❝কাজলদীঘি❞
BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৯ নং কিস্তি
—————————
প্রবীরদাকে বলে দিও ওর যদি দম থাকে অনিকে ফোন করতে। ব্যাপারটা যখন অনি ভার্সেস প্রবীর তখন আমরা দুজনে বুঝে নেব। তোমরা এর মধ্যে মাথা গলাবে না।
সবাই আমার গলার স্বরে চমকে উঠলো। যারা আমাকে এর আগে দেখে নি তারাও আমার দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। সবাই কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। কেউ বুঝতে পারে নি আমি হাসতে হাসতে এইভাবে আচরণ করতে পারি।
আমি জানতাম তুই এই কথা বলবি।
তাই তো আমি ধীরে ধীরে এগচ্ছিলাম। তোর বৌদি মাঝখানে টুকে দিল।
প্রবীরদা জানল কি করে অনি তুলেছে। তার মানে চারজন ছাড়াও আরও কয়েকজন আছে। তাদেরকে আমার সামনে হাজির করতে বলো।
সেই জন্য আমি একমুখে ঝাল খাচ্ছি না দুমুখে ঝাল খাওয়ার চেষ্টা করছি।
অনিমেষদা খুব শান্ত ধীরস্থির ভাবে বললো।
বিধানদার দিকে তাকিয়ে।
কি বিধানবাবু শেকড়টা কতদূর গেছে এবার বুঝতে পারছেন। আমার হয়েছে যতো জ্বালা।
প্রবীরদার এতো ক্ষমতা থার্ড পার্টি দিয়ে আমাকে হুমকি দেয়, আমাকে কাল উড়িয়ে দেবে। আমি বিয়ে করে মজমা নিচ্ছি। এতো বড়ো স্পর্ধা। উনি কি রাজ্য কমিটির নেতা বলে সাপের পাঁচ-পা দেখেছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে ওকে আমি বাটি হাতে কলকাতার রাস্তায় বসিয়ে দেব। যাতে ওর ভিক্ষে না জোটে তার ব্যবস্থা করবো।
বিধানদা প্লেট রেখে এগিয়ে এলো।
মিত্রা থালাটা টেবিলে রেখে আমার হাত চেপে ধরেছে। কনিষ্করা ফ্যাল ফ্যাল করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। অনি কার সঙ্গে এইভাবে গলা উঁচু করে কথা বলছে! যার একটা ফোনে এখুনি এই বাড়িতে পুলিসের হেডকোয়ার্টারের টপ টপ লোক চলে আসতে পারে।
যে বৌদি একটু আগেও আমার সঙ্গে হাসাহাসি করছিল। সেই বৌদি পর্যন্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে। বুঝতে পারছে কিছু একটা জট পেকেছে। জ্যেঠিমনির মুখটা কেমন শুকনো শুকনো। ইসির চোখে কে যেন হাজার পাওয়ারের বাল্ব জ্বেলে দিয়েছে।
বরুণদা কেমন থতমতো খেয়ে গেছে। বড়োমা, ছোটোমা, মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা স্বাভাবিক। ইসলামভাই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে। ওরা আমার এই অবস্থা আগে দেখেছে। যারা দেখে নি এই অনিকে তাদের কাছে অজানা অনির চেহারা বেরিয়ে পড়েছে।
তুই রাগ করিস না। আজ আনন্দের দিন। আমি অনিমেষকে বারণ করেছিলাম। আজ অনিকে কিছু বলো না কালকে পার্টি অফিসে ডেকে আলোচনা করবো। বিধানদা বললেন।
শুনে নাও ওরা সব ইউপি থেকে এসেছে। তার মধ্যে একটা রাজনাথের ভাইপো আছে। প্রবীরদা বিকেলে ওদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেছে। আমার ফোন নম্বর ওদের দিয়েছে। এতো বড়ো অর্ডার সিটি ওনাকে কে দিয়েছে।
অনিমেষদা স্থির চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। রূপায়ণদা, অনুপদা, নিরঞ্জনদা থ হয়ে গেছে।
আমি সব বুঝতে পারছি। তুই একটু শান্ত হ। আমি তোকে কথা দিচ্ছি আমি নিজে পার্টির তরফ থেকে ডাস্ট্রিক এ্যাকসন নেব। তুই কোনও অন্যায় কাজ করিস নি।
কি সাহস আবার অনুপদাকে ফোন করে হুইপ করছেন তুই ওকে ছেড়ে দিতে বল। আমি কি ওনার চাকর।
আমি অনিমেষদার দিকে তাকিয়ে বলে যাচ্ছি।
অনিমেষ তুমি শুধু শুধু সারাদিনের আনন্দটা নষ্ট করলে।
একটুও নষ্ট হয় নি। অনুপদা চেঁচিয়ে উঠলো। ইসলামভাই মুরগীর ঠ্যাং নিয়ে এসো। জমিয়ে খাব। আজ এমন খাব যেন দুদিন খেতে না হয়।
আমার কাছে এসে, এবার একটু হাস। অন্যায় হয়ে গেছে ভাই। যতো নষ্টের গোড়া আমি। তোর মতো সব হজম করতে পারি না।
ইসলামভাই।
হ্যাঁ দাদা বলুন।
তোমাদের কোনও নাচার মিউজিক নেই, চালাও তো একটু নাচি। অনেক দিন নাচিনি। কিরে চিকনা গুরুর বিয়েতে একটু নাচবি তো আমার সঙ্গে।
চিকনা ফিক করে হেসে ফললো।
সুরো আয় আয় সকলে একটু নেচে নিই।
ম্যাডামরা তোমরা ছবি-টবি একটু তোল, তবে কাগজে ছেপে দিও না।
সবাই অনুপদার কথায় এবার হেসে ফেললো।
মিত্রা আমার হাতটা ধরে কাঁধে মাথা রেখেছে।
কিরে মিত্রা ভড়কে গেলে হয়, অনি কি তোর একার নাকি। অনি সবার। তোকে অনুপদা কথা দিচ্ছে ওর কিছু হবে না। অনুপদারও কিছু ক্ষমতা আছে মাথায় রাখিস।
মিত্রা হাসছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অবস্থাটা আবার কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলো। কিন্তু থেকে থেকে যেন কোথায় তাল কেটে যাচ্ছে।
অনুপদার উৎসাহে প্রায় আধঘণ্টা নাচাগানা হলো।
চিকনা, সুরো, নীপা, সঞ্জু, মিলি, অর্ক, অরিত্র, প্রধান কলা-কুশলী আমরা সবাই একবার করে কোমর দোলালাম। শেষটুকু দারুণ মজা হলো। কোমর নাচান থেকে কেউ বাদ গেল না। আমি, ইসি, মিত্রা, কনিষ্ক, নীরু, শ্রীপর্ণা, বটা সবাই একসাথে একটু হাত ধরাধরি করে নাচলাম। খুব হই হই হলো। সবাই থামলাম। শেষে সবাই আইসক্রীম খেলাম বেশ মজা করে। একবারে শেষে ডাক্তারদাদা বললো, তাহলে বান্ধবী সব ভালো যার শেষ ভালো তার। তাই তো?
বড়োমা এমনভাবে ডাক্তারদাদার দিকে তাকাল। সবাই হেসে ফেললো।
ওরা গল্প করছে। আমি ইচ্ছে করেই একটু আলাদা হয়ে পরলাম। ভিড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলাম। বাড়ির ভেতরে এলাম। পর পর গোটা চারেক ফোন করে ফেললাম। লাস্ট আপডেট নিলাম। আপাতত ঠিক আছে।
ওরা সবাই বাগান থেকে বাড়ির ভেতরে এলো। অনিমেষদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। বুঝছি কিছু বলতে চায়। আমি ইশারায় বললাম ভেতরে গিয়ে একটু বসো, আমি আসছি।
বারান্দায় উঠতে যাব ইসি কাছে এলো।
অনি এবার ছাড়, যেতে হবে।
না গেলেই নয়।
বাড়ি খালি পড়ে আছে।
দিনের পর দিন খালি পড়ে থাকলেও কিছু হবে না। লোক আছে।
তুই কোথায় লোক দেখলি!
বরুণদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। মিত্রা হাসলো।
কিরে ছুটকি তুই হাসলি!
ওর লোকজোন আছে।
জ্যেঠিমনি গল্প করছে বড়োমা, ছোটোমা, বৌদির সঙ্গে। পাশে দামিনীমাসি দাঁড়িয়ে।
তুই কি সত্যি যাবি?
গেলে ভালো হতো।
জ্যেঠিমনি?
এখন যাবে বলছে। কালকে না হয় আসবো।
বরুণদা আপনার সঙ্গে কথা বলা হলো না।
আরে ঠিক আছে। সময় চলে যাচ্ছে নাকি।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
রবীনকে বলে দে ওদের পৌঁছে দিয়ে আসুক। হ্যাঁরে সকাল থেকে বুড়ীমাসিকে দেখলাম না।
তোর চোখ থাকলে তো দেখবি।
হাসলাম।
আটটার সময় খাবার বেঁধে নিয়ে গেছে। রবীন পৌঁছে দিয়ে এসেছে।
তোমরা কথা বলো, আমি একটু আসছি।
ভেতরে এসে দেখলাম অনিমেষদারা সোফায় বসে দাদার সঙ্গে কথা বলছে। আমি বললাম, ওপরে এসো একটু কথা বলবো।
দাদা আমার দিকে তাকাল।
এখন কোনও কথা নয়, কাল হবে।
ডাক্তারদাদা বললো খামকা বাধা দিচ্ছ কেন এডিটর, ও যদি কথা বলতে চায় বলুক না।
অনিমেষদা, বিধানদা হাসছে।
বাইরে বেরিয়ে এলাম। মিত্রাকে বললাম তোর ফোনটা একটু দে।
কেন!
দরকার আছে।
মাঠে দেখলাম অর্ক, অরিত্র ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে। বুঝলাম কাজ শুরু করে দিয়েছে।
মিত্রা আমার হাতে ফোনটা দিল। সিমটা খুলে ওর হাতে দিলাম। রাখ, আধঘণ্টা পরে ফেরত দিচ্ছি।
অনিমেষদারা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
আমি যাব। মিত্রা বললো।
ওরা ফিরে যাবে তুই একটু ব্যবস্থা করে দে।
কনিষ্করা মাঠে দাঁড়িয়ে আমাকে লক্ষ্য করছে।
শিঁড়িতে ওঠার মুখে দেখলাম সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওপরে ছোটোমার ঘরে এলাম।
বিধানদা, অনিমেষদা সোফায় হেলান দিয়ে বসলো। অনুপদা, রূপায়ণদা আর একটা সোফায়।
কিরে আবার কি হলো! অনিমেষদা বললো।
বসো না বলছি।
একটা জলের বোতল নিয়ে আসি। অনুপদা বললো।
আমি বলে দিচ্ছি।
বারান্দায় এসে চিকনাকে ডেকে জলের বোতল আনতে বললাম।
বল কি হয়েছে, আবার কোনও গণ্ডগোল! বিধানদা বললেন।
না গণ্ডগোল নয়, তোমাদের খুব সমস্যা আমাকে নিয়ে। তাই না?
তোর কি মাথা খারাপ! অনিমেষদা বললো।
তোমরা শুধু চুপচাপ দেখে যাও আমি কি করি, তারপর আমাকে যা বলবে আমি তাই করবো। এতে তোমরা যদি আমাকে কঠিন শাস্তি দাও, তা-ও আমি মাথা পেতে নেব।
অনুপদা আমার দিকে তাকিয়ে।
তুই খোলসা করে বল।
আচ্ছা তোমাদের পার্টির নিজস্ব কোনও ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো নেই।
কি হবে রেখে?
তোমাদের পার্টির নিচের তলার কর্মীরা কে কি করছে তার হিসাব কি করে পাও?
কেন ব্রাঞ্চ, লোকাল তারপর জোনাল।
ধাপে ধাপে।
হ্যাঁ।
এগুলো যারা পরিচালনা করছে তাদের মনিটরিং করে কে?
জোনাল কমিটি করে, ওখানকার যারা রিপ্রেজেন্টেটিভ আছে তারা করে।
আচ্ছা তোমাকে যদি বলি এখুনি ওই ব্রাঞ্চের আন্ডারে একটা বাড়িতে প্রচুর আন ওয়ান্টেড ওয়েপন্স আছে, তুমি কি করে মনিটরিং করবে।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকাল!
ধরো এতো ওয়েপন্স আছে, তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না। ধরো তোমাদের পার্টির কিছু কর্মী তার সঙ্গে জড়িত। আমি বলতে পারবো না, তাদের কাছে তোমাদের পার্টির সদস্য পদ আছে কিনা। এখন সবাই তোমাদের পার্টির লোক। তোমরা মাথা।
অনিমেষদা কেমন গুম হয়ে গেল। বিধানদা আমার দিকে তাকাল।
চিকনা জলের বোতলটা রেখে একবার সবার দিকে তাকাল। তারপর চলে গেল।
ঘরের দরজা হাট করে খোলা।
আমি যদি কারুর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তোমাদের একটু গালমন্দ করি খারাপ ভাববে না।
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে!
অনুপদা।
বল।
তোমার সিমটা খুলে মিত্রার মোবাইলে লাগাও।
অনিমেষদা আমার চোখে চোখ রাখলো।
তোমাদের দুজনের মোবাইলটা কিছুক্ষণের জন্য স্যুইচ অফ করো।
বিধানদা একবার আমার দিকে তাকাল। পকেট থেকে ফোনটা বার করে স্যুইচ অফ করল।
অনুপদা সিমটা লাগিয়েছ?
হ্যাঁ।
তুমি যখন কথা বলবে, ভয়েজ অন করবে। সবাই শুনবে।
ঠিক আছে।
রূপায়ণদা তোমায় পরিচিত কেউ ফোন করলে তুমি বার বার কেটে দেবে।
রূপায়ণদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
তুই কি চার ফেলছিস মাছ ধরার জন্য?
হ্যাঁ।
ওরে প্রবীর এতো বোকা নয়।
আমি জানি, তবু একটা জিনিষ আমার জানার দরকার আছে। একজনের কাছ থেকে ইনফর্মেশন পেয়ে কাজটা করে ফেলেছি। যাচাই করে দেখি নি।
পেট থেকে বার করতে পারবি কিনা সন্দেহ।
জানো রূপায়ণদা, মানুষ যখন পরের পর অন্যায় করে, তখন সে সবচেয়ে বেশি দুর্বল হয়ে যায় নিজের কাছে।
ও পোর খাওয়া মানুষ, বহুদিন রাজনীতি করছে।
তোমাদের কাছে, আমার কাছে নয়। ভরা বন্যায় বিষধর সাপকে কখনও দেখেছো, একটা সরু ডালে নিজের শরীরটাকে পেঁচিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে, আমি গ্রামের ছেলে, এই দৃশ্য নিজের চোখে দেখেছি। আমার শিক্ষাটা সেখান থেকে পাওয়া।
অনি! অনুপদার মুখ থেকে স্বগতোক্তির সুর।
ঠিক আছে তোর খেলাটা একটু দেখি, শিখে নিই। রূপায়ণদা বললো।
কেউ কোনও কথা বলবে না। ভেবে নাও এই ঘরে আমি একা আছি তোমরা কেউ নেই।
আমি আমার মোবাইল থেকে প্রবীরদার নম্বরে ডায়াল করলাম। ভয়েজ অন করলাম। রিং বাজছে।
হ্যালো।
রেকর্ডিং চালু করলাম।
প্রবীরদা আমি অনি।
হ্যাঁ বল। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে।
আজ এলে না। তোমাকে খুব এক্সপেক্ট করেছিলাম।
শরীর ভালো নয়।
দাদা মনে হয় ঠিকমতো নেমন্তন্ন করতে পারে নি। তাই না।
চুপ। কোনও কথা নেই।
কিগো কথা বোলছ না যে।
না তা নয়।
আমার ওপর রাগ করেছো?
না।
তাহলে। এলে না যে?
চুপ। কোনও কথা নেই।
ঠিক আছে। ছোটোভাই হিসেবে কোনও অন্যায় করে থাকলে ক্ষমা করে দিও।
কিসের ক্ষমা। তুই আমার কেরিয়ারটা ডুম করে দিলি।
আমি! তোমার কেরিয়ার? আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। একজন সাধারণ সাংবাদিক তোমার কেরিয়ার নিয়ে ছনিমিনি খললো, তুমি তাকে ছেড়ে দিলে।
তুই এখন সাধারণ নোস। তুই এখন কলকাতার ডন।
তুমিও বলবে।
আজ যে কটাকে তুলে নিয়ে গিছিস ছেড়ে দে। এর ফল ভালো হবে না।
আমি! কাকে তুললাম? তুমি কি পাগলের মতো বকছো? শরীর ঠিক আছে?
ফালতু কথা একেবারে বলবি না। কাল সকালের মধ্যে ওদের ছেড়ে না দিলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।
তুমি কি করে জানলে আমি তুলেছি?
তুই যে ভাবে জেনেছিস।
তাহলে আরও কয়েকজন আছে, ওদেরকে একটু দেখাও দেখি।
তুই কি আমার সঙ্গে টক্কর নিচ্ছিস।
যদি মনে করো নিচ্ছি, তাহলে তাই।
ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। আমি তোকে শেষবারের মতো বলছি।
আমি এবার আসতে আসতে টপ গিয়ারে উঠতে আরম্ভ করলাম। গলার ভল্যুম চেঞ্জ হতে শুরু করলো।
তোমাকেও বলে দিচ্ছি। তোমরা অবস্থা রাজনাথের থেকেও খারপ করে ছেড়ে দেব। তোমাকে টাডা আইনে ফাঁসাব। জীবনে আর জেল থেকে বেরতে পারবে না।
তোর এতো বড়ো দম!
দম আছে কিনা তা প্রমাণ করে দিয়েছি। তোমার পার্টির ওই দুটো ভেড়ুয়া নেতাও তোমাকে বাঁচাতে পারবে না।
কি বললি তুই!
যা বলছি ঠিক বলছি।
এ্যাঁ।
তোমার দম থাকে লড়ে যাও। আমি প্রস্তুত। আর একটা কথা বলে দিচ্ছি। কাল সকালের মধ্যে ওই গেস্ট হাউসে যদি বাকিগুলোকে পৌঁছে না দাও, চারটেকে কুত্তার মতো মেরে দেব। দেখব তোমার কটা বাপ আছে।
তুই আমার বাপ তুললি।
শুধু বাপ নয় তোর চোদ্দগুষ্টি এলেও বাঁচাতে পারবে না।
কি তুই আমাকে তুই বলছিস।
এর থেকেও যদি নিকৃষ্ট কিছু থাকে বলবো।
গেটের মুখ বড়োমা, ছোটোমা, বৌদি, দামিনীমাসি। পেছনে সবাই। আমি উচ্চস্বরে কথা বলে চলেছি। অনিমেষদা ঠোঁটে আঙুল তুললো। ইশারা করে দেখাল কেউ টুঁ শব্দটি করবে না।
এ্যাঁ।
এ্যাঁ নয়, হ্যাঁ। আমার দম দেখতে চাস। তাহলে ঘরের বাইরে এসে বারান্দায় একবার উঁকি মেরে দেখ। অনি চুপচাপ হাত গুটিয়ে চুরি পরে বসে থাকার ছেলে না।
ওরা চারজন আমার দিকে বিষ্ময়ে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ। আমি সবার দিকে একবার তাকালাম। সবার মুখ থম থমে। উৎকন্ঠা চোখে মুখে। জ্যেঠিমনি, ইসি, বরুণদাকে দেখলাম। বুঝলাম ওদের যাওয়া হয়নি। সবাই আমাদের কথা শুনছে।
কিরে প্যান্ট হলুদ হয়ে গেছে। কথা বলছিস না কেন?
তুই কি আমাকে মারতে চাস।
শুধু মারা নয়। বডি পর্যন্ত গাইপ করে দেব। কেউ খুঁজে পাবে না। বারান্দায় এসেছিস?
ও প্রান্ত থেকে কোনও কথা ভেসে আসছে না।
আমি সত্যি কি মিথ্যে একবার বল তোর মুখ থেকে শুনি।
তুই কি করতে চাস। গলার স্বর নরম।
কি শুকিয়ে গেল। একটা ফোন করবো। তোর ঘর রেট করতে শুরু করবে। ওরা তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তোর বাড়িটার চারিদিক একবার ছাদে উঠে দেখ। মাছি গলতে পারবে না।
আমি অনিমেষদাকে ফোন করছি।
দিলাম অনিমেষদার নামে কাঁচা কাঁচা গালাগাল। ওকি আমার ঠেকা নিয়ে বসে আছে।
অনিমেষদা মুখে হাত চাপা দিয়েছে। বিধানদা মাথা নীচু করে মুচকি মুচকি হাসছে। রূপায়ণদা, অনুপদা না পারছে হাসতে না পারছে গম্ভীর হয়ে থাকতে।
বৌদি আমার দিকে বিষ্ময়ে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে। অনিমেষদা আঙুল তুলে ইশারা করছে। চুপ চুপ মুখে চাবি আঁটো।
তোর এতো বড়ো ক্ষমতা তুই আমাদের পার্টির টপ লিডারকে….।
রেকর্ডিং করে রাখ, আমার গলাটা ভেড়ুয়াটাকে কাল সকালে শুনিয়ে দিবি। আর একটা ভেড়ুয়া আছে। বিধান হারামী।
তুই বিধানদাকে হারামী বলছিস।
বেশ করেছি। তোর বাপের কি?
দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি। মাথায় রাখবি প্রশাসনটা আমরা চালাই। আমিও মন্ত্রী ছিলাম, আমারও কিছু ক্ষমতা আছে।
বেশি দেখাতে যাসনি। গিলে নেব। কেউ জানতেও পারবে না। তারপর খেয়েদেয়ে মুখ মুছে নিতে কতক্ষণ। পাবলিক দু-দিন চিল্লাবে তিনদিনের দিন সব ঘেঁটে ঘ হয়ে যাবে। শোন একটা কথা বলি, বাড়ি থেকে একপাও বেরবি না। বেরলেই ওখানে দানা খেয়ে পরে থাকবি।
তোর এতো বড়ো ক্ষমতা।
ক্ষমতা আছে কিনা দেখতেই পাচ্ছিস। এক ফোনে যদি এই হাল হয়, আর এক ফোনে তোর কি দশা হবে। আর একটা কথা বলে রাখি মন দিয়ে শোন, তোর অশ্বিনীনগরের অস্ত্র কারখানাতেও লোক পাঠিয়ে দিয়েছি। পর্শু ইউপি থেকে চার ট্রাক মাল এসেছে। ওখানে ফোন করে বলে দে নখরামি যেন না করে। ওখানে তুই ছেলেগুলোকে তুলে নিয়ে এসেছিস।
তোকে খুন করে দেব।
প্রবীরদা এমনভাবে চেঁচিয়ে উঠলো যেন আমার ফোনের স্পিকারটা ফেটে যাবে।
সময় পাবি না। আগে অস্ত্র কারখানাটা গিলবো। তারপর তোকে।
তুই তার সময় পাবি না।
আবার বলে রাখছি। নখরামি করবি পুরো বডিটা গাইপ। অনি এতো কাঁচা কাজ করে না। তোর থেকে রাজনাথ ঝানু মাল। তার কি হাল করেছি দেখেছিস। আমি চারদিক বেঁধে ফেলেছি। এবার বল কি করতে চাস।
কিছুক্ষণ চুপ। কোনও কথা নেই।
শোন তুই তো নিজে মুখে বলবি না। আমি রফা করি।
বল।
কিরে গলাটা কেমন ভাড়ি ভাড়ি লাগছে। কাঁদছিস নাকি।
না।
অনেক কামিয়েছিস। কাগজের গুষ্টির তেইশ। এতদিন যা করলাম সব একটিং। মিত্রার সঙ্গে যা করার করা হয়ে গেছে। আমার বহু টাকার দরকার। টাকা পেলে সব ছেরে ছুড়ে ফেটে যাব। তোর রাজনাথ, ডাক্তারও অনেক কামিয়েছে মিত্রার কাছ থেকে। আমিই বা বাদ যাই কেন।
তুইও ডাক্তারের কাছ থেকে টাকা টেনে নিয়েছিস।
ওটা আমার নয় মিত্রার। সাদা টাকা। মিত্রাকে ট্যাক্স দিতে হবে। ওখানেই মিত্রাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছি। আমার হার্ড ক্যাশ চাই।
কতো।
তোর জন্য কাল অনিমেষদা আমার কাছ থেকে টাকা টেনেছে।
কতো।
পাঁচ কোটি। তোর নাকি দেওয়ার কথা ছিল।
এ কথা তোকে কে বললো!
তাহলে আনিমেষ আমার কাছ থেকে নিল কেন?
কি করে বলবো।
প্রবীরদার গলাটা ভাড়ি ভাড়ি।
কিরে তুই মেয়েছেলের মতো কাঁদছিস নাকি।
না।
দেখলাম রূপায়ণদা, অনুপদা ঘরের এক কোনে চলে গিয়ে মুখে রুমাল চাপা দিয়ে হাসছে। বৌদিরা বারান্দায়, মুখে কাপর চাপা দেওয়া। চোখে বিষ্ময়। এতক্ষণে ওরা বুঝতে পেরেছে কার সঙ্গে আমি কথা বলছি।
তুই এখন কোথায়?
আমি নিচের বাগানে আম গাছের তলায়। বাড়ির সবাই ঘুমচ্ছে।
তুই আমাকে বাঁচা অনি।
বাঁচাব পরে। আমার দশকটি চাই। কি করবি বল।
পেয়ে যাবি।
কাল সকালে চাই।
হবে না। কাল বিকেলে মালটা ডেলিভারি করতে হবে।
আমার কাছে খবর আছে, ওখানে যা মাল আছে আর আমি যা চাইলাম নস্যি।
তোর কখন দরকার।
যতো সকালে সম্ভব। এরা ওঠার আগেই ফেটে যাব।
কোথায় পাঠাব বল।
আমার বাড়িতে।
না তুই এক কাজ কর।
বল।
তুই ভিআইপির মুখে চলে আয়।
আবার স্কিম।
বিশ্বাস কর।
না তুই ট্রাংগুলার পার্কের মুখে নিয়ে আয়।
ঠিক আছে পৌঁছে যাব।
শোন আজ থেকে তুই আমরা বন্ধু। দিমাক খাটালে এর থেকে অনেক মাল কামাতে পারবো। পার্টিফার্টি গুলি মার বুঝেছিস। নোট থাকলে পার্টি তোর পোঁদে পোঁদে ঘুরবে। আর একটা কথা, অনিমেষ, বিধান যেন জানতে না পারে।
তুই তাহলে এদের সরিয়ে নে। ছেলে গুলোকে ছেড়ে দে।
দেবো আগে সকালে মাল পৌঁছবে, তারপর। ওদের পেছনে অনেক খরচ করতে হয়েছে। মাগনায় হয় নাকি এসব।
তাহলে হবে না।
অনি ঝপ পাল্টি খেয়ে যাবে। দামিনীকে বলবো, ছেলেগুলোকে রেপ করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেবে। কনিষ্ক বটা হাসপাতালের ডাক্তার আমার বন্ধু নিশ্চই খবর রাখিস। অপারেশন করে বাদ দিয়ে দেব।
প্লিজ তুই এটা করিস না। আমি জানি তুই সব পারিস। ওখানে রাজনাথের ভাইপো আছে।
রাখছি, ভোর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। তারপর কাজ চালু করে দেব। আমি বাগানে পায়চারি করছি। কি ডিসিসান নিলি জানাবি।
তাহলে আমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারি।
পারিস। ফালতু তখন ছেলেগুলোকে দিয়ে ফোন করালি। মিত্রার সঙ্গে মজমা নিচ্ছিলাম। না করালেই পারতিস।
চুপ।
রাখছি।
ফোনটা কেটে রেকর্ডিংটা সেভ করলাম। ওরা আমার দিকে তাকিয়ে। নিস্তব্ধ ঘর। আমি আবার ডায়াল করলাম।
ভয়েজ অন করা আছে।
হ্যাঁ বলেন অনিবাবু।
উনি বারান্দায় এসেছিলেন?
হ্যাঁ।
দেখে কি বুঝলেন?
ধ্বসে গেছে।
ওখানে কারা আছে?
একটু আগে খবর নিয়েছি। সব ঠিক ঠাক আছে।
একবারে চোখ সরাবেন না।
অনুপদার ফোনটা বেজে উঠলো। হাত তুললাম।
দাঁড়ান একটু বাদে আপনাকে রিং-ব্যাক করছি। আর একটা ফোন এসেছে।
ঠিক আছে।
অনুপদা আমার দিকে তাকিয়ে।
কিরে কি করবো?
অনুপদার দিকে তাকিয়ে বললাম। ঘুমচ্ছিলে, ঘুমভেঙে ফোন ধরছো।
আমার জন্য একটু অভিনয় করো। প্লিজ।
অনুপদা হাসলো।
ভয়েজ অন করে রেকর্ডিংটা চালু করে দিলাম।
হ্যালো।
কিরে কখন থেকে রিং বেজে যাচ্ছে।
কি হলো আবার। এই কানারাতে কি করতে ফোন করলি।
অনি এখনো ছারে নি।
কেন আমার সামনে অনিমেষদার সঙ্গে কথা হয়েছে। বললো ছেরে দেবে।
ছারে নি। এখুনি ফোনে কথা হলো।
কি বলছে?
দশকোটি চাইছে।
অনি টাকা চাইছে!
তাহলে বলছি কি।
কি পাগলের মতো বকছিস!
অনিমেষদা বিধানদার নামে যা মুখে এলো বলে গেলো। কাঁচা কাঁচা খিস্তি দিল। আমাকে তুই তাকারি করলো। আর যা বললো, তোকে বলা যাবে না।
তোর শরীর ঠিক আছে?
একটুও মিথ্যে বলছি না। রেকর্ডিং করেছি।
বেশ করেছিস। এখন ঘুমিয়ে পর।
ভোররাত পর্যন্ত টাইম দিয়েছে।
কিসের!
ওর দাদার বাড়িতে টাকা পৌঁছে দিতে হবে। না হলে ওই চারটে ছেলেকে হাপিস করে দেবে।
কে বলতো ওই ছেলে গুলো? আমাদের পার্টির ছেলে? তখনও তুই বললি।
ওর মধ্যে রাজনাথের ভাইপো আছে।
রাজনাথকে পার্টি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তুই আবার ঝামেলায় জড়াতে যাচ্ছিস কেন?
যতই হোক রাজনাথ আমাদের পার্টির মেম্বার ছিল এতদিন।
ছিল, এখন নেই। শুধু রাজনাথকে নিয়ে আমাদের পার্টি নয়। তাছাড়া তুই জানলি কি করে অনি তুলেছে?
আরও দু-জন ছিল। খাবার কিনতে বাইরে বেরিয়েছিল। সটকে চলে এসেছে।
ওগুলোকে কোথায় রেখেছিস?
অশ্বিনীনগরে একজন পার্টি কর্মীর বাড়িতে।
এখন ঘুমো, ভালো লাগছে না। পারলে অনিমেষদাকে ফোন কর।
অনিমেষদার ফোন স্যুইচ অফ।
তাহলে বিধানদাকে কর।
বিধানদারও স্যুইচ অফ।
ল্যাণ্ড লাইনে কর।
রিং বেজে যাচ্ছে। একটু ধরতো আর একটা ফোনে ফোন এসেছে।
তুই কি সারারাত ঘুমোস না।
গায়ে একটা দাগ লেগে গেছে।
অন্যায় করেছিস।
দাঁড়া।
অ্যাঁ।….কি বললি।….এখনো আছে।…. বেরোয় নি…. ঠিক বলছিস….ঠিক আছে।
হ্যালো।
বল।
অনিমেষদারা এখনও অনির বাড়িতে আছে? গলায় উৎকন্ঠা।
তুই কি গাঁজা খেয়েছিস। আমার সঙ্গে একসঙ্গে বেরলো।
আমার লোক বললো। অনিমেষদার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।
দেখলাম ইসলামভাই, চিকনা ঘরের দরজার সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল।
রাখ ভালো লাগছে না। কাল পার্টি অফিসে আয় দেখছি।
তাহলে কাল সকালে টাকাটা পাঠিয়ে দিই।
কেন বলবি তো?
যদি ঝেড়ে দেয়।
কি করে বুঝলি ঝেড়ে দেবে?
ওর গলা শুনে মনে হচ্ছে। তারওপর ওর সেই মুখার্জীর লোক আমার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
কি করতে!
মনে হয় রেইড করবে।
কেন! আবার কি গণ্ডগোল করলি?
অনুপ তুই আমাকে অনির হাত থেকে বাঁচা।
তখন থেকে কি ভ্যাজর ভ্যাজর করছিস বল তো?
তোরা কিছু না করলে অনিকে কাল আমি ঝেড়ে দেব।
তারপর সামলাতে পারবি?
নিজে তো মরেই গেছি। একটাকে নিয়ে মরি অন্ততঃ।
ওখানে ইসলাম আছে।
কিছু চিন্তা করতে ভাল লাগছে না।
আমি কি করবো। তোর জন্য আমি কি পার্টি থেকে এক্সপেল হবো নাকি। অনুপদা রেগে গেল।
ঠিক আছে, আমি আমার মতো করে কাজ শুরু করছি।
আগু পিছু ভেবে করিস।
ভাবতে গেলে শেষ হয়ে যাব।
যা পারিস কর। আমি এখন রাখছি।
অনুপদা ফোনটা কেটে দিল।
আমি ছোঁ মেরে অনুপদার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে রেকর্ডিংটা সেভ করলাম।
ফোনটা স্যুইচ অফ করে দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
শুধু অনিমেষদার ক্ষীণ কন্ঠ কানে ভেসে এলো। সুতপা ওকে আটকাও।
একটা হই হই পরে গেল।
ছুটে নীচে চলে এলাম। বাগানে এসে দাঁড়ালাম। নেপলা, চিকনা, সঞ্জু বেধড়ক মারছে একটা ছেলেকে। আর একটাকে টেনে হিঁচড়ে আবিদ নিয়ে আসছে। পেছনে রতন।
ইসলামভাই আমাকে দেখে বললো। অনি তুই ওপরে চলে যা।
গলার স্বরে সারাটা বাড়ি কেঁপে উঠলো।
চারিদিক আধো অন্ধকার। লাইট সব নিভিয়ে দিয়েছে ইসলামভাই। ছেলেগুলোর মুখ ঠিক মতো দেখতে পাচ্ছি না। ফিরে আসছিলাম।
অনিদা বাঁচাও। আমি কিছু করিনি।
ঘুরে দাঁড়ালাম।
নেপলা আমার নাম শুনে ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়েছে। ছেলেটা ঘসরাতে ঘসরাতে আমার কাছে এসে পা জড়িয়ে ধরলো।
অনিদা, তুমি বিশ্বাস করো।
দেখলাম কনিষ্ক পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
কেরে টনা! কনিষ্কর গলা।
কনিষ্কদা তুমি! এরা আমাকে মেরে ফেললো।
আমি স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে।
তুই এখানে, এত রাতে! কনিষ্কর গলাটা এই নিশুত রাতে গম গম করে উঠলো।
ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বারান্দায় বৌদিরা দাঁড়িয়ে। মিত্রা, ইশি পাশে এসে দাঁড়াল, আমার দু-হাত দুজনে শক্ত করে ধরেছে।
কনিষ্কদা একটু জল।
চিকনা জলের বোতলটা নিয়ে আয়। অনি তুই ওপরে চলে যা। কনিষ্কর এই গলা সবার কাছে অপরিচিত।
কেরে কনিষ্ক। বটার গলাটা গম গম করে উঠলো।
টনা।
ভাসিলা ভেঁড়ি।
হ্যাঁ।
ওটা আবার এতো রাতে এখানে কোথা থেকে এলো!
বলছি বটাদা, সব বলছি। টনা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো।
ইসলামভাই অবাক হয়ে কনিষ্ক আর বটার দিকে তাকিয়ে আছে।
অনি তুই ওপরে চলে যা। কনিষ্ক গুরু গম্ভীর গলায় ফের বলে উঠলো।
আমি আর দাঁড়ালাম না। সোজা ওপরে চলে এলাম। পেছন পেছন সবাই। দেখলাম অরিত্র ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে। আমি সোজা চলে এসে অনিমেষদা, বিধানদার পায়ের কাছে বসলাম। মাথা নীচু। অনুপদা, রূপায়নদার মাথা নীচু। মিত্রা, ইশি দাঁড়িয়ে। বুঝলাম এই টুকু দৌড় ঝাঁপে ওরা হাঁফিয়ে গেছে। ঘরের সবাই চুপ চাপ।
তুমি আমাকে ক্ষমা করো দাদা।
আয় পাশে উঠে বোস।
আমি তোমায় অনেক অ-কথা, কু-কথা বলেছি।
সে তো তুই পার্মিশন নিয়েই বলেছিস। রাগ করিনি।
ছোটো। বিধানদা চেঁচিয়ে উঠলো।
হ্যাঁ দাদা।
একটু চা খাওয়াবে।
এতো রাতে!
বিধানদা হাসছে।
অনির ফুলশয্যা হচ্ছে, আমরা পাহাড়া দিচ্ছি। যাও যাও একটু কড়া করে বানিয়ে নিয়ে এসো।
অমিতাভবাবু?
বলুন।
আপনার পকেটে সিগারেটের প্যাকেট আছে?
দিচ্ছি।
মল্লিকদা টেবিলের ওপর থেকে সিগারেটের প্যাকেট আর এ্যাসট্রেটা সেন্টার টেবিলে রাখলো। দুজনে দুটো সিগারেট বার করে ধরালো। সবাই কেমন যেন বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে।
কিরে তোরা গিয়ে খাটে বোস। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অনিমেষদা মিত্রা, ইসির দিকে তাকাল।
ও সব কাজ সেরে রেখেছে। অনিমেষদা ভাবলেশহীন গলায় বললো।
সিগারেটে একটা টান মারলো।
কি বিধানবাবু ভুল কথা বলেছি?
না।
রামের কাছে হুনুমান গিয়ে যেমন সব শেষে বলতো প্রভু অনুমতি দিন। ও সেরকম ভাবে বসে আছে। অনিমেষদা ধোঁয়া ছারতে ছারতে বললো।
অনিমেষদার কথায় সবাই ফিক ফিক করে হাসছে।
সুতপা, মুখ ভেটকে দাঁড়িয়ে রইলে কেন। ভেতরে এসো। বসো। সুরো মাকে দেখছি না।
নিচে, ঘুমিয়ে পরেছে। বৌদির গলাটা ধরা ধরা।
যাক রক্ষে। লাইভ দেখলে মাথা খারাপ করে দিত।
বৌদি ভেতরে এলো।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
আর ওখানে বসে থেকে লাভ নেই এবার উঠে পাশে বোস।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে দুজনের মাঝখানে বসলাম। মাথা তুলছি না।
আমরা চা খেতে খেতে তোর বাকি কাজগুলো সেরে নে। অনিমেষদা বললো।
আমি মাথা নীচু করে বসে আছি।
আমি বলছি।
যা না অনি রেকর্ডিংগুল ল্যাপটপে ট্রান্সফার করে সিমটা দে। অনুপদা বললো।
আমি তাকালাম।
তুই তো বিয়ে করলি না, যেন যুদ্ধ করলি। অনুপদা বললো।
অরিত্র।
হ্যাঁ দাদা।
অরিত্র, দ্বীপায়ণ ঘরের মধ্যে এসে ঢুকলো।
দেখছেন বিধানবাবু কোনও টেনসন দেখতে পাচ্ছেন মুখে। অনিমেষদা ওদের দিকে তাকিয়ে বললো।
বিধানদা মুচকি মুচকি হাসছে।
আমি পকেট থেকে মাবাইলটা বার করলাম। দ্বীপায়ন এগিয়ে এলো। হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে মিত্রার দিকে একবার তাকাল।
যাও, দরজা খোলা আছে। মিত্রা বললো।
ইসি চারদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে। ফ্যাকাশে মুখ। যেন হাসতেও ভুলে গেছে। বরুণদা গেটের মুখে গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে।
ইসলামভাই গেটের কাছে এসে দাঁড়াল।
কাজ শেষ হলো ইসলাম। অনিমেষদা বললেন।
আমায় কিছুই করতে দিল না।
তার মানে!
কনিষ্ক, বটার পরিচিত। আমাকে বললো তুমি ওপরে চলে যাও।
তারমানে! দলে সরকারি ডাক্তারও আছে! অনিমেষদা এমনভাবে বললো, এবার দেখলাম সবাই হেসে ফেললো।
ও অনিমেষ, একটা কিছু করো। বড়োমা মুখ খুললো।
অনিমেষদা আমার দিকে তাকাল।
কিরে, দিদি কি বলছে। আমার জন্য কিছু বাকি রেখেছিস?
আমি চুপচাপ। অনিমেষদা বড়োমার দিকে তাকাল।
দিদি আপনি এতক্ষণ সব দেখলেন, কিছু বুঝতে পারলেন না।
কই দেখলুম সব শুনলুম। গা হিম হয়ে যাচ্ছে।
এই গেমে রাজাকে ও চেক দিয়েছে। রাজার এক ঘরও নড়াচড়া করার শক্তি নেই। নয় গেম হার। নয় রাজাকে খোয়াও। কি বুঝলেন। আমরা সব বোড়ে। ইসলাম পর্যন্ত। অনিমেষদা বললো।
ছোটোমা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
এসো এসো ছোটো চা না খেলে মাথা খুলবে না। বিধানদা বললো।
ইসি উঠে গেলো। মিত্রা ভেটকে বসে আছে। টিনা, মিলি ভেতরে এলো। হাতে হাতে সবাইকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিল। বিধানদা চায়ে চুমুক দিয়ে আঃ করে উঠলো।
বেশ ভালো বানিয়েছ ছোটো।
ছোটোমা একবার হাসল। আমার দিকে তাকাল। এখন আর সেই আতঙ্ক মুখে নেই। ডাক্তারদাদা চুপ করে খাটের এক কোনায় বোসে।
বুঝলে অনিমেষ যা শুনলুম অনির নেটওয়ার্কটা বেশ মজবুত। মাছি গলতে পারবে না। ওর সিপাইগুলোর মাথাও খুব পরিষ্কার। বিধানদা বললেন।
অনিমেষদা মাথা দোলাচ্ছে। বিধানদা আমার মুখের দিকে তাকালেন।
হ্যাঁরে মুখার্জীর লোকজন চলে এসেছে, না এখনও আছে।
ওখানে মুখার্জীর লোক নেই। আমি বললাম।
তারমানে!
অনিমেষদা আমার দিকে অবাক বিষ্ময়ে তাকালেন। ঘরের সবাই নড়ে চড়ে বসলো। মিত্রা এতক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসেছিল। এবার বাবু হয়ে বসলো। নিশ্চিন্তে চায়ে চুমুক দিচ্ছে।
তাহলে এরা কারা!
আর একটা এজেন্সির লোকজন।
তুই কি এদের ইনফর্মার।
হেসে ফেললাম।
বলনা একটু শুনি।
আমি মাথা নীচু করে আছি।
সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
মুখার্জী রাতে এলো। ওর লোকজন এলো। অতো যত্নআত্তি করে খাওয়ালি-দাওয়ালি। ওকে কাজটা দিলি না! বাইপাস করে আর একটা এজেন্সি ঢুকিয়ে দিলি।
আমি মাথা তুললাম না।
ওদেরকে ফোন করে বলে দিলে ফিরে আসবে?
আমি চুপ করে আছি।
কি দিদি ছেলের মনের কথা কিছু বুঝছেন। অনিমেষদা বড়োমার দিকে তাকাল।
আবার আমার দিকে ফিরে তাকাল।
তুই কি আমাদের এখানে বসিয়ে রেখে কাজ সারছিস।
তোমরা বললে শুরু করবো।
আমরা যদি না বলি ওদের চলে আসতে বলবি।
ওরা চলে আসবে, কাল গট আপ গেম খেলবে।
এনকাউন্টার!
আমি চুপ করে রইলাম।
তোর থার্ড অপশন বল।
এখনও কিছু ঠিক করিনি।
ওই মেয়েটার মুখের দিকে একবার তাকা। আমরা সবাই ফালতু। ও তোর বিয়ে করা বউ।
আমি কি নিজের জন্য করছি। চেঁচিয়ে উঠলাম।
হক কথার এক কথা।
বিধানবাবু আমার মুখ বন্ধ। এবার আপনার কিছু জিজ্ঞাস্য থাকলে ওকে করুণ।
কি বলবো অনিমেষ, গায়ে গন্ধ আছে। সব শুনে এক ঘর লোকের সামনে অস্বীকার করি কি করে। মিটিং-এ বক্তৃত্বা দিতে হলে সব নস্যাত করে দিতাম।
দ্বীপায়ণ ফোন দুটো নিয়ে ঘরে ঢুকলো। আমার হাতে দিল। আমি মিত্রার ফোন থেকে চিপটা অদল বদল করে দিতে বললাম। অরিত্র ঘরে ঢুকলো।
অনিদা পার্মিশন চাইছে। কি বলবো।
অরিত্রর দিকে তাকালাম।
হ্যাঁরে ছেলেটাকে মেরে দেবে না? অনিমেষদা আমার দিকে তাকাল।
উনি যদি আমাকে মারতে চান আমি ছেড়েদেব কেন। চেঁচিয়ে উঠলাম।
তুই রেগে যাস না। ভয় লাগে।
অনিমেষদা এমনভাবে বললো, হেসে ফেললাম।
অনুপ, অশ্বিনীনগরের খবরটা আমাদের কাছে ছিল না?
অনুপদা অনিমেষদার কথায় মাথা দোলাল।
তুই এই খবরটা পেলি কি করে! অনিমেষদা আমার মুখের দিকে তাকাল।
বৃহস্পতিবার পার্কস্ট্রীটে এ্যাসিয়াটিক সোসাইটির তলায় একটা ভিখারীর সঙ্গে বুবুন বসে বসে কথা বলছিল। আমরা দেখেছি। ডাক্তারদাদা বললো, ও ভিখারী নয়। রাতে ওকে জিজ্ঞাসা করতে ও রেগে গেল, বললো আইবির লোক। মিত্রা কট কট করে বলে উঠলো।
অনিমেষদা মাথায় হাত দিয়ে বসলেন। বিধানদা মিটি মিটি হাসছেন। রূপায়ণদা, অনুপদা গম্ভীর থাকার চেষ্টা করেও হেসে ফেলছে।
অনি। গেটের মুখ থেকে কনিষ্ক ডেকে উঠলো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
তুই উঠলি কেন, বোস। অনিমেষদা বলে উঠলো।
আয় বাবা, ভেতরে আয়।
অনিমেষদা কনিষ্ককে ভেতরে ডাকলেন।
কনিষ্ক ভেতরে এলো।
তোর আর দুই বন্ধু কোথায়?
নীচে আছে।
ওরা কারারে বাবা?
প্রবীরবাবুর লোক।
কোথায় থাকে?
ভাসিলা ভেঁড়ি।
তোদের চিনলো কি করে?
আমরা যাই।
যাস মানে!
অনি নিয়ে গেছিল।
কেন সেটাই জিজ্ঞাসা করছি?
আপনাদের অপনেন্ট পার্টির সঙ্গে ওদের মারপিট হতো এলাকা দখল নিয়ে, ওরা ইনজিওর্ড হলে অনি ওদের তুলে আনতো। আমরা বকলমে ট্রিটমেন্ট করতাম। সেই থেকে পরিচয়।
ক-জন এসেছে?
দু-জন।
একটাকে নিয়ে আসতে পারবি।
ডাকছি।
কনিষ্ক বেরিয়ে গেল।
বিধানবাবু, সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার দেখছেন। এরা নিশ্চই ভেতরে ভেতরে আমাদের সংগঠন করে। না হলে অনির কথায় এ ধরনের কাজ করবে না।
মুখ চোখ ফোলা হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা একটা ছেলে ঘরে ঢুকলো।
হাতজোড় করে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। স্যার বিশ্বাস করুণ অনিদার নামটা আগে জানলে এ কাজ করতুম না।
তুই থামবি। কনিষ্ক ধমকে উঠলো।
বোস বোস। অনিমেষদা বললো।
মনা নিচে মাটিতে বসে পরলো।
তুই অনিকে চিনলি কি করে?
অনিদা আমাদের ভেঁড়ি এলাকায় যায়।
কেন যায়?
অনিদা আমাদের সংগঠনটা কি করে বারাব তার বুদ্ধি দেয়। তার বিনিময়ে অনিদাকে আমরা নিউজ দিই।
তোরা কোন সংগঠন করিস।
মনা বললো।
কোন ব্রাঞ্চ।
ভাসিলা এক নম্বর।
অনিদা আমাদের পার্টির মেম্বার নয় এটা জানিস।
অনিদা কোনও খারাপ বুদ্ধি দেয় না।
অনিমেষদা, বিধানদার দিকে তাকাল। বিধানদা মাথা দোলাচ্ছে।
তারপর বল।
অনেক লেখাপড়া জানা ছেলে অনিদার জন্য আমাদের সংগঠনে এসেছে। ওখানে অনিদা সকলকে পড়ায়। কনিষ্কদা, বটাদা, নীরুদা, অনিকেতদা সবাই যায়। চব্বিশঘণ্টা জলে পরে থাকি ছেলেমেয়েদের রোগে চিকিৎসা করে, ওষুধ দেয়।
পয়সা নেয় না।
এ কি বলছেন স্যার। মনা কানে হাত দিল।
তোকে কনিষ্ক শিখিয়ে পরিয়ে নিয়ে এলো।
মনা আবার কান ধরে। কাল আমার বউ আমাকে মারবে স্যার। হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো।
কেন রে!
যদি জানতে পারে আমি অনিদার খবর নিতে এসেছিলাম।
অনিমেষদার সাথে সাথে সবাই হেসে ফেললো।
অরিত্র। অনিমেষদা চেঁচিয়ে উঠলো।
অরিত্র ঘরে ঢুকলো।
ওদের গ্রীণ সিগন্যাল দিয়ে দে। দু-জায়গাতেই। অনিমেষদা বললো।
দেখলাম ঘরে সবার মুখের চেহারা বদলে গেল।
অনুপ ফোনগুলো অন কর। এবার বাজতে শুরু করবে। বিধানদা বললো।
হ্যাঁরে অনিকে তোর বউ ভালোবাসে।
গত মাসে আমার ছেলের ভাতে অনিদা আমার বাড়িতে জল ঢালা ভাত খেয়ে এসেছে। বলেছিল পরে গিয়ে গরম ভাত খাবে, আর যায়নি। আমার মুখ ফোলা দেখলে জিজ্ঞাসা করবে। মিথ্যে কথা বললে টনা বলে দেবে।
টনা কে রে!
নিচে আছে। ও ভাসিলা দু-নম্বর ভেরি দেখে। আমার সম্বন্ধি।
ও অনিকে চেনে?
হ্যাঁ চেনে।
আবার কাঁদে। তোকে কে ব্যান্ডেজ বাঁধলো।
নীরুদা।
ছোটো ঘুম হলো না। আর একটু চা খাওয়াবে। বিধানদা আবার বললো।
ছোটোমা হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়াল। অরিত্র ঘরে ঢুকলো। হাতে ফোন।
তোমার সঙ্গে একটু কথা বলবে। আমার হাতে ফোনটা দিল।
হ্যাঁ বলুন সিং সাহেব।
একবারে পরিষ্কার করে দেব।
বাংলায় হিন্দী টান। সবাই শুনছে।
ভিখিরী করে দিন। ওদিকেরটা।
ওটা ঘণ্টা খানেক আগে খতম করে দিয়েছি।
কেউ পরেছে।
না একবারে ঠাণ্ডায় ঠাণ্ডায় হয়ে গেল।
কালকে সিনপসিসটা পাঠান।
ঠিক আছে। ওই চারটেকে দিন।
কাজ শেষ হলে একবার জানান, শ্যামবাজারের পাঁচ মাথার মোড়ে চলে আসবেন। ঘোঁড়ার ল্যাজ যেদিকে সে দিকে দাঁড়াবেন গাড়িতে তুলে দেব।
আমরা ঘণ্টা খানেকের মধ্যে কাজ সেরে নিচ্ছি।
কাগজপত্র আছে।
সব স্পেশ্যাল ভাবে দিল্লী থেকে তৈরি করে আনিয়েছি।
ঠিক আছে।
অরিত্রর হাতে ফোনটা দিলাম। অরিত্র ফোনটা নিয়েই টেপাটেপি করে নিল।
অনিমেষদা অরিত্রর দিকে তাকিয়ে।
তোরা একেবারে অনিদার মতো তৈরি হয়েগেছিস না। নো টেনসন ডু ফুর্তি। অনিমেষদা বললো।
বৌদি হাসছে।
বিধানবাবু এবার দেখছেন সুতপার মুখটা কেমন হাসি হাসি।
বিধানদা মিটি মিটি হাসছে।
কিরে অনুপ অনিকে আমাদের পার্টির সদস্য পদটা দিবি।
ভাবছি কামিং ইলেকসনে ওকে এমপি বানাব। ওর জন্য কোনও প্রচারের দরকার নেই।
আমরা খাটব স্যার।
এ ব্যাটা বলে কি অনুপ। মনার দিকে তাকিয়ে বিধানদা বললো।
তোদের ওখানে গোপাল আছে না?
গোপাল অনিদাকে ভয় পায়।
কেন!
কয়েকদিন আগে অনিদা ছট্টুকে মেরে দিয়েছে। কাগজে খপর বেরিয়েছে। গোপাল ওপারে চলে গাছে।
ওপারে মানে!
খুলনায় চলে গেছে।
কেন!
যদি অনিদা মেরে দেয়।
তাহলে অনিদা তোদের দাদা বল।
না না, অনিদা, অনিদা।
ছোটোমা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। এবার মিত্রা উঠে এলো। সবাইকে চা দিচ্ছে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
তুই কোথায় যাচ্ছিস? অনিমেষদা বলে উঠলো।
একটু আসছি।
এগিয়ে যেতে মনা পা ধরে ফেললো। আবার কান্না।
কি হলো বলবি তো।
তুমি একটু টনাকে বলে দাও।
টনা কোথায়?
নিচে।
পা ছার, বলে দিচ্ছি। সকালে হাসপাতাল গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসবি।
আমি দুটো ফুঁড়ে দিয়েছি। নীরু চেঁচিয়ে উঠলো।
ওই দেখুন বিধানবাবু, এতক্ষণ গলা পেয়েছিলেন? এখন সবকটার গলার স্বর বেরচ্ছে।
বিধানদা হাসছে।
বুঝলে ছোটো, তোমাদের এখানে শোবার জায়গা থাকলে আর বাড়ি ফিরতাম না।
কেন আমার অতগুলো ঘর ফাঁকা পরে আছে। ডাক্তারদাদা চেঁচিয়ে উঠলো।
ডাক্তারবাবু ঠিক কথা বলেছেন। আপনারা দুজনেই কুমার অসুবিধা নেই। অনিমেষদা বললেন।
সবাই হাসছে।
ওরে যাচ্ছিস যা মারার অর্ডারটা দিস না। অনিমেষদা পেছন থেকে কথাটা ছুঁড়ে দিল।
আমি বেরিয়ে এলাম। ইসির সঙ্গে বারান্দায় দেখা হলো। বরুণদাও নীচু স্বরে কথা বলছে। আমার পথ আটকাল।
যা নিচে গিয়ে শুয়ে পর।
ইসি আমার দিকে তাকাল।
কি দেখছিস অমন করে।
তোকে ছুঁলে মনে হয় অনেক জম্মের পাপ থেকে মুক্ত পাব।
যা একটু শুয়ে পর, বরুণদার কাল অফিস আছে।
যাবে না।
জ্যেঠিমনি কোথায়?
আর টেনসন নিতে পারল না। ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছি।
কে দিল?
তোর নীরু ডাক্তার।
হাসলাম।
হাসলি যে।
এমনি। শিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলাম। কনিষ্ক পাশেপাশে এলো। নিচে আসতেই চিকনা জড়িয়ে ধরলো। সবাই ঘিরে ধরেছে। রতন, আবিদ, নেপলা, সাগির, অবতার কাকে বাদ দেব।
একটা সিগারেট দিবি।
বটাদা। চিকনা চেঁচালো।
বটা এগিয়ে এলো। সিগারেট দিল।
রতন।
বলো দাদা। ওমকে একবার ফোন কর।
ওম ওখান থেকে মালদের নিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে।
কেন?
আবিদ কি গন্ধ পেয়েছে।
এখন কোথায় আছে?
পিলখানায়। আবিদের খাশ ডেরায়।
ওদের হ্যান্ডওভার করতে হবে।
কাজ শেষ!
হ্যাঁ।
রতন দুহাত তুলে একবার ঝাঁকুনি দিল।
টনা কোথায়রে? কনিষ্কর দিকে তাকালাম।
নিচের ঘরে শুইয়ে রেখেছি। নীরু বললো।
কেনরে!
মারটা একটু বেশি পড়ে গেছে দাদা। নেপলা মাথা নীচু করে বললো।
ভাঙ্গা ভাঙ্গি করেছিস না কি?
না চোখটা একটু কালসিটে পড়ে গেছে। কনিষ্ক বললো।
ছাগল, তুই থাকতে এতোটা মারল কেন! কনিষ্কর দিকে তাকালাম।
আমি তুই নিচে নামার আগেই কাজ সেরে দিয়েছে।
চল দেখি। সিগারেটটা বাগানে ছুঁড়ে ফেলেদিলাম।
নিচেরে ঘরে এলাম। দেখলাম টনা গুটিসুঁটি মেরে শুয়ে আছে। আমি ওর পাশে বাবু হয়ে বসলাম। সত্যি বেচারার মুখটা ফুলে একাকার হয়ে গেছে। চোখ বন্ধ। আমি মাথায় হাত রাখলাম।
টনা।
টনা চোখ চাইল। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
আমি অন্যায় করে ফেলেছি দাদা।
কাঁদে না।
শালা প্রবীরকে কালই হাঁসুয়া দিয়ে টুকরো করে দেব।
চলবে —————————
from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/VR92ZJO
via BanglaChoti
Comments
Post a Comment