কাজলদিঘী (ঊনত্রিংশ কিস্তি)

“কাজলদীঘি”

BY-জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

ঊনত্রিংশ কিস্তি
—————————

অনেক সকালে আমার ঘুম ভাঙলো।

কাল রাতে আমি আগে চলে এসেছিলাম। মিত্রা কখন এসেছে আমি জানি না। আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম। মিত্রাও আমাকে ডাকেনি।

ঘুম ভাঙতে দেখলাম, মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরে শুয়ে আছে। আমি ওকে ডাকলাম। ও উঠে পরলো।

কিরে কটা বাজে?

আমি মিটসেফের কাছে গিয়ে মোবাইলের ঘরিটা দেখলাম।

পাঁচটা বাজে।

মিত্রা ওর আগোছালো শরীরটা ঠিকঠাক করে নিল।

আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম।

নিচে নামলাম। এখনও ভোর হয়নি ভোরের পূর্বাভাস আকাশে বাতাসে।

মুখহাত ধুয়ে ফ্রেশ হলাম। মিত্রা বিছানা গোছাচ্ছে। মাঝে মাঝে আমার দিকে টেরিয়ে টেরিয়ে দেখছে।

আমি পাজামা পাঞ্জাবী ছেড়ে প্যান্ট গেঞ্জি পরলাম। মিত্রা আজ কোনও দুষ্টুমি করলো না। বুঝলাম কালরাতে একটা গোল টেবিল হয়েছে। হয়তো দাদার সঙ্গেও কথা হয়েছে।

কিরে এখুনি বেরবি?

হ্যাঁ।

বড়োমাকে ডাকি?

ডাক। যেতে পারবি?

পারবো।

মনে হচ্ছে মিত্রার একটু একটু পরিবর্তন হচ্ছে। ওর কনফিডেন্টের জায়গা আবার ফিরে আসছে। আমি আমার কাজ করে চলেছি। বুঝতে পারছি মিত্রা কিছু বলার জন্য উসখুস করছে।

বুবুন।

উঁ।

একটা কথা বলবো।

বল।

রেগে যাবি না?

রাগ করবো কেন।

আমি মিত্রার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।

ও আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমার দু-কাঁধে হাত রেখে বুকে একটা চুমু খেল। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

কি বলবি, বল।

কাল নিরঞ্জনদা সব কথা বড়োমাকে বলেছে।

তুই কি বলতে চাস বল।

নিরঞ্জনদার কোনও ক্ষতি হবে না?

নিরঞ্জনদা ব্লাইন্ড হলে ক্ষতি হবে। নাহলে কিছুই হবে না।

তোকে সত্যি কথা বলি।

বল।

বড়োমা এই দায়িত্বটা আমার ওপর দিয়েছে।

আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললাম।

তুই হাসলি।

বড়োমা আমাকে এতো ভালোবাসে, তবু আমার প্রতি বড়োমার বিশ্বাসের বনিয়াদ ততটা পোক্ত নয়।

তা নয়। তোকে আমি যেমন ভয় পাই, তেমনি বড়োমা, ছোটোমাও ভয় পায়। ওদের দৃঢ় বিশ্বাস তুই কোনও অন্যায় কাজ করবি না। তবু কোথায় যেন একটা খটকা লাগছে।

জানি। তোর মধ্যেও এই ব্যাপারটা আছে। কেন? আমি বাঘ না ভাল্লুক?

মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে।

তুই বড়োমাকে বলিস, নিরঞ্জনদা তার স্বার্থ রক্ষার জন্য আমার স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। তাই আমি মেনে নিতে পারছি না।

দাদা শোনার পর ঠিক এই কথা বলেছে। দাদা তোকে সাপোর্ট করেছে। নিরঞ্জনদাকেও খুব বকেছে। এমনকি বড়োমাকেও। দাদাকে কাল প্রথম একটু রাগতে দেখলাম।

নিরঞ্জনদা, বড়োমা কি বললো?

চুপচাপ দাদার কথা শুনে গেছে।

ইসলামভাই ছিল।

হ্যাঁ।

ইসলামভাই মনেহয় তোর ছকটা কিছুটা বুঝেছে।

কি করে বুঝলি?

কালকে দাদার সঙ্গেও কথা হলো, দাদা ইসলামভাইকে সাপোর্ট করলো।

ছোটোমা?

ছোটোমা চুপচাপ। কোনও কথা বলেনি। একবার বলেছে, দিদি আমার দৃঢ় বিশ্বাস অনি কোনও অন্যায় কাজ করবে না।

কোথায় বসে কথা হচ্ছিল?

ওই বাড়ির বারান্দায়।

নিরঞ্জনদা, বড়োমাকে বললো, না বড়োমা জিজ্ঞাসা করলো।

তুই চলে আসার পর নিরঞ্জনদা সবাইকে নিয়ে বারান্দায় গেল। সব বললো। তুই নিরঞ্জনদাকে বলেছিস, তুমি যদি দাদা-বড়োমার পরিচিত না হতে তাহলে তোমাকে ছারতাম না।

হ্যাঁ।

নিরঞ্জনদা ওই কথায় আরও ভয় পেয়েছে। বড়োমার হাতে পায়ে ধরেছে।

দিদি তুমি আমাকে অনির হাত থেকে বাঁচাও। ও যদি একবার লেখা লিখি শুরু করে আমার কেরিয়ার ডুম।

বড়োমা প্রথমে নিরঞ্জনদাকে দেরেমুশে গালাগালি করেছিল। পরে বলেছে অনি আমাকে এই বিষয়ে পাত্তা দেবে না। তুই তোর দাদাকে ফোন কর। আর এই দায়িত্ব মিত্রাকে দে।

তুই কি বললি?

আমি বলে দিয়েছি। এই ব্যাপার নিয়ে আমি বুবুনকে কোনও রিকোয়েস্ট করতে পারবো না। অন্য ব্যাপারে বলো, আমি বলছি।

হাসলাম।

দাদার সঙ্গে আমার ফোন থেকে কথা হলো।

রেকর্ডিং করেছিস?

না।

ছাগল। আমার শোনা হলো না।

যাঃ রেকর্ডিং করা যায়।

আমি মিত্রার গালটা একটু টিপে দিলাম।

দাদা সব শোনার পর তেরে গালাগাল করলো নিরঞ্জনদাকে। বলে কিনা অনি যদি তোর সম্বন্ধে লেখে আমি ছাপবো। এ্যাজ এ এডিটর। তোর কি করার আছে কর। না হলে অনি যা বলবে শুনে যা। ও একটা পরিকল্পনা মাফিক এগোচ্ছে। আর তুই চুনোপুঁটি। তোর পার্টির অনেক রাঘব বোয়াল ওকে ভালোবাসে। আমি খোঁজ খবর নিয়ে সব জানতে পেরেছি।

দাদা ঠিক কথা বলেছে।

তুই এতো কানেকশন তৈরি করলি কি করে!

জেনে কি করবি?

আমার একটু জানতে ইচ্ছে করে।

একটা সময় কোনও কাজ ছিল না, লেখা আর আড্ডামারা। তুইও ছিলি না যে একটু প্রেম করবো।

দ্যাখ দ্যাখ তুই কিরকম হাল্কা ভাবে কথাটা নিলি।

এটা সিরিয়াস ব্যাপার নয়।

তোর কাছে কোনটা সিরিয়াস কোনটা সিরিয়াস নয়, বোঝা মুস্কিল। ইসলামভাই পর্যন্ত তোর ব্যাপার স্যাপারে ঘাবড়ে যাচ্ছে।

এই মিটিং থেকে তুই কি শিখলি?

একটা ব্যাপার শিখলাম, বুবুন ছাড়া আমার বাঁচার কোনও গতি নেই।

মিত্রা আমার বুকে মুখ রাখল। জড়িয়ে ধরলো।

আমাকে ছেড়ে কোনওদিন চলে যাবি না।

যেতে পারি কিন্তু কেন যাব। কার কবিতার লাইন বল।

বলতে পারবো না।

পড়েছিস?

পড়েছি, বোধগম্য হয়নি।

পড়ে নিস ভালো করে।

অনি। বড়োমার গলা।

মিত্রা আমাকে ছেড়ে দিল। আমি বারান্দায় গিয়ে বড়োমাকে মুখ দেখালাম।

কিরে তোর হয়ে গেছে?

অনেকক্ষণ। নিরঞ্জনদা।

তৈরি হচ্ছে।

তাড়াতাড়ি করতে বলো।

আয়।

যাচ্ছি।

আমি মিত্রা দুজনে নিচে নেমে এলাম। মিত্রা শাড়িটা আটপৌরে করে পরেছে। বেশ দেখতে লাগছে। ও এখন বেশ ঝকঝকে। আমরা দুজনে এবাড়িতে এলাম। দেখলাম বারান্দায় সবাই বসে আছে। নিরঞ্জনদা, ইসলামভাই কথা বলছে। আমায় দেখে ইসলামভাই একগাল হেসে বললো। কাল দারুন ঘুমিয়েছিস।

তোমার ঘুম ভালো হয়নি?

তুই ঘুমোতে দিচ্ছিস কোথায়? শুধু টেনসনে ফেলে দিচ্ছিস।

কেন!

কাল আমি দিদিমনিকে তোর কাছে ছাড়তে গেছিলাম।

ডাকলেনা কেন?

তুই যেভাবে ঘুমচ্ছিলি মায়া হলো।

আমি ইসলামভাই-এর পাশে বসলাম। নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাশে হাসি হাসলো।

মর্নিং স্যার।

আর মর্নিং মর্নিং করিস না। চা খেয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি চল।

ইসলামভাই শব্দ করে হাসলো।

বড়োমা আমার পাশে এসে বসলো।

কি ম্যাডাম কাল সব শুনলে ভাই-এর কাছ থেকে?

শুনলাম।

বলুন আপনার হুকুম।

ছোটোমা চা নিয়ে এলো। খামারে অনাদি আর চিকনার বাইক এসে দাঁড়াল।

ওই ভাবে তাকিয়ে আছো কেন। দাওনা ওর কানটা মূলে।

আমি ছোটোমার দিকে তাকালাম। হাসলাম।

হাসিসনা তোর হাসিটা দেখলে গা জ্বলে যায়।

আমার হাতে চায়ের কাপটা দিয়ে বললো, নাও চা গেল।

আমি বড়োমার দিকে তাকালাম। বড়োমা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে পড়ার চেষ্টা করছে।

তাকিয়ে আছো কেন?

তুই কবে আসবি?

পর্শু রেস্ট্রি অফিসে দেখা হবে।

ওখানে গিয়ে আবার কি গন্ডগোল পাকাবি?

আমি চায়ের কাপটা পাশে রেখে, বড়োমার গলা জড়িয়ে ধরলাম।

অনিকে বিশ্বাস হয়না?

না।

কেন?

তুই একটা পাগল। পাগলকে বিশ্বাস করা যায়।

তাহলে দাদাকে বিশ্বাস করলে কি করে?

তখন বয়সটা কম ছিল, তাই।

এখন কমিয়ে ফেল।

পারিনা যে।

তুমি যার জন্য চিন্তা করছো। তোমায় কথা দিচ্ছি তার গায়ে একটা আঁচড় পরবে না। যদি পরে দেখবে তার অবস্থা মলের মতো করে ছেড়ে দেব। তখন অনি সত্যি পাগল হয়ে যাবে।

কথা দিচ্ছিস?

কথা দিলাম।

ঠিক।

ঠিক ঠিক ঠিক তিন সত্যি।

বড়োমা আমার মুখে চোখে হাত বুলিয়ে দিল। চোখটা সামান্য ছল ছল করে উঠলো। আমি বড়োমার গলাটা ছেড়ে দিয়ে চায়ের কাপটা মুখে তুলে নিয়ে নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম।

নিরঞ্জনদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

তুমি ভয় পাচ্ছ কেন?

তুই জানিস না, আমার ওপর কি প্রেসার।

নেতা হবে, প্রেসার উপভোগ করবে না, তা হয়।

তোর জন্য। একটু থেমে মুখটা ঘুরিয়ে। আমি এখানে না এলেই ভালো হতো।

তোমাকে আমি আসতে বলিনি। বড়োমা বলেছে। বড়োমার সঙ্গে বুঝে নাও।

ইসলামভাই আবার হো হো করে জোড়ে হাসলো।

ছোটোমা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। মিত্রা মুখ ধুয়ে চায়ের কাপ নিয়ে এসে আমার পাশে বসলো।

ও চুপচাপ।

ইসলামভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম, তোমার সঙ্গে একটু কথা আছে। খামারে চলো।

এখানে বল। বড়োমা বললো।

হাসলাম।

এটা আমার আর ইসলামভাই-এর ব্যাপার। কেউ মাথা গলাতে পারবে না। আর গলালেও ঢুকবে না।

ইসলামভাই হাসছে।

আমি আর ইসলামভাই খামারে এলাম।

আমি রতনকে বলে দিয়েছি। তোর সঙ্গে দেখা করে নেবে। ইসলামভাই বললো।

রতনের ফোন নম্বর আমার কাছে নেই।

আমার পুরনো নম্বরে ফোন করবি।

রতনেরটা দাও।

ইসলামভাই রতনের ফোন নম্বর দিল। আমি আমার মোবাইলে সেভ করলাম।

আমার ফোন নম্বর রতনের কাছে আছে?

আছে। তোকে ও একটা ব্যাগ দেবে। নিয়ে আসবি।

ওখানকার লেটেস্ট নিউজ।

ফার্স্টক্লাস। তোর কাজ। কোনও খুঁত নেই।

মুখার্জী কোনও খোঁজ খবর করেছিল?

প্রথম দিন, তারপর আর করেনি।

অবতারের খবর কি?

রতন বললো ও এইসব দেখে খুব ভয় পেয়ে গেছে। মনেহয় কাউকে পাঠিয়েছিল। তোকে খুব খোঁজা খুঁজি করছে। তোর সঙ্গে দেখা করতে চায়।

কেন? তুমি কিছু বুঝতে পারছো।

তোকে জিজ্ঞাসা করবো ভেবেছিলাম। তুই যা ব্যস্ত।

ভিআইপি মানুষ।

ইসলামভাই আমার পেটে একটা গুঁতো মারলো। হাসছে।

কেনরে?

মিঃ ব্যানার্জী ওর ঘারে ঝুলে পরেছে। বাঁচতে চায়।

ইসলামভাই-এর মুখটা কঠিন হয়ে গেল।

তুই কি ভাবছিস?

আগে এদিকটা সামলে নেব। মলের শেষ পরিণতি কি হয় দেখব। তারপর হাত দেব।

আমি কালকে হাইকমান্ডে ফোন করেছিলাম।

কি বলছে।

এই ব্যাপারটায় ওরা খুব খুশি।

তুমি কোথায় জানতে চাইল নাকি?

দেখলাম জানে। বললো খুব সেফটি জায়গা। নিরঞ্জনদার ব্যাপারটা শুনলাম।

তুমি কি বলো?

তোর জায়গায় তুই ঠিক আছিস। ওই সচিব ফেঁসেছে।

অনেক কামিয়েছে। নিরঞ্জনদার কে হয়?

মুখে বলছে কেউ নয়। তবে মনে হচ্ছে নিরঞ্জনদার খুব কাছের লোক। এক লবির হবে।

আজকে ওর প্যান্ট খুলবো যাই।

এমনিতেই তোকে ধ্বসছে। একটা আন্ডার স্ট্যান্ডিং-এ যেতে চাইছে। সচিবকে মনে হয় ট্রান্সফার করবে।

তোমায় কে বললো?

হাইকমান্ড।

তুমিও তো ওকে প্রচুর টাকা দিয়েছো।

কি করবো, কাজ করাতে হবে তাই।

আমি আজ অনিমেষদার সঙ্গে কথা বলবো। কালকে খবর পাঠিয়েছি।

তোর লবি আমার থেকে স্ট্রং।

এই তো আবার গল্প দিলে।

ইসলামভাই আমার পেটে আবার খোঁচা মারলো।

পর্শু চলে যাবে রেস্ট্রি অফিসে। আমি সব বানিয়ে নিয়ে আসছি।

শোন আমি চল্লিশ আনাচ্ছি, আর লাগলে বল রতনকে বলে দিই।

আর দশের কথা বলে দাও। লাগলে যাওয়া আসা করছি, নিয়ে আসা যাবে।

আমাকে কবে ছাড়বি।

তোমার কি না গেলেই নয়?

ঠিক তা নয়। তুই বললে কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসব।

আমি যাই, হালচাল বুঝি, তারপর। দামিনীমাসিকে ফোন করেছিলে?

হ্যাঁ। ভজুর সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়েছি। দামিনী কেঁদে ফললো।

চুপ করে থাকলাম।

সত্যি অনি তোর সঙ্গে দেখা না হলে জীবনে অনেক ঘাটতি থেকে যেত।

চলো।

আমরা দুজনে খামার ছেড়ে বারান্দায় উঠলাম। বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। মিত্রা হাসছে। বুঝলাম ওরা সারাক্ষণ আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে ছিল। ওদের চোখ-মুখ তাই বলছে।

নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে বললাম। চলো এবার বেরিয়ে পরি।

নিরঞ্জনদা হতাশার সুরে বললো, চল। আজ তোর ওপর আমাকে নির্ভর করতে হবে। এখানে দিদির সামনে এক বলছিস। গিয়ে দেখবো তুই আর এক মূর্তি ধারন করেছিস।

আচ্ছা তোমার কততো ক্ষমতা, তুমি এখুনি একটা ফোন করলে আমাকে এখান থেকে পুলিশে এ্যারেস্ট করে নিয়ে চলে যাবে। মিথ্যে মামলায় ছ-মাস জেল খাটাবে।

সে তো বুঝলাম, তারপর ছ-মাস বাদে যখন বেরবি তখন তো আমার ষষ্ঠীপূজো করে ছেরে দিবি। তোকে বেশি ঘাঁটায়। যে ঘাঁটাবে সে মরবে।

মিত্রা হি হি করে হাসছে।

তুই হাসিস না। যত নষ্টের গোড়া তুই। নিরঞ্জনদা বললো।

বড়োমা দেখছো। সব দোষ আমার ঘারে চাপিয়ে দিচ্ছে।

থাম তুই।

আমি বড়োমা, ছোটোমা সবাইকে প্রণাম করলাম।

বড়োমা আমার থুতনিটা ধরে চুমু খেলো। আমার সম্মানটা রাখিস।

হাসলাম।

গাড়িতে যেতে যেতে নিরঞ্জনদা আমার সঙ্গে একেবারেই কথা বলছে না। জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আর নিজের ফোনে মাঝে মাঝে কথা বলে চলেছে পার্টির লোক জনের সঙ্গে। সবাইকেই একটা কথা বলে যাচ্ছে, আমি কলকাতা যাচ্ছি, ফিরতে চার-পাঁচদিন সময় লাগবে। শেষে আমি বললাম।

কিগো তুমি কি আমার সঙ্গে কথা বলবে না বলে ঠিক করেছো।

তুই কথা বলছিস না, তাই বলছি না। তোকে বোঝা মুস্কিল।

দাদার সঙ্গে কথা হয়েছে।

হ্যাঁ কালকে রাতে বলেছি। সে তোর থেকে এককাঁটা ওপরে। উল্টে আমাকে ধমক দিল।

কে ঠিক, আমি না দাদা।

তোরা দুজনেই ঠিক, আমি একমাত্র ভুল।

হাসলাম।

হাসিস না তোদের দু-জনের কথা শুনে আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।

আচ্ছা ভদ্রলোক তোমার কতটা কাছের মানুষ।

আমার আত্মীয়।

দাদা জানে?

না।

তাহলে!

তাহলে আবার কি, জানলে আরও গালাগালি করবে।

ভদ্রলোকের ট্রান্সফারের অর্ডার হয়ে গেছে।

নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তুই এটা কি করলি!

আমি করিনি। অনিমেষদা করেছে।

নিরঞ্জনদার গালে কেউ যেন একটা থাপ্পর মারলো। থম মেরে কিছুক্ষণ বসে রইলো।

কিছু বলো।

কি বলবো। কি ভাবছে বলতো পার্টিতে। সকলে কানা ঘুষো একটাই কথা বলবে, আমি এর মধ্যে জড়িত।

ওই দায়িত্বটা আমার ওপরে ছেড়ে দাও।

তুই দায়িত্বটা নিবি!

অবশ্যই নেব।

তুই বিশ্বাস কর, আমি অনেকবার বারন করেছি, শোনেনি। দাদা তোর কথা বলেছে। গা করিনি। তোকে প্রথম দেখার পর দাদাকে সব বলেছি।

পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ নেই।

না-রে বিশ্বাস কর। পার্টিতে অনেকেই জানে ও আমার আত্মীয়।

কি রকম আত্মীয়?

আমার ছোটো বোনের হাজবেন্ড।

দাদা জানে?

না। আমার জন্যই ও ওখানে পৌঁছতে পেরেছে।

ভদ্রলোকের আরও দোষ আছে।

কালকে তুই বলার পর খোঁজ খবর নিতে শুরু করলাম। তখন সব পরিষ্কার হলো। বোন বললো।

তোমার বোনের কপালটা খারাপ।

বোনের সঙ্গে আমার কপালটাও পুরলো।

তোমারটা পুরবে না।

ভদ্রলোকের এ্যাগেনস্টে তদন্ত কমিশন গঠন হবে।

হোক। শালা মরুক। তারপর আমি বুঝে নেবো। তুই আমাকে বাঁচা। পার্টিতে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে। কালকে থেকে আমার অপনেন্ট লবি উঠে পরে লেগেছে।

তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। আমি তোমায় কথা দিচ্ছি।

তোর কথা আমি বিশ্বাস করি না। তুই আর এক রাজনীতিবিদ, ঝপ পাল্টি খেয়ে যাবি।

এই তো তুমি ফর্মায় ফিরে এসেছো। এত হতাশ হলে পার্টি করবে কি করে?

তুই জানিস না অনি, এতদিন আমি পার্টি করছি কেউ আমার সম্বন্ধে টেঁ-ফুঁ করতে পারেনি। আজ ওর জন্য আমাকে পথে বসতে হবে। তাই তোকে নিয়ে যাচ্ছি। যদি তুই আর না লিখিস তাহলে হয়তো বেঁচে যাবে। যতোই হোক ওপরের দিকে থুতু ফেললে নিজের গায়ে পড়ে।

তোমার সঙ্গে অনিমেষদার আলাপ আছে।

মুখ চেনে, নাম জানে, মাঝে দু-একবার মিটিং-এ কথা হয়েছে। সেই ভাবে কথা হয়না। তোর কথা মতো ওরা বড়োভাই আমি ছোটোভাই, ফুর্তি করি। কালকে তোর কথাটা শুনে খুব রাগ হয়েছিল, মন খারাপও লাগছিল। তারপর ভেবে দেখলাম তুই টোটাল ব্যাপারের নির্যাসটা বলেছিস।

এবার বলো তুমি কি করতে চাও?

তুই যে ভাবে বলবি করবো।

দাঁড়াও।

আমি ফোনটা হাতে নিয়ে অনিমেষদাকে ডায়াল করলাম। ভয়েজ অন করলাম। যাতে নিরঞ্জনদা শুনতে পায়।

হ্যালো।

দাদা আমি অনি। সুপ্রভাত।

বাবা, খুব ফুর্তিতে আছিস মনে হচ্ছে।

একবারেই না।

গলাশুনে মনে হচ্ছে।

কি করছো?

চা খেতে খেতে তোর লেখাটা পড়ছি। আর ব্রিফ করছি।

কেন দাদা, আমার লেখাটা কি এতই ইমপর্টেন্ট যে ব্রিফ করতে হবে।

তুই আমায় সমস্যায় ফেলেছিস।

আমি আবার কি সমস্যায় ফেললাম?

শুক্রবার মিটিং, আমাকে বিষয়টা নিয়ে বলতে হবে।

কেন জেরক্স তোমার কাছে আছে।

খুঁজে পাচ্ছি না। তুই কি ফিরছিস?

কি করে বুঝলে?

গাড়ির আওয়াজ পাচ্ছি।

হ্যাঁ। আজকে একবার তোমার কাছে যাব।

আমিও তোকে তাই বলবো মনে করেছিলাম। তুই আমার মুখের কথাটা কেরে নিলি।

আমার একটা সমস্যা হয়েছে।

তুই তো সমস্যা ছাড়া আমাকে ফোন করিস না। তোর বৌদিকে করিস।

এটা অভিমানের কথা।

তোর বৌদি লেখাটা পড়তে পড়তে বলছিল, অনি বড্ড ভালো লিখে ফেলেছে।

এটা অসম্ভব রকমের বারাবারি হয়ে যাচ্ছে।

তোর সমস্যার কথা বল।

আজ আমাকে সরকারের এক আমলা ডেকে পাঠিয়েছে। তাই যাচ্ছি।

আবাসন দফতরের?

হ্যাঁ।

একবারে যাবি না। লোকটা অনেক দিন থেকে জ্বালাচ্ছে। ওটাকে দূর করতে হবে। ওর আরও অনেক সমস্যা আছে। ওটাকে এমন জায়গায় পাঠাব, আর কোনওদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।

তাহলে আমি যাব না?

একবারে যাবি না। তোর কাজ তুই করেছিস। ওর ক্ষমতা থাকলে প্রমাণ করুক।

আমিও সেটা দাদাকে বলেছিলাম। তবু ওরা দাদাকে প্রেসার করেছে।

মহা মুস্কিল।

তাই দাদা বললো তুই নিরঞ্জনকে নিয়ে একবার যা।

কে নিরঞ্জন?

বাবা তুমি পার্টির মাথা হলে কি করে বলো তো?

অনিমেষদা হো হো করে হেসে ফেললো।

আরে পার্টি ওই একটা নিরঞ্জনকে নিয়ে চলে। বলনা কে সেই মহান ব্যক্তি?

নিরঞ্জনদা আমার দিকে ফ্যাকাশে চোখে তাকিয়ে আছে।

আমার জেলার সভাধিপতি।

হ্যাঁ হ্যাঁ ভদ্রলোকের সঙ্গে একবার আলাপ হয়েছিল। মনে পড়ছে। ওই জেলার দায়িত্বে বিধানবাবু আছেন।

বৌদি কি সকালে চা-টা কড়া করে দেয়নি?

না-রে আজকের চা-টা কেমন পাতলা পাতলা করেছে।

দাদার সম্পর্কে ভাই হয়, আমায় উনি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন।

বলছি না একবারে যাবি না। তুই তো ফাইল নম্বর ধরে ধরে লিখেছিস। এটার দরকার ছিল।

আমি নিরঞ্জনদার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলছি।

সব জায়গায় কোরাপশন। এত চেষ্টা করেও কিছুতেই বন্ধ করতে পারছি না। এইসব লোকের জন্য আমাদের সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তুমি বললে যাব, না বললে যাব না।

তুই এক কাজ কর, নিরঞ্জনবাবুকে নিয়ে দুপুরে আমার বাড়িতে চলে আয়, একসঙ্গে খাওয়া যাবে।

দাদা, মল্লিকদা যদি সঙ্গে যায়, আপত্তি আছে?

একবারে না। অনেকদিন দেখা হয়নি কয়েক ঘণ্টা গল্প করা যাবে।

ঠিক আছে।

আমি তোর বৌদিকে বলে রাখছি, তুই আসছিস।

তুমি যেতে বললে, আমি যাব না, তা হয়।

ঠিক আছে।

ফোনটা আফ করলাম। রেকর্ডিংটা সেভ করলাম। নিরঞ্জনদা আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।

অনেকক্ষণ থেকে দেখছি একটা গাড়ি আমাদের গাড়িটাকে ফলো করছে। ভিউইংগ্লাসে গাড়ির মুখটা দেখতে পাচ্ছি। একটা ডিস্টেন্স রেখে আসছে। ফোনটা পকেটে ঢোকালাম।

নিরঞ্জনদা আমার হাতটা ধরে ফললো। অনি আজ আমার দফারফা হয়ে যাবে।

কেন!

আমি অনেক অন্যায় করেছি।

ভুল স্বীকার করে নেবে। অনিমেষদা নিজের দায়িত্বে সব ঠিক করে দেবে। অনিমেষদার মুখের ওপরে কথা বলার মতো লোক এই মুহূর্তে পার্টিতে খুব কম আছে।

জানি। তোর সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠতা কি করে হলো।

জেনে তোমার লাভ।

না বুঝতে পারছি পার্টিতে টিঁকে থাকতে গেলে তোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।

আমি ব্যবসায়ী লোক। আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে লাভ নেই।

নিরঞ্জনদা আমার হাতটা ধরে আছে। প্লিজ তুই এরকম করিস না।

আমার ছশো একর জমি।

তুই যা ভাঁজ মারলি, আমি না দিলেও তুই আদায় করে নিবি।

বৃথা তুমি বড়োমাকে কাল রাত থেকে টেনসন খাওয়ালে। এই মাথা নিয়ে কি করে যে পার্টি করো বুঝতে পারি না।

সত্যিরে মনেহচ্ছে আমার এখনও শেখার অনেক বাকি আছে।

কার জোড়ে জেলা সভাধিপতির পদটা বাগিয়েছো।

বিধানদাই দিয়েছে।

তখন তুমি ভালো ছিলে, দু-বছরে অনেক কামিয়ে নিয়েছো, তাই না?

তুই এভাবে বলিস না।

পার্টিটা কামানোর জায়গা নয়। ভালবাসার জায়গা। জানো, অনিমেষদার বাড়িতে গেলে তুমি অবাক হয়ে যাবে। কিন্তু ভদ্রলোক যদি মনে করতেন, আমি রাজপ্রসাদে থাকবো। এখুনি তা করতে পারেন। এক পয়সাও লাগবে না।

জানি।

তাহলে পার্টি তোমাকে পুষবে কেন?

আমার ভুল হয়ে গেছে।

তুমি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছ। ভুগতে তোমাকে হবে। আমি চেষ্টা করবো রিকভার করার। কিন্তু কতটা পারবো জানি না।

তুই একটু দেখ।

আমি তোমার পেছনে বলছি না। তোমার সামনে বলছি। এখন থেকে তোমার ভগ্নীপতিকে মুখ মুছে ফেলে দাও। নাহলে তোমার সামনে ঘোর বিপদ।

আমি কি করবো বল?

আগে বড়োমাকে ফোন করে সব জানাও। বড়োমা কষ্ট পাচ্ছে, এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।

ঠিক আছে, ফোন করছি।

তোমার ফোন থেকে নয় আমি ফোন করছি, তুমি কথা বলবে। আমার শোনার দরকার আছে।

তাই দে।

আমি মিত্রার ফোনে ডায়াল করলাম।

কিরে ধাবায় বসে গিলছিস, তাই না?

হ্যাঁ। আলুপরটা, চিকেন চাঁপ, মটর পনির।

দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি।

ঠিক আছে বড়োমাকে দে।

বড়োমা তোর কথা শুনতে পাচ্ছে।

তোরা কোথায়?

তোর স্কুলে এসেছি। ঘুরতে।

কে কে আছে?

সবাই আছে।

খুব বাড়িয়ে বাড়িয়ে আমার গুণকীর্তন করছিস।

বেশ করছি। নে বড়োমা কথা বলবে।

দে।

হ্যালো।

গলাটা গম্ভীর গম্ভীর, এখনও অনির ওপর রাগ পরেনি।

তোর ওপর রাগ করবো কেন।

তাহলে অভিমান।

চুপচাপ।

অনি ভুল কাজ করেনা। এটা বহুবার বলেছি। আবার মনে করিয়ে দিলাম কথাটা। নাও নিরঞ্জনদার সঙ্গে কথা বলো।

নিরঞ্জনদার হাতে ফোনটা দিলাম।

দিদি।

বল।

আমার সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।

তাই!

বড়োমার গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে গেছে।

তোর সঙ্গে আর কথা বলবো না। অনিকে দে।

আমি ইশারায় নিরঞ্জনদাকে বললাম তুমি কথা বলো। আমি বলবো না।

কিরে চুপচাপ কেন। অনিকে দে।

অনি তোমার সঙ্গে কথা বলবেনা।

তাহলে রেখে দে। তোর সঙ্গে যা কথা ছিল বলা হয়ে গেছে। মিত্রা ফানটা বন্ধ কর।

বড়োমা ফোনটা রেখেদিল।

আমি ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে জানলার দিকে মুখ করে বসে থাকলাম। কলকাতার খুব কাছে চলে এসেছি। আবার পকেট থেকে ফোনটা বার করে দাদাকে ডায়াল করলাম। দেখলাম এনগেজ। মল্লিকদাকে ডায়াল করলাম। দেখলাম এনগেজ। পকেটে ঢুকিয়ে রেখে দিলাম।

জানলার দিকে মুখ করে চুপচাপ বসে রইলাম। কিছু ভালোলাগছে না। এক স্বপ্ন দেখি আর এক হয়ে যায়। মানুষের জীবনের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলো মাঝে মাঝে এমন ভাবে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, তল খুঁজে পাওয়া যায় না। এখান থেকেই মানুষের জীবনে জটিলতার সৃষ্টি হয়। একে ওপরকে ভুল বোঝে। দূরত্ব তৈরি হয়।

ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বারকরলাম। দেখলাম মল্লিকদার ফোন।

বলো।

সরি স্যার তোর ছোটোমার সঙ্গে একটা ভাইট্যাল ব্যাপার নিয়ে কথা বলছিলাম।

বলো কি বলছো।

বাবা খুব গম্ভীর মনে হচ্ছে।

না। ঠিক আছি।

কলকাতা ঢুকতে আর কতটা পথ বাকি।

আধঘণ্টা। তোমরা কোথায়?

অফিসে ঢুকে পরেছি।

এত সকালে!

তুই যা শুরু করেছিস। এরপর খাট বিছানা নিয়ে অফিসেই থাকতে হবে।

কেন!

সবাই এসে তোকে খোঁজে। না পেলে দাদা, আমি।

ভালোই তো ভিআইপি হয়ে যাচ্ছ।

ক্ষমা দে। বুঝেছি তোর কথা বলার মুড নেই এখন। অফিসে আয় সব বলছি।

ঠিক আছে।

অফিসের গেটে গাড়িটা থামতেই সিকুরিটির ছেলেটা এগিয়ে এলো।

দরজা খুলে স্যালুট করে পাশে দাঁড়াল। আমি ভাবলেশহীন মুখে একবার চারদিকটা দেখে নিলাম। নিরঞ্জনদা আমার পেছন পেছন গাড়ি থেকে নামলো।

গাড়িটা ভতরে রাখার ব্যবস্থা করে দাও।

হ্যাঁ স্যার।

আমি দরজা খুলে রিসেপসনিস্ট কাউন্টারের সামনে আসতেই সেই ভদ্রমহিলা উঠে দাঁড়িয়ে মর্নিং স্যার বলে উঠে দাঁড়ালেন। আমি খুব গম্ভীর হয়ে লিফ্টবক্সের সামনে দাঁড়ালাম। নিরঞ্জনদা আমার পেছনে। আমাকে মেপে চলেছে। লিফ্ট ওপরে ছিল, বোতামে হাত দিতে নিচে নেমে এলো। আমি ওপরে উঠলাম।

নিরঞ্জনদা তুমি দাদার ঘরে বসো। চেনো ঘরটা?

না।

এসো।

নিরঞ্জনদা আমার পেছন পেছন এলো, আমাকে দেখেই হরিদা বলে উঠলো। ছোটোবাবু কখন ফিরলে?

এখুনি। দাদা ভেতরে?

হ্যাঁ।

আমি দরজা খুলতেই দাদা আমার দিকে তাকাল। আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে বললাম যাও ভেতরে গিয়ে বসো। আমি আসছি।

নিরঞ্জনদা ভেতরে গেল।

তুই আসবি না?

আমি ওপর থেকে আসছি।

সিঁড়িদিয়ে ওপরে উঠে গেলাম। সোজা চলে এলাম সনাতনবাবুর ঘরে। সনাতনবাবু আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন। ছোটোবাবু সব ঠিক আছে?

হ্যাঁ।

আমার কাজ সব হয়েছে।

রেডি আছে। এখন দেব?

না। ফোন করলে দাদার ঘরে চলে আসবেন।

আমি সনাতনবাবুর ঘর থেকে নিউজরুমে চলে এলাম।

আমার টেবিলটার সামনে দেখলাম তিন চারটে ছেলে বসে আছে। চিনতে পারলাম না। নিউজরুমে ঢুকতে মল্লিকদা আমায় দেখেছে। আমি একবার দেখলাম, তারপর নিজের টেবিলের সামনে গেলাম। ছেলেগুলো প্রথমে বুঝতে পারেনি। তারপর মল্লিকদার ইশারায় যে যার চেয়ার ছেরে উঠে দাঁড়াল। তারপর আস্তে আস্তে নিজের জায়গায় চলে গেল।

আমি টেবিলে বসলাম। নিজের চিঠিপত্রের বান্ডিলটা একবার দেখলাম। দেখলাম ঝিমলি আর তনুর চিঠি আছে। বাকি গুলো সব আমার লেখার ওপর, আর কিছু ইনভিটেসন কার্ড। মোবাইলটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রার ফোন।

বল।

তুই কি অফিসে পৌঁছে গেছিস?

এতক্ষণে খবর চলে যাওয়ার কথা।

তোর কি হয়েছে বল না?

কিছু না।

যাওয়ার সময় হাসতে হাসতে গেলি।

আমি ঠিক আছি।

বড়োমা মন খারাপ করছে।

দোষ করেছে ফল ভোগ করতে হবে। এখন রাখ, কথা বলতে ভালো লাগছে না।

আচ্ছা।

মল্লিকদা কাছে এলো।

শরীর খারাপ।

না।

মন খারাপ।

না।

তাহলে কেমন কেমন যেন লাগছে।

মল্লিকদার টেবিলের ফোনটা বেজে উঠলো।

যাও তোমার ফোন এসেছে।

আমি ঝিমলির চিঠিটা খুলে পড়লাম। ফোন না করার জন্য অনেক কথা লিখেছে। অনেক মান অভিমান। ডাক্তারিতে চান্স পেয়েছে। আগামী সপ্তাহে ভাইজ্যাক যাবে, আমাকে একবার সময় দিতে হবে।

মল্লিকদা কাছে এসে বললো। দাদা তোকে একবার ডাকছে।

তুমি যাও, আমি যাচ্ছি।

মল্লিকদা চলে গেল।

আমি তনুর চিঠিটা পড়লাম। তনু অনেক কথা লিখেছে। বিবিসির একটা ভালো পোস্ট হোল্ড করছে। আমি মালিক হয়েছি সেই খবরটা কেন জানাইনি তার জন্য তলব করেছে। পারলে একবার লন্ডন যাওয়ার অনুরোধ করেছে। আর আমার চেয়ে পাঠানো ডকুমেন্টস। ভালো করে ডকুমেন্টসগুলো দেখে নিলাম।

আমি নিউজরুম থেকে সোজা চলে এলাম দাদার ঘরে। দেখলাম তিনজনে বসে কথা বলছে।

কিরে তোর নাকি মেজাজ বিগড়ে গেছে? দাদা আমার দিকে তাকিয়ে।

আমি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে বসতে বললাম। এ খবরটা তোমায় কে দিল?

তোর বড়োমা বললো।

একটু চা খাওয়াবে।

সকাল থেকে কিছু খেয়েছিস?

না।

কি খাবি বল?

ডিম টোস্ট বলো। নিরঞ্জনদাও কিছু খায়নি।

দাদা বেলে হাত দিতেই হরিদা ঘরে এলো।

হরি চারটে ডিমটোস্ট বানিয়ে নিয়ে আয়।

হরিদা বেরিয়ে গেল। আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকালাম।

তুমি ওরকম ভেটকিমাছের মতো মুখ করে বসে আছো কেন। দাদাকে বলেছো?

নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকিয়ে। বলেছি।

দাদা কি বললো?

তুই চুপ কর। তোর জন্য সব গণ্ডগোল। নিরঞ্জনদা চেঁচিয়ে উঠলো।

হেসে ফেললাম।

ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বার করলাম। দেখলাম মিঃ ব্যানার্জীর ফোন। প্রথমে ভাবলাম রিসিভ করবো না। তারপর ঠিক করলাম রিসিভ করি।

হ্যাঁ দাদা বলুন।

অনিবাবু খবর কি?

খুব ভালো, আপনার প্রাক্তন স্ত্রীকে গান্ধর্ব মতে বিবাহ করলাম। আপনার কথা রেখেছি। খুশী তো।

মিঃ ব্যানার্জী চুপ করে গেলেন। কোনও কথা বললেন না।

কি হলো কথা বলছেন না কেন। আপনি খুশী নন।

দেখলাম সবার চোখমুখের চেহারা বদলে গেল।

আপনার সঙ্গে একটু দরকার ছিল। মিঃ ব্যানার্জীর গলাটা গম্ভীর।

আপনি কথাটা শুনে কানে খটকা লাগলো। তবু গায়ে মাখলাম না।

আমি জানি।

কবে সময় হবে?

দিন সাতেকের আগে হবে না।

আমার একটু তাড়া ছিল।

আপনি আপনার কাজ গুছিয়ে নিন। আপনার এখনও বেশ কিছু কাজ বাকি আছে।

আজই একটা সময় দিন। খুব দরকার।

হবে না। আমি কলকাতায় কয়েকঘণ্টার জন্য এসেছি। আবার ফিরে যাব। মিত্রার সঙ্গে কথা হয়েছে।

না।

রাখি।

একটু সময় পাওয়া যাবে না।

যাবে, সাতদিন পর। ওই যে আপনার কাছ থেকে সময় চেয়ে নিলাম।

ফোনটা কেটে দিলাম।

আমার চোখে মুখের চেহারা যে বদলে গেছে দাদা সেটা বুঝতে পেরেছে।

আমি দাদার টেবিলের ফোনটা কাছে টেনে নিলাম। সনাতনবাবুকে ফোনে ধরে বললাম, আমাদের কমপিউটার ডিভিশনের চিফ ম্যানেজারকে একটু ডেকে আনুন তো।

দাদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকদা গম্ভীর। নিরঞ্জনদা ফ্যাকাশে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। হরিদা প্লেটে করে খাবার নিয়ে ঢুকলো।

আমি একটা প্লেট টেনে নিয়ে গোগ্রাসে গিলতে আরম্ভ করলাম।

কিরে ওই ভাবে খাচ্ছিস! দাদা আমার দিকে তাকাল।

দরকার আছে।

কোথাও যাবি আবার?

দেখোনা রগড়টা।

ওরা তখনও খাবারে হাত দেয়নি। আমার খাওয়া হয়ে গেল। ঢক ঢক করে জলটা গিলে নিলাম।

আর এক প্লেট আনাই।

না।

তুই আমারটা খা। মল্লিকদা বললো।

উঃ তোমরা বড়ো বিরক্ত করো।

ওরা অবাক হয়ে আমাকে দেখছে।

সনাতনবাবু ঘরে ঢুকলেন। পেছন পেছন সেই ব্যক্তি। উনি হয়তো আগে আমায় দেখেছেন, আমি এখনও পর্যন্ত ওনাকে দেখিনি। আলাপও হয়নি।

বসুন।

ভদ্রলোক বসলেন।

আপনার নাম।

দিগন্ত চৌধুরী।

আমি অনি ব্যানার্জী।

আমি জানি স্যার।

আজ আপনার সঙ্গে পরিচিত হলাম।

আমি হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।

হরিদা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। আমিতাভদা আমাকে গোগ্রাসে গিলছে। মল্লিকদা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সনাতনবাবু ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছেন।

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দিগন্তবাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম।

আমার একটা উপকার করতে পারবেন।

বলুন।

দশটা থেকে দশটা পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত এই সময়ে আমাদের হাউস থেকে আউটগোয়িং আর ইনকামিং কলের একটা লিস্ট আমাকে একটু বের করে দিতে পারবেন।

হ্যাঁ। এই টুকু কাজ!

খুব সামান্য। কিন্তু কনফিডেন্সিয়াল। আশারাখি আপনি সেটুকু বজায় রাখবেন।

অবশ্যই। এখুনি এনে দিচ্ছি।

চা খেয়ে নিন। আর একটা কথা, আপনি এটা নিজে হাতে করবেন, কাউকে দিয়ে নয়।

ঠিক আছে।

উনি চা খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি সনাতনবাবুর দিকে তাকালাম।

সুনিতদার চিঠিটা রিসিভ হয়ে এসেছে।

সনাতনবাবু মাথা দোলালেন। হ্যাঁ।

কিংশুকের।

হ্যাঁ।

টাকার কথা কি বললো।

দিতে পারবে না।

ঠিক আছে। আমার কাগজগুলো নিয়ে আসুন।

সনাতনবাবু বেরিয়ে গেলেন।

আমি নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে বললাম। দাদাকে যাওয়ার ব্যাপারটা বলেছো।

না।

কেন?

তুই বলবি।

বাঃ আমি কলা ছাড়িয়ে দেব, তুমি গিলবে।

তুই আর কত অপমান করবি।

দেখছো দাদা, নিরঞ্জনদা কি বলছে।

আমি শুনলাম ওর মুখ থেকে। অনিমেষ কি বলছে?

কেন সব নিরঞ্জনদাকে শুনিয়েছি। কিছু গোপন করিনি।

কিরে নিরঞ্জন তুই এটা বলিসনি।

এমনকী বড়োমার সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দিয়েছি।

তুই কথা বলিসনি কেন?

একটু কষ্টপাক না হলে শক্ত হবে না।

আমাকে অন্ততঃ ছ-বার ফোন করেছে।

তোমার আনন্দ হচ্ছে না?

কেন!

তোমাকে কোনওদিন বড়োমা এইভাবে ছ-বার ফোন করেছে?

দাদা হো হো করে হেসে ফেললো।

মল্লিকদা মুচকি মুচকি হাসছে।

দায়িত্ব নিয়ে ভায়ের উপকার করতে যাবে, একটু কষ্টপাবে না তা হয়।

আমি ফোন করি।

সে তুমি করতে পারো, আমি কথা বলবো না।

আবার হাসি। কিরে নিরঞ্জন বুঝতে পারছিস।

নিরঞ্জনদা মাথা নীচু করে বসে আছে।

দাদাকে আর সব খোলাখুলি বলেছো, না পেটে রেখে দিয়েছো।

সব বলেছি।

ওখান থেকে ফোন এসেছিল? টাইম ওভার হয়ে গেছে।

না ফোন আসেনি।

তাহলে বুঝতে পারছো। কাজ শুরু হয়ে গেছে।

নিরঞ্জনদা আমার মুখের দিকে তাকাল।

তাকিয়ে লাভ নেই। এটাই অনির ক্ষমতা। মুখে যা বলে তা করে। দিদিকে ফোন করেছ?

না।

কেন!

চুপচাপ।

তোমার জন্যই কিন্তু মানুষটা সকাল থেকে কষ্ট পাচ্ছে। একদিকে অনি আর একদিকে নিরঞ্জন। না পারছে ওগড়াতে না পারছে গিলতে। উভয় সংকট।

নিরঞ্জনদা ফিক করে হেসে ফললো।

দিগন্তবাবু দরজা ঠেলে মুখটা ঢুকিয়ে বললো, আসতে পারি।

আসুন।

ভদ্রলোক আমার পাশের চেয়ারে এসে বসলেন। আমাকে লিস্টটা দিয়ে বললেন, আর কিছু আপনাকে সাহায্য করতে পারি।

না। অসংখ্য ধন্যবাদ। আজ আপনার সঙ্গে ঠিক জমিয়ে গল্প করতে পারছি না। হাতের কাজগুলো আগে শেষ করি তারপর আপনার সঙ্গে কথা বলবো।

ঠিক আছে। আমি আসি।

আসুন।

আমি কল লিস্টের দিকে ভালো করে চোখ বোলালাম।

দাদাকে বললাম, পেনটা দাও তো।

দাদা পেনটা এগিয়ে দিল। আমি বেশ কয়েকটা নম্বর দাগ দিলাম। ফোনটা তুলে নিয়ে সনাতনবাবুকে রিং করলাম, দেখলাম নো রেসপন্স হয়ে যাচ্ছে। বুঝলাম ভদ্রলোক ঘর থেকে বেরিয়ে পরেছেন।

আমার কথাই ঠিক। মিনিট খানেকের মধ্যে সনাতনবাবু দাদার ঘরে ঢুকলেন। বসলেন। আমাকে কাগজগুলো হাতে দিলেন।

কি ব্যাপার ছোটোবাবু অফিসে সবাই কিরকম তটস্থ তটস্থ মনে হচ্ছে।

কি করে বলবো। আপনি এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার, আপনি খোঁজ খবর নিন।

কাগজগুলো দেখতে দেখতে হিমাংশুকে একটা ফোন লাগালাম।

কিরে কোথায়?

অফিসে।

একবার আসবি।

কেন।

একটু দরকার আছে।

একটা জরুরি কাজ করছি।

রেখে চলে যায়। মিনিট দশেকের জন্য।

এই তুই শুরু করে দিলি।

আয় না।

আচ্ছা।

ফোনটা রেখে সনাতনবাবুর দিকে তাকালাম।

সনাতনবাবু আমাদের রিসেপসনিস্ট ভদ্রমহিলাকে একটু ডাকুন।

সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। ব্যাপারটা ঠিক বোধোগম্য হচ্ছে না। রিসেপসনিস্ট ভদ্রমহিলা এডিটর রুমে আসবে! ব্যাপারটা কি?

দাদা মল্লিকদা আমার দিকে কেমন সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছে।

কি হলো হাঁ করে তাকিয়ে আছেন কেন! ডাকুন।

আমার গলার স্বর কর্কশ।

এইবার নিরঞ্জনদা একটু নড়ে চড়ে বসলো। আমার দিকে কট কট করে তাকিয়ে আছে।

সনাতনবাবু ফোন করলেন।

দাদাকে বললাম হরিদাকে আর এক রাউন্ড চায়ের কথা বলো।

কিছু খাবি?

না।

কিছুক্ষণপর ভদ্রমহিলা এলেন। আমার দিকে তাকিয়ে একগাল হাসলেন। সেই ছলবলিয়া ভাবটা এখনও অক্ষুন্ন। আমিও হাসলাম।

বসুন ম্যাডাম।

উনি বসলেন।

ম্যাডাম আপনাকে অনেকে বিরক্ত করছে তাই না?

একবারেই না।

আপনার কাজ করতে কোনও অসুবিধে হচ্ছে না তো?

না স্যার।

স্যার! মুখ তুলে তাকালাম।

আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবেন।

বলুন।

কললিস্টটা দেখিয়ে বললাম এই নম্বরগুলো কারা চেয়েছিল আপনাকে, একটু জানাতে হবে। আপনি রিসেপশন টেবিলটা কন্ট্রোল করছেন।

এইবার ভদ্রমহিলা যেন আকাশ থেকে পড়লেন।

দাদা মনে হয় আমার চালটা এইবার কিছুটা হলেও ধরতে পেরেছে। মুখ তাই বলছে। নিরঞ্জনদার চোখ যেন ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। সনাতনবাবু আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মল্লিকদা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো।

ম্যাডাম আমার সময় কম। মুখ নীচু করে বসে থাকলে চলবে না।

ভদ্রমহিলা কিছুতেই মুখ তুলছে না। ফোঁস ফোঁস করে কাঁদতে আরম্ভ করলো।

কাঁদছেন কেন? আমি কি আপনাকে কোনও অপমান সূচক কথা বললাম।

ভদ্রমহিলা মাথা দোলালেন। না।

তাহলে আপনার আপত্তি কোথায়?

ভদ্রমহিলা রুমাল দিয়ে চোখ মুছছেন।

কিগো রনিতা অনি যা বলছে তুমি উত্তর দিচ্ছ না কেন?

আমি বলতে পারব না দাদা।

কেন?

ওরা আমার ক্ষতি করবে।

কে তারা, বলবে তো।

সনাতনবাবু ওনাকে শোকজ করুন। উত্তর দিতে না পারলে, স্যাক করুন। আমি বললাম।

সনাতনবাবুর মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল।

স্যার আমি বলছি। রনিতা ম্যাডাম বললেন।

বলুন।

উনি পর পর নাম বলেগেলেন। তার মধ্যে চম্পকদা যেমন আছে সনাতনবাবুর নামটাও আছে। নিউজ ডিপার্টমেন্টের একজন আছে। আর্ট ডিপার্টমেন্টের একজন আছে।

আমি পার্টিকুলার একটা নম্বর টিক দিয়ে বললাম এই নম্বরটা কে চেয়েছে বলতে পারবেন।

এটা সনাতনবাবু চেয়েছিলেন।

আপনার কাছে নোটিং করা আছে।

আছে।

আপনি খাতাটা নিয়ে আসুন।

ভদ্রমহিলা বেরিয়ে গেলেন।

দাদা রাগে ফুলছে। আমি কুল। নিরঞ্জনদা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে। সনাতনবাবু মাথা নীচু করে বসে আছে।

কি দাদা, এখনও শিক্ষা হলো না।

আমি সনাতনবাবুর দিকে তাকালাম।

বিশ্বাসকরো ছোটোবাবু ওই মেয়েটার মতো আমাকেও প্রেসার করা হয়েছে।

কে করেছে?

মিঃ ব্যানার্জী।

কেন।

আপনার সঙ্গে ওনার হিসাব এখনও বাকি আছে। নাহলে….।

একজন মাস্তান গোছের লোক দিয়ে আপনাকে ফোন করিয়েছে।

হ্যাঁ।

সবাইকে এখানে ডাকুন।

সনাতনবাবু একে একে সবাইকে ফোন করে করে ডাকলেন।

সবাই ঘরে এলো।

সবার মুখে এরই মধ্যে একপোচ করে কালি পড়েগেছে। ঘর ভরে গেছে। চম্পকদা মাথা নীচুকরে ঘরে ঢুকলো। আমি চুপচাপ বসে আছি। মল্লিকদা নির্বাক।

আমি রতনকে ফোন করলাম। ভয়েজ অন করে। সবাই শুনুক।

হ্যাঁ অনিদা, আমি তোমার খুব কাছেই আছি।

জানি তুই থাকবি।

দাদার হুকুম।

ডঃ ব্যানার্জীর ওখানে কে আছে?

লোক আছে, তোমায় চিন্তা করতে হবে না।

কুত্তাটা এখন কোথায় আছে?

তোলতাই করে নিয়ে এসেছি। গ্যারেজে।

ঠিক আছে তুই তোর জায়গায় থাক। সময় হলে ফোন করবো।

আচ্ছা।

দাদার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। বুঝতে পারছি এখুনি পারলে এদের আঁচড়ে কামরে ছিঁরে দেবে।

ডঃ ব্যানার্জীকে ফোন করলাম।

হ্যালো।

আমি জানতাম তুমি ফোন করবে।

জানতেন!

অবশ্যই।

আরে দাদা আপনার বুদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সহজ কথা নাকি। পাকা মাথা বলে কথা। লাইনে কতদিন আছেন। আমি জানতাম….

যা বলার পরিষ্কার করে বলো।

এরকম হিজরেদের ফৌজ বানালে চলে?

কি বলতে চাও।

এখনও পরিষ্কার হচ্ছে না। আপনার সৈন্য সামন্তরা সব আমার সামনে মাথা নীচু করে বসে আছে।

তুমি জানো আমি কি করতে পারি।

মহান ব্যক্তি আপনি, আপনার কত ক্ষমতা। অনি সে জায়গায় চুনোপুঁটি।
-বক বক না করে কাজের কথা বলো।

যার ওপর নির্ভর করে আপনি এই কীর্তি করছেন, সে তো গ্যারেজ।

ডঃ ব্যানার্জী অট্টহাসি হেসে উঠলেন।

একবার ফোন করে দেখুন, নো রেসপন্স পাবেন।

আমার সামনে বসে আছে।

ওটা ড্যামি। টাকা কামানোর জন্য।

কি বলছো!

আরে সামনে যখন বসে আছে জিজ্ঞাসা করুন।

কিরে অবতার, কি বলছে অনি?

উনি ঠিক কথা বলছেন।

শুয়োরের বাচ্চা।

খিস্তি করবেন না। দেব খুপরিতে দানা ভরে।

তার মানে!

আমি হো হো করে হেসে উঠলাম।

ডাক্তার সাহেব এইবার আপনার বিচক্ষণ বক্তব্য রাখুন।

কি বলতে চাও।

যদি মনে করি আপনার ডাক্তারখানা থেকে এখুনি তুলে আনবো। কাকপক্ষী কেউ টের পাবে না।

আমার গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে গেল। ঘরের সবাই আমার দিকে চমকে তাকাল। নিরঞ্জনদা যেন ভূত দেখছে। দাদা মল্লিকদা গুম।

সবাই চুপচাপ।

কি প্যান্টে পেচ্ছাপ করে ফেলেছেন?

কি বলতে চাও।

আপনার ডাক্তারি সার্টিফিকেটটা জাল। সেটা আজ এইমাত্র লন্ডন থেকে আমার হাতে এসে পৌঁচেছে।

অসম্ভব।

আগামীকাল কাগজে একটা গুছিয়ে আর্টিকেল লিখি। আপনি কোর্টে প্রমাণ করবেন সত্যি না মিথ্যে। এখন তো কয়েকদিনের জন্য গ্যারেজ হয়ে যাবেন।

স্কাউন্ড্রেল।

চু চু চু চু রাগ করছেন কেন। এতবড়ো খেলা খেলতে নেমেছেন। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়। অনির সঙ্গে টক্কর নিতে বসেছেন। একটা দুধের শিশু বলে কথা। এই সময় রাগ করলে চলে?

তুমি কি ভাবছো মিত্রা ছাড়া পাবে।

ওটা নিয়ে আপনি ভাবছেন কেন। আপনি আগে আপনারটা ভাবুন।

অনি তুমি আমার এতবরো ক্ষতি করো না। প্লিজ….

হঠাৎ গলার স্বরটা বদলে গেল মনে হচ্ছে? আমি বললাম।

চুপচাপ।

আপনার নামে লন্ডনে আর একজন ডাক্তার প্র্যাক্টিশ করছে। তার নাম এবং সার্টিফিকেট ভাঙিয়ে আপনি এখানে মেডিকেল কাউন্সিলে রেস্ট্রি করেছেন। বেশ গুছিয়ে মৌরসি পাট্টা শুরু করে দিয়েছেন।

অনি বিশ্বাস করো।

আমার লোক আপনার গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। পালাবার চেষ্টা করবেন না।

আমি এখুনি তোমার কাছে যেতে চাই।

এতো তাড়াহুড়ো করছেন কেন।

প্লিজ।

আপনার বিশ্বস্ত লোকদের কে ধমকেছে?

অবতার।

এরা তার নাম জানতো?

না।

কতটাকা দিয়েছেন?

না মানে….।

ত ত করবেন না। আপনার অবস্থা মলের মতো করে ছেরে দেব। বাঁচতে চান না মলের মতো মরতে চান?

বাঁচতে চাই।

বাবাঃ এত কীর্তি করার পরও বাঁচার সখ আছে?

আছে।

মিত্রা ছাড়া কটা মেয়ের সর্বনাশ করেছেন?

তুমি বিশ্বাস করো।

এখানে আমার গুরুজনেরা বসে আছেন। নাহলে আপনাকে ধুয়ে দিতাম।

ইস তুমি এ কি করলে।

বাবাঃ যেন আপনার সতীত্ব হরণ করলাম?

চুপচাপ।

আপনার বিশ্বস্ত অনুচরদের জন্য কি ম্যাসেজ রাখছেন?

আর কোনওদিন বিরক্ত করবো না।

করলে কি হবে?

যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেব। প্লিজ তুমি আমায় বাঁচাও।

আমি হেসে ফললাম।

বাবা আপনি যে সিংহ শাবক থেকে একেবারে পোষা কুকুর বনে গেলেন।

তুমি যা বলবে।

আপনার ওই টমিটাকে আমার কথা শোনাচ্ছেন।

শানাচ্ছি।

দ্যাটস গুড। ফিফটি পার্সেন্ট শেয়ার কার নামে আছে?

কিসের!

নার্সিংহোমের?

ওটা লন্ডনে আছে।

ফাইন্যালি কালকের কাগজে লেখাটা লিখছি।

আমার কাছে আছে।

এই তো লক্ষ্মীছেলের মতো কথা।

তুমি এভাবে বলো না।

বাবা, স্ত্রীর সঙ্গে একটু খুনসুটি করবো না। কার নামে আছে?

অমিতাভদা ফিক করে হেসে ফেললো।

আমার নামে আছে।

আপনার না আপনার ছেলের নামে?

আমার নামে।

আপনার আর আপনার ছেলের নাম এক?

না। নামটা ওর আছে সইটা আমার।

বাঃ আপনার গুণে তো নুন দেওয়ার জায়গা নেই। কজন জানে ব্যাপারটা?

কেউ জানে না।

মিত্রার কাছ থেকে কটা স্টাম্প পেপারে ব্ল্যাঙ্ক সই করিয়েছেন?

সব আমার কাছে আছে।

এই তো গুড বয়ের মতো কথা বলছেন।

কালকে সকালে দাদার বাড়িতে চলে আসবেন সব নিয়ে। না হলে বুঝতে পারছেন।

হ্যাঁ সব বুঝতে পারছি।

কাল পর্যন্ত আপনাকে পাহাড়া দেওয়ার মতো লোক রেখে দিচ্ছি। কাল কাজ মিটে গেলে তারপর আপনি স্বাধীন। কারুর সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করবেন না। তাহলে সব গড়বড় হয়ে যাবে।

ঠিক আছে।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/egMvxSW
via BanglaChoti

Comments