!
তোমাকে সবাই মনেমনে খুব ভালোবাসে।
একটা মানুষ আমাকে দেখলোনা, জানলো না, আমাকে ভালোবাসে কি করে?
আমার কাছ থেকে তোমার কথা শুনে।
আমি মানুষটা কিন্তু ভালো নয়।
কে বলেছে?
এই যে তোমার সঙ্গে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছি, সেক্স করছি। জানতে পারলে কি ভাববে।
তুমিতো রেইপ করছোনা। সেক্স করছো। সেক্স করতে গেলে দুজনের সম্মতি থাকা দরকার। কারুর ভাবনায় কি এসে যায় বলো। তাছাড়া তোমার মতো ছেলর সঙ্গে প্রেম করা সৌভাগ্যের ব্যাপার ক-জনের ভাগ্যে জোটে বলো।
আমি ঝিমলির দিকে তাকালাম।
মেয়েটা কি আমাকে সত্যি সত্যে ভালোবেসে ফেলছে? বড়ো বিপদ।
তুমি মাঝে মাঝেই অফমুড হয়ে যাচ্ছ। কি ভাবছো বলো তো?
কিছুনা।
আমি ঝিমলির গালের দুইপাশে হাত দিয়ে ওর তুলতুলে নরম ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। ঝিমলি আবেশে চোখ বন্ধ করলো। ওর সুডৌল পাছা আমার খোকার ওপর চাপ দিচ্ছে। তারও ঘুম ভাঙছে। আমি ঝিমলির বুকে হাত দিলাম। নিপিলটা সামান্য শক্ত হয়েছে। ঝিমলি কিছুতেই আমার ঠোঁট ছাড়তে চাইছে না। বেশিক্ষণ সময় দাওয়া যাবেনা। ছ’টার মধ্যে আমাকে বাড়িতে পৌঁছতে হবেই। আমি ঝিমলিকে জাপ্টে ধরে ঘুরে শুলাম। ঝিমলি এখন আমার বুকের তলায়। চোখ বন্ধ।
আমি ঝিমলির ফুলবাগানে হানা দিলাম। ফুলের মধু খাওয়ার জন্য। নিপিলদুটো বেশ ফুলে ফুলে উঠেছে। আমি মন দিয়ে চুষতে শুরু করলাম। একটা হাত ওর প্যান্টির ভেতর দিয়ে পুশিতে রাখলাম। বুঝতে পারলাম একবারে পরিষ্কার। সামান্য ভিঁজে ভিঁজে। আমি ওর পুশির মটরদানায় আঙুল ছোঁয়ালাম। ঝিমলির মুখ থেকে আঃ শব্দ বেরিয়ে এলো। আমি ওর বুক থেকে মুখ না তুলেই আর একটা ফুলে মধু খাওয়া শুরু করলাম। আজ ঝিমলি মজা নিয়ে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ। গাল দুটো আপেলের মতো লাল হয়েছে। ওর গমের মতো গায়ের রংয়ে টোল পরেছে।
-অনিদা আমি একটু মুখ দিই।
ঝিমলি চোখ খুললো।
আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম। সামান্য ঘোলাটে। আবেশে ঢুলু ঢুলু। ওকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরে উঠে বসালাম। আমার পাজামাটা কোমর থেকে খসে পরেছে। আমি ঝিমলির প্যান্টিটা কোমর থেকে টেনে নামালাম। ঝিমলি আমার পাজামা খুললো। আমার সোনায় হাত দিয়েই ঝিমলি ফিক করে হেসে ফেললো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কার্ল করা চুলের দু একটা কপালের সঙ্গে লেপ্টে রয়েছে। আমি ওর মুখটা চেপে ধরে ঠোঁটে চুমু খেলাম। ঝিমলি আমার সোনামনির সঙ্গে খেলা করছে। জামাটা টেনে খোলার চেষ্টা করছে। আমি হাঁটু মুড়ে বসে ঝিমলির ঠোঁট চুষছি। ঝিমলি দুপা আমার দুপাশে ছড়িয়ে দিয়েছে। ওর পুশিটা কেমন হা করে আছে।
আমার ঠোঁট থেকে ঠোঁট সরিয়ে নীচু হয়ে আমার সোনামনিকে চুমু খেলো। জিভটা বার করে সোনামনির জামার বোতাম খুলে ঠোঁটে চুমু দিলো। শরাটা শরীর সিরসির করে উঠলো। ঝিমলি আস্তে আস্তে ঠোঁট দিয়ে সোনামনিকে চাপ দিচ্ছে আর জিভ দিয়ে সোনামনির ঠোঁট চাটছে।
আমি ঝিমলির ছড়ানো পিঠে হাত রাখলাম। কোমরের শেষ প্রান্তে ওর পাছুটা তানপুরার মতো। আমি ওর মুখ থেকে সোনামনিকে মুক্ত করলাম। ওর মুখ তুলে ধরলাম। ঝিমলি হাসছে।
-তোমরটায় একটু মুখ দিই।
ঝিমলি চোখের ইশারায় সম্মতি দিলো।
আমি ঝিমলিকে চিত করে শুইয়ে ওর পুশির কাছে মুখ নিয়ে এলাম। ঝিমলি পাদুটো দুপাশে ছড়িয়ে দিলো। আমি জিভ দিলাম। ওর পুশির নরম তুলতুলে ঠোঁটদুটো কেঁপে কেঁপে উঠলো। আমি বেশ কিছুক্ষণ জিভ দেওয়ার পর ঝিমলি বললো
-তোমরাটা একটু আমার দিকে দাও।
আমি ঝিমলির পুশি থেক মুখ তুলে হাসলাম। আমার সোনামনিকে ওর মুখের কাছে পৌঁছে দিয়ে আবার ঝিমলির পুশিতে জিভ দিলাম।
বেশ কিছুক্ষণ এই খেলায় আমরা মনোনিবেশ করলাম। ঝিমলি আমার সোনামনিকে তীব্র ভাবে চুষে চলেছে। বুঝতে পারছি আমার যাদু দন্ড এখন তার জায়গা খুঁজে নেওয়ার জন্য রাগে গড় গড় করছে।
আমি ঝিমলির মুখ থেকে সোনামনিকে মুক্ত করেই ঝিমলির মুখের দিকে তাকালাম। ঝিমলি মুচক মুচকি হাসছে।
পাদুটো দুপাশে ছড়িয়ে আমাকে আহ্বান করলো ওর পুশিকে স্পর্শ করার জন্য।
আমি হাঁটু মুড়ে বসলাম। ওর পুশি হাঁকরে আমার সোনামনিকে ডাকছে। আমি আস্তে আস্তে ওর পুশির মুখে আমার সোনামনিকে রাখলাম। ঝিমলির দিকে তাকালাম। ঝিমলি ভ্রু কুঁচকে ইশারা করলো, দাও। আমি একটু চাপ দিলাম। ঝিমলি মুখ থেকে কোনো শব্দ করলো না। কিন্তু ওর মুখের রং বদলে গেলো। সামান্য লেগেছে বুঝতে পারলাম।
আবার চাপ দিলাম।
ঝিমলির বুক কেঁপে কেঁপে উঠলো। বুকের নিপিল দুটো ফুলে শক্ত হয়ে গেছে। আমি শেষ চাপটা দিয়ে ওর বুকে ঢলে পরলাম। ঝিমলি আমার পিঠে ওর নরম হাত রাখলো। ওর পুশির ভেতরটা ভীষণ গরম আগেও ঝিমলির সঙ্গে সেক্স করেছি। কিন্তু আজকে কেন জানিনা মনে হচ্ছে ওর পুশির ভেতরটা ফার্নেসের মতো গরম। বেশ ভালো লাগছে। ঝিমলির মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। ঝিমলির আধ খোলা চোখের মনিদুটো থিরথির করে কাঁপছে।
-ঝিমলি কষ্ট হচ্ছে।
-না।
-তাহলে চুপচাপ।
-তোমার উষ্ণ স্পর্শের অনুভূতি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছি।
কিছুক্ষণ চুপচাপ। ঝিমলি কোমর নাড়াচ্ছে। আমি দুলছি।
-আঃ।
-কি হলো।
-করো।
-করছিতো।
-কই করছো।
-তাহলে কি ভাবে করবো।
-দুষ্টু।
আমি ঝিমলির ঠোঁটে ঠোঁট রেখে কোমর দোলালাম। ঝিমলি আমার জিভটা চুষতে শুরু করলো। বুঝতে পারছি ঝিমলির নখের স্পর্শ আমার পিঠে ছবি আঁকছে।
আমি আস্তে আস্তে গতি বারালাম। ঝিমলি পাদুটো সামান্য উঁচু করলো। যেন সম্পূর্ণ হচ্ছে না। আরো বেশি করে ভেতরে ঢোকাও। আমি ঝিমলির বাঁদিকের ফুলে মধু খেতে শুরু করলাম। ঝিমলির মাথাটা পেছন দিকে হেলে পরলো।
-ঝিমলি ভেতরে না বাইরে?
-তোমার এরই মধ্যে হয়ে যাবে।
-তুমি বললে।
-তাহলে আর একটু করো। ভালো লাগছে।
আমি এবার আর একটু জোরে করতে শুরু করলাম। ঝিমলির শরীরটা দুমঢ়ে মুচড়ে কেঁপে কেঁপে উঠলো।
-কি হলো।
-রাখতে পারছিনা। তুমি বার করো।
-ভেতরে?
-না বাইরে করো। মাসের মাঝখান।
-ঠিক আছে।
আমি ঝিমলির বুক থেকে উঠে দুহাতের ওপর ভর দিয়ে শেষ বারের মতো করতে শুরু করলাম। ঝিমলির সারা শরীর কাঁপছে। ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরেছে। চোখ বন্ধ। আমার দুটো হাত শক্ত করে ধরেছে। পা দুটো যতটা সম্ভব উঁচু করে দুপাশে ছড়িয়ে দিয়েছে। আমি আমার সোনামনিকে ঝিমলির পুশি থেকে টেনে বার করলাম। ঝিমলি ঝটতি উঠে বসে আমার সোনামনিকে দু’হাতে জাপ্টে ধরলো। আমার সোনামনি ওর হাতের মধ্যে কেঁপে কেঁপে উঠলো। আমি ঝিমলিকে জাপ্টে ধরে আছি। ঝিমলি আমার সোনমনিকে আদর করছে। বুঝতে পারছি। ওর হাতের ফাঁক দিয়ে আমার সোনামনির অশ্রু ওর পুশিতে গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে।
চারিদিক নিস্তব্ধ। সামান্য বিন্দু বিন্দু ঘাম আমার কপালে। ঝিমলি আমার বুকে মুখ ঘষছে। আমি বুক থেকে ওর মুখ তুলে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। ঝিমলির মুখে পরিতৃপ্তির হাসি।
আমি হাসলাম।
-সত্যি তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছে করেনা।
-সব সময় এসব করা ভালো নয়।
-রাখোতো তোমার ধর্মের কথা।
হাসলাম।
-হাসছো কেনো।
-খারাপ অভ্যাস।
-আর কোনোদিন আসবোনা!
-এটা তোমার রাগের কথা।
আমি ঝিমলির দিকে তাকিয়ে আছি। ঝিমলির ঠোঁট থিরি থিরি কাঁপছে। ওর গায়ের উষ্ণতা সামান্য কমে এসেছে। ঝিমলি আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
অনেকক্ষণ ঝিমলির সঙ্গে কথা বললাম। নানা বিষয় নিয়ে। ঝিমলি খুব ইমপ্রেসিভ।
আর একটু কফি খাবে?
ও চোখের পাতা কাঁপিয়ে বুঝিয়ে দিলো খাবো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। বাথরুমে গেলাম। ঝিমলি আমার পেছন পেছন এলো। আমি ভালো করে পরিষ্কার হয়ে বের হতে গিয়ে দেখলাম ঝিমলি আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
-কি হলো।
আমার সৌভাগ্য তোমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পেরেছি।
-এটা বাড়িয়ে বললে।
-ঠিক আছে তোমায় একদিন নিয়ে যাবো।
-আগের থেকে বলো।
-আচ্ছা।
বাথরুম থেকে বেরোবার মুখে ঝিমলি আমাকে জাপ্টে ধরলো।
-আবার কি হলো?
-তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছেনা।
আমি ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। ঝিমলি কলকলিয়ে উঠলো। তোমার টয়লেটটা একটু ইউজ করতে চাই।
হাসলাম। যাও। এটা আবার জিজ্ঞাসা করতে হয় নাকি?
ব্যাচেলার্স কোয়ার্টার বলে কথা।
আমি হাসছি।
ঝিমলি উঠে গেল।
ঘরে এসে প্যান্ট গেঞ্জি চাপালাম। বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছে। জিনসের জ্যাকেটটা আলমাড়ি থেকে বার করলাম। ট্রে-টা নিয়ে রান্নাঘরে গেলাম। ঝিমলি এখনও বাথরুম থেকে বেরোয়নি। আমি কাপ-ডিস ধুয়ে কফি বানালাম। খাটের ওপর ট্রে-টা রেখে রান্নাঘরে এলাম।
ঝিমলি এখনো বাথরুম থেকে বেরোয়নি। আমি কাপ-ডিস ধুয়ে কফি বানালাম। এসে দেখলাম ঝিমলি ব্রেসিয়ারের ফিতে লাগাচ্ছে। আমাকে দেখে ফিক করে হেসে ফেললো।
আমি খাটের ওপর ট্রেটা রেখে রান্না ঘরে গেলাম
ওর ব্যাগ থেকে চিরুনিটা বার করে আমার আলমাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে।
কোথায় গেছিলে?
বিস্কুটের কৌটটা নিয়ে এলাম।
তুমি সত্যি এক্সপার্ট।
তুমি।
আমার কথা ছাড়। তোমার কাছে আমি ফাউ।
চলে এসো।
অনিদা তুমি কি তন্ত্র-টন্ত্র পড়ো নাকি।
কে বললো?
বইটা দেখলাম।
ওই একটু আধটু পড়ি। জ্ঞান আহরণের চেষ্টা করি।
ঝিমলি একটা বিস্কুট তুলে দুই ঠোঁটের মাঝখানে রেখে মিষ্টি করে ভাঙলো। আমি কফির কাপে চুমুক দিলাম।
তোমার মা আমাদের সঙ্গে ভালোব্যবহার করছে না।
আমার মা!
হ্যাঁ।
কি রকম?
আমাদের কাগজে এ্যাড না দিয়ে অন্য কাগজে বেশি করে দিচ্ছে।
ঝিমলি শব্দ করে হেসে ফেললো।
হাসছো যে?
আজই মাকে গিয়ে বলছি। অনিদা তোমার নামে এই অপবাদটা দিল।
আমি সত্যি বলছি। গত তিনমাসে তোমার মার দফতর মাত্র দুটো এ্যাড দিয়েছে। কিন্তু আমি জানি অন্যান্য কাগজ অনেক বেশি টাকার এ্যাড পেয়েছে।
ঠিক আছে বাবা ঠিক আছে তোমাকে দুঃখ করতে হবে না। এমাস থেকে তোমার কাগজে বেশি করে এ্যাড পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
তুমি তাড়াতাড়ি ডাক্তারিটা পাশ করেনাও, তোমাকে আমার দরকার আছে।
সত্যি!
সত্যি।
আমাকে তোমার কিসের দরকার, রিপোর্টারি করাবে।
না তোমাকে তোমার ফিল্ডেই রাখবো।
বাঃ পড়ার আগেই চাকরি পাকা হয়ে গেল।
তোমার পড়া শেষ হোক, দেখতে পাবে।
আমাদের বাড়িতে কবে যাবে।
দিন পাঁচেক ভীষণ ব্যস্ত থাকব। তুমি একটা ফোন কোরো। বলে দেব।
তোমাকে ফোন করলে পাওয়া যায়?
তোমার সঙ্গে কথা বলছি, আমার মোবাইল সুইচ অফ। গত দেড়ঘণ্টা সুইচ অফ হয়ে পরে আছে।
তারমানে!
সত্যি তুমি দেখো।
তুমি যার সঙ্গেই কথা বলবে, ফোনটা সুইচ অফ থাকবে।
প্রায়শই এটা করে থাকি। নাহলে কথা বলে মজা পাই না।
তুমি তো ট্রিমেন্ডাস!
নাহলে যার সঙ্গে কথা বলছি সেও বিরক্ত হয়, আমিও কথা বলার রিদিমটা হারিয়ে ফেলি। এই জন্য আগে মোবাইল ব্যবহার করতাম না। ইদানীং করছি।
ঝিমলি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে।
চলবে —————————
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/EOV8gmK
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment