কাজলদিঘী (সপ্তদশ কিস্তি)

কাজলদিঘী

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

সপ্তদশ কিস্তি
—————————

দুজনে ওপরে চলে এলাম, আসার সময় নিচে আওয়াজ দিয়ে এলাম, ওপরে যাচ্ছি। ছোটমা বড়মা দুজনে বসে গল্প করছিলেন, ঘোরা হলো। মিত্রা মুখটা দেখিয়ে একগাল হাসলো। আয়। মিত্রা ভেতরে গেলো। আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি, কোঁচর থেকে পেয়ারা বার করে একটা ছোটমার হাতে দিলো, একটা বড়মার হাতে দিলো, আর দুটো বড়মাকে দিয়ে বললো, একটা দাদার জন্য একটা মল্লিকদার জন্য।
-ওই পাগলটা গাছে উঠেছিলো। ছোটমা বললেন।
-আমি উঠি নি, উঠতে বাধ্য হয়েছি।
-গাল ভরা কথা বলিস না। বড়মা বললেন। এখনো হনুমান হওয়ার শখ জাগে।
মিত্রা হাসলো, আমি আর দাঁড়ালাম না, এরপর আরো চোখা চোখা ডায়লগ বেরোতে পারে। আমি ওপরে চলে গেলাম, সারাদিন শুই নি, ঘুমও পায় নি। কিন্তু এখন কেমন কেমন যেন লাগছে। শরীরটা ঠিক বইছে না, ইজি চেয়ারে বসে শরীরটা ছেড়ে দিলাম, একথা ওকথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম, জানি না।
হঠাত হৈ হৈ শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। কইরে মর্কটটা। বললো তোকে পাহারা দিচ্ছে। ঘরের মধ্যে হুড়মুড় করে ওরা ঢুকে পরলো। দেবাশিষ, টিনা, অদিতি, মিলি, নির্মাল্য।
-শালা বসে বসে ঘুমোচ্ছে বলে কিনা পাহারা দিচ্ছে।
আমি আড়মোড়া ভাঙলাম, ওরা কেউ খাটে কেউ চেয়ার দখল করে বসলো।
-জানিস অনি আমার একটাই দুঃখ মিত্রা আমাকে চিন্তে পারলো না।
-শুধু তোকে না ওদের সবাইকে?
-সবাইকে, তবে যাই বল মিত্রাকে আগের থেকে অনেক সেক্সি লাগছে।
-কামড়ে খেয়ে নে।
-শালা।
মিত্রা মুখ টিপে হাসলো। দেখলাম ওরা ফুলের বুকে নিয়ে এসেছে, সঙ্গে ফল, মিষ্টি।
-এ গুলো কিরে।
-কিছুনা। টিনা বললো।
-এগুলো এঘরে ঢোকালে কেনো।
-কেনো।
-এ ঘরটা নোংরা।
-বেশতো পরিষ্কার দেখছি। দেবাশিষ বললো। দেবাশিষ চেয়ারটা এগিয়ে নিয়ে এলো। আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম
– তুই এদের চিন্তে পারিস নি।
-তুই বলনা সম্ভব, সেই দশ বছর আগে দেখেছি। তোর সঙ্গে এদের যোগাযোগ ছিলো তাই……
-দাঁড়া চিনিয়ে দিচ্ছি।
-অনিদা খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি। অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো। মিত্রার চোখে বিস্ময়।
-কেনো।
-এমনিতেই দেবাশিষ তোমার গল্প বলে আমাদের ওয়ার্ল্ডে পপুলার হয়ে গেছে, সবাই তোমাকে দেখতে চাইছে।
-সে তো ভালো কথা। একদিন কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া যাবে। পার্টি দাও। কিন্তু মিত্রাকে মনে করাতে গেলে ওই ব্যাপারগুলো এসেন্সিয়াল।
-তুমি অদিতিরটা বলতে পারো আমারটা বলতে পারবে না। মিলি বললো।
-তোমরা এরকম করলে, মিত্রাকে চেনাব কি করে।
-তুই বলনা শুনি। মিত্রা বললো।
-এই দেখো মালকিন তার কর্মচারীকে হুকুম করছেন শোনাবার জন্য, আমি না বলে পারি কি করে।
-খুব খারাপ হয়ে যাবে বলছি। মিত্রা বললো।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, মনে পরে সেই সিঁড়ি দিয়ে একটা সুন্দরী মেয়ে উঠছে, পায়ে হিল তলা জুতো, ঠক ঠক আওয়াজ, একটা জিনসের প্যান্ট পরা, টাইট গেঞ্জি, আমি তোকে বললাম…..
-সেই পাছুতে হাত। মিত্রা খিল খিল করে উঠে বিছানায় গড়াগড়ি খায়।
-অনিদা প্লিজ, আর না, তুমি সব কেলো করে দেবে।
-তারপর সেই প্রেমপত্র, হেঁদুয়াতে….দেবাশিষের দিকে তাকিয়ে বললাম, তোকে তো দেখিয়েছিলাম, দেবাশিষ হ্যাঁ বললো।
এই সেই অদিতি, দেবাশিষের সহধর্মিনী।
-বাবা এত হাসা হাসি, নিচ থেকে শোনা যাচ্ছে।    ট্রেতে সাজিয়ে ছোটমা সবার জন্য লাইম জুসের গ্লাস নিয়ে ঢুকলেন।
মিত্রা হাসতে হাসতে বললো তুমি বসো গল্পগুলো শুনে যাও একবার। ও অদিতির ব্যাপারটা রিপিট করলো। ছোটমা হেসে খান খান।
-কি দুর্বুদ্ধি রে বাবা।
-নেক্সট বল। মিত্রা বললো।
দেখলাম বড়মা এসে হাজির হয়েছে, বাবা তোদের হাসির চোটে তো নিচে টেকা দায়।
ছোটমা গিয়ে বড়মাকে হির হির করে টেনে আনলো, শোনো তোমার ছেলের কলেজ লাইফের কীর্তি।
আমি বড়মাকে ইজি চেয়ার ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। বড়মা ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো।
এবার আমি দেবাশিষকে কি ভাবে মাথায় বুদ্ধি নেই পাছায় আছে তার গল্প বললাম।
বড়মা বললেন, তোর পেটে পেটে এত বুদ্ধি।
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম পেটে নয়……..
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
এবার মিলির দিকে তাকালাম।
-প্লীজ অনিদা, বড়মা, ছোটমার সামনে আমার প্রেসটিজটা ডাউন করে দিও না।
-এই দেখ মিত্রাকে চেনাতে হবে তো। তবে কি জানো মিলি, সেদিন যদি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দৌড়বিদ আমার সঙ্গে দৌড়তো আমি তাকে হারিয়ে দিয়ে সোনার মেডেল পেতাম। শ্রেফ পেঁদানি খাওয়ার ভয়ে।
তারপর মিলিকে চুমু খাওয়ার ব্যাপারটা ডিটেলসে বললাম, এও বললাম, সেজন্য পারিশ্রমিক হিসাবে পেয়েছি একটা মোগলাই পরাটা, সাক্ষী, মিত্রা। কেনোনা ওর ওপরেই আমার মোগলাই পরাটা নির্ভর করছিলো। আবার সারা ঘরে হাসির রোল। বড়মার হাসতে হাসতে চোখে জল এনে ফেললো, বললো তুই থাম। আমার পেট ব্যাথা করছে।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, নে জল খা অনেক হেসেছিস।
অদিতি বললো, বাঃ এরকম সর্টিয়ালি করলে চলবে না, তুমি নির্মাল্যেরটা বলো।
-এটারও স্বাক্ষী মিত্রাদি। মিলি বললো।
-হ্যাঁ। তুমি যা বললে ঠিক বলেছো। নির্মাল্যের দিকে তাকালাম, কি রে।
নির্মাল্য মাথা নীচু করে ফিক ফিক করে হাসছে।
-ওরও কি সেম ব্যাপার। ছোটমা বললো।
-না ওরটা একটু অন্যরকম, দেবাশিষকে যেমন মাথা আর পাছু বুঝিয়েছিলাম, ওকে মুতে নাম লিখতে বলেছিলাম।
আবার হাসি, আমি ক্যারিকেচার করে দেখাচ্ছি আর ওরা হাসছে।
বড়মা হাসতে হাসতে বললেন, ও ছোটো, আমাকে ধরে তোল, হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যাথা হয়ে গেলো।
-কি মালকিন এবার চিনতে পারলেন সবাইকে।
-তুই আবার মালকিন মালকিন করছিস। মিত্রা খেঁকিয়ে উঠলো।
-যা বাবা।
ছোটমার দিকে তাকিয়ে বললাম, খিদে পেয়ে গেছে।
-সে কি রে এই তো খেলি দুঘন্টা হয় নি।
এতোটা হাসালাম যে, বড়মা তুমি বলো তোমার খিদে পেয়ে গেছে না।
-খিদে পায় নি, তবে অবেলায় খেয়ে উঠলাম, বদহজম হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেলো।
সবাই হাসলো।
-টিনারটা বললি না। মিত্রা বললো।
-ওরটা তোকে পার্সোনালি বলবো।
হাসির হাট ভাঙলো। বড়মা ছোটমা বেরিয়ে গেলেন।
দেবাশিষ বললো, কি হয়েছে মিত্রার।

আমি এডিট করে সংক্ষেপে সমস্ত ব্যাপারটা বললাম।

দেবাশিষ বললো কি বলছিস তুই। ওদের চোখ কপালে উঠেছে। মিত্রা মাথা নীচু করে বসে আছে।

-আর বলিস না। এবার সাতদিন গ্যারেজ। এই ডাক্তারবাবু এলেন বলে।

-নাম কি।

-পাশেই থাকেন দাদার বন্ধু ডাক্তার সামন্ত।

-ডাক্তার সামন্ত! তুই চিনিস না।

-চিনব কি করে, পেসেন্ট হয়ে কখনো যাই নি তো।

-নিওরোর টপ। এশিয়ায় দশজনের মধ্যে একজন।

-বলিস কিরে, ভদ্রলোককে দেখে একেবারে বোঝা যায় না।

বলতে বলতেই ডাক্তারবাবুর গলা পেলাম। কই আমার পেসেন্ট কোথায়।

আমি দরজার সামনে এগিয়ে গেলাম।

-বাবা এতো বেশ বড় গল্পের আসর দেখছি। কই মা কেমন আছো।
ডাক্তারবাবু মিত্রার মুখের দিকে তাকাল।
-ভালো।

-তোমার চোখমুখতো ভালো বলছে না।

বড়মা ঘরে এসেছেন সামন্ত ডাক্তারের পেছন পেছন।

ডাক্তারবাবু দেখলেন। ওর পায়ে কিসব ঠোকাঠুকি করলেন।

-অনি বাবা একটা কাগজ কলম দেতো।

আমি টেবিলের ওপর থেকে কাগজ পেন এনে দিলাম। উনি ওষুধের নাম লিখলেন। নিচে নিজের ফোন নম্বরটা দিলেন।

-শোন এই ওষুধটা তোকে হয়তো দেবে না, তবে তুই ফোন করতে বলবি আমায়, কোথা থেকে নিবি।

-সকালে যে দোকান থেকে ইঞ্জেকশন নিয়ে এলাম সেই দোকান থেকে।

-কোথায় বলতো দোকান টা।

-ট্রাংগুলার পার্কের কাছে। এখুনি নিয়ে আসি।

-যা। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললেন, মা তোমার সাতদিন রেস্ট, এবাড়ি থেকে একেবারে বেরোনো যাবে না। খালি খাওয়া দাওয়া আর ঘুম।

মিত্রা মাথা নীচু করে বসে আছে।
আমি দেবাশিষকে বললাম চলতো দেবা।

দেবাশিষ উঠে এলো। ওর গাড়ি নিয়ে ওষুধটা নিয়ে এলাম। ডাক্তারবাবু ওদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। আমায় দেখে বললেন,
-তোকে দিয়েছে।
-হ্যাঁ। আপনার সইটা চিন্তে পেরেছে।
-দেখি।
আমি ওঁর হাতে ওষুধটা দিলাম। ঠিক ওষুধ দিয়েছে। উনি কি ভাবে খেতে হবে বলেদিলেন। সাতদিন পর বাড়ির বাইরে বেরোবার পারমিশন দেবেন।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, শুনে নে, ঘ্যানর ঘ্যানর করবি না।
-অনি ঠিক বলেছে মা। তুমি এই বাড়ির মধ্যে থাকবে, খুব বেশি হলে নিচের বাগানে ঘুরতে যাবে। আজ রাত থেকে ওষুধ চালু করে দাও।
সামন্ত ডাক্তার উঠে দাঁড়ালেন।
আমি যাই নিচে গিয়ে বান্ধবীদের সঙ্গে একটু আড্ডা মারি।
আমরা সবাই হেসে ফেললাম।
তোমরা হাসছো কেন?

আপনি বললেন বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা মারি। মিলি বললো।

হুঁ ঠিক কথা। সামন্ত ডাক্তার নিজেও হাসছেন।

ডাক্তারবাবুকে নিচে পৌঁছে দিলাম, ছোটমা বললেন অনি দাঁড়া এগুলো একটু ধর।
আমি একবুক নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম, কি দারুণ গন্ধ।
-দেবো কান মূলে।
ছোটমার সঙ্গে ট্রে ভাগাভাগি করে ওপরে নিয়ে এলাম, আমায় দেখে মিত্রা নামতে চাইছিলো, টিনা বললো তোমায় যেতে হবে না মিত্রাদি, আমি যাচ্ছি। টিনা আমার হাত থেকে একটা ট্রে নিয়ে বিছানার ওপর রাখলো। আমি ছোটমার হাত থেকে ট্রে নামিয়ে রাখলাম।
-এবার একরাউন্ড চা। আমি বললাম।
-ওটা গেল আগে, তারপর দিচ্ছি। ছোটোমা বললেন।
-তথাস্তু।
টিনা, মিলি, অদিতি হেসে ফেললো।
ছোটমা চলে গেলেন। আমরা খেতে খেতে কথা বললাম, কলেজ লাইফের কথা কর্মজগতের কথা।
দেবাশিষ বলে উঠলো। কালকের ঘটনাটা তুই দারুণ দিয়েছিস।
-তুই কার কাছ থেকে শুনলি।
-আবার কে চম্পক।
-তোকে ফোন করে বললো!
-হ্যাঁ। আক্ষেপ করছিলো, আমাকে দিলে না। দিয়েছি কাঁচা কাঁচা খিস্তি। তারপর বললো সব ঘটনা। আমিও বললাম, অনি বলে আপনার চাকরিটা গেলো না, না হলে কি হতো বুঝতে পারছেন, ওই হাউস থেকে কেউ বেরোয় না তাড়ানো হয়, আপনি আর কোথাও চাকরি পেতেন। চুপ করে গেলো। তারপরের ব্যাপারগুলো বল।
-সে অনেক কথা, তোকে একদিন গিয়ে বলবো।
-আমি কিছু কিছু জানি। তবে মালটাকে তুই দারুণ টাইট দিয়েছিস। তোকে আমার প্রয়োজন হবে।
-যখন প্রয়োজন হবে বলিস, অবশ্যই সাহায্য করবো।
-আমিতো টিনার মুখ থেকে শুনলাম, খবরটা। মিত্রার শরীর খারাপ, সঙ্গে সঙ্গে ডিসিশন।
-আমারই জানানো উচিত ছিলো।
-তোর সকালের ম্যাসেজটা পড়লাম, ১১টার পর। ওই কানা রাতে কি করছিলি।
-ফিরছিলাম।
-কোথা থেকে।
-বিশ্বযুদ্ধ করে।
মিত্রা মাথা নীচু করে মুচকি মুচকি হাসছে।
দেবাশিষ ইশারায় একটা ইঙ্গিত করছিলো, আমি ইশারাতেই ওকে বললাম না।
-ও হাসছে কেনো রে।
-তুই জিজ্ঞাসা কর।
-আমি তো ভাবলাম, কাল রাতেই কিছু একটা হয়েছে।
-ঠিকই ধরেছিস, কাল থেকেই চলছিলো। আজ বার্স্ট আউট হলো। সকালের সেই দৃশ্য দেখলে তুই ঘাবড়ে যেতিস।
-মিত্রা তোর ফোন নম্বরটা দে।
মিত্রা ওদের ফোন নম্বর দিলো। প্রত্যেকে মোবাইলে ফোন নম্বরটা সেভ করে নিলো। দেখতে দেখতে নটা বেজে গেলো। ওরা উঠলো। আমি মিত্রা নিচ পযর্ন্ত ওদের এগিয়ে দিলাম। গুডনাইট বলে সবাই চলে গেলো।

আমরা দুজনে নীচে এসে বসলাম, বড়মা রান্নাঘরে, ছোটমা টিভি দেখছে, সিরিয়াল। কিছুক্ষণ বসে দেখলাম, ছোটমা কথার ফাঁকে ফাঁকে বললেন
-হ্যাঁরে অনি, তুই যে কলেজ লাইফে এই তেঁদড়ামো করতিস, কে শেখাতো তোকে, মিত্রা।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে
-না মিথ্যে বলবো না, আমার মাথায় তখন নিত্য নতুন বুদ্ধি আসতো, ইনস্ট্যান্ট, একচুয়েলি গ্রামের ছেলে তো শহরে এসে দাদা হতে হবে, তাই এসব আর কি।
-তোর কি ছোট থেকেই দাদা হবার শখ।
-কেনো।
-মিত্রার মুখ থেকে ওখানকার গল্প শুনছিলাম, ওখানে তোকে সবাই দেবতা হিসাবে মানে।
-ঠিক তা নয়। একটা সময় ছিল, যখন যে কেউ দায়ে অদায়ে ডাকলেই আমাকে পেতো। তাছাড়া আমার একটা প্লাস পয়েন্ট ছিলো আমি মা-বাপ হারা ছেলে। যেখানে খুশি চলে যেতাম বাধা দেবার কেউ নেই।
-বাজে বকিস না।
-এই দেখ সত্যি কথা বললেই বাজে বকা হয়ে গেলো।
-ছোটো, কি বক বক করছেরে অনি।
-দেখনা যা জিজ্ঞাসা করছি তার উত্তর না দিয়ে উল্টো গল্প ফাঁদছে।
-ওটা ওর দাদার থেকে পেয়েছে। কিছুতো পেতে হবে, সোজা কথা কোনোদিন সোজা করে বলে না।
আমি উঠে রান্না ঘরে চলে গেলাম। ছোটমা মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো
-চললেন তেল মারতে।
আমি হাসলাম। রান্নাঘরে গিয়ে বড়মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।
-ওরে ছার ছার পুরে মরবো।
-কি ভাজছো।
-মাছের ডিমের বড়া, খাবি। দেখলাম, মিত্রাও আমার পেছন পেছন উঠে এসেছে।
-ওকে একা নয়, আমিও পেছনে আছি।
-ছোটোরে, ওদের একটা প্লেটে দেতো। ছোটোমা উঠে এলেন।
-দূর তোমার প্লেট, আমি থালা থেকে দুটো বড়া তুলে নিয়ে চলে এলাম।
-আমাকে দে।
-তোর জন্য প্লেট। বড়মা ফিরে তাকালেন
-তোকে দেয় নি।
-না।
-কি বদমাশ ছেলেরে বাবা। স্বার্থপর এক নম্বরের।

ছোটোমা দাঁত কিড়মিড় করছে।

আমি বড়া খাচ্ছিলাম। মিত্রা আমার পাশে এসে বসলো। দেখলাম ওর প্লেটে চারটে। দিলাম একটা খাবলা। মিত্রা না না করে উঠলো। বড়মা চেঁচিয়ে উঠলেন
-কি হলো রে আবার।
-দেখনা, আমার প্লেট থেকে দুটো তুলে নিল।
-অনি।
-না গো বড়মা মিথ্যে কথা বলছে।
-মিত্রা, তুই আয় আমি দিচ্ছি। মিত্রা রান্নাঘরে গেলো।
বাইরে হর্ন বেজে উঠলো, বুঝলাম সাহেবরা ঢুকলেন।
আমি হাত মুখ মুছে, সোফার এক কোনে বসলাম। মিত্রা বড়মার সঙ্গে রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ফুসুর ফুসুর গুজুর গুজুর করছে। মল্লিকদা ঘরে ঢুকলেন
-কি অনিবাবু স্যার আজ সারাদিন গ্যারেজ।
কোনো কথা বললাম না। ছোটমা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।
-জীবনে প্রথম, বুঝলে ছোটো।
-সারাদিন ওর কীর্তিকলাপ শুনলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে।
-তাই। রাতে দুঘন্টা সময় দিও।
-ছোটমা ব্যাপারটা কিন্তু ঠিক দাঁড়াচ্ছে না।
-বাবা, অনিবাবুর দেখি রাগও আছে। মল্লিকদা বললেন।
-থাকবে না, যতই হোক রক্তমাংসের শরীর বলে কথা। ছোটমা বললেন।
-কইগো শুনছো। অমিতাভদা চেঁচিয়ে উঠলেন।
-দেখছিস মিত্রা দেখছিস, কেমন ষাড়ের মতো চেঁচাচ্ছে, যেন বিশ্বজয় করে এলো।
-আরে এদিকে এসো আগে।
আমি অমিতাভদার দিকে তাকালাম, মল্লিকদা সোফায় হেলান দিয়েছেন, ছোটমা, ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জলের বোতল বার করে গ্লাসে ঢালছেন। বড়মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন, পেছন পেছন মিত্রা। বড়মার দিকে তাকিয়ে বললেন
-আজ অনি ফাটা ফাটি করে দিয়েছে। আমার দিকে ঘুরে, তুই কাল সারারাত অফিসে ছিলি বলিসনি তো কই।
-আরো অনেক জায়গায় ছিলেন। ছোটমা বললেন, জুরি বেঞ্চে গোপন জবানবন্দী দিয়েছে।
-তাই নাকি, কি করে জানবো।
-ন্যাকা জানেনা যেন কিছু। কালকে যেগুলো ফুস ফুস করছিলে, আজ পুরোপুরি বললো। মনটা শান্তি হলো।
-বলেছে বুঝি। তা ভালো, তা ভালো।
মিত্রা মুখে কাপড় চাপা দিল।
-হ্যাঁরে তুই তো মল্লিকের কাজ বাড়িয়ে দিলি।
দাদার দিকে তাকালাম।
-কাল সারারাত যে ছেলেগুলোকে বুদ্ধি দিয়েছিলি, তারা আজ ১টা থেকে হাজির। আমাকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে মারলে, তোর কথা বলে, শেষে আমি বললাম, ও হঠাত আজ সকাল বেলা কলকাতার বাইরে চলে গেছে, এক সপ্তাহ বাদে আসবে।
বেশ মল্লিকের টেবিলে চলে গেলো, তুই বেশ ভালো ভালো সাবজেক্ট দিয়েছিলি ওদের, লিখেছেও বেশ, আমি মল্লিককে বলেছি, একটু কারেকশন করে দে, কাউকে বল ছবি-টবি তুলে আনতে। সুনীত তো এসব দেখে থ মেরে গেছে। তুই কাল ওই কানা রাতের বেলা অফিস গেছিস শুনে।
-ওর লেখাটা বলো। মল্লিকদা বললো।
-মার্ভেলাস নামিয়েছিস। আমি সার্কুলেসনের ছেলেটাকে ডেকে বললাম যদি পারিস একটু বেশি ছাপিস।
-কেনো বললে। রিটার্ন হলে তুমি কিনবে। আমি বললাম।
-আচ্ছা আচ্ছা আর বলবো না।
বড়মা আমার আর মিত্রার মাঝখানে বসেছে, আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, যেটা তুই বললি, ওই মিউজিয়াম না কি।
-হ্যাঁ।
-তার জন্য এতো চেঁচামিচি।
-তুমি নিউজের কিছু বোঝ।
-দেখ কথা, শোনো, সাতকান্ড রামায়ণ পরে বলে সীতা কার বাপ, আজ পঁচিশ বছর তোমার সঙ্গে ঘর করছি, আমি বুঝবোনা কি তুমি বুঝবে। বড়মা এমন ভাবে কথা বললেন সবাই হো হো করে হেসে ফললো।
-এই বলে রাখি শোনো, মেয়েটা অসুস্থ সামন্ত ডাক্তার বলে গেছে, সাতদিন বেরোনো বন্ধ, অনিকে একেবারে বিরক্ত করবে না। যদি করো অনর্থ হয়ে যাবে।
-ঠিক কথা একেবারে মনে ছিল না, কেমন আছিসরে। দাদা মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললেন।
মিত্রা মাথা দুলিয়ে বললো, ভালো।
-এখন উঠে পরোতো দেখি, তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পরতে হবে।
অমিতাভদা ছোটমার দিকে তাকালেন, দিচ্ছি দাঁড়ান।
-একেবারে দিবি না।
-ছোটমা আমার জন্য একটু। আমি বললাম।
ছোটমা মিত্রার দিকে তাকালেন, কি রে তোরও লাগবে।
মিত্রা হেসে ফেললো।
বড়মা মুখ ভেটকে বসে রইলেন।
বড়মা অমিতাভদা যখন কথা বলেন বেশ মজা লাগে, মাঝ মাঝে, বড়মার কথা জানতে ইচ্ছে করে, কিন্তু কখনো তা প্রকাশ করি নি। এদের মধ্যেও একটা সুইট রিলেশন আছে। সে দিক থেকে দেখতে গেলে, ছোটমা মল্লিকদা অনেক রিজার্ভ। আমি বসে বসে নিউজ চ্যানেল দেখছি, মল্লিকদা দাদা কথা বলছেন, মিত্রা বড়মা কথা বলছেন।
ছোটমা চা নিয়ে এলো।

-বুঝলে কাগজের অফিসে যারা কাজ করে তাদের চা খেতেই হবে। সেখানে কোনো লিমিট নেই। তাই না অনি।
-তুমি এক কাজ করলে পারো। আমি দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-বল।
-তুমি কিছু দিন অফিসে না গিয়ে বড়মাকে তোমার টেবিলে পাঠিয়ে দাও, বড়মার চা খাওয়া অভ্যাস হয়ে যাবে, তাহলে আর তোমার কোনো অসুবিধে হবে না।
বড়মা আমার কানটা ধরতে যাচ্ছিলেন আমি কান সরিয়ে নিয়ে বললাম, গায়ে চা পরে যাবে।
মিত্রা মুখ টিপে হাসতে গিয়ে কাপড়ে চা ফেললো।
ছোটমা বলে উঠলো তুই হাসতে গেলি কেনো, ওদের মা বেটার যুদ্ধ হচ্ছে হতে দে। দাঁড়া রাতে তোর মল্লিকদাকে তোর কীর্তি কলাপ বলবো।
-দারুণ নিউজ না। মল্লিকদা বললেন।
-দারুণ মানে। তুমি স্কুপ হিসাবে ট্রিট করতে পারো। আবার সাক্ষী কে মিত্রা।
-আমি নিউজগুলো লিখে দিতে পারি। মিত্রা বললো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। কালকের থেকে একলা থাকবি। আমি বেরোব।
-না না এরকম করিস না।
-উইথড্র কর।
-আচ্ছা উইথড্র।
চায়ের আসর ভাঙলো। তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পরলাম, আমার আর মিত্রার বিছানা আমার ওপরের ঘরে। আমি আগে ভাগে ঘরে চলে গেলাম। মিত্রা এলো একটু দেরি করে।
এসেই দরজা বন্ধ করে বললো, সবাই শুয়ে পরেছে। পটা পট করে ব্লাউজ, কাপড় খুলে ফেল, বাথরুমের দিকে দৌড়ালো।
-কি হলো রে।
-তুই টাওয়েলটা দে।
আমি এগিয়ে দিলাম।
মিত্রা বাথরুমে ঢুকলো। কিছুক্ষণ পরে চেঁচিয়ে ডাকলো। বুবুন।
আমি বাথরুমের গেটের কাছে গেলাম। কি হলোরে।
-কি শীত করছে।
-তার মানে।
-জানি না।
-বেরো তাড়াতাড়ি।
-তুই আয়, দরজা খোলা।
আমি দরজা খুলে দেখি, মিত্রা নেংটো হয়ে দাঁড়িয়ে।
-কি করছিলি।
-পটি।
-পাছু ধুয়েছিস।
-ধুতে গিয়েই তো শীত লাগলো।
-হাত পা মুছে নে। ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁপছে।
শায়া পরে বেরিয়ে এলো। কাপড়টা কোনো প্রকারে জড়িয়ে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো।
-ওষুধটা কে খাবে।
-দে।
আমি একটা ট্যাবলেট আর জলের গ্লাস এগিয়ে দিলাম।
ও ট্যাবলেটটা মুখে দিয়ে জল খেলো।
-নে এবার শুয়ে পর, আমি চাপা দিয়ে দিচ্ছি।
-তুই শুবি না।
-শোবো।
মিত্রার গায়ে একটা কম্বল চাপা দিলাম। ও বললো তুই চলে আয় তোকে জাপ্টে ধরে শুই, তাহলে শীতটা কমবে।
-দাঁড়া লাইটটা নিবোই আগে।
আমি লাইটা অফ করে ছোটো লাইট জালালাম। ওর কম্বলের তলায় গিয়ে শুয়ে পরলাম।
-কিরে শরীর খারাপ লাগছে নাকি।
-না। মাথাটা একটু যন্ত্রণা করছে।
-দাঁড়া টিপে দিই।
উঠে বসলাম, ওর মাথাটা টিপে দিলাম, ও উপুর হয়ে শুয়ে বললো কোমরটা টিপে দে, তাও দিলাম, তারপর বললো পা দুটো একটু টিপে দে, তাও দিলাম। কখন যে ও ঘুমিয়ে পরেছে বুঝতে পারলাম না। আমার গরম লাগছে, তবু আমি পাখাটা একটু কমিয়ে দিয়ে মিত্রার পাশে শুয়ে পরলাম ওর মাথায় হাত রেখে। কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানি না। হঠাত প্রচন্ড গরম লাগলো, ঘুম ভেঙে গেলো। মিত্রার মাথায় হাত দিয়ে দেখি, গা পুড়ে যাচ্ছে, বড় লাইটটা জাললাম, ঘড়ির দিকে তাকালাম, দেড়টা বাজে। মাথাটা বন বন করে ঘুরে গেলো, টেবিলে একটা থার্মোমিটার ছিলো, কাগজের ডাঁই থেকে তাকে খুঁজে বার করলাম। মিত্রাকে ডাকলাম, ও গঁ গঁ করছে। বাধ্য হয়ে ওর বুকের কাপড় সরিয়ে ব্লাউজের বোতাম খুলে বগলে থার্মোমিটার গুঁজলাম, একশ সাড়ে তিন জ্বর। এতরাতে কাকে ডাকি, মিত্রাকে কোনো প্রকারে জাগালাম, বললাম, জ্বর এসেছে, আমাকে একটু হেল্প কর। চোখ জবা ফুলের মতো লাল।
-আমার শীত করছে।
-ঠিক আছে।
মানিপার্টসের ভেতর সব সময় কেলপোল নিয়ে ঘুরি, ভাবলাম একটা দিয়ে দিই। তারপর ভাবলাম না আগে মাথায় জল ঢালি। আর জল পট্টি দিই। মিত্রা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
-কি ভাবছিস।
-কিছু না। তুই মাথাটা এদিকে নিয়ে এসে শো। মাথাটা একটু ধুইয়ে দিই।
-শীত করবে।
-করলে কি করবো বল, জ্বরটা তো নামাতে হবে।
ওকে ধরে ধরে এপাশে শোয়ালাম। একটা পলিব্যাগ জোগাড় করে তাকে কেটে দুটুকরো করে ওর মাথার তলায় দিলাম। চুলগুলো যাতে না ভেঁজে তার ব্যবস্থা করলাম। তারপর বাথরুম থেকে বালতি করে জল এনে ওর মাথায় ঢাললাম। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে ঢালার পর ও বললো, অনি এবার তুই বন্ধ কর।
-কেনো! কি হয়েছে বল, অশ্বস্তি হচ্ছে।
-না শীত করছে। ওর দাঁত ঠক ঠক করে কাঁপছে।
চোখের লালাভাবটা কিছুটা কম, ছল ছল করছে। আমি ওর মাথা শুকনো করে মুছিয়ে দিলাম, মুখটা ভিঁজে টাওয়েল দিয়ে মুছিয়ে দিলাম।
-আর দিসনা, শীত।
বাধ্য হয়ে মানিপার্টস থেকে কেলপোল বার করে দিলাম। নে এই ট্যাবলেটটা খেয়ে নে।
ওকে মুখের মধ্যে ট্যাবলেটটা দিয়ে জল ঢেলে দিলাম এক ঢোক খেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
-আর না।
-এই জন্যই তোদের এত রোগ, জলখাবি না মুতবিও না।
মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো।
-হাসিস না গা জ্বলে যায়।
মিত্রা দুচারবার হাঁচি মারলো। বুঝলাম ঠান্ডা লেগেছে।
মগে করে জল এনে যে পাঞ্জাবীটা সকালে ছিঁড়েছিলো তার থেকে দুটুকরো ছিঁড়ে নিলাম। খুঁজে খুঁজে একটা পিচবোর্ড বার করলাম।
-কি করবি।
-হাত পাখা পাবো কোথায় এই কানা রাতে, হাওয়া দিতে হবে তো।
ওর মাথার শিয়রে বসে জল পট্টি দেওয়া শুরু করলাম।
মিত্রা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
-তোকে খুব কষ্ট দিচ্ছি না।
-একেবারে না। কথা বলিস না।
-দেখিস আমার কিছু হবে না। কৈ মাছের জান।
-জ্ঞান দিস না। জ্বরটা আগে নামাই তারপর তোর কথা শুনবো, এখন ঘুমোবার চেষ্টা কর।
-ঘুম আসছে না।
-আসবে।
দেখতে দেখতে এক ঘন্টা হয়ে গেলো। আবার থার্মোমিটার বগলে গুঁজলাম।
-কিরে আমার ব্লাউজের বোতাম খোলা কেনো।
-তোর মুনু চুষছিলাম।
-একবার ডাকবি তো। আমিও একটু চুষতাম।
-তুই থামবি।
-টেনসন করছিস কেনো, দেখবি কিচ্ছু হবে না।
জ্বর এখন আড়াই। আবার জলপট্টি দেওয়া শুরু।
আবার এক ঘন্টা পর দিলাম, দেখলাম জ্বরটা নিরানব্বই। জলপট্টি দেওয়া থামালাম।
-বুবুন গরম লাগছে।
-লাগুক কম্বল খোলা যাবে না।
-ঠিক আছে তুই একটা পাতলা চাদর গায়ে দে।
-ওর কথা মতো তাই করলাম।
-একবারে উঠবি না আমি একটু নীচ থেকে আসছি।
-কেনো।
-তোমার সেবা করার জন্য।
নীচে গিয়ে রান্নাঘর থকে সরষের তেল বার করলাম, গ্যাস জালালাম, তেলটা গরম করে সাঁড়াসি দিয়ে ধরে ওপরে নিয়ে এলাম।

-বুবুন বাথরুমে যাবো।

-এর মধ্যে তোর আবার বাথরুম পেলো। যেতে হবে না আমি মগ এনে দিচ্ছি মুত।

মিত্রা আমার কথা শুনে হেসে ফেললো।

-তুই আমাকে একটু ধর আমি যেতে পারবো।

আবার ওকে ধরলাম। ও আমার কাঁধে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালো, বাথরুমের সামনে গিয়ে বললাম ভেতরে যেতে হবে না, এখানে মুত।

-ঠিক আছে তুই চোখ বন্ধ কর।

-ন্যাকামো করিস না। সব দিয়ে থুয়ে এখন বলে চোখ বন্ধ কর।

-আমার হবে না।

-ঠিক আছে বন্ধ করলাম।

আওয়াজ হলো। থামলো। বুঝলাম শেষ হয়েছে। কি হলো রে।

-একটু মগে করে জল এনে দে।

-কেনো।

-ধুতে হবে না?

-উঃ।

আবার মগে করে জল দিলাম। ধরে ধরে খাটে এনে শুইয়ে দিলাম। দাঁড়া থার্মোমিটারটা দিই।

-কতবার দিতে লাগে।

-তোর জানার দরকার আছে।

এবার জ্বরটা দেখলাম, সারে আটানব্বই।

-কত?

-সামান্য আছে। পাখাটা বন্ধ করলাম।

-পাখা বন্ধ করছিস কেনো

-সেবা করবো।

মিত্রা হেসে ফেললো।

-কাপড় খোল।

ও কাপড় খুললো।

-ব্লাউজ খোল।

-করবি।

-হ্যাঁ করবো, আমার নুনু তোকে দেখে এই সময় শাল গাছ হয়েছে কিনা।

-দেখি দেখি বলে আমার নুনুতে হাত দিলো, কোথায় রে এতো ছোট্ট হয়ে আছে।

-থাক।

টেবিলের ওপর থেকে তেলের বাটিটা নিয়ে এলাম, এখনো গরম আছে, আমি ফুটিয়ে নিয়ে এসে ছিলাম, প্রথমে ওর কোমর পিঠটা মালিশ করে দিলাম, তারপর বুকটা দিলাম, ও বদমাইশি করছে, মাঝে মাঝে আমার নুনুতে হাত দিচ্ছে, তারপর ওর চোখ মুখ কপাল ঘার মালিশ করলাম, তারপর বললাম, নে শায়া তোল।

-ওখানে তেল লাগাবি নাকি।

-হ্যাঁ। না হলে ঢুকবে না।

-তোরটা দে একটু তেল লাগাই।
কট কট করে ওর দিকে তাকালাম।
মিত্রা শায়া তুললো, ভালো করে দুটো পা পায়ের চেটো তেল মালিশ করলাম এবার বললাম ব্লাউজ পর।

-এই তেল গায়ে।

-যা বলছি কর।

-তুই কিন্তু দারুণ ম্যাসেজ করতে পারিস।

-কেনো ভালো করতে পারি না।

-ওতে তুই মাস্টার।

মিত্রা কাপড় ব্লাউজ পরলো।

-নে এবার শুয়ে পর।

ও শুয়ে পরলো, আমি ওর পাশে শুয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম, ও আমাকে জাপ্টে ধরেছে।

-বুবুন।

-উঁ।

-তোকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি না।

-ঘুমোবার চেষ্টা কর।

-জানিস বাবার কথা মনে পরে যাচ্ছে।
মিত্রার চোখে চোখ রাখলাম।

-কেনো।

-অসুস্থ হলে বাবাও ঠিক তোর মতো রসুন তেল দিয়ে সারা শরীর মালিশ করে দিতো। বড়ো হওয়ার পর খালি পা দুটো মালিশ করে দিতো।

-ও।

-আজ তোর মালিশ করা দেখে বাবার কথা মনে পরে গেলো।

বুঝলাম মিত্রা কাঁদছে।

-আবার কাঁদে।

-জানিস আজ সারা দিন কেঁদেছি। ছোটমার কাছে আমিও কনফেস করেছি।

-ভালো করেছিস।

-তুই আমাকে ভীষণ ভালোবাসিস না।

-একেবারে না।

-ভালো না বাসলে কেউ এই ভাবে করতে পারে না।

-সম্পত্তি দিয়েছিস, করতে হবে।

মিত্রা চুপচাপ।

-পাখাটা একটু চালিয়ে দিবি।

-না। আমি হাওয়া দিচ্ছি।

আমি পিচবোর্ডটা নিয়ে হাওয়া দিতে আরম্ভ করলাম।

-বুবুন।

-উঁ।

-আমাকে এখান থেকে কোথাও দূরে নিয়ে যাবি।

-যাবো।

-কোথায় বল।

-একটু ভালো হয়ে ওঠ নিয়ে যাব।

-সেখানে তুই আর আমি, আর কেউ থাকবে না।

-সেতো সমুদ্রের মাঝখানে যেতে হয়, কিংবা কোনো নির্জন দ্বীপে।

-তাই যাবো।

-আচ্ছা।

-কোথায় নিয়ে যাবি।

-ভেবে দেখি।

ও আমার হাতটা টেনে বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলো। চোখ বন্ধ। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। কথা বলতে বলতে কখন ঘুমিয়ে পরলো বুঝতে পারলাম না। আমি ওর গায়ে একটা পাতলা চাদর চাপা দিয়ে ওর মুখের দিকে চেয়ে রইলাম।

ওর পাশ থেকে সরে এসে ইজিচেয়ারে বসলাম।

সাড়ে চারটে বাজে। জ্বর দেখলাম, না এখন নেই।

একটু তন্দ্রা মতে এসেছিলো।
দরজা ঘট ঘট করতে তাকালাম, সোয়া পাঁচটা, পূব আকাশ সবে ফর্সা হয়েছে।

দরজা খুললাম, ছোটমা। চায়ের কাপ হাতে।
-লাইট জ্বেলে ঘুমোচ্ছিস। ভেতরে এলেন, কিরে এসব কি, বালতি মগ তেলের বাটি সাঁড়াসি, জলপট্টি।
ছোটমাকে ইশারায় চুপ করতে বললাম। তারপর চা খেতে খেতে সব বললাম
-এই মাত্র চারটে নাগাদ ঘুম পাড়িয়েছি। ছোটমা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, কাপড়ের খুঁট দিয়ে চোখ মুছলেন। ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বড়মা, ছোটমা, মল্লিকদা, দাদা এসে হাজির। সবাই চুপচাপ। থম থমে মুখ। ছোটমা বললেন
-যা আমার ঘরে গিয়ে একটু শুয়ে পর। দুরাত তোর ঘুম হলো না, শরীর খারাপ করবে।
দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম, ডাক্তারবাবুকে একবার ডাকো।
-দাঁড়া, আলো ফুটুক, ডাকছি।
ছোটমার দিকে তাকিয়ে বললাম, আমাকে একটু চা খাওয়াবে।
-চা কেনো, ছোটো ওকে একটু হরলিক্স করে দে। বড়মা বললেন।
ছোটমা বেরিয়ে গেলেন। দাদা ইজি চেয়ারে, আমি দাদার পাশে মাটিতে, বড়মা মিত্রার মাথার শিয়রে। মল্লিকদা চেয়ারে।
-মল্লিক আমার সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে আয় তো।
মল্লিকদা বেরিয়ে গেলেন। সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে এসে দাদাকে দিলেন। দাদা একটা সিগারেট ধরালেন।
-বুঝেছো।
-বলো।
-তোমরা কয়েকদিনের জন্য কোথাও ঘুরে এসো। আমি মল্লিক ঠিক ম্যানেজ করে নেবো।
-সেই ভালো।
-কিরে মল্লিক পারবো না।
-খুব পারবো।
-কোথায় যাই বলোতো।
-অনির বাড়ি চলে যাও। মিত্রা ওখানে গিয়ে কয়েকদিন বেশ ফুরফুরে ছিলো লক্ষ্য করেছিলাম।
-কিরে অনি যাবি।
-যাওয়া যায় তবে আগে ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞাসা করো উনি কি বলেন।
-মেয়েটার নার্ভের ওপর খুব চাপ পরে গেছে। সহ্য করতে পারে নি। মল্লিকদা বললো।
-সামন্ত তাই বলছিলো, বিকেলে এসেছিলো দেখে বললো, মা তোমার চোখটা ভালো ঠেকছে না, ওষুধ লিখে দিলো। আমার দিকে তাকিয়ে বড়মা বললেন হ্যাঁরে ওষুধটা খাইয়েছিস।
-আমি মাথা দোলালাম।
-জ্বরটা কখন এলো।
-দেড়টা।
-ডাকলিনা কেনো।
-শুতে গেলে সাড়ে এগারোটা, ডাকি কি করে।
-পাকামো করিস না। একা একা সব করলি।
-কি করবো।
-মল্লিক তোরাও কিছু জানতে পারিস নি।
-হ্যাঁ বাথরুমে আওয়াজ হচ্ছিল, ভাবলাম কেউ বাথরুম ইউজ করছে। প্রায় দুটো পযর্ন্ত জেগেছি, ছোটো অনি আর মিত্রার সম্বন্ধে গল্প করছিলো।
ছোটমা চা হরলিক্স নিয়ে এলেন। সবাইকে চা দিলেন আমাকে হরলিক্সের গ্লাসটা এগিয়ে দিলেন।
-এখান থেকে দুটো বিস্কুট নে।
নিলাম।
-তোমায় বলছিলাম, দেখো বাখরুমে ঘট ঘট শব্দ হচ্ছে।
-হ্যাঁ।
-তখন অনি মিত্রার মাথায় জল ঢালছিলো, সাড়ে তিন জ্বর উঠেছিলো।
-সব্বনাশ।
-তুই কি করলি সেই সময়। দাদা বললো।
-আমি প্রথমে জল ঢাললাম মাথায়, তারপর আমার কাছে ক্যালপল ছিলো দিলাম, সারারাত জলপট্টি দিলাম, রান্নাঘর থেকে তেল গরম করে এনে মুখে কপালে, পায়ে পায়ের চেটো, আর হাতে মালিশ করলাম। এই তো ঘন্টা খানেক হলো ঘুমিয়েছে।
-তুই তো ট্রেন্ড নার্স ।
ছোটমা মুখ টিপে হাসলো।
বড়মা দাদার দিকে তাকিয়ে বললো মস্করা হচ্ছে।
-তুমিই বলো বড়, ওই সময় মাথা ঠিক রেখে অনি ঠিক ঠিক কাজ করেছে কিনা।
-তোমার মতো তো নয় কিছু হলেই দশবার পায়খানায় দৌড়বে। ও ছোট আর আমার ছেলে।
মিত্রা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।
বড়োমা মিত্রার দিকে তাকাল।

দাদার দিকে তাকিয়ে বললো

-মেয়েটা জেগে গেলে ঘাড় মটকাবো।
-যাই ডাক্তারকে ধরে নিয়ে আসি।
দাদা চলে গেলেন। ছোটমা ইজি চেয়ারে বসলেন। আমি ছোটমার কোলে মাথা দিলাম, ছোটমা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
-যা না অনি, আমরা তো আছি, ছোটোর ঘরে গিয়ে একটু শুয়ে নে। বড়মা বললেন।
-না ঘুম পাচ্ছে না।
-থাক। ছোটমা বললেন।
-কি বিপদে ফেললে বলতো মেয়েটা। বড়মা ছোটোর দিকে তাকিয়ে বললো।
-সবই ওপর ওয়ালার ইচ্ছে, না হলে আমাদের কাছেই বা আসবে কেনো। মল্লিকদা বললো।
-ঠিক বলেছিস, কাল থেকে যেন একটা ঝড় যাচ্ছে।
অমিতাভদা, ডাক্তারবাবুর গলা পেলাম।
-কি অনিবাবু ধূম জ্বর এসেছিলো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম, ছোটমা ইজিচেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন, ডাক্তারবাবু ইজি চেয়ারে বসলেন। মল্লিকদা চেয়ারটা দাদার দিকে এগিয়ে দিলেন, ওরা দুজনে মিত্রার পায়ের দিকে বসলো।
-বলোতো কি কি হয়েছিলো, আমি একটু মিলিয়ে নিই আমার সঙ্গে।
আমি পঙ্খানুপুঙ্খরূপে যা হয়েছিলো, তাই বললাম।
-তুমি কি ওর বুকে পিঠে তেল মালিশ করেছিলে।
মাথা নীচু করলাম।
-লজ্জার কিছু নেই তখন তুমি নার্স।
মাথা দেলালাম।
-দ্যাটস গুড।
-এমনি তেল না গরম তেল।
বললাম তেল গরম করে মালিশ করেছি।
-ওঃ ওয়ান্ডারফুল। ঝড়টা কাটলো। বুঝলে এডিটর।
-মস্করা রেখে আসল ব্যাপারটা বলো তো সামন্ত। বড়মা বললেন।
-কি হয়েছিলো জানো। ওর নার্ভগুলো হঠাত ক্র্যাম্প ধরে গেছিলো, তাই ও অস্বাভাবিক আচরণ করেছিলো। ওটা কিন্তু ও করে নি, ওর নার্ভগুলো করেছিলো। কাল আমি একটা ইঞ্জেকশন দিলাম, নার্ভগুলোকে জাগাবার জন্য আর একটা দিলাম ঘুমোবার জন্য, তাহলে নার্ভগুলো তাড়াতাড়ি সতেজ হবে। বিকেলে যে ট্যাবলেটটা দিলাম, সেটা স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য, কিন্তু নার্ভগুলো ঘুমিয়ে পরেছিলো, যখন জাগতে আরম্ভ করলো, তখন আড়মোড়া ভাঙলো, জ্বর এলো, ধুম জ্বর। সেই সময় যা যা করার দরকার অনিবাবু তা করেছে। আজ দেখবে ও অনেক সতেজ থাকবে। কিন্তু একটা কথা এখান থেকে নড়ানো যাবে না। সাতদিন। তারপর তোমরা যেখানে যাবার যাও। তখন ঝড় একেবারে কেটে যাবে, ভবিষ্যতে ওকে একেবারে বেশি স্ট্রেইন দেওয়া যাবে না। একবার ব্রেকডাউন করলেই, পঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা। ছোট এবার একটু চা হোক। তারপর মাকে দেখছি।

ছোটমা বেরিয়ে গেলেন।
-তুমি আগে একবার দেখো, তারপর চা খাবে। বড়মা বললেন।
-আর একটা ব্যাপার এর মধ্যে ঘটেছে। আমি বললাম।
-বলো।
-কালকে ও ক্লাবে গেছিলো……..
-হ্যাঁ তোমার ছোটমা আমাকে বৈকালে ঘটনাটা বলেছেন। ওটাও তুমি ভালো কাজ করেছো। সবই ফাস্ট্রেশন বুঝলে অনিবাবু। কখনো হতাশায় ভুগবে না, ভুগলেই বিপদ। কি থেকে কি হয় বলা মুস্কিল। আমরা পযর্বেক্ষণ করে যতটা পারি ওষুধ দিই।
ছোটমা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোকে কম করে দিলাম, দুরাত তোর জাগা হয়ে গেলো।
-তাতে কিছু হবে না। ও খুব স্ট্রং ম্যান।
-থামো তুমি। ছেলেটাকে পিষে মেরে দিলে এরা। বড়মা বললেন।
-বুবুন। মিত্রা চোখ চাইলো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। মিত্রা আমার দিকে তাকালো।
বড়মা মিত্রার মাথায় হাত রাখলো। তোকে চিন্তা করতে হবে না আমরা সবাই আছি।
ডাক্তার চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, বুবুন কে।
বড়মা বললেন, অনির আর এক নাম। মিত্রা ওকে বুবুন বলে ডাকে।
-বাঃ বেশ মিষ্টি তো নামটা, অনি এ নামটা তোমার কে রেখেছিলো।
-আমার মা।
-ও।
মিত্রার চোখ দুটো ছল ছলে।
-কাঁদছিস কেনো। বড়মা ওর কপালে চুমু খেলেন।
-তোমাদের অনেক কষ্ট দিচ্ছি।
-মেলা বকিস না আর। একবার পাঁঠাটাকে জোর করে ডাকতে বলতে পারতিস। তাহলে এতোটা কষ্ট হতো না।
মিত্রা হেসে ফেললো।
-কি কষ্ট হচ্ছে মা।
মিত্রা শুয়ে শুয়ে কাপালের দিকে চোখ তুলে, ডাক্তার বাবুর দিকে তাকালো। না কষ্ট হচ্ছে না। মিত্রা আস্তে করে বললো।
ডাক্তারবাবু এগিয়ে গেলেন।
স্টেথো দিয়ে বুকটা দেখলেন। একটু কফ হয়েছে বুকে, আমি একটা ওষুধ লিখে দিচ্ছি। হাত পায় যন্ত্রণা করছে।
-করছিলো কাল রাতে,
-এখন করছে না।
মিত্রা মাথা দোলাল, না।
-ঠিক আছে, স্নানের আগে ভালো করে তেল মেখে স্নান করবে, গরমজল ঠান্ডাজল মিশিয়ে। নর্মাল ডায়েট। পারলে একটু দুধ খাওয়াতে পারবে।
-এখানে গোয়াল ঘর পাই কোথায় বলতো।
-সেও ঠিক। আমাদের বাজারে যে দুধ পাওয়া যায় তাই দাও।
অমিতাভদার ফোনটা বেজে উঠলো।
হ্যালো।

ও প্রান্ত থেকে মনে হয় কেউ কিছু বললো।

-আরে আপনি আর ফোন করার সময় পেলেন না, এই সাত সকালে। ধরুন যে লিখেছে তার সঙ্গে কথা বলুন। দাদা ঝাঁঝিয়ে উঠলো।

কে?

বনদফতরের মন্ত্রী।

অমিতাভদা ফোনটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন
-হ্যালো।
-শোনো তোমার মতো দু’টাকার সাংবাদিককে উড়িয়ে দেবার ক্ষমতা আমি রাখি, আজই লেখাটার সম্বন্ধে একটা অবজেকশন পাঠাচ্ছি, অমিতাভকে বলে ছেপে দেবে।
মাথাটা দপ করে গরম হয়ে গেল। ঘরের সবার দিকে একবার তাকালাম। চোয়ালদুটো শক্ত হয়েগেল।
শোনেন আপনার মতো গোটা দশেক মন্ত্রীকে আমি নিত্য নতুন জন্ম দিই।

কি বললে?

যা বললাম ঠিক বলছি।

তোমার এতোবড়ো সাহস।

সাহসের এখনও কিছু দেখেননি। 

-শোনেন  আপনার নামে এবার কাল থেকে সিরিয়াল লিখবো, দেখি আপনার চেয়ারটা আপনি কি করে ধরে রাখেন, সাতদিনের মধ্যে আপনাকে রিজাইন দিতে বাধ্য করাবো, তখন লালবাতি নিয়ে ঘোরা বেরিয়ে যাবে।
আরাম করে এসিতে কাটান, দেখছি।

ওরা আমার দিকে সবাই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। মিত্রা উঠে বসলো।

বড়োমা চেঁচিয়ে উঠলো উঠিস না, উঠিস না।

– আর কালকের সকালের কাগজে আপনার ছেলের মধুচক্রের ব্যাপারটা ছাপবো উইথ ফটো, যেটা আপনি পার্কস্ট্রীট থানাতে দিয়ে চেপে রেখেছেন। দেখি আপনার কেমন ক্ষমতা, আপনার দম থাকলে আপনি আমাকে আটকান।
আর একটা কথা শুনে রাখুন যার কাছে নাম লিখিয়ে আপনি মন্ত্রীত্ব পেয়েছেন, ওই লিস্টে সবার প্রথম আমার নামটা আছে, একটু ভালো করে জেনে নেবেন।
ফোনটা কেটে দিলাম।

সবাই আমার কথা শুনে থ। মল্লিকদা আমার চোখ মুখ দেখে ভয় পেয়ে গেছে, বুঝতে পারছে, অনি এবার একটা কেলোর কীর্তি করবে, এটা মল্লিকদা অনেকবার টের পেয়েছে।
আমি মিটসেফের কাছে এসে আমার ফোনটা তুলে নিলাম।

বুবুন প্লিজ। মিত্রার করুণ স্বর কানে ভেসে এলো।

বড়োমা মিত্রাকে ধরে আছে।

আমি কারুর দিকে তাকালাম না।

রিং করলাম।

হ্যালো।

রতন।

হ্যাঁ।

অনিদা।

বলো।

তুই মন্ত্রীর ছেলের ভিডিও রেকর্ডিংটা বার করে রাখ। আজকেই আমার চাই। আমি ওখান থেকে ফটো বার করে নেব। মন্ত্রীর নখরামি আজকেই ভাঙব। আর ইসলামভাইকে বলে দিবি, আমাকে যেন এই ব্যাপারে কোনও রিকয়েস্ট না করে। তাহলে একটা অনর্থ হয়ে যাবে।

অমিতাভদা, ডাক্তার সামন্ত, ছোটোমা, বড়োমা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। মিত্রা আমার চেঁচামিচিতে উঠে বসেছে। ডাক্তার সামন্ত ওকে শুতে বলছেন।

মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, প্লিজ বুবুন।

ফোনটা বন্ধ করে আমি ওর কাছে গেলাম। আমার চোখ মুখের চেহারা ও চেনে। ও আমার হাতটা ধরে ফেলল।

তুই রাগ করিস না। আমি জানি তোর মনের অবস্থা। তুই একটু ঠান্ডা হ।

কি বলছিস তুই, ও আমাকে ধমকাচ্ছে। ওর এত বড় বুকের পাটা। ওর মন্ত্রীত্ব আজই ঘোঁচাব।

না তুই এরকম করিস না। আমায় কথা দে।

মিত্রা আমার হাতটা কিছুতেই ছাড়তে চাইল না।

দাদার ফোনটা আবার বেজে উঠলো। দাদা ধরলেন।
-হ্যাঁ বলো।
-এ্যাঁ। হ্যাঁ ও আমাদের নতুন মালিক।….এই তো কয়েকদিন হলো হয়েছে….  নিজেই লিখেছে। আমি কি বলবো বলো, আমি একজন সম্পাদক, ও লেখা দিলে আমাকে ছাপতে হবে, মালিক বলে কথা। একটা কাজে কাল এসেছিলো। ধরো দিচ্ছি।

দাদা আমার হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিল।

কথা বল। দাদার চোখে মুখে বিরক্তি।

ফোনটা ধরেই হেঁড়ে গলায় চেঁচিয়ে বললাম, কি হয়েছে বলুন।
-আরে ভাই, তুমি মাথা গরম করছো কেনো।
-কি হলো এরই মধ্যে আপনার ক্ষমতা শুকিয়ে গেলো।  খবর নিয়ে দেখলেন বুঝি, আমি ঠিক কথা বলেছি কিনা। বুঝলেন এবার দু-পয়সার সাংবাদিকের দম।
-না। মানে।
কি চান বলুন?

তুমি ভাই ভালো ছেলে কেন এসব….।

-নেগোশিয়েসনে আসুন।
-বলো।
-এ মাসে আপনার দপ্তর থেকে ৩ কোটি টাকার এ্যাড বেরোচ্ছে,
-কে বললো?

-রাখলাম। নিজে অফিসে এসে কথা বলবেন।

-না না তুমি বলো।

-২ কোটি আমার কাগজের নামে পাঠিয়ে দেবেন আজকের মধ্যে।
-সেটা কি করে সম্ভব?

-ওটা কি আমি আপনাকে বলে দেব।

-একটা রিজিন থাকবে তো।

-রিজিনটা কাল সকাল থেকে টের পেয়ে যাবেন। তারপর মোমবাতি নিয়ে আমাকে খুঁজবেন।

-এটা কেমন কথা হলো।

-কেনো যার কাছে ফোন করে খোঁজ নিলেন, তিনি বলতে পারলেন না।

ভদ্রলোক চুপ করে রইলেন।

শুনুন অনি ব্যানার্জী এক কথার মানুষ। 

না হলে কাল থেকে সিরিয়াল চলবে, আর আপনার চেয়ারটা পাওয়ার জন্য যে ওঁত পেতে রয়েছে, তার নামে ভালো ভালো কথা বলে, চেয়ারটা পাইয়ে দেবো।
-ঠিক আছে, ঠিক আছে তুমি যা বললে তাই হবে।

-কোনো ফোনটোন যেন করতে না হয়। ধরুন।
আমি অমিতাভদার হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে বাথরুমে গেলাম।
অমিতাভদা ওনার সঙ্গে কথা বলছে।

মিত্রা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।

আমি বাথরুম থেকে শুনতে পাচ্ছি অমিতাভদার কথা, মন্ত্রীমহাশয় পারলে এখুনি এসে অনির কাছে ক্ষমা চাইবেন, কিন্তু আমি যেন আর না লিখি ওনার সম্বন্ধে। এটা অমিতাভদাকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমি যা বলেছি উনি মেনে নেবেন।

অমিতাভদা হাসছে। কি ছেলে বলো।

এডিটর কি বুঝলে? ডাক্তার সামন্ত বললেন।

ওর ক্ষমতা আছে ডাক্তার, ওর সোর্সও দারুণ, আমি তিরিশ বছরে এই সোর্স তৈরি করতে পারিনি। দুদিন আগেই ও যা করেছে, তা হিন্দী ফিলমে দেখা যায়।

যার জন্য এই মেয়াটা হঠাত ব্রেক ডাউন করলো। ডাক্তার সামন্ত বললো।

ওর কোনও ভ্রুক্ষেপ দেখেছ। আমরা একটা কাজ করতে গেলে দশবার ভাবি। ও ভাবে না। ওর কথা হচ্ছে এটা করতে হবে, তারজন্য যা যা দরকার আমাকে জোগাড় করে নিতে হবে।

ডাক্তারবাবু বললেন, এডিটর ছেলেটা খাঁটি ইস্পাত খুব সাবধানে ব্যবহার করো, না হলে হাত কেটে ফালাফালা হয়ে যাবে। কি আগুন দেখেছো। একটা মন্ত্রীকে পযর্ন্ত ঠুসে দিলে।
-বলনা বলো, এবার সামন্তর কথার উত্তর দাও। বোবার মতো বসে আছো কেনো, বোবার শত্রু নেই,
বড়োমা মনেহয় দাঁত মুখ খিঁচিয়ে উঠলো।

-কি বলবো মিনু তুমি বলো।

-কি বলবো মানে! 

-মনে রাখবে ও আমার ছেলে একটাও ভুল কাজ করবে না, প্রয়োজনে ভুল কাজ করবে, আবার স্বীকারও করে নেবে। এতদিন হলো এইভাবে কোনোদিন কোনো মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পেরেছো।
তারপর মনেহয় মিত্রার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো। কি বল মিত্রা।
মিত্রা কি বললো, শুনতে পেলাম না। বাথরুম থেকে চোখে মুখে জল দিয়ে বেরোলাম।
আমাকে বেরতে দেখে সবাই চুপচাপ হয়ে গেল।
-বাবা। তুই সকাল বেলা ভালো সওদা করলি তো। মল্লিকদা এমন ভাবে বলে উঠলেন, আমিও না হেসে পারলাম না।
-যাই বল মল্লিক অনির কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে,
দাদা আমার দিকে তাকাল।
কিরে অনি মন্ত্রী পুত্রের কেলাঙ্কারিটা দে, ছেপে দিই।
-মরণ। বড়মা এমনভাবে বললেন, সকলে হেসে ফেললো।
-অফিসে যাও আজই যদি এ্যাডের ব্যাপারটা কনফার্ম না করে কাল দেবো। আমার অনেক টাকার দরকার।
-একটা নিউজের দাম দু কোটি, তুই তো চম্পকের চাকরি খেয়ে নিবি।
-তোমরাইতো বাঁচিয়েছো চাকরিটা, কালকে ও বলছিলো।
-শুধু আমায় একা দোষ দিও না। দাদা বললো।
-লক্ষণও বুঝি দোসর ছিলো। বড়মা বললো।
ছোটমা ফিক করে হেসে ফেললো। মল্লিকদার মাথা নীচু।
-চলো আমরা বুড়ো বুড়িরা এখন নিচে যাই। ডাক্তারবাবু বললেন।
-ওকে এখন কি দেবো। বড়মা বললেন।
-ডিমটোস্ট বা বাটার টোস্ট, ভালো করে সেঁকে, আর দুধ না হলে হরলিক্স বা বোর্নভিটা।
-অনি, ওকে হাতমুখ ধুইয়ে দে নিয়ে আসছি। ছোটমা বললেন।
ওরা সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে।
কিছুক্ষণ পর ছোটমা ফিরে এলেন, হাতে মিত্রার কাপড় শায়া ব্লাউজ। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললেন
-ওগুলো ছেড়ে রাখিস, লন্ড্রীর ছেলেটা আসবে দিয়ে দেবো। মিত্রা ছোটমার দিকে তাকালো।
-আর তাকাস নি ওই ভাবে, খালি একা একা মজা নিয়ে যাচ্ছিস, আমাদের জন্য একটু রাখ। আমরা ফাঁকে পরে যাচ্ছি। ছোটমা লাফাতে লাফাতে বেরিয়ে গেলো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
– কিরে ছোটমা কি বলে।
-শুনলি তো।
-তার মানে, আমার প্রেসটিজে পুরো গ্যামাকসিন।
-বেশ করেছি।
-ভালো। ওঠ।
-দরজাটা বন্ধ কর।
-কেনো।
-কাপড়টা কাল পরিয়েছিস! না খালি জড়িয়ে দিয়েছিলি।
-ও।
বাইরের দরজাটা বন্ধ করলাম।
-ধর একটু।
-কেনো।
-সব কেনোর উত্তর দেওয়া যায়।
-এগিয়ে আয়।
ও বিছানা থেকে এগিয়ে এলো। আমি ওর হাতদুটো ধরে দাঁড় করালাম, ও আমার বুকে ঢলে পরলো। আমি ওকে শক্ত করে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরলাম।
-মিত্রা!
-উঁ।
-কি হলো।
-মাথাটা কেমন ঘুরে গেলো।
-একটু খেয়ে নিয়ে আবার ঘুমিয়ে পর।
মিত্রা বুক থেকে মাথা তুলছে না, কিরে বাথরুমে যেতে পারবি, না এখানে এনে দেবো।
-না যাবো।
-দাঁড়া।
আমি ওকে কোলে তুলে নিয়ে বাথরুমের দরজার সামনে নিয়ে গেলাম, এখানে বোস।
-না, কমে গেছে। আমি ভেতরে যাই, তুই দরজাটা ভেজিয়ে দে।
আমি দরজাটা ভেজিয়ে দিলাম।
কিছুক্ষণ চুপচাপ।
-কি রে হলো।
-হ্যাঁ।
-দেখলাম ও বসে আছে। দাঁড়া।
-উঠতে পারছি না।
আমি ওকে তুলে ধরলাম। উঃ কি ভারী রে বাবা।
মিত্রা হেসে ফেললো।
-নে দাঁত মাজ। আমি ডাক্তারবাবুকে তোর নতুন উপসর্গটা বলি।
-ও কিছু না, বলতে হবে না।
-কেন!

-সব বলতে হবে?

-রোগ বাধিয়েছিস বলতে হবে না।

-একটু মাজন এনে দে।

টেবিলের ওপর থেকে মাজন এনে দিলাম।

-ও দাঁত মাজলো, মুখ ধুলো আমি ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আছি।
-তোর এতো রাগ। মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকাল।
-তুই বল মানসিক পরিস্থিতি এরকম, সাত সকালে ফোন, মাথাটা গরম হবে না।
-ভালোই হলো। দেবে।
-ওর বাপ দেবে, অমিতাভদা অফিসে পৌঁছলে ওর সচিবকে পাঠিয়ে দেবে।
-তাই বলে দু কোটি!
-ওটা তোর।
-শুধু আমার একার।
-থাক এখন এসব আলোচনা।
-কাল নীপা ফোন করেছিলো।
-কখন।
-যখন পেয়ারা পারছিলাম, তুই রবীনের সঙ্গে কথা বলছিলি তখন।
-কি বললি।
-বোললাম, তোর শরীর খারাপ। জিজ্ঞাসা করলো সব বললাম।
-তোরটা আমার ঘারে চাপিয়ে দিলি।
-কি মজা বলতো, আজ ওরা চলে আসবে।
-ঠিক আছে, তাড়া তাড়ি কর। ছোটমা এসে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
-থাকুক।
-থাকুক কিরে। তুই তো আমাকে ফুল ঢিলে করে দিচ্ছিস।
-বেশ করছি।
ওকে ঘরে নিয়ে এলাম।
-ওদিকে মুখ করে দাঁড়া।
-আমি ফিরে দাঁড়ালাম।
ও শায়া ব্লাউজ পরে নিলো। দরজা খুললাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছোটমা এলেন, দুজনের জন্য খাবার নিয়ে।
-তুই মুখ ধুয়েছিস। ছোটোমা বললো।
-আমি! কেনো!
-মুখ ধুবি না।
-কাল রাতে ঘুমিয়েছি!
-না ঘুমলে মুখ ধুতে নেই। পিচাশ। বেরো আগে।
মিত্রা হাসছে।
ছোটমার ধমকানিতে ব্রাশ নিয়ে বাথরুমে গেলাম।
-তুমি মুখে বললে কেনো, পিঠে দুচারঘা দিতে পারলে না।
-ছোটমাকে বল, ডাক্তারবাবু এখনো যান নি।
আমি বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম, ছোটমা নেই।
-কিরে ছোটমা গেলো কোথায়?
-তুই বলতে বললি, আমি বললাম, ছোটমা দৌড়ে নিচে চলে গেলো।
-ও।
ঘড়ির দিকে তাকালাম, আটটা বাজে।
-খেয়ে নে।

নিচে আওয়াজ পেলাম, অনি আমার সাক্ষাত দেবতাগো এ যাত্রায় মেয়েটা বেঁচে গেল। কাল আমায় কি গালাগালটাই না দিলে।

আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।

-বুড়ীমাসি!

-তুই গালাগাল করেছিস?

-না।

-ওই যে বলছে?

-দাঁড়া আসুক।

-কোনও কথা বলবি না। তোর প্রতি ওরও একটা অধিকার আছে।

মিত্রা মাথা নিচু করলো।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/ISZfu5G
via BanglaChoti

Comments