❝কাজলদীঘি❞
BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৫ নং কিস্তি
—————————
কনিষ্কদের একটা পেপার আছে বুঝলে বড়োমা, ডেড বডি দেখে পরীক্ষা দিতে হয়। তাও আবার ফ্রেস বডি হতে হবে। এটা আনসিন কোশ্চেনের মতো। কিরকম বডি পড়বে কেউ জানে না। ধরো তোমার বডি আর ছোটোমার বডি এক।
না। ও একটু রোগা আমি একটু মোটা।
তেমনি মিলির বডি আর সুরোর বডি এক।
না।
অতএব অন দ্যা স্পট বডি দেখে পরীক্ষা দেওয়া খুব টাফ। তার থেকে যদি বডিটা আগে দেখে নেওয়া যায় তাহলে বডির কেমন স্ট্রাকচার সে গুলো বুঝে নেওয়া যায়। পরীক্ষাটা ভালো হয়, নম্বর ভালো পাওয়া যায়। গ্রেডেসান বেড়ে যায়।
এই বডি থাকে কোথায়?
মর্গে।
সেখান থেকে বডি বার করে এনে ট্রেতে রাখা হয়। সবাই দেখে আর পরীক্ষা দেয়। অনেক মাপ জোক আছে, ওটা ওরা ভালো বলতে পারবে।
তুই মর্গে ঢুকলি! মিত্রা বললো।
হ্যাঁ।
গন্ধ লাগে নি।
ও তো ভালো গন্ধ।
সবাই এমাগো করে উঠলো।
পরীক্ষার আগের রাতে ওদের হস্টেলে যেমন যাই তেমন আড্ডা মারতে গেছি। দেখলাম কনিষ্কর ঘরে সবাই এসে উপস্থিত। গুরুগম্ভীর আলোচনা চলছে।
নীরু বললো, অনি তুই এ যাত্রায় বাঁচা। বললাম কেন রে, আবার ভূত। ওরা সব ডিটেলসে বললো। আমি বললাম দাঁড়া আমার পরিচিত লোকটার ডিউটি যদি মর্গে থাকে তাহলে হিল্লে হয়ে যাবে।
তোর সঙ্গে ডোমেদের পরিচয় আছে! ছোটোমা বললো।
হ্যাঁ। ওরা আমার নিউজ সোর্স।
তোর আর কোথায় কোথায় নিউজ সোর্স আছে বলতো। বড়োমা বললো।
তাহলে তোমায় বলছি কি বড়োমা। টিনা বললো।
অগত্যা আমাকে সেই রাতটা থেকে যেতে হলো। বেলাবেলি তো আর কাজ হবে না। যখন সবাই শুয়ে পড়বে তখন কাজ সারতে হবে।
রাত তখন বারোটা সারে বারোটা বাজে।
মেডিকেলের মর্গটা একটু ব্যাকোয়ার্ড পজিসনে বুঝলে। আমি গেলাম। চারিদিক নিস্তব্ধ। ওখানটা একটু একটু অন্ধকার। ব্যাটারা লাইট লাগালেও ভেঙে দেয়।
কেন।
মদ খেতে অসুবিধা।
দেখলাম আমার পরিচিত লোকটা নেই ওর এক সাগরেদ আছে। সে আমাকে চেনে। বসে মদ গিলছে। কাছে যেতেই বললো, ভেতরে তোমার মাল আছে নাকি অনিদা? বললাম আছে।
কেন তোর কি প্রচুর মরা বন্ধু ছিল। বড়োমা বললো।
ঠিক তা নয় সে আবার অন্য গল্প বলতে হয় তোমাকে।
এটা আগে শুনি পরে ওটা শুনবো।
মিত্রা হাসছে। সুরো আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে এসেছে।
ডোম ব্যাটা বললো, কোনটা বলো?
বললাম, বিকেলে লাইনে গলা মেরেছে। আলটপকা আর কি। বুঝলে। ওরা বলেছে পরীক্ষায় ফ্রেস বডি দেবে।
গলাকাটা বডি ফ্রেস বডি! মিত্রা বললো।
কেন তোর বডি দেবে পরীক্ষার খাতায়, ছাগল।
সবাই হাসে।
তোর বডিটা দিতে পারতো।
তাহলে কাল বিয়ে করতে পারতিস না।
উঃ থাম না মিত্রা। বৌদি বললো।
দেখছো বৌদি, বড়োমা কেমন চুপ করে শুনছে। এই বেলা কিছু বলতে পারছে না।
বলবো, আগে শুনে নিই।
তা বললো একটা আছে, আনওটেড (ওয়ান্টেড) বাডি (বডি) পোস্টমটেম (মর্টেম) হয়নি। ওরাও মাঝে মাঝে ইংরাজী ঝাড়ে। সে ইংরাজী শুনলে তোমার মাথা খারপ হয়ে যাবে।
আমি বললাম, কেন।
কাল নতুন ডাক্তারদের কি কাজে লাগবে, তারপর পোস্টমর্টেম হবে।
বুঝে গেলাম ওই বডিটা কনিষ্কদের দেবে।
চলতো দেখি, আমার পরিচিত লোকের বডি ডাক্তারদের কাজে লাগাব।
ও ব্যাটা বলে কি, একটা বোতলের দাম দাও।
আমি সেই সময় হাঁসবো না কাঁদবো। পকেটে একটা পয়সাও নেই।
তোকে পরে দেব।
এখুনি দাও, আমি মাল কিনতে যাব।
বুঝলাম সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে, ওকে টাকা দিয়ে মাল কিনতে পাঠিয়ে দেব। আমরা আমাদের কাজ করবো।
ঠিক আছে তুই একটু বোস, আমি বন্ধুদের ডাকি আমার কাছে পয়সা নেই, ওদের কাছ থেকে চেয়ে দিচ্ছি।
সে তখন নেসার ঘোরে, কনিষ্কদের ডেকে আনলাম। ওরা দশ বারো জন। ওরা পয়সা দিল। ব্যাটা যাওয়ার সময় আমাকে বললো। তুমি নিজের মতো করে দেখে নাও। তারপর আমি এসে সাইজ করছি। তুমি তো আমাদের ঘরের লোক।
কনিষ্করাই চাবিটাবি খুলে ঢুকে পরলো। আমি পেছনে।
মর্গের ভেতরে ঢুকলাম। জীবনে প্রথম মর্গে ঢোকা। ঢুকেই আমার চক্ষু ছানা বড়া। ট্রেতে জায়গা নেই বলে। এখানে ওখানে ছড়িয়ে আছে পচা গলা বডি। সে গন্ধে আমার অন্নপ্রাসনের ভাত উঠে আসার জোগাড়। দেখি দেয়ালে একটা লোক হেলান দিয়ে বসে আছে। মাথা নেই। মাথাটা তার কোলে। বড়োমার দিকে তাকালাম।
একবার ভাবো।
তুই থাম, আর বলতে হবে না।
এ কি গো! না শুনলে জানবে কি করে, ডাক্তার হতে গেলে কতো কসরত করতে হয়।
দিদি তুমি কানে আঙুল দাও, আমরা একটু শুনি। ছোটোমা বললো।
বল শুনি। বড়োমা ঢোক গিলে বললো।
কনিষ্করা সবকটা বডি দেখে বললো মনে হয় কালকে এই বডিটা পাবো বুঝলি নীরু। এটাই যা একটু ফ্রেস আছে।
মাথা নেই।
শেলাই করে বসিয়ে দিলেই হলো।
বটা বলে উঠলো, দাঁড়া মালটাকে জোড়া লাগাই।
মর্গের ভেতর তখন বিয়ে বাড়ি।
ওরা হাসছে।
আমি ওদের রগড় দেখছি। গন্ধে বমি এসে যাচ্ছে। ওরা দিব্বি আছে। অভ্যেস আছে। সেই কন্দকাটা বডিটাকে পেটা পিটি করে শুইয়ে গলাটা ধরের কাছে রাখলো। তারপর সব স্কেল দিয়ে মেপেমুপে লেখালিখি করতে বসে গেল।
একবার বুকের কাছে মাপে আর একবার ঠ্যাং মাপে কেউ পেট মাপে। বডির পুরো স্ট্রাকচারটা খাতায় ড্রইং করলো। আমি চারিদিক চেয়ে চেয়ে দেখি। মর্গ থেকে বডি আনতে গেছি। কিন্তু মর্গে ঢুকিনি। একপাশে দেখি একটা মেয়ের বডি পরে আছে গায়ে একফোঁটা কাপর নেই। চারিদিকে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। মানে ওটা কাটা হয়ে গেছে।
বটা বলে, চল মেয়েটার বডিটা একটু দেখে নিই।
কনিষ্ক বললো দেখছিস না ওটা সাবার হয়ে গেছে। ভেতরে কিছু মাল নেই।
অনিকেত, নীরু মেয়েটার বডি টেনে এনে ওই কন্দকাটার পাশে শোয়াল।
আমি ওদের রগড় দেখছি। কারুর কোনও হেল দোল নেই। এর মধ্যে নীরু বলে উঠলো।
বুঝলি কনিষ্ক দেখে মনে হচ্ছে কুমারী মেয়ে, জীবনে এখনও কিছু পায়নি বুঝেছিস।
কনিষ্কর দিকে তাকিয়ে ভাবছি এই বুঝি নীরুর পাছায় কষিয়ে একটা দেয়।
মালটাকে বিয়ে দিয়ে দে গলা কাটার সঙ্গে।
সঙ্গে সঙ্গে বটার ঝেড়ে লাথি নীরুর পেছনে। তখন মর্গের ভেতর হুলুস্থূলুস কাণ্ড।
মর্গের ভেতর তোরা মারামারি করছিস! বৌদি বললো।
আমি না ওরা। করবে না?
মানে!
আনন্দে। পরীক্ষার কোশ্চেন পেপার আউট। ভাবো দেখি একবার, আগামীকাল তোমার সবচেয়ে টাফ পেপারের পরীক্ষা, আর আজ তুমি কোশ্চেন হাতে পেয়ে গেলে তোমার কি হবে।
আবার যেখানে যেমন ছিল গুছিয়ে গাছিয়ে সবাই মিলে মর্গের বাইরে এলাম। সে কি আনন্দ বড়োমা কি বলবো, যেন মনে হলো গ্যাস চেম্বার থেক বেরলাম। ব্যাটা তখন বেহেড মাতাল, মর্গের গেটে তালা বন্ধ করে চাবি দিলাম। সোজা বৌবাজার, সারারাত হোটেল খোলা, সবাই মিলে মাংস ভাত খেলাম।
হাত ধুয়েছিলি? বড়োমা বললো।
মনে নেই।
ওই হাতে খেলি? মিত্রা বললো।
কাঁধটা মিত্রার নাকের কাছে ঠেকিয়ে দিয়ে বললাম, গন্ধটা শোঁক, এখনও মর্গের পচা মরার গন্ধ পাবি।
দেখছো বড়োমা।
তুই বললি কেন?
তুমি তো প্রথমে বললে।
হাওয়া ওদিকে ঘুরে গেছে।
ছোটোমার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
চা। এইতো।
তুমি কতো বোঝ। জড়িয়ে ধরলাম।
আর আদর দেখাতে হবে না। ভালোপাহাড়ে কবে নিয়ে যাবি।
টিনারা সকলে হই হই করে উঠলো।
তোরা চেঁচাচ্ছিস কেন? বড়োমা বললো।
একটু আগে অনিদাকে বলেছি পাত্তা দেয়নি। বলে কিনা অনেকটা হাঁটতে হবে। মিলি বললো।
কনিষ্কর মুখ থেকে শুনেছি। খবর পাঠালে ওরা মাথায় করে নিয়ে যাবে। ছোটোমা বললো।
তাহলে কনিষ্ককে বলো।
চা পাবি না।
বাইরেটা দেখ অন্ধকার হয়ে আসছে।
ও ছোটো, ওকে বলেছিস। বড়োমা, ছোটোমার দিকে তাকাল। চোখে মুখে বিষ্ময়।
কখন বলবো। দেখলে তো সবাই এসে জমে গেলাম।
আমার দিকে তাকিয়।
এই তুই নিচে চল, তোর সঙ্গে কথা আছে।
মিত্রার দিকে তাকালাম। মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে। বুঝলাম ও কিছুটা জানে।
ওরা সবাই বসে রইলো। আমি ছোটোমা, বড়োমার পেছন পেছন নিচে এলাম। দামিনীমাসি ভজুরামও নিচে চলে এলো। দেখলাম ইসলামভাই তার দলবল নিয়ে কাজ করছে। পুরো দায়িত্ব ইসলামভাই-এর ঘারে। আমি সোফায় বসলাম।
চা এলো। ভজুরামের হাত দিয়ে চায়ের ট্রে ওপরে চলে গেলো। চা খেতে খেতে ছোটোমা বললো। আজ রাতে তোর এ বাড়িতে থাকা হবে না।
কেন!
কাল রাত্রি। আজ তোর মিত্রার মুখ দেখা হবে না।
ভীষণ ফাজলাম করতে ইচ্ছে করছিল। করলাম না। নিজেক চেক করে নিলাম।
ঠিক আছে আমি ফ্ল্যাটে চলে যাচ্ছি।
তোর একা যাওয়া হবে না। তোর সঙ্গে কেউ যাবে।
না তা হবে না। আমি একা যাব, কেউ আমার সঙ্গে থাকতে পারবে না।
কি বদমাশরে তুই। বৌদি বললো।
আমি হাসছি।
তুই আমার বাড়িতে চল।
না তা হবে না।
তাহলে তোকে যেতে হবে না। নিচের ঘরে তালা বন্ধ করে রাখি। ছোটোমা বললো।
তাও হবে না। আমি ঠিক ওর মুখ দেখে নেব।
বড়োমা হাসছে।
ও ছোটো ও যা খুশি করুক, আমাদের কাজ হয়ে গেছে। ও এবার ওরটা বুঝে নিক।
বুঝলাম আমার কথায় এদের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় রয়েছে। ঝোপ বুঝে কোপ মারলাম।
কটায় বেরতে হবে।
সন্ধ্যে হওয়ার আগে।
সন্ধ্যে হতে আর কি বাকি আছে? বাইরেটা একবার দেখ।
ঠিক আছে। আর ঘণ্টা খানেক পরে বেরবি।
এখুনি বেরিয়ে যাই। তাহলে আমারও কিছু কাজ করা যাবে।
মিত্রাকে বলে যা।
মিত্রা জানে না!
জানে, তবু তুই একবার বলে যা। ওর ভালো লাগবে।
আমি ছোটোমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে একবার হাঁসলাম। ওপরে এলাম। দেখলাম ওরা সবাই গল্প করছে। মিত্রা আমাকে দেখে একবার হাসল।
কিগো অনিদা, কি বললো ছোটোমা। টিনা বললো।
আমাকে তারিয়ে দিল।
মিত্রা হাসছে। ওর দিকে তাকিয়ে বললাম।
আজকে আমার মতো জামা প্যান্ট পরি।
মিত্রা মাথা দোলাল, পর। কাল কখন আসবি?
চলে আসব।
ফোন স্যুইচ অফ করবি না।
এটা কথা দিতে পারবো না।
কেন বলছিস ওকে। দেবা বললো।
তোরা থাকবি না চলে যাবি?
হয়তো তোর ওখানে চলে যেতে পারি।
যাসনি।
কেন!
বাঁধা গরু ছারা পেলে কি হয় জানিস।
তোকে যেতে হবে না। আমি গিয়ে ছোটোমাকে বলছি। মিত্রা বললো।
মিত্রা খাট থেকে নিচে নেমে এলো।
মহা মুস্কিল দুটো মন খুলে কথাও বলা যাবে না?
এই যে তুই বললি, বাঁধা গরু ছারা পেলে….।
ঠিক আছে তুই রাতে লোক পাঠা, দেখ আমি আছি কিনা।
তা করবো কেন, তুই মুখে বলেছিস এটাই যথেষ্ট।
আমি আমার মতো গেঞ্জি জিনসের প্যান্ট ড্রয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলাম। সোজা ছোটোমার ঘরে। মিত্রা পেছন পেছন এলো।
তুই চলে যাবি একটুও ভালো লাগছে না।
বিয়ে করতে গেলি কেন।
আমি করলাম, তুই তো করতে গেলি।
বাবাঃ, ঘটা করে সখ মেটালি, একটু কষ্ট করবি না।
তোর কষ্ট হচ্ছে না।
হচ্ছে, তবে তোর মতো নয়।
মিত্রা পেটে খোঁচা মারল।
দাঁড়া।
মিত্রার দিকে ফিরে তাকালাম।
মিত্রা দরজার সামনে গিয়ে একবার বারান্দায় উঁকি মারল। বুঝলাম দরজা বন্ধ করার ধান্দা।
ও ভুল করিস না। ছোটোমা হানা দিতে পারে।
দিক। এখন আর ভয় নেই।
ভয়ের বাকিটা কি রেখেছিস?
আমি পাজামা পাঞ্জাবীটা খুললাম।
কি ছোটো।
আবার। সারারাত ঘুম হবে না।
একটু।
একবারে না।
মিত্রা তবু আমাকে জাপ্টে ধরলো। ঠোঁটে ঠোঁট রাখল।
এবার ছাড়।
তুই যেন ঘোড়ায় জিন দিয়ে এসেছিস।
এখুনি ইচ্ছে করবে।
কর।
আজ ওসব করতে নেই।
আমার নাম করে অন্য কাউকে করিস। তাহলেই আমাকে করা হয়ে যাবে।
মিত্রার দিকে তাকালাম। চোখের মনি স্থির।
ওমনি মন খারাপ হয়ে গেল।
আমি প্যান্ট পরতে শুরু করলাম।
কিরে ভেতরে কিছু পরবি না।
হাসলাম।
হাসছিস যে।
দেখ ভুল করে কি নিয়ে এসেছি।
মিত্রা খিল খিল করে হেসে উঠলো।
তুই আমারটা নিয়ে এসেছিস।
তুই যে আমার প্যান্টের তলায় গুঁজে রাখবি কি করে জানবো।
তখন তাড়াহুড়ো করে তোর প্যান্টের তলায় গুঁজে বাথরুমে গেছিলাম।
তারপর আর পরিসনি?
না।
বেশ করেছিস।
সাবধান কিন্তু।
নিশ্চিন্তে থাকতে পারিস।
দুজনে ছোটোমার ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
কখন আসবি?
হয়তো দেখবি তুই ঘুমচ্ছিস, আমি এসে কড়া নারলাম।
মিত্রা হসে উঠলো।
দুজনে নিচে নেমে এলাম। আমাকে দেখে ছোটোমার চোখে বিস্ময়।
কিরে এট পরেছিস কেন! তোর আর জামা প্যান্ট নেই?
মিত্রার দিকে তাকিয়ে। তুই কি করছিলি, ও যখন এটা পরলো।
আমাকে বললো, আমার পছন্দ মতো পরি।
তুই একেবারে গদোগদো হয়ে বললি, পর।
মিত্রা মাথা নীচু করে হাসে।
কি খাবি?
কিছু না।
রাতে মনুর হাত দিয়ে খাবার পাঠাব।
পাঠিয়ো না।
কেন! তুই ওখানে যাচ্ছিস না?
কে বললো যাচ্ছি না।
আমি লোক পাঠাচ্ছি।
তাহলে অনি তার পূর্ব অবস্থায় ফিরে যাবে।
ছোটোমা চুপ করে গেল। মুখটা হঠাৎ গম্ভীর। বড়োমা এগিয়ে এলো।
কেন গোঁয়ার্তুমি করিস।
এ তো মহা মুস্কিল। আমি কি এখনও ছোটো আছি।
আমার কথার ধরণে সকলে হাসছে। একমাত্র ছোটোমা গম্ভীর।
তুমি লোক পাঠিয়ো। তবে রাত বারটার পর। তার আগে কিছু কাজ আছে, সারবো।
ছোটোমা তবু গম্ভীর।
বুঝলাম কথাটা বলা বুমেরাং হয়ে গেছে।
আবার কাছে গেলাম, জড়িয়ে ধরলাম। একটু আদর করলাম। আবার স্বাভাবিক।
ঠিক আছে। তুমি রাতে খাবার পাঠিও। আর ভজুকে পাঠিয়ে দিও।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম একটা কাজ করবি।
বল।
আমাকে গোটা কুড়ি ড্রইং পেপার আর রংয়ের বাক্সটা এনে দে, পারলে বোর্ডটাও।
মিত্রা ছুটে বেরিয়ে গেল।
ছোটোমা হাসছে।
তুমি গম্ভীর হয়ে গেলে মেজাজ বিগড়ে যায়। একটা মিষ্টি দাও, একটু জল খাই।
মাসি লুচি ভাজছে। দুটো খেয়ে যা।
তাই দাও।
ছোটোমা ছুটে চলে গেল।
বড়োমার দিকে তাকিয়ে বললাম, ভজুরাম কোথায়?
দেখ বাগানে কোথায় লাইট লাগাচ্ছে। তাদের পেছন পেছন ঘুরছে।
বাইরের বারান্দায় এসে ভজুরামকে ডাকলাম। দেখলাম ইসলামভাই এসে হাজির।
কিরে কোথায় যাচ্ছিস?
বনবাসে।
ইসলামভাই হাসছে।
বিয়েতো করলে না, জ্বালা বুঝবে কি করে।
তোকে দেখে মনে হচ্ছে এবার একটা বিয়ে করে ফেলি।
কেউ মেয়ে দেবে না এই বুড়ো বয়সে।
ইসলামভাই জোড়ে হেসে উঠলো।
বল না কোথায় যাচ্ছিস?
জানিনা। রাস্তায় বেরই আগে।
মানিপার্টস থেকে ফ্ল্যাটের ডুপ্লিকেট চাবিটা বার করলাম। ইসলামভাই-এর হাতে দিলাম।
এটা কি করবো।
ছোটোমার হুকুম, রাতে একা থাকা যাবে না। তুমি ভজুরামকে ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেবে। আমি ঠিক সময় চলে আসব। বাকিটা ছোটোমা তোমাকে বলে দেবে।
তোর সঙ্গে রাতে আমি থাকবো। আপত্তি আছে?
আছে।
তুই সোজা সুজি বলে দিলি।
ছোটোমার হুকুম, ভজুরাম ছাড়া কেউ থাকবে না।
আচ্ছা।
কিরে আমি কখন থেকে খাবার নিয়ে বসে আছি। ছোটোমা দরজার বাইরে থেকে চেঁচাল।
আমি ফিরে তাকালাম।
মনুকে বলেছিস?
জিজ্ঞাসা করো।
ইসলামভাই হাসছে।
ওমা এসে দেখি দুটোর জায়গায় গোটা দশেক লুচি। মিত্রা ওপর থেকে সব গুছিয়ে নিয়ে নিচে চলে এসেছে। ইসলামভাই আমার প্লেট থেকে দুটো লুচি তুলে মুখে নিল। ইলামভাই-এর দেখা দেখি মিত্রাও দুটো লুচি তুলে নিল।
ছোটোমা চেঁচিয়ে উঠলো। কিরে তোরা সবাই খেলে ও খাবে কি!
ওর জন্য বেশ তড়িজুত করে সাজিয়ে দিয়েছ। আমার জন্য দাও? প্লেটে আরও আছে, খাক না।
আমি হাসছি। আমারা তিনজনে ভাগাভাগি করে খেলাম। তারপর বেরিয়ে এলাম।
গেটের বাইরে এসে দেখলাম, বাড়িটা বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। চারদিকে সাজো সাজো রব।
মনে মনে যেটা ঠিক করেছি সেটাই করবো।
প্রথমে ভাবলাম রিমঝিমদের বাড়িতে যাই। ওকে মডেল করে কিছু ছবি আঁকি, তারপর ভাবলাম না ওর থেকেও তিয়ার শারীরিক গঠন আরও শার্প। ওকে মডেল করলে ভালো হয়।
রাজী হবে কি? বলেই দেখি না।
সঙ্গে সঙ্গে তিয়াকে একটা ফোন লাগালাম। রিং বাজতেই ফোন ধরলো।
একটু চেঁচামিচির আওয়াজ। অপর প্রান্ত থেকে তিয়ার গলা ভেসে এলো।
হ্যালো, অনিদা দাঁড়াও, আমি তোমাকে রিং ব্যাক করছি।
তিয়া ফোনটা কেটে দিল।
ট্র্যাংগুলার পার্কের দিকে হাঁটতে আরম্ভ করলাম।
তিয়া ফোন করলো।
বলো অনিদা। আমি তো ভড়কে গেছিলাম।
কেন।
তুমি আমাকে ফোন করবে, এ সৌভাগ্য আমার আছে। আমি কি রিমঝিম।
থাক তাহলে, আর যাব না।
তার মানে!
ভাবছিলাম হাতে একটু সময় আছে তোমার বাড়িতে যাব।
এ কি সৌভাগ্য আমার, চলে এসো।
তুমি কোথায়?
ক্লাবে।
তাহলে থাক, তোমার বন্ধুরা আবার কি ভাববে।
দূর, সব বোগাস বুঝলে, এখানে আসি টাইম পাস করার জন্য।
তোমার বাড়িতে এখন কে কে আছেন?
কেউ নেই।
কেন, বাবা-মা?
বাবা মা এখানে থাকেন না।
ওরে বাবা তাহলে যাওয়া যাবে না।
সত্যি তুমি এখনও সেকেলে রয়ে গেলে। একটু আধুনিক হও তো। ঝিমলিদি ঠিক কথা বলেছে।
হাসলাম, কোথায় তোমাদের বাড়ি?
নিউ আলিপুর। তুমি কোথায় আছো বলো, আমি তোমাকে পিকআপ করে নিচ্ছি।
আমি রাসবিহারী কানেকটরে দাঁড়াই।
তাই দাঁড়াও আমি পার্কস্ট্রীটে আছি, আধঘণ্টার মধ্যে তোমার কাছে পৌঁছে যাচ্ছি।
চলে এসো।
ফোনটা কেটেই, সুজিতদাকে একটা ফোন লাগালাম।
সুজিতদা ধরলো।
কিরে ব্যাটা তুই কোথায়, অ্যাতো গাড়ির আওয়াজ পাচ্ছি।
লেক মার্কেটের গা দিয়ে হাঁটছি।
এখন!
একজায়গায় যাব। তুমি কোথায়?
অফিসে।
তোমার এতো পয়সা খাবে কে বলো?
কেন তুই আছিস।
হাসলাম।
আমার কাজ কতদূর?
চলছে।
আচ্ছা অনি সত্যি তোর রবিবার বিয়ে?
হয়ে গেছে।
কবে।
গতকাল। আগামীকাল বৌভাত। সেই জন্য তোমায় আসতে বলেছি।
আগামীকাল তোর বৌভাত! তুই এখন লেক মার্কেটে হাওয়া খাচ্ছিস?
শোনোনা তুমি কখন বাড়ি ফিরছো।
কেন বলতো।
একটু দরকার আছে।
আরও একঘণ্টা।
মানে আটটা বাজবে।
হ্যাঁ।
শোবে কখন?
সাড়ে এগারটা বারটা।
আমি যাব।
কি পাগলের মতো বলছিস, আমার ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না।
তোমাকে বুঝতে হবে না। আমি যাব। জেগে থাকবে।
তোর বৌদিকে ভর্সা করে ফোনে বলতে পারি তুই আসবি।
অবশ্যই।
ঠিক বলছিস?
আরে বাবা….।
তোকে এখনও বিশ্বাস হয় না।
গেলেই বুঝতে পারবে।
ফোনটা কেটে দিলাম।
রাসবিহারী কানেকটরে এসে দাঁড়ালাম।
ঝিমলির মাকে একটা ফোন করলাম। সঙ্গে সঙ্গে উনি রিসিভ করলেন। ঝিমলির খবর জানতে চাইলাম। উনি বললেন ভাইজ্যাকে মিঃ মারান ঝিমলির জন্য খুব সুন্দর একটা থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। স্টেশন থেকে ঝিমলিকে গাড়িতে করে পিকআপ করে নিয়ে গেছে। এমনকি মারানের ফোন নম্বর পর্যন্ত দিয়ে এসেছে। যদি কোনও প্রবলেম হয় যেন একবার ফোন করে। উনি খুব খুশী। ঝিমলি আমাকে বেশ কয়েকবার ফোনে সব জানাতে চেয়েছিল, আমার ফোনের স্যুইচ অফ। টিনা, মিলি, অদিতির খুব প্রশংসা করলেন।
কাল সন্ধ্যার দিকে একটু সময় হবে?
কেন বলো।
আমার ট্র্যাংগুলার পার্কের বাড়িতে একটু আসতেন।
কেন?
এমনি একটা ছোটখাটো ভোজসভা আছে।
বিয়ে করছো?
ওই রকম আর কি।
উনি হাসছেন।
সত্যি অনি আজকের দিনেও তোমার মতো একটা সেকেলে ছেলের দেখা পাওয়া যায়।
তা নয়। আমার আত্মীয় স্বজন বলতে কেউ নেই। তাই নিজেকেই….।
যাব।
ঝিমলি নেই। রিমঝিমকে সঙ্গে নিয়ে চলে আসবেন। মানে সবাই।
উনি হাসছেন।
ঠিক আছে, ঠিক আছে।
ফোনটা কেটে দিলাম।
সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে না। কয়েকটা লজেন্স কিনলাম। আর ক্যান্ডি।
চার মাথায় এসে দাঁড়ালাম। একটা ক্যান্ডি মুখে দিয়ে চিবোতে শুরু করলাম। ফোনটা বেজে উঠলো দেখলাম তিয়ার ফোন।
কোথায় আছো?
দেখো আমি মেট্রো স্টেশনের গায়ে দাঁড়িয়ে আছি।
হুস করে একটা গাড়ি আমার সামনে এসে দাঁড়াল বেশ দামী গাড়ি। দরজা খুলে গেল। ভতরে দেখলাম তিয়া ড্রাইভিং সিটে বসে। আমি উঠে বসলাম। দরজা বন্ধ করলাম। হাল্কা এসি চলছে। তিয়া গাড়ি স্টার্ট করলো।
তোমাকে দূর থেকে দেখেছি, চিনতেই পারিনি।
কেন!
তুমি এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছো। যেন কোনও স্কুলের ছেলে কোচিনে যাবে।
হাসলাম।
এগুলো কি নিয়ে বেরিয়েছো?
ছবি আঁকার ষন্ত্রপাতি।
তুমি ছবি আঁকো!
একটু আধটু। তবে আহামরি কিছু না।
কোথায় গেছিলে?
তোমার কাছে যাব বলেই বেরিয়েছি।
আমার কাছে যাবে! ছবি আঁকবে! ঠিক বুঝতে পারলাম না।
চলো গিয়ে বোঝাচ্ছি।
যদি আমাকে না পেতে?
তাহলে রিমঝিমের কাছে চলে যেতাম।
আমি লাকি নম্বর ওয়ান। রিমঝিমকে কিছুতেই এই সুযোগ দেব না।
আমি মনে মনে হাসছি। এরা চারজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, কিন্তু একে অপরের প্রবল প্রতিদ্বন্দী।
আমাকে দেওয়া ম্যাসেজগুলো তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ।
আমি পকেট থেকে একটা ক্যান্ডি বার করে তিয়ার দিকে এগিয়ে দিলাম। এই বার ওর দিকে নজর পড়লো। চোখ নামিয়ে নিলাম। এ কি পোষাক পরেছে তিয়া! এতক্ষণ খেয়ালি করিনি। কালো রং-এর ফিন ফিনে একটা টপ পরেছে মসারির নেটের মতো। ওর অন্তর্বাস পুরো দেখা যাচ্ছে। অন্তর্বাস বললে ভুল হবে পুরো শরীরটা আমার চোখের কাছে উন্মুক্ত। এমনকি সুগভীর নাভীর নীচে যেখানে চওড়া বেল্টে প্যান্টের কোমরবন্ধনী। ওর পরনে জিনসের থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট। পায়ে রিবকের একটা জুতো। ছোটো মোজা। আমার চোখ দেখে তিয়া বুঝতে পেরেছে। মুচকি হাসছে।
আমি ভিউগ্লাস দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। তিয়া আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের পাশ দিয়ে গাড়ি ঘোরাল। আমি জানি এখানে সব নামীদামী লোকেদের বাস। কেউ কারুর খোঁজ রাখে না। তিয়া এসে যে বাড়িটার সামনে দাঁড়াল, এই বাড়ির পাশ দিয়ে আমি বহুবার হেঁটে গেছি। হর্ণ বাজাতেই গেট খুলে গেল। গেটের দারোয়াণের পোষাক দেখেই বোঝা যায় বাড়িটা যে সে লোকের বাড়ি নয়।
তিয়া গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করলো। আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো। চলো।
আমি একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছি। গাড়ির ভেতর থেকেই চারিদিক লক্ষ্য করলাম।
বুঝতে পারছি তিয়া তাড়িয়ে তাড়িয়ে আমার এই ব্যাপারটা উপভোগ করছে।
আমি দরজা খুলে নিচে নামলাম। উচ্চবিত্তের বাড়ি বলতে যা বোঝায় একদম সেরকম। তিয়া আমার কাছে এগিয়ে এলো। চলো ভেতরে চলো।
সত্যি আমি তিয়ার পাশে ভীষণ আন-স্মার্ট।
তিয়া আমি দুজনে ওদের বাড়ির ভেতরে এলাম। নিচের ফ্লোরটা বসার জায়গা। বেশ কয়েকটা বড়ো বড়ো অয়েল পেন্টিং আছে। একেবারে টিপ টপ সাজানো গোছান। পুরণো দিনের আসবাব।
আমি কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। একদিকে একটা বাঘের মডেল। দেখেই বুঝতে পারলাম তিয়াদের বাড়ির পূর্ব পুরুষেরা কেউ শিকারী ছিলেন। না হলে এরকম মডেল থাকা সম্ভব নয়।
ওকে জিজ্ঞাসা করলাম। সঙ্গে সঙ্গে উত্তর পেলাম। ঠিকই ধরেছি আমি, তিয়ার দাদু শিকারী ছিলেন। এই বাঘ তাঁর হাতের শিকার। কাছে গেলাম ভালোকরে দেখলাম। তিয়া দেখাল, দাদু এখানে গুলি করেছিল। আমায় গুলির জায়গাটাও দেখাল। চলো আমার ঘরে চলো।
ড্রইংরুমের ভেতর দিয়েই ওপরে ওঠার শিঁড়ি। আমি ঘোরান শিঁড়ি দিয়ে ওর পেছন পেছন ওপরে উঠে এলাম।
ওর ঘরে ঢুকে মনটা ভরে গেল। প্রায় চারশো স্কয়ার ফিটের ঘর। স্ট্যান্ড এসি। একসাইডে ওর শোবার খাট এবং দামি পুরনো দিনের আসবাব। মাঝখানে একটা ছোট্ট সেন্টার টেবিল। তার চারদিকে সোফা। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। তিয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি যে গোগ্রাসে গিলছি, সেটা ও বুঝতে পারছে।
বসো, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলে হবে।
আমি সোফায় বসলাম। এখানকার আদব কায়দা সত্যি আমার অজানা।
কি খাবে?
এক গ্লাস প্লেন জল।
তিয়া শব্দ করে হেসে উঠলো।
হাসলে যে।
ভাবছি তুমি কি করে অতো বড়ো কাগজের মালিক হলে।
আমি হইনি। আমাকে করা হয়েছে।
তাহলে তুমি সামলাচ্ছ কি করে?
ওই আর কি।
উঁহুঁ সে বললে শুনবো না। আমি খোঁজ খবর নিয়েছি। তোমাকে অফিসে সবাই রয়েল বেঙ্গল টাইগার বলে।
হবে হয়তো, আমার সামনে তো কেউ বলে না।
একজন গুড এ্যাডমিনিস্ট্রেটর না হলে এই ধরণের কথা অফিসের লোকজন বলে কি করে?
আমি হাসলাম।
তুমি এতো সাধারণ, তোমাকে এতো ভায় পায় কেন লোকে, খুব জানতে ইচ্ছে করে।
খোঁজ করো জেনে ফেলবে।
এ-মা তুমি জল চেয়েছিলে। দাঁড়াও নিয়ে আসি।
তিয়া বেরিয়ে গেল।
ভেবেছিলাম ঘরের বাইরে গিয়ে তিয়া চেঁচিয়ে উঠবে আয়া।
তা করলো না নিজেই বেরিয়ে গেল।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে ঘরটার চারিদিক দেখলাম। বেশ কয়েকটা পেন্টিংও আছে তিয়ার ঘরে। ছোটো ছোটো। মনে হয় খুব একটা দামি আর্টিস্টের আঁকা নয়। তুলির স্ট্রোকগুলো ভীষণ দুর্বল। কালার কমবিনেশনটা এমন উগ্র খুব চোখে লাগে। মনে হচ্ছে বুক ফেয়ার থেকে কিনে বাঁধান। কলকাতা আর্ট কলেজের বহু ছাত্র বুকফেয়ারের ওই দশদিন মাঠে বসে ছবি আঁকে। আমি তিয়াদের বয়সী মেয়েদের, যাদের একটু পয়সা আছে, ওদের কাছ থেকে ছবি কিনতে দেখেছি।
কিগো ছবির মধ্যে ঢুকে গেলে নাকি।
ফিরে তাকালাম। তিয়ার ঝলমলে শরীরটার দিকে ঠিক ভাবে তাকাতে পারছি না। বার বার চোখ নামিয়ে নিচ্ছি। তিয়া খুব স্বাভাবিক। নিজের মনকে বোঝালাম তুই কি রে অনি। তুই নাকি তিয়াকে মডেল করে ছবি আঁকবি। ও যদি তোকে বলে অনিদা তুমি আমার একটা নুড স্কেচ করে দাও।
মনে মনে হাসলাম।
কিগো নিজের খায়ালে নিজে হাসছো।
কথাটা ঘুরিয়ে নিলাম। এই ছবিটা কি তুমি বুক ফেয়ার থেকে কিনেছো?
কি করে বুঝলে?
এমনি বললাম।
নিশ্চই তুমি কিছু একটা বুঝেছো, না হলে বলতে পারতে না।
তারমানে তুমি বুক ফেয়ার থেকেই কিনেছ।
হ্যাঁ।
আমি এগিয়ে এসে তিয়ার হাত থেকে জলের গ্লাস নিলাম।
তিয়া তোমার বাড়িতে কেউ নেই?
মা-বাবা কয়েকদিনের জন্য একটু বাইরে গেছেন।
কোথায়?
হাঁসিমারাতে আমাদের তিনটে টি-গার্ডেন আছে। কলকাতার অফিস থেকেই সব কিছু অপারেট হয়, কি একটা প্রবলেম হতে বাবা গেলেন সঙ্গে মাও গেলেন। কয়েকদিনের মধ্যেই চলে আসবেন।
তুমি গেছ?
মাসে একবার যাই। অনিদা তুমি ম্যাজিক জান?
একথা বলছো কেন।
ছবিটার কথা মনেপড়ে গেল তাই।
হ্যাঁ মনের ম্যাজিক। ওটা কাউকে শেখানো যায় না, অনুভব করতে হয়। এবার আমার আসার কারণটা তোমাকে বলি।
গ্লাসটা সেন্টার টেবিলে রাখলাম।
আমি একটা কাজ করছি বুঝলে তিয়া। একটা এ্যাড এজেন্সির কিছু প্রমোশনের কাজ।
তুমি!
কেন, করতে পারি না?
না মানে….!
আমার আবার কিসের টাকার দরকার।
হ্যাঁ!
আমার টাকার দরকার আছে। কাগজের জন্য। অনেক টাকা পেলাম, তাই কাজটা নিয়েছি।
তিয়ার চোখদুটো বদলে গেল। চোখের তারা দুটো অন্য কিছু কথা বলতে চায়।
রিমের মা বলছিল তোমার কাগজকে এ্যাড পাইয়ে দিয়েছে।
হ্যাঁ দিয়েছেন। সরকারি দপ্তরের এ্যাড। কেন?
এমনি তোমাকে জিজ্ঞাসা করলাম। আচ্ছা অনিদা তোমার কোনও আত্মসম্মান বোধ নেই।
কিসের জন্য বলো।
তুমি তোমার কাগজের হয়ে ওনার কাছে এ্যাড চেয়েছো কেন?
কাগজ এ্যাডের ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া কাগজের প্রতি আমারও একটা দায়িত্ব আছে। আর সরকারি অ্যাড কাগজ তো পেয়েই থাকে।
সেটা ঠিক, তা বলে ওনাকেই তোমাকে চাইতে হবে।
বুঝলাম ব্যাপারটা নিয়ে চার বন্ধুর মধ্যে কিছু একটা আলোচনা হয়েছে। কথাটা ঘোরাবার চেষ্টা করলাম।
ও ছেড়ে দাও তিয়া। তুমি তো মডেলিং করো?
করি।
তুমি আমার প্রমোশনে মডেলিং করবে।
অফকোর্স কেন করবো না। কিন্তু তুমি কি আমাকে নেবে?
নেবো। তোমাদের চারজনকেই একটা সুযোগ দেব।
তাহলে আমি করবো না।
কেন।
আমি ওদের সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করবো না।
প্রোডাক্ট একটা নয়। অনেকগুলো আছে। সবেতেই তুমি মডেল হবে, তা হবে না।
ঠিক আছে। তাহলে করবো। কিন্তু তোমাকে একটা প্রমিস করতে হবে, আমি যেই প্রোডাক্টে কাজ করবো সেই প্রোডাক্টে অন্য কেউ কাজ করতে পারবে না।
হাসলাম। তোমার স্টিল গুলো আমাকে একটু দেখাবে।
নিশ্চই। কেন দেখাব না। তিয়া ওর দেয়াল আলমাড়িটার দিকে এগিয়ে গেল। আমি সোফায় বসতে বসতে বললাম। তোমার যেগুলো পছন্দ সেগুলো আমায় দাও।
তিয়া বেছে বেছে আমায় ফটো দিল। ছবিগুলো বেশ ভালো। বুঝলাম এই ঘরেই তোলা।
কিছু সিডিতে আছে। তোমায় দিতে পারি। ওগুলো আউটডোর স্যুটিং।
আমি ল্যাপটপ নিয়ে আসিনি।
নিয়ে যাও, সময় করে দিয়ে যাবে।
ঠিক আছে।
তিয়া আমার সামনে বসে। ওর ডাগর চোখে অনেক জিজ্ঞাসা। ওর চোখ তাই বলছে।
আমি তোমার কয়েকটা ছবি আঁকবো। তোমার আপত্তি আছে?
একটুও না। এই ড্রেসে, না চেঞ্জ করবো।
তোমায় যদি কস্টিউম আর টু পিসে দেখতে চাই, দেখাবে?
তুমি নুড দেখতে চাইলেও, দেখাতে পারি।
একটু থমকে গেলাম। তিয়া বলে কি!
না তার দরকার পরবে না। আমার যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু হলেই চলবে।
তাহলে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করো আমি আসছি।
তিয়া বেরিয়ে গেল। ঘরটা বেশ ঠান্ডা হয়ে গেছে। তবু কেমন যেন আমি ঘেমে যাচ্ছি। কাগজ বার করলাম পেন্সিল বার করলাম, রেডি হলাম। ঘরের দরজাটা বন্ধ। বসে বসে পোজগুলো ভাবছিলাম কি ধরণের ড্রইং করবো।
তিয়া ঢুকলো।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। তিয়ার হাইট প্রায় পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি। মেয়েদের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভালো হাইট। বুক থেকে তলপেট পর্যন্ত একফোঁটা মেদ নেই, শরীরটা ধরে রাখার জন্য বেশ ভালোরকম চর্চা করে। ব্রা-প্যান্টি যা পরেছে তা না পরার মতো। সরু ফিতেয় ঢাকা। টকটকে ফর্সা চেহারায় লাল রঙের ব্রা-প্যান্টিতে ওকে মোহময়ী করে তুলেছে। আমি ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে। তিয়া হাসলো।
পছন্দ।
আমি নিজে যথেষ্ট স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করলাম। এই ঘরে ঢুকেই দেখেছি দুটো স্পট লাইট আছে।
তিয়া আমার সামনের সোফায় এসে বসলো। চোখ ফেরাতে পারছি না ওর শরীর থেকে। বুঝতে পারছি তিয়া আমার চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করছে।
এবার বলো। তুমি কেমন ভাবে আঁকতে চাও।
তোমার ঘরে ওই স্পট লাইটটা জ্বলে না।
হ্যাঁ। প্রয়োজন লাগে না, তাই জ্বালাই না।
লাইটটা জ্বালাও।
তিয়া সোফা থেকে উঠে গেলো। হাঁটার ভঙ্গির মধ্যে উদ্ধত ভাব। একটা ছন্দ আছে।
তিয়া লাইটটা জ্বালিয়ে আমার দিকে তাকাল। ঘরের সব লাইট নিভিয়ে দাও।
তিয়া আমার কথা মতো তাই করলো।
ঠিক লাইটটার নিচে দাঁড়াও।
তিয়া হেঁটে গেল।
ফরটি ফাইভ ডিগ্রী এ্যাঙ্গেলে দাঁড়াও।
কি ভাবে বলো।
আবার বললাম।
তুমি উঠে এসে দেখিয়ে দাও।
আমি উঠে গিয়ে ওকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে এলাম। তিয়া হাসলো।
আমি সোফায় ফিরে এসে ড্র করতে শুরু করলাম। তিনটে এ্যাঙ্গেলে তিনটে স্কেচ করলাম। একটা বসে দুটো দাঁড়িয়ে।
আবার ওর কাছে গেলাম। ওকে ঠিক মতো দাঁড় করিয়ে ওর সামনে থেকে স্কেচ করলাম। এইভাবে একের পর এক গোটা পনেরো স্কেচ করে ওকে রিলিফ দিলাম।
সোফায় এসে বসলাম। তিয়া বললো একটু দাঁড়াও, আমি আসছি।
আমি ছবি গুলো দেখছিলাম, আর নিজের প্রশংসা নিজেই করছিলাম। কোনওদিন মডেলিং করিনি, কিন্তু দেখে দেখে খুব খারাপ স্কেচ আমি করিনি। ছবিগুলো নিয়ে নিজেই একটু একটু কারেকশন করছিলাম, তিয়া এসে ঢুকেই আমার পাশে বসলো। হাতে দুটো অরেঞ্জ জুসের গ্লাস। টেবিলে গ্লাস দুটো রেখে, ওআও বলে চেঁচিয়ে উঠলো।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
তুমি কি দারুণ এঁকেছো অনিদা।
হাসলাম।
আগে কোনওদিন এইভাবে সিটিং করেছো?
একবার।
কোথায়?
আমরা যেখানে শিখি। আর্ট কলেজের কিছু ছাত্র-ছাত্রী এসেছিল, তাদের কাছে।
এবার তুমি চেঞ্জ করে নাও।
তোমার কাজ শেষ।
হ্যাঁ।
তিয়া বেরিয়ে গেল, কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো, এবার অন্য পোষাক, জিনসের প্যান্ট আর গেঞ্জি।
দুজনে অরেঞ্জ জুস খেলাম।
আমি এবার বেরবো তিয়া।
তুমি কোথায় যাবে?
লেক মার্কেট।
চলো তোমায় পৌঁছে দিই।
আমি চলে যেতে পারবো।
কটা বাজে খেয়াল আছে।
কটা।
সাড়ে দশটা, এখান থেকে এখন ট্যাক্সি পাবে না।
হাঁটতে হাঁটতে ওই মোড়ে চলে যাব।
সত্যি অনিদা, আচ্ছা আমি ছেড়ে দিয়ে আসলে তোমার কোনও আপত্তি আছে।
হাসলাম। চলো।
দুজনে নিচে নেমে এলাম।
তাহলে তোমাকে নিয়ে আমি ভাবনাচিন্তা করতে পারি।
অবশ্যই।
গাড়িতে আসতে আসতে ওর সঙ্গে ছেঁড়া ছেঁড়া টুকরো টুকরো কথা হলো।
সঠিক জায়গায় এসে আমি ওকে গাড়ি থামাতে বললাম, এখান থেকে সুজিতদার বাড়ির দূরত্ব মিনিট চারেক। তিয়াকে বিদায় দিলাম।
সুজিতদার বাড়ির কাছে এসে মোবাইলটা বার করে অন করলাম। চারজনকে ম্যাসেজ করলাম।
তোমাদের অনিদা হঠাৎ একটা বিয়ে করে ফেলেছে। পাত্রী তাদের কাগজের মালকিন। যদি পারো আগামীকাল সন্ধ্যায় একবার এসো। ফোনটা অফ করে দিলাম।
শিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে এলাম। যাক এখনও সেই নেমপ্লেটটা সুজিতদা টাঙিয়ে রেখেছে। পরিবর্তন করেনি। বেল বাজাতেই বৌদি দরজা খুলেই চেঁচামিচি শুরু করে দিল। ভেতরে এলাম। জুতো খুললাম। দেখলাম বৌদির চেঁচামিচিতে ভেতরে থেকে সুজিতদা আর বছর সাত আটেকের একটা বাচ্চা ছেলে বেরিয়ে এলো। সুজিতদার ছেলে। ওর যখন এক বছর বয়স শেষ এসেছিলাম। ছেলেটা আমাকে দেখে হাসছে।
কি গুবলুবাবু অনি কাকাকে নিশ্চই চিনতে পারছো না।
তোকে চিনবে কি করে তখন ওর এক বছর বয়স। বৌদি বললো।
আয় ভেতরে আয়। সুজিতদা বললো।
কথা বলতে বলতে ভেতরে গেলাম।
আমি বেশিক্ষণ বসবো না। আরও এক জায়গায় যেতে হবে।
এতো রাতে কোথায় যাবি? বৌদি বললো।
অনেক কাজ, বুঝলে বৌদি।
অনেক বড়ো হয়ে গেছিস এখন, তাই না?
সুজিতদা, বৌদি কিন্তু গণ্ডগোল করছে।
বৌদি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
তোর একটুও পরিবর্তন হয়নি ও সেদিন ঠিক বলেছিল।
হবে কি করে। পরিবর্তন হলে এই অবেলায় তোমার এখানে আসতাম।
উঃ মুখে যেন খই ফুটছে। কি খাবি?
শ্রেফ একগ্লাস জল। একদিন বৌকে নিয়ে এসে পেট ভরে খেয়ে যাব।
তোর বৌ আসবে?
অনি যখন আসতে পেরেছে তার বৌও আসবে। তখন সে মালকিন নয়। অনির বৌ।
তাহলে আমি যা শুনেছিলাম সেটাই সত্যি।
কি শুনেছিলে বলো।
তোর সঙ্গে তোর হাউসের মালকিনের প্রেম নিবেদন চলছে।
বৌদি আজ থেকে সাতবছর আগে তোমায় একটা মেয়ের কথা বলেছিলাম তোমার মনে আছে।
হ্যাঁ।
কি নাম বলো।
মিত্রা।
এই তো বেশ মনে রেখেছো।
মনে রাখবো না। তার কথা বলে কতোদিন চোখের জল ফেলেছিস।
ফেলেছি বুঝি।
বৌদি হাসছে।
সেই মিত্রাই এই মিত্রা।
অ্যাঁ।
কিগো বুলা তুমি তাহলে ভুল ইনফর্মেসন দিয়েছ।
সে কাগজের মালকিন ছিল না।
তখন তার বাবা ছিল। এখন সে হয়েছে।
সুজিতদা জোরে হাসলো। আর যা শুনেছ ওকে বলতে যেও না। সব কথা নস্যাৎ করে দেবে।
না সুজিতদা বৌদি যদি ওর সম্বন্ধে কোনও খারাপ কথা শুনে থাকে তারও একটা রিজিন আছে।
একটু থামলাম।
সেই নিয়েই মেতে আছি সুজিতদা। কথাটা যে কতটা অসত্য তা প্রমাণ করতে হবে।
সুজিতদার দিকে তাকালাম।
যাক, কালকে কিন্তু ভাইপোকে নিয়ে যাওয়া চাই।
আমি ভেতরের ঘরে চলে এলাম। সুজিতদার সঙ্গে কাজের কথা বললাম। ছবি দেখালাম।
সুজিতদা অবাক।
তুই এখন ছবি আঁকতে বেরিয়েছিলি!
হ্যাঁ।
সুজিতদা চেঁচিয়ে উঠলো, বুলা দেখে যাও অনির কীর্তি।
বৌদি প্লেটে করে মিষ্টি, জল নিয়ে এসেছে।
কিগো সাদা জল না কোল্ডড্রিংকস?
কোল্ডড্রিংকস।
বৌদি ছবিগুলো দেখল, হাসল।
তোর না আজ কালরাত্রি।
সেই জন্য ফাঁক পেয়ে গেলাম।
সুজিতদা হাসছে।
কাজের প্রতি তোর ডেডিকেশনকে আমি সত্যি স্যালুট করি।
তোমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছি।
দেব এক থাপ্পর।
তা তুমি দিতে পার বৌদি। কিন্তু যে লোকটি টাকা দিয়েছে। তার কথা একবার ভাব। তাকে গ্যাস খাইয়ে তখন বুঝিয়ে দিয়েছি। যদি করে দিতে না পারি, তাহলে কতোবড় প্রেসটিজ বলো।
এই জন্য তোর দাদা তোকে দিয়েছে।
আমি সব নয় বৌদি, দাদার টিমকেও কাজ করতে হবে।
ও নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
আমি একটা মিষ্টি গুবলুবাবুকে দিলাম। আর একটা মিষ্টি নিজের মুখে তুললাম।
তোকে কিন্তু আজ দেখে ভীষণ ভালো লাগছে।
ও কথা বলো না, মিত্রা শুনলে রাতে দরজা বন্ধ করে ঠ্যাঙাবে।
দেখেছো কি টক টক করে কথা বলছে। সেই অনি আর এই অনি! বৌদি বললো।
জানিস অনি, তুই সেদিন চলে আসার পর। আর কাজ হয়নি।
কেন!
আমার মার্কেটিং ম্যানেজার, সেলসের ছেলেরা আমাকে এসে ছেঁকে ধরলো।
কেন আমাকে পিটবে নাকি!
দূর।
শোন না আগে কি বলে। বৌদি বললো।
তুমি দাঁড়িয়ে রইলে কেন, বসো। বৌদির দিকে তাকালাম।
বৌদি বসলো।
ওরা দু-মাস ধরে যাকে বোঝাতে পারেনি, তুই এক ঘণ্টায় তাকে কি করে বোঝালি।
সত্যি জানো কি সুজিতদা, আমি ওর চোখ মুখ দেখে ধরে ফেলেছিলাম।
সুজিতদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
ভদ্রলোক একটু ক্রিয়েটিভ আর্ট পছন্দ করেন। এই গড্ডালিকা প্রবাহের মতো যা চলছে তা ওঁর মন পসন্দ নয়। আমি সেই এ্যাঙ্গেলে কথা বললাম, মাছ বড়সিতে বিঁধলো।
শুনলে বুলা, অনির কথা শুনলে। তাহলে ও যদি মালিক না হয় কে হবে।
তুই বেশ সুন্দর কথা বলতে শিখেছিস।
সব তোমাদের আর্শীবাদ বৌদি। আমার জীবনে কয়েকটা বছর তোমরা দুজনে আলো করে ছিলে।
বৌদি হাসছে।
আমি ভুলি কি করে।
সব শালা নেমকহারেমের জাত। সুজিতদা চেঁচিয়ে উঠলো।
রাগ করো না দাদা। তোমার হাতের পাঁচটা আঙুল সমান, তুমি নিজে বলো। অনি গ্রামের ছেলে। শহরে উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাইছে। তাকে নেমকহারামী করলে চলবে।
আর বক বক করিস না।
বেশ কিছুক্ষণ সুজিতদা বৌদির সঙ্গে গল্প করলাম।
তারপর উঠে এলাম। তিনজনে আমাকে নীচ পর্যন্ত এগিয়ে দিল।
তুই এখন কোথায় যাবি?
বাড়িতে ঢোকা নিষেধ। নতুন বৌ-এর মুখ দেখা যাবে না। তাই নিজের খুপরিতে।
তোর সেই ফ্ল্যাটে?
হ্যাঁ।
চল তোকে ছেড়ে দিয়ে আসি।
কলকাতা শহরে সারারাত ট্যাক্সি চলে।
সুজিতদা হাসছে।
তোর সঙ্গে কথায় পেড়ে ওঠা যাবে না।
কালকের কথাটা মথায় থাকে যেন। আর শোনো ছবিগুলো সঙ্গে করে নিয়ে যাবে।
সুজিতদা বৌদি দুজনে হাসছে।
এখান থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের পথ আমার বাড়ি। তবু আমি সেখানে যেতে পারবো না। কালরাত্রি। নিজের মনে হেঁটে বড়ো রাস্তায় চলে এলাম। একটা ট্যাক্সি ধরলাম।
ট্যাক্সি থকে যখন নামলাম তখন সাড়ে এগারোটা হবে। গেটের কেয়ারটেকার ছেলেটি আমায় দেখে হাসলো।
দাদা অনেকদিন পর।
তুমি ভালো আছো?
হ্যাঁ দাদা।
আমার ঘরে কেউ এসেছে?
দুজন ভদ্রলোক এসেছেন। একজনকে আগে দেখেছি। আর একজন নতুন।
লিফ্টের দিকে এগিয়ে গেলাম।
বুঝলাম ইসলামভাই আর ভজু। ওপরে উঠে এলাম। দরজায় নক করতেই দরজা খুলে গেল।
গেটে ভজুরাম।
কে রে ভজু? ভেতর থেকে ইসলামভাই-এর গলা পেলাম।
অনিদা।
ভেতরে এলাম।
তুমি এতরাত পর্যন্ত কোথায় ছিলে?
কাজ করছিলাম।
বড়োমা কতোবার ফোন করলো জানো।
তুই কিছু বললিনা কেন।
ইসলামদার সঙ্গে কথা হয়েছে।
তুই খেয়েছিস?
তুমি আসনি খাব কি করে।
বেশ করেছিস। পেটে ভিঁজে গামছা বেঁধে থাক।
ঘরে এলাম।
দেখলাম ইসলামভাই আমার বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে আছে। আমায় দেখে হাসল।
একটা চকচকে চাদর পাতা। ঘরটা মনে হয় আগের থেকে একটু চকচক করছে।
ঘরটার কি অবস্থা করেছিলি। ইসলামভাই বললো।
কতদিন আসিনি সেটা বলো।
তা ঠিক। কাজ হলো।
হ্যাঁ। আর একটা বড়ো কাজ বাকি আছে, কাল সকালে সারবো।
হাত মুখ ধুয়েনে, তিনজনে বসে খাই।
তুমি খেয়ে আসনি?
তোর এখানে আসব, খেয়ে আসব কেন। দিদিকে বললাম দিয়ে দাও, তিনজনে একসঙ্গে খাব।
তুমি থাকবে না কেটে পরবে।
তুই তো থাকতে দিবি না?
আমি সে কথা বলিনি, তোমার ওখানে কি কাজ আছে না আছে আমি কি করে জানব।
ওখানকার কাজ সাল্টে দিয়েছি। বাকি যে টুকু আছে রতন, আবিদ করবে, লোক আছে।
আচ্ছা ইসলামভাই আমাকে একটা কথা বলতে পার?
বল।
টোটাল ব্যাপারটার স্পনসরার কে?
জেনে তোর লাভ।
আমার কোনও লাভ নেই। তবু একবার জিজ্ঞাসা করা কর্তব্য তাই।
ইসলামভাই হাসছে।
তুই ব্যাটা বহুত ঘাঘু মাল। ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানিস না।
কিগো তুমি এখনও হাত মুখ ধোওনি। আমার খাবার গরম হয়ে গেছে। খিদে লেগেছে। ভজু বললো।
তুই রান্নাঘরের খোঁজ পেলি কি করে!
এসে ঘর গোছালাম, ও বাড়ি থেকে আসার সময় দিদিমনি নতুন চাদর দিয়েছিল পাতলাম।
ওই জন্য, তখন থেকে ভাবছি এ চাদর এলো কোথা থেকে। এতো চকচকে।
ব্যাগে তোমার পাজামা পাঞ্জাবী আছে। পরে নাও।
তুই রেডি।
হ্যাঁ।
দাঁড়া আমি ঝট করে হাত-মুখ ধুয়ে আসছি।
বাথরুমে গেলাম। তাড়াতাড়ি কাজ সারলাম। দেখি ইসলামভাই ছোট টেবিলটা টেনে নিয়ে কাগজ পেতেছে।
কি এনেছিস ভজুরাম।
লুচি, মাংস।
চিকেন?
হ্যাঁ।
কে বানিয়েছে?
মা।
তাহলে জবরদস্ত হবে।
ইসলামভাই হাসছে।
আমি ইসলামভাই-এর দিকে তাকালাম।
মেনুটা মনে হচ্ছে মিত্রার সিলেকশন।
ইসলামভাই মাথা দোলাল।
ও বাড়ির লেটেস্ট খবরা খবর নিতে নিতে খাওয়া শুরু করলাম।
ইসলামভাই বললো তুই ফোনের স্যুইচ অফ করে রেখেছিস। মামনি ফোন করেছিল, আমি কতোবার ফোন করেছি। আবার টেনসনে পরে গেছিল সবাই। কেন তুই এরকম করিস?
আমি হাসছি।
একটু বললে যেখানে সব ঝামেলা মিটে যায়, সেখানে চেপে রাখার কি দরকার।
আমি শুনে যাচ্ছি।
অনিমেষদা, বিধানদার সঙ্গে আমি, দামিনী কাল একফাঁকে একটু কথা বলেছি।
কি বললো?
দামিনীকে ওখানকার দায়িত্ব নিতে বলছে।
মাসি কি বলছে?
তোর সঙ্গে কথা বলে জানাবে।
অনিমেষদা কি বললো?
হাসছে। বিধানদাকে টিপ্পনি কেটে বললো, বিধানবাবু অনি এখন বড়ো নেতা।
ঠিকঠাক খাইয়েছো?
সাদা ভাত, মুড়িঘন্ট, ডাল, মাছ, সামান্য একটু দই-মিষ্টি খেয়েছে দুজনে। খুব ভালো মুডে ছিল।
ওদিককার ব্যাপারে তোমায় কিছু বললো?
গ্রীণ সিগন্যাল দিয়েছে। এবার আমাকে কাজের কাজ করতে হবে।
চিন্তা-ভাবনা কিছু করলে?
কালকের কাজটা মিটুক।
কতজনের এ্যারেঞ্জমেন্ট?
দাদা বললো অনি একটা পাগল বুঝেছো ইসলাম। কাকে কাকে বলবে আমি নিজেও জানিনা। তুমি বরং তিনশো জনের কথা মাথায় রেখে ব্যবস্থা করো।
হাসলাম। আমি এর মধ্যে মাথা গলাব না।
সে বললে হয়।
গতকালের খাবারগুলো বেশ ভাল বানিয়েছিলে বুঝলে ইসলামভাই।
আমি জাকিরকে বলেছিলাম একবারে রিচ করবি না। ঘরোয়া বানাবি। ব্যাটা আমার কথাটা রেখেছে। আগামীকালও ও রান্না করবে।
কালকের মেনু।
বলা যাবে না।
সেকিগো! বিয়ে আমার, মেনু জানতে চাইছি, বলছো কিনা বলা যাবে না।
ইসলামভাই জোড়ে হেসে উঠলো।
ইসলামভাই-এর ফোনটা বেজে উঠল। নামটা দেখে বললো, মামনি।
কিরে মামনি?
বুবুন এসেছে—
তিনজনে বসে খাচ্ছি। খাওয়া হয়ে গেলে তোকে ফোন করতাম।
কখন এসেছে?
সাড়ে এগারোটা নাগাদ।
ওর ফোন বন্ধ কেন?
আমার ফোন খোলা আছে।
পকেট থেকে বার করে একবার দেখ না।
ভজু দেখতো।
অনিদা ঠ্যাংটা একটু রেখো।
কিরে তোর ঠ্যাং ও খাচ্ছে।
তাহলে কি?
ওরে সকাল থেকে ওর মুখ বন্ধ নেই, শরীর খারাপ করবে। ডাক্তারদাদা সকালে একবার বকেছে।
নাগো অনিদা, দিদিমনি মিছে কথা বলছে।
আমি ভজুর দিকে তাকালম।
তোমার ফোন বন্ধ।
কিরে, দেখলি।
তুই কোথায়?
বড়োমার ঘরে শুয়ে আছি।
কেন?
তোর ঘরে সব মেয়েরা।
মেয়েরা মানে?
অদিতি, সুরো, মিলি, টিনা কেউ বাড়ি যায়নি। ফেল সবাই ও ঘরে।
তাই!
ছোটোমার ঘরে দাদা, মল্লিকদা। আগামীকাল আরও লোক আসবে ডাক্তারদাদার বাড়িতে শোবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কেন?
কেন আবার কিরে, এতো লোক শোবে কোথায় ?
দেখ আমি কিছুই জানি না।
তোর সব বড় বড় ব্যাপর।
এই রিটার্নটা কাল পাবি।
সরি সরি আর বলবো না।
তোর কাছে আর কে শোবে?
ছোটোমা, বড়োমা।
ওঘরে।
মাসি, কবিতা। ইসলামভাই প্রচুর জিনিসপত্র ঢুকিয়ে গেছে।
মামনি ওরা বার করেনি!
কোথায় রাখবে, তুমি কিছু বলোনি।
আমি রতনকে ফোন করছি।
এখন আর তোমায় ফোন করতে হবে না। সারাদিন পরে সবে দুজনে একটু শুয়েছে।
বুবুন।
উঁ।
তুই কখন আসবি?
দেখি।
দেখি কেন, ইসলামভাই-এর সঙ্গে চলে আসবি।
ঠিক আছে, এখন রাখ।
খাওয়া শেষ?
শেষের পথে।
মিত্রা ফোন বন্ধ করলো। খাওয়া শেষ হতেই, বেশ ঘুম পাচ্ছে। ইসলামভাইকে বললাম, আমি এই সাইডে তুমি ওই সাইডে। ভজুরাম মাঝখানে।
ইসলামভাই বললো তাই হোক।
ভজুরামকে বললাম মাথাটা একটু কড়কে দে।
ঠিক বলেছো অনিদা তোমার মাথাটা অনেকদিন ভাল করে টেপা হয় নি।
ভজুরাম সব গুছিয়ে গাছিয়ে নিল। আমি বিছানায় টান টান হয়ে শুলাম।
ইসলামভাই।
বল।
কাল আমি অনেক ভোর ভোর বেড়িয়ে যাব।
তুমি জাগলে ভালো, না হলে ডাকবো না। মনে রেখো।
কাল আবার কোথায় যাবি?
বলা যাবে না।
অন্যদিন কাজটা করলে হতো না?
না।
আমায় জিজ্ঞাসা করলে কি জবাব দেব?
বলবে সকালে উঠে চলে গেছে, দেখা হয়নি।
কখন আসবি?
বলতে পারছি না।
তারমানে!
কাজটা শেষ করে আসতে হবে।
কালকেই করতে হবে?
ভেবেছিলাম তোমাকে বলবো না। তোমরা কেউ জানতেই পারবে না। তখন কথায় কথায় বললে একটু বললে যদি ঝামেলা কমে তাহলে বলবি না কেন, তাই হিন্টস দিলাম।
ফোনটা অন্ততঃ পক্ষে খোলা রাখিস।
হয়তো হবে না।
দুপুরে এসে খাবি?
চেষ্টা করবো।
আবার কোনও গন্ডগোল পাকাচ্ছিস?
না।
ঠিক।
তুমি বিশ্বাস করতে পার।
ভজুরাম মাথাটা বেশ ভালো ম্যাসাজ করে। এমনভাবে টেপে মাথাটা একেবারে হাল্কা হয়ে যায়। কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি জানি না। ঠিক সময়ে ঘুম ভাঙলো। উঠে দেখলাম ওরা দুজনে অঘোরে ঘুমচ্ছে। আমি মুখ হাত ধুয়ে ফ্রেস হলাম। জামা প্যান্ট পরলাম। আলমাড়ি থেকে জাঙ্গিয়া বার করে পরতে ভুললাম না। ফ্ল্যাটের চাবিটা দেখে নিলাম টেবিলের ওপর আছে কিনা। মোবাইলের ঘরিতে দেখলাম, পৌনে পাঁচটা বাজে। বাইরে হাল্কা আলো। আমি বেরিয়ে এলাম। দরজায় দাঁড়িয়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, আজকের কাজটা আমার জীবনের একটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, আমাকে এই কাজটা ঠিক মতো শেষ করতেই হবে।
চলবে —————————
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/lA7j0hU
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment