কাজলদিঘী (৪৩ নং কিস্তি)

“কাজলদীঘি”

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

৪৩ নং কিস্তি
—————————

একে একে সবাই এগিয়ে আসছে।

তোর কিছু হলে আমি কি নিয়ে থাকব। মিত্রা ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললো।

দামিনীমাসি আমাকে ছেড়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো।

এই দ্যাখ সবাই মিলে পাগলাম করে। আমার কিছু হয়েছে নাকি।

ছোটোমা, বড়োমা চোখ মুছছে। দাদা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।

মল্লিকদা পুরো ফিউজ। নীপা পাশে দাঁড়িয়ে চোখ মুছছে।

তোমরা কেঁদে কিছু করতে পারবে। ওর মুখের দিকে তাকাও, কোনও বিকার দেখছো। বৃহস্পতিবার থেকে ও ফলোআপ করছে। ডাক্তারদাদা বললো।

তুমি জানতে? দাদা বললো।

না।

তাহলে বললে কি করে?

ও ঘন ঘন নিজেকে চেঞ্জ করেছে। আমি বড়ো বান্ধবীকে বার বার বলেছি। তুমি একবার অনিকে চেপে ধরো। আমি ঠিক ভাল বুঝছি না।

তুমি আমাকে বলনি কেন?

কি করে জানব, এরকম ঘটনা ঘটতে চলেছে। সেদিন ও সকলের সামনে বলেছে।

মুন্না তুমি জানতে?

বিশ্বাস করুণ দাদা। মামনির সাহায্যে ওর মোবাইলটা চুরি করে যতটুকু জানতে পেরেছি। তাও অনি জানতে পেরে গেছে। লাস্ট ম্যাসেজটা ওর মোবাইলে টাইম পাঁচটা পঁয়তাল্লিশ।

তুমি ঠিক বলেছো! ঠিক তার ঘণ্টা খানেকর মধ্যে অর্ক, সায়ন্তন কাউকে কিছু না বলে অফিস থেকে বেরিয়ে গেছে।

অনি আজকে যাদের সঙ্গে নিয়ে গেছে তারা সবাই স্পেস্যাল টাস্ক ফোর্সের লোক। আমি ধোপে টিকব না।

কি বলছো!

ও দুপুর থেকে ছটফট করছিল।

কে ঘটনাটা ঘটিয়েছে?

রাজনাথ।

দাঁড়াও আমি ফোন করছি।

একবারে করবে না, ওটা আমার ব্যাপার। ফোন করলে অনিকে আর পাবে না। আমার গলার কর্কশ শব্দে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল।

তুই যা বলবি শুনতে হবে।

শুনতে হবে, নাহলে অনিকে ছাড়তে হবে।

সবাই চুপ করে গেল।

ভেতরে যাও।

সকলে স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে। আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।

ইসলামভাই।

বল।

তুমি, আবিদ, রতন ওপরে এসো।

সবাই আমার গলার স্বরে চমকে গেছে। বুঝে গেছে এ অনি সাধারণ অনি নয়।

খাবার ব্যবস্থা করো। অনেক রাত হয়েছে।

মিত্রা।

বল।

এই ফাইলটা রাখ।

একটু আগে আমার রূপ আর এই মুহূর্তে আমার রূপ দেখে সবাই থতমতো খেয়ে গেছে।

আমি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে এলাম।

আমার পেছন পেছন ইসলামভাই, আবিদ, রতন, দেখলাম দামিনীমাসিও আসছে।

ঘরে চলে এলাম।

তুমি এলে! তোমাকে আসতে বলিনি—দামিনীমাসির দিকে তাকালাম।

আমি থাকব।

তুমি থাকবে না।

থাকব।

দামিনীমাসি মাথা নিচু করলো।

কোনও কথা বলতে পারবে না।

ঠিক আছে, শুনবো।

কাঁদতে পারবে না।

দামিনীমাসি মাথা দোলাল।

আমি টেবিলের কাছে চলে গেলাম। পকেট থেকে কাগজ বার করতে করতে কথা বলতে শুরু করলাম। ওরা সবাই আমার পেছনে দাঁড়িয়ে।

ডাক্তার কোথায় আছে?

তুই বিশ্বাস কর আমি জানিনা। ইসলামভাই বললো।

রতন।

আমি জানিনা।

আবিদ।

কারুর মুখে কোনও কথা নেই।

বল কোথায় আছে।

শেষ জানতাম রাজনাথ বাবুর বাড়িতে। রতন বললো।

কোন বাড়িতে।

মুরারীপুকুরে।

তারপর।

আর জানি না।

মাসি জানত।

মাসির কথা মতো ওইটুকু খোঁজ পেয়েছিলাম। তারপর আর জানি না।

তোর ফোন। মিত্রা ঘরে ঢুকলো।

ওদের দিকে ফিরে তাকালাম। আবার টেবিলের দিকে ঘুরলাম।

হ্যালো।

কি হলো, আমার এ্যাকাউন্ট নং।

সরি। হাত ধোয়া হলো।

হ্যাঁ।

যেটা বেঁচে আছে।

রাখলাম না। আই উইটনেস করে নিলাম থানার ওসিকে, তারপর ঝেড়ে দিলাম। রাখলেই ঝামেলা।

ভালো করেছেন। নিন লিখে নিন। কাগজটা টেবিলের থেকে নিয়ে একে একে নম্বর বললাম।

মিত্রা দাঁড়িয়ে আছে, সব শুনছে। আমি ইচ্ছে করে ভয়েজ অন করে রেখেছি।

এবার বলুন।

এ্যাকাউন্টগুলো সব রঘুবীর যাদবের নামে আছে। নমিনি রাজনাথ। সব এ্যাকাউন্ট সিল করুন। যে কোনও সময় আপনাকে ডাকতে পারি। টিম নিয়ে রেডি থাকবেন।

আচ্ছা ওরা কি আপনাকে টার্গেট করেছিল?

কে বললো আপনাকে!

যেটা বেঁচে ছিল।

রেকর্ডিং করেছেন?

অবশ্যই। তবে ওরা আপনাকে চেনে না। আকিব বলে ছেলেটা ওদের চিনিয়ে দিত।

কালকে রেকর্ডিংটা এবং কপি গুলো আমাকে একটু জেরক্স করে পাঠান।

সকালে পাঠিয়ে দেব। আর একটা অন্যায় করেছি।

আবার কি করলেন।

বড়দা, আপনার দাদা রিকয়েস্ট করলো একটু হিন্টস দিয়ে ফেলেছি।

বেশ করেছেন। এ্যাকাউন্টগুলো আগে সিল করুণ।

কাজ সেরে বাড়ি যাব। এখনও অফিসেই আছি।

কাগজ দেখুন।

বেরিয়ে গেছে?

হ্যাঁ।

এখুনি আনিয়ে নিচ্ছি।

আচ্ছা।

ফোনে কথা শেষ করে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলাম। গেটের মুখে বাড়ি শুদ্ধু সবাই দাঁড়িয়ে আছে।

কি হলো তোমরা এখানে?

তোর মাথা ঠাণ্ডা হয়েছে। দাদা হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো।

আমার মাথা কখনই গরম নয়।

তখন যেরকম বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে উঠলি। আর একটু হলে স্ট্রোক হয়ে যেত।

ভেতরে এসে বসো।

সাগির, অবতার কোথায় আছে? ইসলামভাইয়ের দিকে তাকালাম।

আমার কাছে। মাসি বললো।

কাল যখন বলবো বার করে দেবে। ও দুটোকে রাখবো না।

অনি!

সবাই আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।

আমার কথার কোনও দ্বিরুক্তি যেন না হয়। কি কথা মুখার্জীকে বললাম শুনেছো।

ইসলামভাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

ওরা আর অন্যায় করবে না বলেছে। মাসি আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।

সামলাতে পারবে।

আমি কথা দিচ্ছি। মাসি আমার হাতটা চেপে ধরলো।

রতন।

বলো।

আজ ভোররাতে ব্যারাকপুর লাটবাগানে যাবি। ভিখারি হবি। নুলো ভিখারি। পারবি।

আমি পারবো দাদা, রতনদা পারবে না। আবিদ বললো।

ছোটোমা একটু চা খাওয়াতে পারবে?

এত রাতে!

অনি ঠিক কথা বলেছে। দাদা বললো।

যাওনা ছোটো একটু নিয়ে এসো। ডাক্তারদাদা বললো।

ছোটোমা বেরিয়ে গেল।

ঠিকানাটা লিখে নে। মাথায় রাখবি তোকে মার্ক করার জন্য আমার লোক থাকবে।

আমি ভুল করবো না।

আমি আবিদের দিকে তাকালাম। আমার চাহুনি বলছে আমি ঠিক নেই।

আজ বিকেল থেকে সব মাথায় রাখছি।

এই অবস্থাতেও আবিদের কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হাসে।

ঠিকানা বলো।

আমি বললাম। আবিদ লিখলো।

এই বাড়িতে ডাক্তার লুকিয়ে আছে।

দামিনীমাসি, বড়োমা, ইসলামভাই সকলে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

কে যাচ্ছে কে বেরচ্ছে আমাকে জানাবি। আমি তোর সঙ্গে মিলিয়ে নেব।

আচ্ছা।

মিত্রা।

বল।

কাল দশটায় দাদার সঙ্গে অফিসে যাবি। আমার ল্যাপটপ প্রিন্টার সঙ্গে নিয়ে যাবি। তোকে নিয়ে বিকেলবেলা বেরবো।

কোথায় যাবি?

প্রশ্ন করবি না, যেখানে যাব দেখতে পাবি।

ইসলামভাই।

বল।

কাল সারাদিন তুমি, দামিনীমাসি, রতন এই বাড়িতে থাকবে। আমি না বলা পর্যন্ত একপাও এ বাড়ি থেকে বেরবে না।

আচ্ছা।

ছোটোমা, ভজু চা নিয়ে ঢুকলো।

আমাকে চা দিতে দিতে বললো, আমাকে বল ওদের কি বললি।

মল্লিকদার কাছ থেকে শুনে নেবে।

ওরকম গম্ভীর হয়ে কথা বলছিস কেন। একটু ভালো করে বল না। দেব কান মুলে।

হাসলাম।

এই তো আসল অনি বেরিয়ে পরেছে।

সবার মুখ চওড়া হলো।

হ্যাঁরে অনি আজ তুই সেমিফাইন্যাল খেললি, ফাইন্যাল কবে খেলবি। ডাক্তারদাদা বললো।

আগামীকাল, মিত্রাকে নিয়ে অত্যন্ত ভদ্রভাবে।

যাক শুনে আশ্বস্ত হলাম।

এবার খাওয়ার জায়গা করো।

দামিনীমাসি আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

তোমার কি হলো।

না কিছুনা।

যাও নিচে যাও।

ছোটোমা, দামিনীমাসিকে নিয়ে নিচে চলে গেল। সবাই পেছন পেছন বেরিয়ে গেল।

ঘর ফাঁকা, মিত্রা দরজা পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে একবার দেখে নিল তারপর ঘরের মাঝখানে এসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

কি হলো তুই দাঁড়িয়ে রইলি!

মিত্রার চোখ হাসছে।

কেন তুই তাড়িয়ে দিবি।

আমার কাছে পা টিপে টিপে এগিয়ে আসছে।

নিচে যা, খাবার ব্যবস্থা কর।

তবু মিত্রা আমার চোখে চোখ রেখে পা টিপে টিপে এগিয়ে আসছে। চোখের হাসি এবার সারা মুখমণ্ডলে ছড়িয়ে পরলো।

যাব না কি করবি?

এখন একেবারে বিরক্ত করবি না।

আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

কেন আমাকে তুই এনকাউন্টারে মারবি।

পাগলের মতো কথা বলবিনা।

কেন তুই এরকম করিস।

কি করলাম।

তোর জন্য সেই সন্ধ্যে থেকে কেঁদে মরছি সকলে।

কে কাঁদতে বলেছিল।

আমাকে একটা ফোন করতে পারতিস।

তুই কথা রাখিস নি।

কি করবো। সবাই যদি আমাকে একসঙ্গে চেপে ধরে।

আমাকে টলাতে পারলো কেউ।

তুই আমি সমান। তোর কিছু হলে, আমি কি করবো।

কারুর জন্য কোনও কিছু আটকে থাকে না।

মিত্রা আমার মুখটা চেপে ধরলো।

প্লিজ তুই থাম। কেন তুই দাদার ওপর ওরকম মুখ ঝামটালি?

বেশ করেছি। আমার কাজে কেউ ইন্টারফেয়ার করুক আমি তা চাইনা।

দাদা কি তোর খারাপের জন্য বলেছে?

যার যা কাজ তাকে সেই কাজ করতে দে। দাদা আজকের কাজটা করতে পারতো?

তোর মোবাইল না দেখলে সেটা কেউ জানতে পারতাম না।

কেন দেখতে গেছিস?

কেন দেখাবি না। তুই রতনকে পর্যন্ত বলেছিস, কথা না শুনলে এনকাউন্টারে উড়িয়ে দিবি। সে বেচারা পরি কি মরি করে আমার কাছে এসে আমার পা ধরে বসে থাকলো আধ ঘণ্টা।

ইসলামভাই কাঁদছে। দামিনীমাসি কাঁদছে। তোকে ভালোবেসে ওরা কি অন্যায় করেছে?

আমি ন্যায় অন্যায় বুঝি না। আমার কাছে কাজটা কাজ। আমার একার জন্য হাজার জনের ক্ষতি হোক আমি তা চাইবো না।

অনি এই অনি। নিচ থেকে দাদা চেঁচিয়ে উঠলো।

মিত্রা আমাকে ছেড়েদিল।

যা নিচে গিয়ে দেখ, কি হলো।

তুই চল।

কি হয়েছে দেখ।

আমি পারবো না।

অগত্যা নিচে এলাম।

দাদা মোবাইলটা হাতে দিয়ে বললো। অফিসে গণ্ডগোল হচ্ছে আরও কাগজ ছাপতে হবে। না হলে হকাররা কাল থেকে স্ট্রাইক করবে।

তুমি কি বললে?

তুই সার্কুলেশনে কথা বল।

আমি ফোন ধরলাম।

হ্যালো।

অনিবাবু আমি সামলাতে পারছি না। মিনিমাম একলাখ কাগজ ছাপার পার্মিসন দিন।

প্রেসে কে আছে।

সবাই আছে আমি আটকে রেখেছি।

যতটা প্রয়োজন ছাপতে বলুন। একলাখ কাগজের যা দাম হবে খরচ বাদ দিয়ে বাকিটা আপনারা সমান ভাবে ভাগ করে নিন। এটা ক্যাশ সেল হবে। হকারদের সাথে সেই ভাবে কথা বলে তবে কাগজ ছাপবেন। যদি রাজি হয় ছাপবেন, না হলে ছাপবেন না।

সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। এইরকম একটা কথা যে আমি বলতে পারি, ওরা বিশ্বাস করতে পারেনি। আমি দাদার হাতে ফোনটা দিয়ে সোজা গট গট করে ওপরে উঠে এলাম।

গেঞ্জিটা খুলে প্যান্ট খুললাম। টাওয়েলটা আলনা থেকে টেনে নিলাম। পরতে যাবো, মিত্রা ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। প্লিজ একটু।

একবারে বিরক্ত করবি না, মন মেজাজা ঠিক নেই।

ও তুই তোর কাজের লোকদের দেখাস। আমাকে দেখিয়ে লাভ নেই।

সরে যা। আমাকে বাথরুমে যেতে দে।

একবার।

আমাকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁট তুলে ধরেছে। বাধ্যে হয়ে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। চোখ দুটো খুশিতে ঝকঝক করে উঠলো। আমাকে ছেড়ে দিল।

জানিস তোর কথায় নিচের রিপার্কেসন! তোর একটুও দেখতে ইচ্ছে করে না।

কোনও কথা বললাম না।

আমি বাথরুমে গেলাম।

ভালোকরে মুখ-হাত-পা ধুয়ে বেরিয়ে এলাম। মিত্রা আলমাড়ি খুলে আমার পাজামা পাঞ্জাবী বার করে রেখেছে।

কিরে এটা পরবি তো?

দে।

ছোটোমা এসে দুবার ঘুরে গেলো। তুই না গেলে কেউ খেতে বসবে না।

তোরা কি পেয়েছিস বলতো।

ডাক্তারদাদাকে বলনা, বলতে পারছিস না।

ডাক্তারদাদা এখনও আছে!

যায় কি করে। তোর কাছ থেকে পুরো ঘটনা শুনতে হবে।

আজ কিছু হবে না।

আমি নয় পেট পাতলা। তোর সায়ন্তন কি করেছে।

কেন!

দাদার কাছে বসে পেট খালি করে দিয়েছে।

ওহ ছেলেটাকে নিয়ে সত্যি পারা যাবে না। মনে মনে যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই। ছাগলাটাকে দিয়ে হবে না।

আজ প্রথম?

হ্যাঁ।

চুলটা আঁচড়ে নিলাম। দুজনে নিচে নামলাম। সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে গল্প করছে। দাদারা সোফায় গোল হয়ে বসে। আমি ঘরে ঢুকতেই দাদা বলে উঠলো।

তোর কথা মতো বলে দিয়েছি। রিটার্ন হলে আমায় কিছু বলবি না।

কালকে বাইরের কাগজে এই লেখাটা এডিট করে ছাপিয়ে দেবে। নাহলে তুমি ঝামেলা পোহাবে।

তার মানে!

যা বললাম তাই।

সে কি করে হয়। তোর টিভি নিউজ এখনও ধরতে পারেনি। খালি ব্রেকিং নিউজ বলে ক্লিপিংস দিয়ে চলেছে।

মোবাইলটা পকেট থেকে বার করে সায়ন্তনকে ছোট্ট একটা ম্যাসেজ লিখে দিলাম। আমার পার্মিশন ছাড়া, একটিও ছবি এবং ক্লিপিংস যেন বাইরে না যায়। এটা মাথায় রাখবি।

কিরে তোর কাজ শেষ হয়নি। দাদা বললো।

কথাটা কানেই ঢোকালাম না এমন ভান করলাম।

বড়োমা সবাই একসঙ্গে কি করে বসবো?

তোকে ভাবতে বলেছি।

দিয়ে দাও। আমি কোথায় বসবো?

টেবিলে।

ভজু কোথায় মাসি?

ঘুমচ্ছে।

কোথায়?

ছোটোর ঘরের মেজেতে।

খাওয়া হয়ে গেছে?

না।

ওকে খাইয়ে দিতে পারতে।

তুই না এলে ও খাবে না বলে ওপরে চলে গেছে।

ডাকো।

কবিতা বেরিয়ে গেল।

টেবিলে আবার নিচে করে লাভ কি, সবাই নিচে বসলে হতো না?

তোর মন চাইলে হবে। বড়োমা রান্নাঘর থেকে বলে উঠলো।

আমি উঠে দাঁড়ালাম।

ইসলামভাই ধরো টেবিলটা একটু ধারে সরিয়ে দিই।

তোকে করতে হবে না। রতনকে বলে দিচ্ছি।

গোল করে আসন পাতা হলো। আজ আমি ডাক্তারদাদা আর দাদার মাঝখানে। দাদার পাশে মল্লিকদা, ডাক্তারদাদার পাশে ইসলামভাই। ওদিকে ছোটোমা, বড়োমার মাঝখানে মিত্রা বড়োমার পাশে নীপা, দামিনীমাসি, কবিতা, ভজু। ওপাশে রতন, আবিদ নেপলা।

সবাইকে খাবার বেড়ে দেবার পর মাঝখানে সব হাঁড়ি বসানো হলো যার লাগবে মিত্রা কিংবা কবিতা উঠে উঠে দেবে।

কারুর মুখে কোনও কথা নেই, সবাই গম্ভীর। খাওয়া শুরু হলো। মেনু লিস্টে শুধু বিড়িয়ানী, চিকেন। অনেক ক্ষণ পর ডাক্তারদাদা বলে উঠলেন।

বড়ো ভাল রেঁধেছো। দারুণ স্বাদ।

কিনে এনেছো না বাড়িতে করেছো। আমি বড়োমার দিকে তাকালাম।

উঁ কতো খায়। আমি বানিয়েছি। মিত্রা বললো।

তোর দ্বারা এ জন্মে হবে না, হলে আগামী জম্মে।

জিজ্ঞাসা কর মাসিকে।

বুঝেগেছি, হেল্পার।

আমার মতো তাই না অনিদা। ভজু বললো।

সবাই হাসছে।

কাল সকালে হবে, মনে রাখিস। মিত্রা বললো।

আমি কোনও উত্তর দিলাম না।

আবার সবাই চুপচাপ।

বেশ কিছুক্ষণ পর ডাক্তারদাদা বললো।

কিরে তোর এখন আবার তাড়াহুড়ো নেই তো?

না।

তোর নেক্সট ভেঞ্চার?

কিছু নেই।

বলা যাবে না?

মোবাইলটা পকেটে ভাইব্রেসন মুডে ছিল। কাঁপছে। বুঝলাম কেউ ফোন করছে। বার করলাম। ডাক্তারদাদা দাদা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে। দেখলাম মিঃ মুখার্জী।

হ্যালো।

বড়ো মুস্কিলে পড়েছি।

আবার কি হলো!

রঘুবীর যদব না রঘুবীর প্রসাদ।

কেন, কি নাম দেখছেন?

রঘুবীর প্রসাদ।

নমিনি।

মিলে যাচ্ছে।

তাহলে আবার কি, ওইটাই হবে। এ্যামাউন্ট কি দেখছেন।

বিশাল।

আজ কিছু তোলা হয়েছে।

হ্যাঁ। কলকাতার অনেকগুলো এটিএম থেকে। বিদেশী ব্যাঙ্ক ফেসিলিটিও ভাল।

কতো?

এক।

কোকা না খোকা?

খোকাতেই সীমাবদ্ধ তবে কোকার কাছাকাছি।

এ্যামাউন্টগুলো একটু নোট ডাউন করে নিন। পারলে প্রিন্ট আউট।

আমি বরং একটা মিনি স্টেটমেন্ট নিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

তাই করুন।

আর কিছু?

কালকে সকালে কাগজ গুলো একটু পাঠিয়ে দেবেন। মুখে গালা আটকে দেবেন।

ঠিক আছে।

ফোনটা পকেটে রাখলাম।

দাদা ডাক্তারদা আমার মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে। আমি এতক্ষণ কি কথা বললাম ওরা শুনেছে। কিন্তু কার সঙ্গে কথা বলছিলাম, বুঝতে পারেনি।

মল্লিকদা নিচু হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে।

কি দেখছো?

তোকে।

দেখতেই পাচ্ছি।

তুই কি আজকাল কোড ল্যাঙ্গুয়েজে কথা বলছিস কেউ বুঝতে পারবো না বলে।

ফিক করে হাসলাম।

হাসলেই সাতখুন মাপ। সারারাত জাগতে হয় জাগবো। কি ঘটনা ঘটালি বলবি। নাহলে উঠছি না। তখন অনেক তড়পেছিস আমার ওপর। একটা কথাও বলিনি।

ঘরটা গম গম করে উঠলো দাদার গলার আওয়াজে। সকলে চমকে তাকাল। খাবার থালায় হাত থেমে গেছে সকলের।

হো হো করে আমি হেসে উঠলাম। সবাই গম্ভীর। আমি হাসছি।

তোকে আমি এবার কান ধরবো।

সে তো তুমি থাপ্পরও মেরেছো। হাসতে হাসতে বললাম।

অনেকদিন পিঠে পরেনি। তাই ধরাকে সরাজ্ঞান করছিস।

চেঁচিয়োনা ছগনলাল ছুটে চলে আসবে।

বল আগে।

বললে সহ্য করতে পারবে?

বলেই দেখ।

আবার চুপ চাপ। আমি খেতে শুরু করলাম। সবাই খাওয়া থামিয়ে আমার কথা বলার অপেক্ষায়।

রতন।

বলো দাদা।

তুই তখন ম্যাডামের পা ধরে কেঁদেছিলি কেন?

তখন তোমার কথা না শুনলে তুমি ছট্টুর মতো আমাকে মেরে দিতে।

শুনলে কথাটা।

দাদা আমার দিকে বিষ্ফারিত চোখে তাকিয়ে।

এই ছট্টুকে এতদিন আমি বুকে করে আগলে রেখেছি। সাক্ষাত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছি। আজ কুকুরের মতো চোখের সামনে গুলি করে মারার হুকুম দিয়েছি। সায়ন্তন তোমাকে নিশ্চই বলেছে। বলতে পারো আমি চাইলে ও বেঁচে যেত।

কেন—দাদা ঝাঁজিয়ে উঠলো।

আমার কথা শোনেনি। বেইমানি করেছে।

সবাই বসে আছে, আমি খাচ্ছি।

ওকে কিন্তু আমি ভালোবাসতাম। আজ ওর একটা কথায় অবিশ্বাস করলাম। তুড়ন্ত ডিসিসান নিলাম ওর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার নেই। আর আমি যদি বিচার বুদ্ধি দিয়ে একবার মনে করি আমি ঠিক কাজ করতে যাচ্ছি। তোমরা কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না। আমার কাছে ছয় থেকে সাত রকমের অপশন থাকে। একজন না বললে, আর একজনকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেব।

কেন তুই এই কাজ করলি—এখনও দাদার গলায় সেই ঝাঁজ।

নিরূপায় হয়ে।

আর কোনও পথ ছিলো না?

না।

তার মানে! এইবার দাদার গলাটা বুঁজে এলো।

সরাসরি দাদার চোখে চোখ রাখলাম। তাহলে তোমাদের সকলকে আমাকে হারাতে হতো। মিত্রা পর্যন্ত বাদ যেত না।

কথাটা বলেই আমি খাবার থালায় মুখ লোকালাম।

আমি খাচ্ছি, সকলের হাত থেমে গেছে। পিন পরলে ঘরে শব্দ হবে। বুঝতে পারছি সকলে আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে।

কি হলো বসে রইলে কেন, খাও। আর শুনবে, না এখানে থামিয়ে দেব।

দাদা আমার দিকে তাকিয়ে। চোখের পলক পড়ছে না।

তুমি যাকে ফোন করে আমার জন্য সাহায্য চাইবে মনে করেছিলে, তার হাত-পা বাঁধা। সে কিছু করতে পারবে না।

দাদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

আবার সবাই চুপচাপ। নিস্তব্ধে খেয়ে যাচ্ছে।

যে ছেলেটা আমার গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করতে পারে, তাকে কোন সাহসে বাঁচিয়ে রাখবো বলো।

দাদার পিঠে কে যেন চাবুকের বাড়ি মারলো। আমার দিকে সরাসরি তাকাল।

তুই কি করে জানলি!

পরিদা।

পরিদা! ইসলামভাই আমার দিকে তাকাল।

হ্যাঁ। পরিদা। চকে দাঁড়িয়ে তোমরা যখন সবাই চা খাচ্ছিলে। পরিদা আমাকে আলাদা ডেকে নিয়ে গিয়ে বললো। তোকে একজন খুঁজতে এসেছিল। তাকে দেখতে এই রকম। সব খোঁজ খবর নিলো। লোকটাকে দেখে আমার তেমন সুবিধার মনে হলো না। ঘটনা পরম্পরায় পরিদার কথাটা অবিশ্বাস করতে পারিনি। তাই বাড়িতে ঢুকেই সময় নষ্ট করতে চাইনি।

আবার চুপচাপ।

রতনকে জিজ্ঞাসা করো, ওর পেট থেকে আমি কথা বের করেছিলাম কিনা। কিরে রতন আমি ঠিক বলছি।

রতন হ্যাঁ বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললো।

খেতে বসে কাঁদতে নেই রতন। আমি বলতে চাইনি, তোরা সবাই শুনতে চেয়েছিস।

দামিনীমাসি, বড়োমা নিজেদের পাত ছেড়ে উঠে এসে, এঁঠো হাতে আমার সামনে এসে বসলো। বাঁহাতে কাপরের খুঁট দিয়ে চোখ মুছছে।

কি হলো! তোমরা উঠে এলে কেন। যাও আমি বলছি।

তোর মুখটা একটু দেখবো।

দেখে লাভ নেই।

ঠিক আছে, বল। মিত্রা আস্তে করে বললো।

আবার খাওয়া শুরু করলাম।

তখন আমি আমার মধ্যে ছিলাম না। আমার মধ্যে একটা হিংস্র পশু কাজ করছিল। তোমরা কেউ সামনে এসে দাঁড়ালে, তারও অবস্থা ছট্টুর মতো হতো।

একটু থেমে।

রতন চাক্ষুষ দেখেছে, লাইভ দেখেছে অর্ক, সায়ন্তন। তুমি তো সায়ন্তনের মুখ থেকে সব শুনেছো।

ফোনটায় ম্যাসেজ এলো। পকেট থেকে বার করলাম। দেখলাম অর্ক ম্যাসেজ করেছে।

দাদা লাটবাগানের বাড়িতে একটা কালো গাড়ি ঢুকলো। নম্বর এই। ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না। আমি বাড়িতে, আমার চেলুয়ারা খবর দিল।

নম্বরটা দেখেই বুঝলাম স্পেশাল নম্বর।

সঙ্গে সঙ্গে মুখার্জীকে ফোন করলাম। ইচ্ছে করে লাউড স্পিকারে দিলাম।

মিঃ মুখার্জীর গলা ভেসে এলো। আপনাকে নিয়ে আর পারা যাবে না।

কেন।

এই কানা রাতে ওখানে আপনার লোক আছে!

গাড়ি কেন বাড়িতে ঢুকলো?

আমাকে বাঁচতে হবে।

আমার প্রতি বিশ্বাস নেই।

এ আপনি কি বলছেন অনিবাবু!

আমার খাবারে আপনি ভাগ বসাবেন না। আপনারটা আপনাকে দিয়েছি। ওটা আমার।

না না আমি শুধু খবরটা পৌঁছে দিচ্ছি। ওখানে থেকে বেরবার চেষ্টা করলে, এনকাউন্টার করতে বাধ্য হবো।

আপনি অর্কর পেট থেকে কথা বার করেছেন।

ঠিক।

আপনার সঙ্গে অর্ককে আলাপ করিয়ে দেবার পরই অর্ককে এই কাজ থেকে অফ করে দিয়েছি।

সত্যি!

ফোন করে দেখতে পারেন।

ব্যাটা নম্বরটা ভুল দিয়েছে।

মাথায় রাখবেন ওই পাড়ায় সাত বছরের একটা ভিখারীর ছেলে আমার ইনফর্মার হিসাবে কাজ করছে।

সত্যি! এক কাজ করুণ, আপনি আমাদের দফতরে জয়েন করুন।

টাকা দিতে পারবে না।

মুখার্জী জোড়ে হেসে উঠলো।

ফোনটা কেটেই অর্ককে ফোন করলাম।

বলো।

ঘুমিয়ে পড়েছিস।

দূর ঘুম আসে। মাথার মধ্যে যা ঢুকিয়ে দিয়েছ। তারপর যা লাইভ দেখালে।

ঘুমের ট্যাবলেট খা, একটাকে হাফ করে।

দু-একদিন না ঘুমলে কিছু হবে না।

তুই মুখার্জীকে তোর নম্বর দিয়েছিলি?

দিয়েছি। শ্যামবাজারের একটা এসটিডি বুথের।

সকলে মুখে হাত চাপা দিল।

নে ঘুমিয়ে পর।

শুধু এটুকু মশলা নেবার জন্য ফোন।

হ্যাঁ।

অনিদা।

বল।

বড়োমা, ছোটোমা, দামিনীমাসি ঠিক আছে?

এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে।

ম্যাডাম?

হ্যাঁ।

নেক্সট ভেঞ্চার বলো। এটা কাল খতম করবে।

কয়েকদিন রেস্ট নে, তারপর।

আচ্ছা। গুড নাইট।

ফোনটা পকেটে রাখলাম।

এটা অর্ক! দাদা চোখ বড়ো বড়ো করে বললো।

হ্যাঁ।

মল্লিক শুনলি।

দাদা জোরে হো হো করে হেসে উঠলো।

এর জন্য আজ তোমরা বেঁচে আছো। গত চারদিন ধরে ও দামিনীমাসির বাড়িতে মেয়ের দালাল হিসাবে কাজ করেছে। চারদিকে চোখ-কান খুলে রেখে আমাকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় আপডেট দিয়ে গেছে। দামিনীমাসি জানে না।

তুই কি বলছিস! দামিনীমাসি বললো।

তোমার বউমাকে জিজ্ঞাসা করো। এক বর্ণও মিথ্যে নয়।

বড়োমা মিত্রার দিকে তাকাল।

মিত্রা মাথা নিচু করে রয়েছে।

তুই জানতিস! মিত্রার দিকে তাকিয়ে দামিনীমাসি বললো।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে। তার আগের ঘটনা কিছু জানিনা।

এবার বলো, আমি কোথায় ভুল করেছি।

তুই একটুও ভুল করিসনি। আমি এতক্ষণ খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। তুই তখন তোর দাদার ওপর ওরকম চোটপাট করলি বলে। বড়োমা কাঁদতে কাঁদতে বললো।

কাঁদলে উঠে চলে যাব। খাব না বলে দিচ্ছি।

ঠিক আছে কাঁদবো না। তুই তো একটু বলতে পারিস। গলাটা কান্না ভেঁজা।

সময়ের অপেক্ষা করতে হবে।

মায়ের মন মানে?

তাহলে মরতে হবে।

যে তোকে পেটে ধরেছিলো সে পারতো?

সেই জন্য তিনি মারা গেছেন। তুমি, ছোটোমা, দামিনীমাসি পারবে, তাই বেঁচে আছো।

স্পষ্ট কথার কষ্ট নেই, বুঝলে বান্ধবী। অনি হচ্ছে জেমস বন্ড ০০৭।

থামো তুমি, মস্করা করো না। বড়োমার গলাটা ধরা।

একথা তোমায় এভাবে মানায় না। দাদা বললো।

ছেলেটাকে একবার দেখলে না। যদি ওর বুকে এসে একবার লাগতো।

সে টি হতো না। দাদা এমনভাবে বললো, সবাই হেসে ফেললো।

ও বহুত চালাক। সায়ন্তন বললো, অনিদা এখান থেকে কন্ডিসন করে গেছে। বুলেট প্রুফ গাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। তাতে সাদা কাঁচ থাকবে। গাড়িতে ঘাপটি মেরে বসেছিল। সব শেষ হবার পর, ছবি তুলে পালিয়ে এসেছে। ওতো ওই বাড়িটার ভেতরেও ঢোকেনি।

তুমি ফোক্করি করছো এডিটর। ডাক্তারদাদা বললো।

বিশ্বাস করো। লেখাটা এমন লিখেছে ও যেন নিজে ঢ্যে ঢ্যে ঢ্যে করে গুলি করছে।

সবাই হাসছে। বড়োমাও হেসে ফেললো।

সত্যি বলছি অনিদা, তুমি পাঁচটা ঘণ্টা এমন সাসপেন্সে রেখেছিলে। আমাদের পিলে চমকে গেছিল। এর আগে তোমার অনেক রাগ দেখেছি, এরকম কথা তোমার মুখ থেকে আগে শুনিনি। রতন বললো।

ইসলামভাই হাসছে।

তখন তোকে কি যেন বলেছিল?

হজম করে দেব।

অনিদা আমাকে সব সময় বলে। ভজু বলে উঠলো।

দামিনীমাসি ভজুর দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকাল।

কিগো বসে থাকলে হবে। রতন সেই যে দুপুরে একটা চিকেন প্যাটিস খাইয়েছিল। তারপর বটাদার হাফ ডিম পাঁউরুটি। বাকিটা দাও কালকে অনেক কাজ, লড়তে হবে।

তারপর আমরাও আর কিছু খাইনি অনিদা, আবিদ বলে উঠলো।

দাও দাও ওদের দাও। দাদা বলে উঠলো।

হ্যাঁরে অনি কালকে রাজনাথ না ডাক্তার। ডাক্তারদাদা বললো।

বলবো না। সময় বলবে।

কেন জিজ্ঞাসা করছো। ও সোজা কথা কখনো বলে। আবার কাল রাতে ধমকাবে, তখন শুর শুর করে বলে দেবে। মল্লিকদা বললো।

ডাক্তারদাদা খিক খিক করে হেসফেললো।

ডাক্তার তুমি কি নেবে? বড়োমা জিজ্ঞাসা করলো।

থাকলে দাও। আমার বড়ো ভয় করছে, অনি যদি আমাকে হজম করে দেয়।

আবার সকলে হেসে ফেললো।

হ্যাঁরে অনি, কোকা আর খোকা কি বস্তু। মল্লিকদা গম্ভীর হয়ে বললো।

গুড কশ্চেন মল্লিক। ডাক্তারদাদা বললো।

আমার দিকে তাকিয়ে।

তোর কাছ থেকে অনেক নতুন নতুন শব্দ শেখা যায়। বল তোর কোড ল্যাঙ্গুয়েজ।

ইসলামভাই হাসছে।

ইসলামভাই জানে। জিজ্ঞাসা করো।

মুন্না। দাদা বললো।

সত্যি দাদা, বিশ্বাস করুণ আমি জানিনা। রতন তোরা কেউ জানিস?

না দাদা।

বল। দাদা আমার মুখের দিকে তাকাল।

কোকা মানে কোটি, খোকা মানে লাখ।

ইসলামভাই হাসতে হাসতে বিষম খেল।

কি হলো!

ইসলামভাই কাশতে কাশতে হাত দখাচ্ছে। কাছে আসতে হবে না।

ছোটোমা আমার দিকে চোখ পাকিয়ে ইশারায় কান মুলছে।

এক কোটি টাকার ড্রিল! মল্লিকদা বললো।

কাছা কাছি। একটা পরিবারকে উড়িয়ে দেবার জন্য। সেখানে কি আমি গোলাপ ফুল দিয়ে তাকে বরণ করবো।

মিত্রা।

মিত্রা মল্লিকদার দিকে ঘুরে তাকাল।

কালকে আমি রিজাইন দিচ্ছি কাগজ থেকে।

কেন!

আমি অনির সঙ্গে কালকে থেকে এই কাজ করবো।

ঢং দেখো। ছোটোমা বললো।

তোমার দ্বারা হবে না। মিত্রা বললো।

কেন?

বুবুনের মতো তাহলে তোমাকে গিরগিটি সাজতে হবে।

কেন! দাদা বললো।

দেখলেন না, এক ঘণ্টা আগের বুবুন, আর এক ঘণ্টা পরের বুবুনের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ।

দেখলে এডিটর, রতনে রতন চেনে। ডাক্তারদাদা বলে উঠলো।

তারমানে! তুমি কি বলতে চাও। দাদা বললো।

কথাটা স্পষ্ট হচ্ছে না। আরও ভেঙে বলতে হবে। বড়োমা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।

আবার হাসি।

আমি উঠে গিয়ে ছোটোর পাত থেকে একটা মাংসের টুকরো তুলে নিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসলাম।

মিত্রা হাঁই হাঁই করে উঠলো।

তুমি কিছু বলতে পারো না। বড়োমার দিকে তাকিয়ে গঁ গঁ করে উঠলো।

তোকে দিচ্ছি। আছে।

দামিনীমাসি হাসছে।

দিদি আপনি বসুন আমি দিচ্ছি। দামিনীমাসি উঠে গেল।

আমি বেসিনে মুখটা ধুয়ে বেরিয়ে এলাম।

বাগানে এসে দাঁড়ালাম।

বেশ শীত শীত করছে। কাক ডাকছে। বুঝলাম ভোর হয়ে আসছে। এখনও অন্ধকার।

ইসলামভাই পাশে এসে দাঁড়াল। রতন, আবিদ, নেপলা সঙ্গে।

চলো ওপাশে গিয়ে দাঁড়াই।

চল।

সিগারেট আছে।

আছে।

তুমি খাও! রতন বললো।

মাঝে মাঝে খায়। ইসলামভাই বললো।

নেপলা কোমোড় ধাপিয়ে পেন্নাম করলো।

কিরে হঠাৎ!

দাদাকে দেখেছি। তুমি দাদার দাদা।

ধ্যুস।

ও ঠিক কথা বলেছে অনি। সত্যি যদি ঘটনাটা ঘটতো। ভাবলেই গা সিউড়ে উঠছে।

ঘটতো বলতে তুমি কি বোলছো। এখন হয়তো তোমাকে দেখতে পেতাম না। মিত্রা, ছোটোমা, দামিনীমাসি, বড়োমা, নীপাকে দেখতে পেতাম না। দাদা-মল্লিকদা অফিসে ছিল কিছু করতে পারতো না। ওদের টাইম ছিল আজ নাইট। সেই মতো ওখানে গাড়ি পৌঁছেগেছিল। যে ওদের ছট্টুর কাছে নিয়ে আসতো তার যেতে একটু দেরি হয়েছিল।

খাওয়া দাওয়া চলছিল। আর একটু দেরি হলে বেড়িয়ে পরতো।

কি বলছিস তুই!

এক বর্ণও বানিয়ে বলছি না।

মুখার্জী যদি রিফিউজ করতো।

ঘোষ ছিল। অনেক দিন শুকনো হাতে বসে আছে।

ছট্টু বলছিল, ঘোষদার কথা। আবিদ বললো।

তুই কি সকলকে ম্যাসেজ করেছিলি?

কেন বলো!

আবিদ তোর ম্যাসেজ পেয়েছে। নেপলা পেয়েছে। রতন পেয়েছে। দিদি পেয়েছে। কার নাম বাদ দেব।

বিশ্রী ব্যাপার হলো।

কেন!

আমার পার্সোনাল ফোল্ডার সিলেক্ট করে অল করে দিয়েছিলাম মনে হচ্ছে। তখন মাথার ঠিক ছিল না।

সেইজন্য চিকনা, অনাদি, বাসু, সঞ্জু ফোন করেছিল। টিনা, মিলি, দেবাশিস সবাই ফোন করে মামনিকে জিজ্ঞাসা করছে।

ইস এই একটা কাজ ভুল করে ফেললাম। যদিও আমার খুব ঘনিষ্ঠজন আর বন্ধু-বান্ধব ছাড়া কারুর নাম নেই ওই ফোল্ডারে।

তবু রক্ষে।

কিরে শুবি না? মিত্রা ওপরের বারান্দা থেকে চেঁচাল।

তুই যা, যাচ্ছি।

আবিদ।

বলো দাদা।

কাল টানতে পারবি।

এখনও বাহাত্তর ঘণ্টার দম আছে।

মাথায় রাখবি যে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছিস, সেই মাটি পর্যন্ত জানতে পারবে না তোর মনের কথা।

তোমাকে ভাবতে হবে না। কয়েক ঘণ্টায় যা পেলাম তোমার কাছে, মাথা খুলে গেছে।

ছট্টু এই বাড়িতে এসে ঘুরে গেছে, তোরা কেউ জানতে পারলি না।

বিশ্বাস করো অনিদা, অবাক হচ্ছিলাম ওর কথা শুনে। আমি দাদাকে সব কথা বলেছি। রতন বললো।

আর ভুল করিস না। একটা ভুলে কতো বড়ো ক্ষতি হয়ে যেত বল।

ছট্টুকে আমি আন্ডার এসটিমেট করেছিলাম। ইসলামভাই বললো।

তোমাকে একদিন বলেছি। এবার চোখ কান খোলা রাখ। এবার ড্রাগস থেকে একেবারে বিদায় নাও।

আমাকে মাস খানেক সময় দে।

অন্য টিম কাজ করুক। তোমরা সরে এসো।

সরে আসব। ছেলেগুলোকে একটু সেট করে নিই।

কি নেপলাবাবু তখন আমার কথায় খুব কষ্ট পেয়েছো।

একটুও না। সেই সময় অবশ্য মটকা গরম হয়েগেছিল। তারপর তুমি যখন ঘুরে এলে, তখন বুঝলাম তোমার দম। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে এতবড়ো স্কিম। ইসলামভাই পারতো না।

দুর পাগল, আমি। ওদের আর্মস দেখেছিস। এই কাজের জন্য এক কোটি!

হিসাবে যা পাচ্ছি। হয়তো এর বেশিই হবে। তোমাদের শোবার ব্যবস্থা মাসি কোথায় করেছে?

ড্রইংরুমে লম্বা বিছানা পড়েছে। ভজু তোর গেটের কাছে। ওকে নড়ানো যাবে না।

যাও শুয়ে পড়ো, আমি শুই গিয়ে, ভীষণ শীত করছে।

কেনরে শরীর খারাপ নাকি?

না খুব টায়ার্ড লাগছে।

ওপরে চলে এলাম। দেখলাম সত্যি ভজুরাম আমার দরজার গোড়ায়। কুকুর যেমন ভাবে গুটিয়ে শুয়ে থাকে, ঠিক সেই ভাবে। আমি আসতে একবার তাকিয়ে দেখল, হাসল, চোখ বন্ধ করল।

আমি ঘরে ঢুকলাম, দরজা বন্ধ করলাম। মিত্রা চুল আঁচড়াচ্ছে। আমার দিকে একবার তাকাল। ভ্রু-জোড়া কুঁচকে গেছে। হাতের চিরুণি থেমে গেছে।

কিরে কি হয়েছে!

কিছু হয়নি।

তাহলে কাঁপছিস?

শীত করছে।

শরীর খারাপ লাগছে?

নারে বাবা না। আমি মানি পার্টস থেকে একটা ট্যাবলেট মুখে দিয়ে ঢক ঢক করে জল খেলাম।

ওষুধ খেলি!

প্রিকয়েশন।

দেখি তোর কপালটা।

মিত্রা আমার গায়ে হাত দিল। কপালে হাত দিল। আমার গালে গাল ঠেকিয়ে শরীরের উত্তাপ বোঝার চেষ্টা করলো।

কি দেখলি?

না ঠিক আছে।

মাথাটা ভীষণ যন্ত্রণা করছে, একটু টিপে দিবি।

শুয়ে পর, দিচ্ছি।

মিত্রা কাপর ছাড়তে ছাড়তে আমি কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলাম। মিত্রা জামা কাপর ছেড়ে বাথরুমে গেল। কাজ শেষ করে খাটে উঠে এলো। প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে। কপালের দু-পাশটা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে।

অনেকটা খাওয়া হয়ে গেছে, না খেলেই ভালো হতো।

একটু বাম লাগিয়ে দেব।

না।

এখুনি রিলিফ পেতিস।

বড়ো লাইটটা নিবিয়ে দে।

ও আমার কথা মতো বড়ো লাইটটা নিবিয়ে দিয়ে খাটে উঠে এলো।

মিত্রা আমার পাশে আধশোয়া অবস্থায়। ওর নরম হাত আমার কপালে। ওর শরীরের গন্ধ আমার নিঃশ্বাসে এসে ধাক্কা মারছে। আমার মাথাটা ওর বুকের কাছে টেনে নিল। মিত্রার পাঁচটা আঙুল হারমোনিয়ামের রিডের মতো আমার চুলের মধ্যে খেলা করছে।

বুবুন।

কোন সাড়া শব্দ দিলাম না।

কষ্ট হচ্ছে।

আমার মুখ থেকে কোনও শব্দ বেরচ্ছে না।

হাতের বুড়ো আঙুলটা দিয়ে আমার কপালে চাপ দিল। বুঝতে পারছি মিত্রা কিছু বলছে। মনে হচ্ছে ও অনেক দূরে, হাল্কা একটা শব্দ আমার কানে ভেসে আসছে। তারপর সেই ক্ষীণ শব্দটাও আরও দূরে আরও দূরে কোথায় যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল।

এখানে আমি সম্পূর্ণ একা। একেবারে একা। কেউ কোথাও নেই। চারিদিক শুনশান। আমি একা বসে আছি সেই অশ্বত্থগাছের তলায়। আমার সামনে সেই পক্ককেশ বৃদ্ধ। পীরসাহেব! এখন দিনের আলোয় চারদিক থই থই করছে। কই কখনোতো কারুর মুখ থেকে শুনিনি বৃদ্ধ দিনের বেলা কাউকে দেখা দিয়েছেন। উনি তো নিশাচার। অন্ধকারেই ওনার শরীরের দ্যুতি চারদিকে ছড়িয়ে পরে। অবাক হলাম। আগে কোনওদিন চাক্ষুষ দেখিনি! ওনার গল্প শুনেছি লোকের মুখে। যা শুনেছি একেবারে সেই রকম।

বরং তার থেকে একটু বেশিই।

সাদা পক্ককেশ, সাদা আলখোল্লা। সামনে একটা বই খোলা। আরবী ভাষায় কি যেন লেখা। ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। বই থেকে মুখ তুলে আমার দিকে তাকালেন। এই প্রথম আমি তাঁর মুখ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। টকটকে ফর্সা মুখখানা। ভ্রু দুটো সাদা চুলে ঢাকা, কি অপরূপ মুখখানা। সৌম্য শান্ত। আমার দিকে পিটপিট চোখে তাকালেন। হাসলেন।

কিরে তুই! এই অসময়ে?

আপনার কাছে এলাম।

কেন?

ভালো লাগছে না। মনের সঙ্গে ভীষণভাবে যুদ্ধ করছি। নিজের মনকে ঠিক বোঝাতে পারছি না। আজও একটা অন্যায় কাজ করলাম।

পাগল। কে বললো তোকে, অন্যায় কাজ করেছিস।

নিজের মন, বিবেক।

তোর মনে এখনও ময়লা আছে। পরিষ্কার হয়নি। পরিষ্কার কর।

কি ভাবে?

ওটা বলতে পারবো না। তোকে তোর সমস্যাটা বললাম, এবার সমাধানের দায়িত্ব সম্পূর্ণ তোর নিজের।

আমি যে কাজ করেছি, যা করতে চলেছি সব ঠিক করছি?

সবটা বলতে পারবো না। তবে এখনও পর্যন্ত ঠিক কাজ করেছিস।

চুপ চাপ মাথা নিচু করে বসে রইলাম।

যা এবার, আমি একটু পড়াশুনো করি।

তবু বসে রইলাম।

তুই নিজের জন্য কিছু করিসনি। যা কিছু করেছিস সব পরের জন্য। তোর চিন্তা কি?

যা জানতে এসেছিলাম, তা জানতে পারলামনা।

পারবি। একটুঅপেক্ষাকর। সময় এখনও আসেনি।

চোখের সামনে থেকে হঠাৎ সেই পক্ককেশ বৃদ্ধ নিমেষে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি আবার একা। সম্পূর্ণ একা।

ইস, অনিমেষদা কি ভাববে। যখন শুনবে আমি এর মধ্যে জড়িয়ে পরেছি। ভাববে আমি একজন মাস্তান, দাদা, ডন। আমি এনকাউন্টার করাতে পারি। তাও পার্টির একজন ক্ষমতাবান কর্মীর বিরুদ্ধে। অনিমেষদাকে আমার জন্য কতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। হয়তো অন্যান্য পার্টী কর্মীরা অনিমেষদাকে দু-একটা ছোটো-বড়ো কথা বলবে।

কথাটা মনে হতেই আমি কেমন যেন হয়ে গেলাম। ওই নিঃঝুম জায়গাটা আমার গলার স্বরে কেমন গম গম করে উঠলো আমি গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠলাম।

শুয়োরের বাচ্চা রাজনাথ আমি বুঝতে পেড়েছি তুমি খুব ধীর স্থির গতিতে এগোচ্ছ। তুমিও বেশ্যা পট্টি থেকে উঠে এসেছো, আমিও একটা সময় দিনের পর দিন বেশ্যা পট্টিতে কাটিয়েছি। তুমি আমার ডাইরীতে বহু দিন আগে নিজের নামটা লিখিয়ে ফেলেছো। বহুত পোড় খাওয়া মাল তুমি। যখন বুঝতে পারব তুমি অনিমেষদার গায়ে হাত তোলার ব্যবস্থা করেছো, তখন তুমি গাইপ। কোনও বাবা তোমাকে বাঁচাতে পারবে না। মথায় রাখবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমায় ছেড়ে রাখবো। জীবনে বহু বিষধর সাপ পায়ের গোড়ালি দিয়ে ডলে মেরে দিয়েছি। আমি জানি সাপের সাথে খেলা করা কি ভীষণ মজা।

তুই আবার কিন্তু ঝামেলা করছিস মিত্রা। হা হা হা।

আমার শুর শুরি লাগছে। যা না ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। দেখ ছোটোমা ভীষণ ডেঞ্জার। জানতে পারলে হাড় মাস এক করে দেবে।

আবার কাঁদে।

তোকে বলেছিনা, আমি কান্না পছন্দ করিনা। কন্না দুর্বল মানুষের পরিচয়।

তোর টডি আমার হাত থেকে ছাড়া পাবে না।

ইসলামভাই আমার কাছে শিশু। ইসলামভাই জানেনা টোডিকে আমি মারবো। ওকে আমি টিপ দিয়ে সরিয়ে দিয়েছি। একটু সময় নিয়ে কাজটা করবো। ব্যাটা বহুত গভীর জলের মাছ। ইসলামভাইয়ের চ্যালা চামুণ্ডারা টেরও পাবে না।

ইস তোকে বলে ফেললাম। প্লিজ তুই কাউকে বলিস না। গায়ে হাত দিয়ে শপথ কর।

আচ্ছা মিত্রা, তুই কোনও অন্যায় করিসনি! যার জন্য ওরা এই সব করতে বাধ্য হয়েছে।

ঠিক আছে। মাথায় রাখবি তোর কথার ওপর বেইজ করে আমি কাজ করছি।

তবে আমার ইনটিউশন কখনও আমার সঙ্গে বিট্রে করেনি।

কি বললে আমার জন্য তুমি পার্টিতে অপদস্থ হচ্ছ।

মিত্র ওঠ, আর এক মুহূর্ত এখানে বসবো না।

তোমাকে পুরুষ ভাবতাম। তোমার বৌদ্ধিক চিন্তা ভাবনাকে আমি শ্রদ্ধা করতাম। আর তুমি কিনা তোমার পার্টির একটা কুত্তার কথায় আমাকে এতো বড়ো কথা বললে।

তোমার ক্ষমতা থাকলে তুমি আমার সঙ্গে লড়ে যেও। তোমার হাতে সরকার আছে। তোমার হাতে প্রশাসন আছে। আমার হাতে কলম আছে। এক একটা আঁচড়ে আমি তোমার পার্টিকে ফালা ফালা করে দেব। আমি কাগজের মাধ্যমে তোমাদের এগেনস্টে জনমত গড়ে তুলবো। দেখি তুমি কতো ডিস্টার্ব করতে পার আমায়।

না না বৌদি তুমি আমায় রিকয়েস্ট করবে না। যেদিন স্যার, সুনন্দাদি তোমার সঙ্গে আমায় আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। সেইদিন থেকে তুমি তাদের সঙ্গে একই আসনে বসে আছ আমার মনে। তোমার পরে অনিমেষদাকেও সেই আসনে বসিয়েছি। তোমাদের নিঃস্বার্থ ত্যাগ ব্রত আমাকে প্রতি পদে পদে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। নিজেক কতবার বুঝিয়েছি অনি তুই একটা অরফ্যান। তোকে এরা ভালোবাসে।

এদের ভালোবাসার অমর্যাদা কোনওদিন করবি না। এখনও পর্যন্ত তোমাদের ভালো ছাড়া মন্দ চিন্তা করিনি কখনও। যখনই কোনও অন্যায় হচ্ছে নিজের চোখে দেখেছি, নিজের অন্তর দিয়ে বুঝতে পেড়েছি। ছুটে এসে প্রথমে তোমাকে বলেছি, অনিমেষদাকে বলেছি।

সেই অনিমেষদা বলে কিনা আমি তাকে পৃথিবী থেকে সড়িয়ে দেবার ষড়যন্ত্র করেছি। সুরো কি ভাবছে বলো। আমার তো কোনও মায়ের পেটের বোন নেই। পৃথিবীতে ওকে আমি আমার মায়ের পেটের বোন হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছি। একমাত্র বোন হিসাবে ওর কাছ থেকে আমি ভাইফোঁটা নিই। তারমানে অর্থটা কি দাঁড়াচ্ছে। আমি আমার পিতাকে খুন করবো। কিসের স্বার্থে?

আর একটা কথা তোমায় বলে যাচ্ছি শোনো। মিত্রাকে স্বাক্ষী রেখেই বলছি। রাজনাথকে তুমি আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না।

ওর গত দশবছরের ইতিহাস আমার কাছে গচ্ছিত আছে। বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে তুমি ওকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হবে। বলতে পারো আমার কলমের জোড়ে তুমি বাধ্য হবে। তারপর বারো ঘণ্টার মধ্যে ও পৃথিবীর আলো আর দেখতে পাবে না। তোমাদের তৈরি আইনেই আমি ওকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেব।

এনকাউন্টার। ভারতীয় সংবিধানে যার কোনও সুনির্দিষ্ট সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না।

যাবার আগে আর একটা কথা বলে রাখি, এনকাউন্টার স্পেশালিস্টরা সরকারী গুণ্ডা। ডাক্তারের যেমন অলিখিত ভাবে মানুষ মারার অধিকার আছে। ওদেরও আছে। এই খেলাটা আমি এখন খুব নিপুন হাতে খেলতে পারি। আমি ওদের সাপ্লায়ার।

চল মিত্রা চল। আমার এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে না। আমার সমস্ত ছক ওলট পালট করে দিতে হবে। আবার নতুন করে পথ চলা শুরু করতে হবে।

কিরে, তুই এখানে বসে আছিস! অফিসে যাসনি? পই পই করে কাল রাতে তোকে বলেছি, সকাল সকাল অফিসে যাবি।

ঘুমের ঘোরটা কাটতে একটু সময় লাগল।

মাথা ঘুরিয়ে চারদিক দেখলাম। ঘর ভর্তি লোক। অনাদি, বাসু আমার দু-হাত চেপে ধরে আছে। চিকনা আমার পায়ের ওপর বসে পাদুটো জাপ্টে ধরে আছে। আমার মাথার শিয়রে বড়োমা, ছোটোমা, দামিনীমাসি।

আমার মুখের কাছে ডাক্তারদাদার মুখটা এগিয়ে এলো। চোখ দুটো ছল ছল।

বড়োমা।

এইতো আমি। গলাটা ধরা ধরা।

আমার মাথায় হাত রাখলো।

মিত্রা ওখানে কাঠ হয়ে বসে আছে কেন? তুমি ওকে খাইয়ে অফিসে পাঠাওনি কেন!

উনি মিত্রা নন, সুতপা।

হাতটা টানতে চেষ্টা করলাম। অনাদি, বাসু হাত চেপে ধরে আছে।

ছাড় না। তোরা কি করতে এসেছিস। ওখানে কাজ নেই। সব ফেলে চলে এসেছিস। আগামী সপ্তাহে গিয়ে সব হিসেব নেব। মাথায় রাখিস।

উঠে বসার চেষ্টা করলাম।

এখন না একটু পরে। ডাক্তারদাদার গলাটা ধরা ধরা।

কেন! আমার কিছু হয়নি। তোমরা এইটুকুতে ঘবড়ে যাচ্ছ কেন!

বৌদির দিকে তাকিয়ে, হেসে ফেললাম।

আজ তোমার কাছে যেতাম। তোমাকে ফোন করে জানাতাম। মিত্রাকে দেখেছো?

একবার চারদিকটা দেখে নিলাম সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

সকালে এলে! সত্যি আমার একটা ভুল হয়ে গেছে। ম্যাসেজটা করা উচিত হয়নি। তখন ঠিক মাথাটা কাজ করেনি বুঝলে।

তোমার সঙ্গে বড়োমা, ছোটোমা, দামিনীমাসির পরিচয় হয়েছে?

বৌদি এগিয়ে এলো, মাথায় হাত রাখল। মুখটা কেমন দুমড়ে মুচুড়ে যাচ্ছে।

কথা বলিস না। গলাটা ধরা ধরা।

তোমরা কাঁদছো কেন বলো?

সবাই এ ঘরে ভিড় করে আছো? সত্যি বলছি, আমার কিছু হয়নি। দেখ আমি স্বশরীরে বেঁচে আছি। আমি মরবো না। এখনও অনেক কাজ বাকি আছে।

কই স্ট্রংম্যানের ঘুম ভেঙেছে।

অনিমেষদা এখানে! বৌদি!

মাথাটা তোলার চেষ্টা করলাম।

না না এখন না।

অনিমেষদা এগিয়ে এসে আমার মুখের কাছে ঝুঁকে পরেছে।

দাদা তুমি এখানে! দেখলাম দাদার পাশে বিধানদা।

বিধানদা আমার দিকে ফ্যাকাশে মুখে তাকিয়ে।

না জানিয়ে একটা বড়ো অন্যায় করে ফেলেছি দাদা। ক্ষমা করবেন। এছাড়া আমার আর কোনও উপায় ছিল না।

তোকে কথা বলতে হবে না।

আমার ঘুম হয়ে গেছে। এবার উঠি। বড়োমা, মিত্রা কোথায়? ওকে দেখছিনা কেন!

মিত্রা আমার সামনে এলো।

কিরে তোর চোখ দুটো এতো ফোলা ফোলা—কাঁদছিস! কেন!

তোদের নিয়ে সত্যি মহামুস্কিল। অফিসে চলে যা, তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।

মিত্রা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।

কথা বলছিস না কেন!

না, শুয়ে থাকলে হবে না। এবার উঠি। না উঠলে তোরা সব গণ্ডগোল পাকাবি।

ওঠার চেষ্টা করলাম।

তুই উঠতে পারবি। ডাক্তারদাদা বললো।

খুব পারবো।

আস্তে আস্তে উঠে বসলাম। ঘরের চারিদিক তাকিয়ে দেখলাম। হেসে ফেললাম। তোমরাও এসেছো!

সত্যি টিনা, খুব বড়ো অন্যায় করে ফেলেছি। বৃথা ভয় পাচ্ছ।

বড়োমা।

বল।

তোমরা সবাই আমাকে ঘিরে এভাবে বসে আছো কেন? আমার কি হয়েছে? ডাক্তারদাদার মুখটা কেমন শুকনো শুকনো। তোমাদের চোখ ফোলা ফোলা। দাদা, মল্লিকদা কোথায়?

নিচে।

এই ঘরে আসতে মানা করে দিয়েছ?

না।

ছোটো।

ছোটোমা কাছে এগিয়ে এলো, আমি ছোটোমার গলা জড়িয়ে ধরলাম।

ডাকতে পারতে। উঠে পরতাম, ভয় পাওয়ার কি আছে?

এই দেখ আবার কাঁদে। কাঁদলে কিন্তু অনি হাওয়া। আর পাত্তা পাবে না।

ছোটো আমার মুখটা চেপে ধরলো। আমি ছোটোমার মুখের দিকে তাকালাম।

একটু চা খাওয়াও।

আমি একা কথা বলে যাচ্ছি। সবাই চুপচাপ। সবাই কেমন সন্দেহের চোখে আমাকে দেখছে।

ছোটো যাও একটু চা করে নিয়ে এসো। ডাক্তারদাদা বললো।

ডাক্তারদাদা তুমি ফিউজ কেন?

তোর শরীরটা একটু সমস্যা করছিল।

আমার!

হ্যাঁ।

তোহলে তোমার ডাক্তারীশাস্ত্র ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে।

হবে হয়তো।

তুমি এভাবে বলছো! তুমি তো সহজে হার মানবার পাত্র নও।

ডাক্তারদাদা মুখ নিচু করে রয়েছে।

মিত্রা টেবিলের ওপর থেকে আমার ফোনটা দে।

কেন, কি করবি?

দরকার আছে, দে না।

ডাক্তারদাদা ইশারা করলো। অনিমেষদা, বিধানদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।

বৌদি, সুরো এসেছে?

হ্যাঁ।

কোথায়?

নীচে।

তোমরা বসো আমি একটু আসছি।

কোথায় যাবি?

ছোটোর ঘরে।

না তুই এখন যাবি না। বড়োমা বললো।

কেন আমার কি হয়েছে!

ডাক্তারদাদা তাকাল বড়োমার দিকে।

কিছু হয়নি।

তুমি রাগ করছো আমার ওপর।

বড়োমা মাথা নিচু করলো।

তোরা কখন এসেছিস? অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম।

সাড়ে আটটা।

কটা বাজেগো বড়োমা।

সাড়ে এগারোটা।

ইস। তোমরা আমাকে ডাকলেনা কেন?

সবাই চুপ।

মিত্রা মোবাইলটা এনে দিল।

কিরে মোবাইলটা ওখানে ছিল না?

না।

আমার সাথে একটু আয়।

কোথায়?

ছোটোর ঘরে।

যেতে পরবি?

কেন বল তো!

এমনি।

চল।

আমি খাট থেকে নেমে দাঁড়ালাম।

সবাই ইশারায় কথা বলছে। বুঝতে পারছি।

আমি মিত্রার সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। আমার পেছন পেছন টিনা, মিলি, অদিতি।

দেবাশিস বারান্দায় থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। ঘর থেকে বেরবার সময় ওর পিঠে একটা চাপর মারলাম। ও মুখ টিপে ফ্যাকাশে হাসি হাসলো।

আমি ছোটোমার ঘরে এসে ঢুকলাম। মিত্রা আমার পাশে।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/EjsGAnB
via BanglaChoti

Comments