কাজলদিঘী (৫২ নং কিস্তি)

❝কাজলদীঘি❞

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

৫২ নং কিস্তি
—————————

তুই আমাকে ভালোবেসেছিস ঠিক, আমার মনের গভীরে ডুব মারতে পারিসনি। আমি তোর মনের গভীরে কতটা ডুব মারতে পেরেছি তাও বলতে পারবো না। সেটা তুই হয়তো বিচার বিবেচনা করে বলতে পারিস।

তবে এটা তোর অপরাধ নয়। আমার অপরাধ। আমি তোকে হয়তো আমার মনের অন্দরে ঢুকতে দিইনি। কোথাও হয়তো একটা স্বচ্ছ অর্গল তুলে রেখেছি।

যখন তুই ফাইলটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললি, যেখানেই থাকিস নটার মধ্যে আসবি, না হলে আজ থেকে তোর সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক থাকবে না, তখন আমার ভেতরটা আরও দুমরে মুচরে একাকার হয়ে গেল। ভাবলাম আমি আর ফিরবো না।

যাকে আমি এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করি সেই দাদা আজ পর্যন্ত আমাকে এই ভাবে কথা বলতে পারেনি। মিত্রা কে?

তারপর ভাবলাম, না আমি যেখানেই থাকি আজকের দিনটা আমি ডিউ টাইমে ফিরে আসবো, মিত্রাকে আমি জেতাবই, মিত্রাকে আমি কখনও কোনওদিন হারতে দেব না। তুই বিশ্বাস কর আমি আটটার সময় ফিরে এসেছি। আর কোথাও বেরইনি।

মিত্রার চোখ দুটো চক চক করে উঠলো। আমার পাঞ্জাবীর বোতামটা খুলে আমার খোলা বুকে ঠোঁট ছোঁয়াল।

একফোঁটাও চোখ দিয়ে জল বার করবি না। এটা তোর সঙ্গে, আমার বোঝাপড়া।

তুই বিশ্বাস কর বুবুন এটা আমার দুঃখের অশ্রু নয়, এটা আমার অনন্দের। আমি আমার বুবুনকে যেভাবে পেতে চাই, বুবুনকে আমি সেই ভাবেই পাচ্ছি।

জানিস মিত্র ভালোবাসাটা শুধু শরিরী নয়, মনটাও অনেকখানি জুড়ে থাকে, তাই দেখবি প্রাচ্যের মেয়েদের খুব একটা ডিভোর্স হয় না। যেটা পাশ্চাত্যে আকছাড় হয়ে থাকে।

তুই কতো গভীরে গিয়ে ভাবিস। আমি যে সব গুলিয়ে ফেলি।

গুলিয়ে ফেললে কষ্ট পেতে হবে। তার দায় আমার নয়। সম্পূর্ণ তোর।

আজ মায়ের ফটোটার দিকে তাকিয়ে একটা কথা বার বার মনে হচ্ছিল। আমার রক্তের সম্পর্কের কোনও আত্মীয় নেই। খুঁজলে তোর দু-একটা পাওয়া যাবে। আমার পাওয়া যাবে না। আমি যেন কলম করা গাছ। বহু চেষ্টা করেছি খুঁজে পাইনি। এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছি। জানিনা আমার ভাগ্যে কি লেখা আছে। তবু তুই আমাকে আশ্রয় দিয়েছিস। কাছে টেনে নিয়েছিস।

এভাবে বলিস না।

যা সত্যি তাই বললাম।

চল এবার শুই। চাদরটা কেমন হয়েছে কিছু বললি না?

জানিস মিত্রা দারিদ্রতা এতো কাছ থেকে দেখেছি, ….তারপর যখন এগুলো পাই ঠিক ঠিক ভাবে গ্রহণ করতে পারি না। মনের মধ্যে বার বার খচ খচ করে, অনি তুই এটা কি করছিস? এটা তোর পথ নয়, তুই গা ভাসিয়ে দিচ্ছিস।

মিত্রা আমার হাতটা ধরে খাটের কাছে দাঁড়িয়ে।

তখন তুই প্যান্ট জামার কথা বললি, বিশ্বাস কর হাতের সামনে থাকতেও ইচ্ছে করে ওটা পরে গেছিলাম। মনের মধ্যে একটা আলাদা স্পিরিট অনুভব করলাম। মিঃ নেওটিয়াকে তো কাত করলাম। আজ প্রতিজ্ঞা করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। আমাকে দেড় কোটি টাকা যেখান থেকে হোক জোগাড় করে আনতে হবেই।

সেই জায়গায় তুই মিত্রাকে কিছুতেই জিততে দিবি না।

হেসে ফেললাম।

এই হেরে যাওয়াতে কোনও দুঃখ নেই জানিস বুবুন, এই হেরে যাওয়াটা সবচেয়ে বেশি আনন্দের। আমি এইরকম ক্ষেত্রে বার বার তোর কাছে হারতে চাই।

মিত্রা আমার অনেক কাছে।

তুই তখন জোড় গলায় বললি, আলবাৎ পারবো। সেই সময় তোর চোখের আগুনে আমি নিজেকে পুরে মরতে দেখেছি। তুই বললি পৃথিবীটাকে তুই হাতের মুঠোয় দুমরে মুচরে একাকার করে দিবি। আমি তোর চোখের আগুনে নিজেকে পুরিয়ে শুদ্ধ করেছি। আমি যে এই বুবুনকে চাই।

আমি মিত্রার চোখে চোখ রেখেছি।

বুবুনরে বুকের ভেতরের এই আগুনটা আমাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছে। তাই জন্য তোর কোনও কাজে আমি বাধা দিইনি। কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু মনকে বুঝয়েছি, বুবুন যে কাজে হাত দেবে ও জিতবে। ও কোনওদিন হারতে জানে না।

না আমি ভগবান নই। তবে অন্যায় যে করবে মন থেকে যদি বুঝি সে সত্যি অন্যায় করেছে। তোকে বলে রাখি তার শাস্তি তাকে পেতেই হবে। আমার হাত থেকে তার পরিত্রান নেই।

এবার শুই চল।

তুই ওঠ, আমি পড়ে উঠছি।

না তুই আগে উঠবি। আমি তোর হাত ধরে বিছানায় উঠবো।

কোনও সংস্কার?

না।

তাহলে!

এখানে তোর অনুভূতি কাজ করবে না।

বুঝেছি। তাহলে দুজনে একসঙ্গে উঠবো।

তাই হোক।

কোনও দুষ্টুমি একেবারে নয়।

একটু, বেশি নয়।

ঠিক আছে।

কিগো তোমার বিয়ে আর তুমি পরে পরে ঘুমচ্ছ।

এক ঠেলায় ঘুমের বারোটা বেজে গেল।

কইরে অনি ওঠ।

ও অনিদা ওঠো।

যার বিয়ে তার হুঁশ নেই পাড়াপড়শির ঘুম নেই। দে ওর গায়ে জল ঢেলে।

বুঝলাম বৌদি আর সুরো এসে হামলা শুরু করেছে।

বিছানায় শুয়েই আড়মোড়া ভাঙলাম। একবার চোখ মেলে পিট পিট করে তাকালাম। বৌদি সুরো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসছে।

বৌদিগো ঘুম থেকে ওঠা বড়ো কষ্ট।

দাঁড়া তোকে কষ্ট দেখাচ্ছি। চাদর মুড়ি দিয়ে ভোঁস ভোঁস। কটা বাজে খেয়াল আছে।

কেন মিত্রা তো আছে।

মিত্রা তোকে ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তোর সঙ্গে কে থাকবে।

আমি চোখ মেলে তাকালাম। চাদরটা মুখ থেকে সরাতেই দেখলাম বৌদি, বড়োমা, ছোটোমা, সুরো।

ওমা দেখেছো বড়দি যেই মিত্রার কথা বলেছি, ড্যাব ড্যাব করে কেমন তাকাচ্ছে। ও-রে শয়তান। বৌদি বললো।

আমি হাসছি।

ওঠ আগে।

উঠছি, তাড়াহুড়ো করছো কেন। তুমি কি এখুনি এলে?

আবার কথা। আজ যা বোলবো চোখ-কান বন্ধ করে শুনে যাবি।

আমি হাসছি।

একবারে দাঁত বার করবি না।

আমি উঠে বসলাম। সুরোর দিকে তাকালাম।

কিরে সাজিস নি!

এখন সাজবো কেন, বিকেলে।

দুর এখন থেকে সেজেগুজে বসে থাক। অনেকে আসবে পছন্দ হলে তোরটাও একসঙ্গে সেরে ফেলবো।

তোমাকে আর ঘটকালি করতে হবে না।

বড়োমা, ছোটোমা মিটি মিটি হাসছে।

মুখ ধুয়ে ওই পাজামা পাঞ্জাবীটা পর। এখুনি বেরোব।

কোথায়?

বলেছি না কোনও কথা বলবি না।

আমি ভ্যাবলার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম তারপর উঠে বাথরুমে গেলাম। ওরা সবাই চলে গেল।

আমি বাথরুম থেকে বেরিয়ে পাজামা, পাঞ্জাবীটা পরলাম। গেড়ুয়া কালারের একটা পাঞ্জাবী আর চোস্তা। মনকে বোঝালাম, এখন কোনও বিদ্রোহ নয়। এই তিনটে দিন তুমি ওদের আনন্দের সঙ্গী।

আলমাড়ির আয়নাটার সামনে এসে দাঁড়ালাম। খারাপ লাগছে না। চুলটা আঁচড়ে নিচে এলাম। দেখলাম বাগানে রবীন দাঁড়িয়ে আছে। মিত্রার বড়ো গাড়িটা আছে।

বসার ঘরে আসতেই দেখলাম চারজনে ফিট ফাট হয়ে বসে আছে।

আমি বড়োমা, ছোটোমা, বৌদিকে প্রণাম করলাম।

কিগো সব কোথায়!

বললাম না, তোকে ছেড়ে সব পালিয়ে গেছে। বৌদি বললো।

কিগো বড়োমা, মিত্রা কোথায়?

বড়োমা মুখ টিপে হাসছে।

ছোটোমা একটু চা খাওয়াবে না।

এখানে হাঁড়ি বন্ধ।

তারমানে!

তোকে বুঝতে হবে না। বৌদি বললো।

ও সব জানি না, আমার চা চাই।

চল গিয়ে খাবি। ছোটোমা বললো।

কোথায় যাব?

সুরো মুচকি মুচকি হাসছে।

কিরে সুরো?

কেমন মজা বলো।

চল চল ওঠ। বৌদি এগিয়ে এলো।

বড়োমার দিকে তাকিয়ে—

দিদি ওই ব্যাগ দুটো নিলেই হবে।

হ্যাঁ।

ছোটো তোরগুলো?

রবীনকে বলেছি গাড়িতে তুলে নিতে।

মনে হচ্ছে তোমরা কিছু একটা ঘোটালা পাকাচ্ছ।

একবারে কথা বলবি না। বৌদি বললো।

বাবাঃ সেই ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে ধমকে যাচ্ছ।

আমার কথায় ছোটোমা মুখ টিপে হাসছে।

আমি উঠে দাঁড়ালাম। চা না খাইয়ে বার করছো, এটা মনে থাকে যেন।

সব মনে আছে, এখন চল। ছোটোমা বললো।

আমি বড়োমাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। বলোনা কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছ। এই বাড়ি শুনশান, সকলে কোথায়? মিত্রাকে দেখছি না, দাদা, মল্লিকদা, টিনা, মিলি, নীপা, সব গেল কোথায়!

এত বুঝিস, এটা বুঝতে পারিস না।

ঠিক তা নয় তোমরা প্রোগ্রাম চেঞ্জ করে থাকলে আলাদা ব্যাপার। বাড়ি মাত্র দুটো, নয় এ বাড়ি, নয় ও বাড়ি।

তাহলে—

বাঃ দারুণ লাগছে এবার, সুরো।

বলো।

বড় বিয়ে করতে যাচ্ছে। তুই নিধ কনে। বড়কর্তা বৌদি। বড়োমা, ছোটোমা বড়যাত্রী।

ছোটোমা তেরে এলো, দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি।

আমি ছুটে বারান্দায় চলে এলাম।

আগে বলতে হয়, তাহলে জলটাও খেতাম না।

ওতে কোনও দোষ হয় না। বড়োমা বললো।

ছেলের বাড়ির ব্রাহ্মণ কে ছোটোমা?

হ্যাঁ-রে গাঢ়ল। ছোটোমা, বড়োমার ঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।

তাহলে….

গেলে দেখতে পাবি।

আমার বেশ ভয় ভয় করছে বড়োমা।

ছোটোমা এসে কানটা ধরলো।

ভয় ভয় করছে বড়োমা।

সুরো খিল খিল করে হাসছে।

আমরা পাঁচ মূর্তিমান গাড়িতে উঠলাম।

আমি, সুরো সামনের সিটে। বড়োমারা তিনজন মাঝে।

বড়োমা ছগনলালকে বললো, তালা দিয়ে দাও আমাদের আসতে আসতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে।

আমরা বেরিয়ে এলাম।

ছোটোমা, বৌদি আমার পেছনে, আমি স্পিকটি নট।

মাঝে মাঝে সুরোর দিকে তাকিয়ে হাসি। সুরোও হাসে।

এক ঘণ্টার একটু কম সময়ে আমরা পৌঁছেগেলাম মিত্রার বাড়িতে। গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখলাম, চিকনা ছুটে এলো। রবীন বাগানে গাড়িটা দাঁড় করাল। সুরো দরজা খুলে নিচে নেমে গেছে। আমি নামতে গেলাম।

একবারে নামবি না। আগে আমরা নামি তারপর নামবি। ছোটোমা পেছন থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।

মহা মুস্কিল।

চিকনা হাসছে।

কি গুরু আজ কিন্তু সঞ্জুর পাকা দেখা নয়।

তুই কখন এলি?

ম্যাডাম কাল ফোন করলো, আজ সকালে এসে হাজির।

আর কেউ আসেনি!

অপেক্ষা কর দেখতে পাবি।

ওখানকার কাজ কর্ম।

একবারে কাজের কথা বলবি না, সব সোমবার থেকে।

ছোটোমা, বড়োমা, সুরো গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালেও বৌদি দেখলাম গটগট করে বাগানের রাস্তাটা পেরিয়ে ভেতরে চলে গেল।

কি গো ছোটোমা!

এটা দেখছিস। ছোটোমা ঘুসি দেখাচ্ছে।

চিকনা হেসে গড়িয়ে পড়ে।

কিগো এবার নামব? বৌদির দিকে তাকালাম।

না বলেছি।

বড়োমা তুমি একটু দেখো।

দেখছি তো।

কোথায় দেখছো।

বড়োমা হাসছে, তুই একটু থাম না বাপু।

মিত্রা কোথায়রে চিকনা।

সকলে আমার অবস্থা দেখে হাসে।

দেখলাম দাদা, মল্লিকদা, ডাক্তারদাদা, অনাদি, বাসু ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো।

সুরো খিল খিল করছে। গাড়ির দরজা খুলে আমি বসে আছি।

বাঁদড়ী খালি দাঁত বার করে হাসে। দেব না একটা।

সুরো ঘুসি বাগিয়ে এগিয়ে এলো।

আমি ওর হাতটা ধরে বড়োমার মুখের দিকে তাকালাম।

কিগো কখন নামবো।

বিয়ে করার সখ জেগেছে, একটু কষ্ট করবি না। ছোটোমা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।

দেখলাম ভেতর থেকে দামিনীমাসি, ইসলামভাই এগিয়ে আসলো। দামিনীমাসির হাতে একটা পেতলের থালায় কি সব যেন। দামিনীমাসি এসে বড়োমার হাতে দিল। একটা প্রদীপও জ্বলছে দেখছি। বড়োমা প্রদীপের তাপ এবং হলুদ চন্দনের ফোঁটা আমার কপালে লাগিয়ে দিল। চিকনা, বাসু, অনাদি উলু দিল। তালে তাল দিল সুরো, আমি ওদের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করছি। একে একে সবাই মাথায় ধান দুর্বো দিয়ে আর্শীবাদ করলো। আমি গাড়ি থেকে নামলাম প্রত্যেককে প্রনাম করলাম।

দামিনীমাসি, ইসলামভাই মুচকি মুচকি হাসছে।

আমি যেন এক আজব বস্তু সকলে আমার দিকে সেই ভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।

বড়োমা এবার চা।

শুধু চা চা করে গেল। ছোটোমা খিঁচিয়ে উঠলো।

তোমরা ওকে চা দাও নি! মল্লিকদা বললো।

কেন দিতে হবে শুনি, একদিন না খেলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে।

বড়োমা হাসছে।

মাথায় রাখবে, এরপর তোমাকে কোনও কথা বলবো না। তুমি সব জানতে কিছু বলোনি।

তুই বলিস, কাজ শেষ হয়ে যাবার পর বলিস।

দিদি কি করবে রে, দিদি কি করবে, দিদি তোকে বাঁচাবে। তোকে আজ দেখনা কি করি।

ছোটোমার কথায় সবাই হাসছে।

আমরা সবাই ভেতরে এলাম। দেখলাম বুড়ীমাসি গেটের কাছে দাঁড়িয়ে, চোখটা ছল ছল করছে। কাপরের খুঁট দিয়ে চোখ মুছলো।

কিগো বুড়ীমাসি, তোমার আবার চোখে জল কেন?

বড়বাবু থাকলে আনন্দ করতেন।

বুড়ীমাসি ভেতরে চলো, এখন একবারে ওসব নয়। ছোটোমা বললো।

ব্যাশ কাজ শেষ, এবার কচুরী জিলিপি। আমি বললাম।

কাজ শেষ মানে! তোকে আচ্ছা করে হলুদ মাখাই আগে। বড় হবে হলুদ মাখবে না।

বৌদি দাঁতে দাঁত চিপেছে।

দেখলাম শিঁড়িদিয়ে টিনা, মিলি, অদিতি, নীপা নামছে।

কি অনিদা হেবি মাঞ্জা দিয়েছ?

কোথায় আর দিলাম। বললো আরও বাকি আছে।

তুই যাকে খুঁজছিস পাবি না, ঠিক সময়ে দেখতে পাবি। বৌদি বললো।

আমি ছোটোমার দিকে হাঁসি হাঁসি মুখ করে তাকালাম।

ওইখানে গিয়ে চুপটি করে বসবি যখন ডাকব তখন আসবি।

আমি দাদা, মল্লিকদার মাঝখানে গিয়ে বসলাম।

ফোনটা বেজে উঠলো।

পকেট থেকে বার করলাম। দেখলাম সুজিতদা। উঠে এলাম।

হ্যাঁ বলো দাদা।

কিরে সব ঠিক আছে?

তোমার এ্যাড সানডে বেরবে। চিন্তা নেই। তুমি রবিবার কি করছো?

কেনোরে!

একবার আসতে পারবে?

কোথায়!

দাদার বাড়িতে।

যে বাড়িতে গেছিলাম?

হ্যাঁ।

কেন?

আমার বিয়ে।

ভাগ। গুল মারার জায়গা পায় না।

বিশ্বাস করো।

তোকে বিশ্বাস করা মুস্কিল।

ঠিক আছে তোমায় আসতে হবে না। তুমি বৌদিকে আমায় ফোন করতে বলবে।

ঠিক আছে।

দেখলাম মল্লিকদা এসে পাশে দাঁড়িয়েছে।

আমি ফোনটা কাটতেই আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।

এখানেও ব্যবসা?

কি করবো বলো। দায়িত্ব নিয়েছি। সুজিতদা জানে না।

কালকের সুজিত?

চম্পকদাটা সব গজব করে দেবে বুঝলে মল্লিকদা।

তোকে অনেকদিন বলেছি।

কি করবো। পুরনো লোক দাদা দুঃখ পাবে।

ওকি এ্যাডটা যাবে না বলেছে?

তা বলেনি। বলেছে একজন নতুন ম্যাডাম জয়েন করেছে তিনি পার্মিশন না দিলে যাবে না।

দাঁড়া আজ চম্পকের সঙ্গে দেখা হোক।

তুমি কিছু বলতে গেলে বলবে ওই দেখো পারিবারিকতন্ত্র।

তা বলে যা খুশি করবে মেনে নিতে হবে?

তুমি দাদাকে দিয়ে বলাবে।

যাই অফিসে আজ।

হ্যাঁগো আমি সন্দীপদের বলিনি, দাদা বলেছে?

তোকে ওসব ভাবতে বলেছি।

এখানে কি ফুসুর ফুসুর হচ্ছে শুনি, চল ভেতরে চল। ছোটোমা মল্লিকদার দিকে তাকিয়ে হাসলো।

আমি ছোটোমার পেছন পেছন শুর শুর করে ভেতরে চলে এলাম।

দামিনীমাসি কাছে এসে বললো, একটু চা খাবি।

চা খাব মানে! এটা জিজ্ঞাসা করে কেউ? সকাল থেকে চা চা করে চাতক পাখির মতো মরছি।

মাসি মিত্রাকে কিছু খেতে দিয়েছ? ছোটোমা বললো।

বললো কিছু খাবে না। সকাল বেলা সরবত খেয়েছে।

আমি একবার ছোটোমা একবার দামিনীমাসির দিকে তাকালাম। ইসলামভাই হাসছে।

কোথায় লুকিয়ে রেখেছ।

আমি শিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে গেলাম। ছোটোমা হাঁই হাঁই করে উঠলো।

আমি হাসছি।

ছোটো ওকে ওপরে যেতে দাও। দাদা হাসতে হাসতে বললো।

ছোটোমা চুপ করে গেল। আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।  

আমি ওপরে উঠে এলাম। দেখলাম মিত্রার ঘর থেকে চেঁচামিচির শব্দ। বারান্দা শুনসান। আমি ধীর পায়ে মিত্রার ঘরের সামনে এলাম। আমাকে দেখে সবাই হই হই করে উঠলো। মিত্রা একটা কাশ্মীরি গালিচার ওপর বসে। ওকে ঘিরে টিনা, মিলি সবাই।

বড়োমা, বৌদি সোফায় বসে। প্রথম যেদিন এই বাড়িতে এসেছিলাম মিত্রার সঙ্গে ওই সোফাতে বসেছিলাম। সে রাত্রিটার কথা এখনও চোখের সামনে বাঁধান ছবির ফ্রেমের মতো ভেসে আছে।

মিত্রা একটা হলুদ রং-এর শাড়ি পরেছে। লাল ব্লাউজ। কপালে আমার মতো হলুদের টিপ তেল গড়িয়ে পড়েছে। আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসল।

বড়োমা বড় এখানে কেন? টিনা চেঁচিয়ে উঠলো।

টিনার কথাটা আমার যেন কানেই ঢুকছে না। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। এক দৃষ্টে ওর দিকে তাকালাম। তারপর ফিরে এলাম। শিঁড়ি দিয়ে ধীর পায়ে নিচে নেমে এলাম।

শিঁড়ির মুখে দামিনীমাসি চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়ে। মাসির হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে সোজা বাগানে চলে এলাম। কারুর দিকে তাকালাম না। রবীন গাড়ি মুছছে। পায়ে পায়ে রবীনের দিকে এগিয়ে গেলাম। চায়ের কাপটা রবীনের হাতে দিয়ে বাগানের পেছনে চলে এলাম।

মিত্রার বাগানটা ও বাড়ির থেকেও সুন্দর। এ বাড়িতে দুটো মালি আছে। ওরা মেইনটেন করে।

সব ধরনের ফুল কম বেশি ফুটে আছে। আমি ডালিয়ার টবগুলোর কাছে গিয়ে বসলাম। দারুন লাগছে ডালিয়াগুলো দেখতে। পাশেই হাসনুহানা। কি রং, যেন যৌবন ফুটে বেরুচ্ছে। চার রকমের গোলাপ। মেরুণ কালারের গোলাপগুলো আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। আমি ঘাসের ওপর বসে পড়লাম। মনে হলো আমি এদের কতোদিনের পরিচিত। দেয়ালের ধার ঘেঁসে পাম, সুপুরি, নারকেল গাছ। আমি চেয়ে চেয়ে দেখছি। সামনেই দুটো চড়ুই পাখি উড়ে এসে বসলো। ঠোঁটে ঠোঁট রেখে একে অপরকে সোহাগ করলো তারপর আবার ফুরুত করে উড়ে চলে গেল।

আমি একমনে দেখছি। মিত্রাকে আজ কি সুন্দর লাগছে। হয়তো ওর প্রথম বিয়ের দিন আরও বেশি সুন্দর লেগেছে ওকে। এ বাড়িতে তখন কতো লোকের হই চই। কতো ব্যস্ততা। আজও হয়তো সেইটা ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।

কিরে এখানে একা একা বসে আছিস?

মুখ তুলে তাকালাম। মিত্রা পাশে এসে বসলো। আমি ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে।

কি দেখছিস অমন করে?

তোকে ভীষণ সুন্দর লাগছে।

তাই!

মাথা দোলালাম।

হঠাৎ ওই ভাবে চলে এলি?

সকাল থেকে তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল। দেখা হয়ে গেল, চলে এলাম।

ছোটোমা বললো, তুই মিত্রা মিত্রা করে পাগল করে দিয়েছিস?

হাসলাম।

আমাকে বকলি না?

কেন!

তোকে না বলে চলে এলাম।

তুই আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিস, আমি সারপ্রাইজড হলাম।

তাই নিচে চলে এলি, মন খারাপ করে।

কই মন খারাপ করলাম!

রবীনকে চা দিয়ে দিয়েছিস।

তোকে দেখার পর খেতে ইচ্ছে করলো না।

কেন!

তুই আমার জন্য কষ্ট করছিস, আমি এই টুকু পারবো না।

কই আমি কষ্ট করছি।

তুই তো কিছু খাসনি।

সরবত খেয়েছি।

আমি জল খেয়েছি।

মিত্রা খিল খিল করে হেসে উঠলো। চল ভেতরে চল, ছোটোমা হলুদ মাখাবে দুজনকে।

এই সুন্দর জামাটা নষ্ট করে ফেলবো!

আবার কিনে দেব তোকে।

তোর বাবা-মার কাছে একবার নিয়ে যাবি?

চল। আমার ঘরে কোনও ফটো নেই। মায়ের ঘরে আছে। ও ঘরে তুই কোনওদিন ঢুকিস নি।

বড়োমা কোথায়?

তোর মন খারাপ হয়েছে দেখে বড়োমারও মুখটা কেমন ভাড়ি হয়ে গেল। দামিনীমাসি বললো তুই যা মিত্রা, তুই গেলে ও ঠিক হবে।

নারে আমার মন খারাপ হয়নি। মাঝে মাঝে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি, আমি এসবের যোগ্য কিনা?

কেন তোর মনে এতো সংকোচ?

সংকোচ নয়। না পাওয়ার বেদনা। যখন পাই ঠিক মতো গ্রহণ করতে পারি না।

আমি আছি তোর পাশে, ভয় কিসের।

তোকে হারাবার ভয়, আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়।

আর আমাকে হারাবি না। এবার ওঠ। আজকে তুই আমার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন আজ আমি সার্থক করবো।

আমি বাধা দেব না। আর কি কি আছে? আমাকে কি কি করতে হবে বল।

নাই বা জানলি।

ঠিক আছে জানতে চাইবো না।

পায়ে পায়ে দুজনে ভেতরে এলাম। দাদারা সোফায় বসে আছে। আমাদের দুজনের দিকে তাকাল। আমি কোনও কথা বললাম না। শিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে এলাম। এই ঘরটায় আগে কখনও ঢুকিনি। মিত্রা কোমর থেকে চাবির গোছা বার করে তালা খুললো।

মিত্রার মায়ের ঘরে এলাম। ভেতরে ঢুকে মিত্রা দরজাটা ভেতর থেকে ছিটকিনি দিয়ে দিল। আমি একটু অবাক হলাম। টেবিলটার সামনে এসে দাঁড়ালাম। দুজনকে আগে যেমন দেখেছিলাম। ফটোতেও সেরকম দেখলাম। সমান জীবন্ত। ফুলের মালা দিয়ে সাজানো। আমি মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করলাম।

জানিস বুবুন আজ বাবা থাকলে ভীষণ খুশী হতো।

আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।

তুই প্রণাম করে কি বললি।

যে দায়িত্ব মাথা পেতে নিচ্ছি তা বহন করবার শক্তি দিন।

মিত্রা কাছে এসে আমার বুকে ঠোঁট রাখলো।

এবার তুই কিছু খা।

না। আমাকে এই ঘরে একটু একা থাকতে দিবি?

না।

কেনো?

তুই আবার মন খারাপ করবি।

না করবো না।

তুই আজ আমার সঙ্গে থাকবি। একটুক্ষণের জন্যও আমার চোখের আড়াল হবি না।

তোর আত্মীয়রা কেউ আসবে না?

সবাইকে বলেছি, যারা আসে আসবে, না হলে কি করবো।

তুই কখন এসেছিস?

ভোর বেলা। সবাই মিলে গঙ্গায় স্নান করলাম। তারপর চলে এলাম।

আমাকে একা রেখে চলে এলি?

তুই বড়, তোকে সঙ্গে আনা যায়।

হেসে ফেললাম।

তুই বিয়ে করতে চেয়েছিস, বিয়েটা শুধু কাগজে কলমে হয়, একটু অনুষ্ঠান না করলে কেমন করে চলে বল।

তার মানে ছাঁদনা তলা শুভ দৃষ্টি!

দূর ওসব কবে হয়ে গেছে।

তাহলে!

দেখবি, সময় হোক।

এখন কি করবো?

কি করবি, ঘুরে ঘুরে বেড়াবি।

ঘরের বাইরে এলাম মিত্রা আবার তালা দিয়ে চাবির গোছাটা কোমড়ে রাখলো। দুজনে পায়ে পায়ে নিচে নেমে এলাম। ডাক্তারদাদা আমার দিকে তাকিয়ে।

কি স্ট্রংম্যান মনে হচ্ছে চিন্তা শক্তির কোথাও ছেদ পড়ছে?

মাথা নীচু করে হাসলাম।

তুমি ভাবতেই পারোনি এরকম কিছু একটা হতে পারে।

মাথা দোলালাম।

তোমায় কিরকম সারপ্রাইজ দেওয়া হলো বলো।

হাসলাম।

হাসলে হবে, তোকে মুখে কিছু বলতে হবে। দাদা বললো।

দাঁড়াও না এডিটর, বাবু এখন নিজের সঙ্গে নিজে যুদ্ধ করছে।

কি করে বুঝলে?

ওর মুখ বলছে।

থামো তুমি, হ্যাঁরে তোরা দুজন কিছু খা। বড়োমা বললো।

আমি খাব না, মিত্রা যদি খায় ওকে খেতে দাও।

তুই খেলে খাব।

এই যে বললি খেতে নেই।

তোকে মিত্রা বলেছে। বড়োমা বললো।

বললো খালি সরবৎ খেয়েছি আর কিছু খাব না।

একটু মিষ্টি খা কিছু হবে না।

মিত্রার দিকে তাকালাম।

মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।

দেখলাম অনাদি, বাসু নিচের বিশাল ড্রইংরুমের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে। আমি পায়ে পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। ইশারায় ওদের ডেকে নিলাম। তিনজনে বাগানের সবুজ গালিচার মতো ঘাসে এসে বসলাম। সামান্য গরম লাগছে। গাছতলায় বসে অনাদিকে বললাম একটা সিগারেট দিবি?

আমার কাছে নেই, চিকনার কাছে আছে।

বাসু বললো, দাঁড়া চিকনাকে ডাকি।

ও কোথায়?

আবার কোথায়, বড়োমার পেছন পেছন ঘুরছে, আর খেয়ে যাচ্ছে।

বাসু উঠে দাঁড়াল।

হ্যাঁরে অনাদি, মৌসুমি মাসি এখন ওখানে আছে?

না, দেশে গেছে, মাস খানেক পরে আসবে, লোক জোগাড় করে।

কেন!

চিকনা মৌসুমি মাসিকে বলেছে।

আমাদের ওখানে লোক পাওয়া যাবে না?

চিকনার বিশ্বাস নেই। তারওপর তোর বাবার আমলের লোক। চিকনা বললো, মাসি তার লোকজন নিয়ে ধান সেদ্ধ করা, শুকনো করা, ওই সব করবে। বাকি পচা, পাঁচু, হাঁড়ি পাড়ার কিছু ছেলে।

মাসির বয়স হয়েছে।

কে শুনবে কার কথা। যেই শুনেছে অনি মিনি রাইস মিল করবে সেই থেকে স্যারের মাথা খেয়ে ফেলছে। চাষের সময় ছাড়া গ্রামের ঘরে কাজ কোথায় বল। সব সময় তোর ওখানে পরে আছে।

ঠিক।

তুই কি এরমধ্যে মৌসুমি মাসির দেশের বাড়ি গেছিস? অনাদি বললো।

মাস দুয়েক আগে গেছিলাম। মৌসুমি মাসির বড়ো ভাই ওখানকার মুখিয়া। আমার ভীষণ ভালো লাগে জায়গাটা। নামটাও ভীষণ সুন্দর ভালোপাহাড়। জানিস ওখানে প্রায় সকলে আমাকে চেনে। এক একটা ছোট ছোট টিলার মতো পাহাড় আট দশটা পরিবার নিয়ে এক একটা গ্রাম। পাঁচটা গ্রাম পঞ্চাশটা পরিবার। পাঁচ ছশো মানুষ। আমরা শহরে বসে অনেক লেকচার দিই বুঝেছিস অনাদি। তুই গেছিস কখনো?

না।

দেখলাম বাসু, চিকনা হাসতে হাসতে আসছে। কাছে এসে চিকনা একটা ভেউ করে ঢেঁকুড় তুললো।

কিরে!

খাওয়াটা একটু বেশি হয়ে গেছে বুঝলি অনি।

কি খেলি?

বেশি না, গোটা কুড়ি লুচি, আর দশটা রসোগোল্লা।

এটা টিফিন!

তাহলে কি।

দুপুরে।

ইসলামভাই-এর লোকজন তৈরি করছে। বিড়িয়ানি, মুরগীর ঠ্যাং।

আমি চিকনার দিকে তাকালাম।

তাকিয়ে লাভ নেই। এই জন্য বলেছিলাম, অনি বিয়ে করিস না। বিয়ে করলে খাওয়া জুটবে না।

আমি হাসছি।

তুই এই কথা কখন বললি অনিকে! বাসু বললো।

আশাপুরায় যখন পড়তাম। ক্লাস ফোর।

আমার হাসি থামে না।

অনি একটা সিগারেট চাইছে। অনাদি বললো।

তোরা পাবি না।

কেন!

একটাই প্যাকেট আছে। সন্ধ্যে পর্যন্ত চালাতে হবে।

কিনে নিবি।

এখন ব্যবসা মন্দা, বুঝে শুনে খরচ করতে হবে।

শুনছিস অনি চিকনার বাতেলা। বাসু বললো।

সঞ্জুকে আসতে দে, সব হিসেব করে দেব। অনাদি বললো।

কেন ও কি আমার বাপ।

বাপ কি মা এলেই বোঝাব।

অনি তুই এখন ভিভিআইপি তোকে এখন ধরা খুব মুস্কিল। এই ফাঁকে কিছু কথা সেরে নিই।

চিকনা আমার হাতে একটা সিগারেট দিল। ওদেরও দিল। সিগারেট ধরালাম। চিকনা বসলো।

বল।

ধান রাখার আর জায়গা নেই।

আমি কি করবো।

তুই কি করবি মানে! গাছে তুলে দিয়ে মই কেরে নিবি?

জায়গা বার কর।

অনাদির বাড়িতে রেখেছি, বাসুর বাড়িতে রেখেছি।

কিছু বেচে দে।

এখন বেচলে লাভ হবে না।

তাহলে সেদ্ধ করে চাল বানিয়ে নে। মেসিন পত্র নিয়ে এসেছিস?

মেসিন এসেছে, এখনও ফিটিং হয়নি।

কেন!

অনাদিকে জিজ্ঞাসা কর। হারামী আমার নাকে দড়ি দিয়ে চড়কি ঘোরাচ্ছে।

আমি হাসছি।

হাসিস না, ও শালা অনেক টাকা চাইছে। মেসিন বসাবার জন্য।

তোর যদি পোষায় অনাদিকে দিয়ে কাজ করাবি, না হলে করাবি না।

সেখানেও ও পুটকি জাম করে রেখেছে।

কেন?

তুই জিজ্ঞাসা কর।

ব্যবসা করবি তুই, আমি অনাদিকে জিজ্ঞাসা করবো কেন?

অনাদি, বাসু হাসছে।

চিকনা গাল দিল। হাসি হচ্ছে অনির সামনে। আমাকে কেশ খাওয়ানো।

নিশ্চই কিছু একটা অসুবিধা আছে, তাই অনাদি পরে করবে বলছে।

তোকে বলেছে, আমাকে বলেনি।

আমাকে অনাদি কিছু বলেনি।

তাহলে তুই জানলি কি করে?

তোর কথা শুনে।

আমার কথা শুনে তুই সব জেনে গেলি!

আমি হাসি।

মাথাটা একটু খাটা না। কতদিন গবেট গোবিন্দ হয়ে থাকবি।

ও বলেছে ব্যাঙ্কের বিল্ডিং-এর মেটিরিয়াল যখন আসবে তখন মেসিন বসাবে।

ঠিকই তো বলেছে। ডবল খরচ করবে কেন।

কিসের ডবল খরচ।

তোর জন্য একবার গাড়ি ভাড়াদিয়ে মেটিরিয়াল নিয়ে আসবে, আবার ব্যাঙ্কের জন্য মেটেরিয়াল নিয়ে আসবে।

কেন ও শালা গাড়িভাড়া আমার কাছ থেকে নেবে না, মাগনায় নিয়ে আসবে।

তোর কাছ থেকে কম নেবে।

শালা ওমনি অনির সামনে আমাকে কেশ খাওয়ালি।

চিকনা অনাদিকে তেরে গেল।

এটা ম্যাডামের বাড়ি নো ঝামেলা।

ওখানে গিয়ে রাম কেলান কেলাব।

দেখলাম মিত্রা একবার বেরিয়ে এসে আমাদের দেখে আবার ভেতরে চলে গেল।

দেখলি দেখলি ম্যাডাম তোর গলার আওয়াজে একবার দেখে গেল। বাসু বললো।

এর থেকে আসতে কথা বলা যায় না।

বোস বোস। এবার বাকিটা বল।

এইটাই আর কিছু নয়।

এই যে বললি রাখার জায়গা নেই।

অনাদি একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

তাহলে যে বললি অনাদি কিছু করছে না।

আমি তোকে তাই বললাম নাকি।

কতো ধান তুলেছিস?

পাঁচ টন।

ওরে বাবা টাকা পেলি কোথায়?

ইসলামভাই দিয়ে এসেছে।

ইসলামভাইকে শোধ করবি কি করে?

ধান বিক্রি করে।

টাকার সুদ?

নেবে না বলেছে।

তাহলে?

ও তুই বুঝবি।

আমি বুঝলে তুই কি ব্যবসা করবি?

দাঁড়া একটু চা নিয়ে আসি।

অমনি সটকে পরার ধান্দা। অনাদি চেঁচাল।

চিকনা হন হন করে চলে গেল, আমি চেঁচিয়ে বললাম, আমি কিন্তু খাব না।

চিকনা একবার পেছন ফিরে দাঁড়াল।

সেকিরে ভূতের মুখে রাম নাম!

বিয়ে তো করলি না।

ওমনি দিলি।

আমি হাসলাম। চিকনা গট গট করে চলে গেল।

অনাদিকে বললাম, কি হাল রে?

কাজ চলছে পুরো দমে।

আমি দিন পনেরোর আগে ওখানে যেতে পারবো না।

তুই কাজ শেষ করে আয়।

নিরঞ্জনদা এলো না?

এসেছে। দাদা কোথায় পাঠিয়েছে।

নিরঞ্জনদা জায়গাটার ব্যাপারে কি বললো?

শুনেছি কাগজপত্র রেডি হচ্ছে। নিরঞ্জনদা খুব দৌড়দৌড়ি করছে।

আমি অনাদির দিকে তাকিয়ে।

তোকে একটা সুখবর দেওয়া হয়নি।

আবার বাপ হবি নাকি?

দুর।

বাসু জোরে হাসল।

বাসু চান্স নিচ্ছে?

ঢেমনা। বাসু বলে উঠলো।

আমাকে লোকাল কমিটির দায়িত্ব দিয়েছে।

তার মানে! অমল কোথায়?

মাঝে ও একটা ঘোটালা করেছে, মেয়ে ঘটিত।

দিবাকর কেশ!

কাছা কাছি।

তারপর।

নিরঞ্জনদা প্রায়ই এখন ওখানে যাচ্ছে। ওকে সাসপেন করেছে, আমাকে বলেছে তুই আপাততঃ সামলা পরে দেখছি কি করা যায়।

আমি মুচকি মুচকি হাসছি।

তারপর থেকে দেখছি।

তারমানে আগের থেকে তোর চাপ বেরে গেছে।

সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত দৌড়।

তোকে একটা কথা বলেছিলাম মনে আছে।

হ্যাঁ।

কি বলতো।

কমিউনিকেসন বাড়াতে, আর যতটা পারবি লোকের উপকার করতে। বিশ্বাস কর অনি আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আমি জানি আমি এই মুহূর্তে যেখানে অবস্থান করছি শুধু মাত্র তোর জন্য। জীবনে কোনওদিন ভাবতে পারিনি অনিমেষদার সঙ্গে বসবো। কথা বলবো। আমার সেই সাধ পূর্ণ হয়েছে।

কবে বসেছিলি!

তুই যেদিন অসুস্থ হয়েছিলি।

ওই যে ম্যাসেজ পেয়ে আমরা চলে এলাম? বাসু বললো।

হ্যাঁ। ওইদিন। আমাদের প্রত্যেককে ডেকে পাই টু পাই তোর সম্বন্ধে জেনেছে। কি জেরা রে। প্যান্ট ভিঁজে যায় আর কি।

চিকনা।

দুর ওর কোনও বুদ্ধি শুদ্ধি আছে। অনিমেষদার সামনে বলে আমাকে একবার ডাক্তারকে ধরে এনে দিতে পারেন।

এ্যাঁ।

এ্যাঁ না হ্যাঁ। ও ডাক্তারকে একবার দেখে নেবে, ডাক্তার যেন দিবাকর।

তারপর!

সারাক্ষণ তোর পা ধরে বসে থাকল আর কাঁদে। কেউ নড়াতে পারল না ওখান থেকে। পকেট থেকে পাঁচশিকে বার করে তোর কপালে ঠেকিয়ে মানতে করেছে। আগামী বছর রাসের সমস্ত খরচ ওর।

কি পাগল বলতো।

পাগল না। তখন যা অবস্থা ছিল ডাক্তারদাদার মতো ওরকম জাঁদরেল মানুষ পর্যন্ত ঘেমে নেয়ে চান করেগেছিল।

আমি পরে অনেক চিন্তা করেছি বুঝলি, কেন হলো কিছুই বুঝতে পারছি না।

তোর ওপর তখন পীরবাবা ভর করেছিল।

কচু।

তুই বাসুকে জিজ্ঞাসা কর।

তোকে তখন ধরে রাখা যাচ্ছিল না। আমরা তিনজনে হাঁপিয়ে যাচ্ছিলাম। কি শক্তি তোর গায়ে।

যাঃ যতো সব গাঁজাখুরি গল্প।

তুই যখন চোখ খুললি তোর চোখ দুটো জবা ফুলের মতো লাল। কি হয়েছিল বলতো।

মৃগী হয়েছিলি।

তুই সব কিছুতে হেঁপি মেরে উড়িয়ে দিস।

তোরা আজকের দিনে বসে যদি এসব কথা বিশ্বাস করিস, চলে কি করে।

তাহলে তুই পীরবাবার থানে যাস কেন?

ওটা আমার বিশ্বাস, ভালোবাসা। তাই বলে পীরবাবা আমার ওপর ভর করবে, এটা মানা যায়?

দেখলাম চিকনা মিত্রা সমেত সবাইকে ধরে নিয়ে আসছে। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে হাসলাম।

মিত্রা আমার পাশে এসে বললো।

চা খাবি না কেন?

এমনি।

আমি ফোন করেছিলাম খেতে বলেছে।

হাসলাম।

হাসলি যে।

তুই ফোন করে পার্মিশন নিলি।

আজকের দিনটা মানব।

বুঝেছি আবার একটা ঘোটালা।

এই জন্য তোকে বলেছিলাম বিয়ে করিস না অনি, ফুর ফুর করে ঘোরা যাবে। চিকনা বললো।

চিকনাদা। নীপা চেঁচাল।

ওরে বাবা, এ স্মার্ট ম্যাডাম ছিল কাই।

মিত্রা হাসছে।

বিশ্বাস করুণ ম্যাডাম এটা মনের কথা নয়।

চিকনা নীপার দিকে তাকিয়ে ফিচলেমি করলো।

কালকে পর্যন্ত হিসাব করে এসেছো। নীপা গম্ভীর হয়ে বললো।

অনি বলেছে এখানে কোনও বিজনেস টক হবে না। খাওয়া দাওয়া আনন্দফূর্তি।

আংরেজী! অনাদি বলে উঠলো।

হ্যাঁরে….তারপর নিজের মুখ নিজে চেপে ধরলো।

অনাদিরা জিভ বার করে হাসছে।

এখুনি সব্বনাশ করে দিচ্ছিলি।

আটকে দিয়েছি।

তোকে অনি কখন বললো, এ সব কথা। অনাদি বললো।

তোর কানে বয়রা, শুনবি কি করে।

হাসি থেমে নেই।

মিত্রা আমার হাতে চায়ের কাপ দিয়ে পাশে বসলো। সবাই ঘাসের ওপর গোল করে বসেছে।

অদিতি, দেবা-নির্মাল্যকে দেখছি না। আমি বললাম।

আর বোলো না তিনঘণ্টা হয়ে গেছে। ইসলামভাই-এর ফোনের বিল চড় চড় করে বারছে।

কোথায় গেছে?

নিউ মার্কেটে পাঠিয়েছে, মাংস আনতে।

চিকেন না মটন?

দুটোই। তাহলে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বার করে আনছে।

ওরা হাসে।

সেরকমই হবে। তাও ইসলামভাই-এর পরিচিত দোকান, সব আগে থেকে বলে রেখেছে ইসলামভাই। মিলি বললো।

ম্যাডাম আপনারে কিন্তু আজ চাকমা লাগছে। চিকনা বললো।

মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।

চিকনা একবার নীপার দিকে তাকাল।

তুই তাকাস না। অনির বে বলে কথা। একটু আনন্দফূর্তি করবো না।

বে কি চিকনা। মিত্রা বললো।

গাঁইয়া কোথাকার। নীপা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।

দেখলি অনি, আমি গাঁইয়া।

বিয়ে বলতে পার না।

অনি কি? অনি কি? ও শউরে।

সবাই হাসছে।

ম্যাডাম একটা পার্মিশন নেব।

কি।

অনির বিয়ে উপলক্ষে একটা বিড়ি খাব।

মিত্রা মুচকি মুচকি হাসে।

অনি একটা খাবে।

ও বিড়ি খায়!

পাইলে ছাড়ে না।

তোর বিড়ি খাওয়ার প্রথম দিনটা মনে আছে। আমি বললাম।

এই তো শুরু করলি, আমার প্রেসার কুকারে গ্যামো মারার ধান্দা।

চিকনা এমন ভাবে কথাটা বললো সবাই হেসে গড়া গড়ি যায়।

মিত্রা হাসতে হাসতে আমার গায়ে ঢলে পরলো, সেটা কিরে বুবুন?

বুঝলি না।

মিত্রা মাথা দোলায় না।

অনি একবারে না। তাহলে আমি এ্যান্টাসিড খেয়ে মরে যাবে।

মরো না মরো। নীপা দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলে উঠলো।

ওরকম করে বলিস না, দাঁত ভেঙে যাবে।

সবাই হাসে।

কিরে বুবুন। বলনা চিকনার কোড ল্যাঙ্গুয়েজ গুলো।

প্রেসার কুকার হচ্ছে প্রেসটিজ। প্রসটিজ প্রেসার কুকার আছে না—

ওরা হেসে এ ওর গায়ে ঢলে পরে।

গ্যামো হচ্ছে গ্যামাকসিন।

অনিদা তুমি থাম। মিলি বললো।

এ্যান্টাসিড হচ্ছে ম্যাটাসিড। ধানে পোকা লাগলে দেয়। ওটা বিষ।

চিকনা এতো জানে। মিত্রা এমন ভাবে বললো সবার অবস্থা সঙ্গীন।

এই তো ম্যাডাম। আমি সেই পুকুর ঘাটের কেশটা এবার দেখাই।

মিত্রা আমার হাতটা ধরে বললো ওকে তুই থামতে বল।

আমি বললে ও থামবে। সবে তো শুরু। এখনও সঞ্জু আসেনি। এলে হাতাহাতি হয়ে যেত।

বিড়ি খাওয়ার কেশটা।

দেখলি চিকনা দেখলি, মিত্রা আবার মনে করিয়ে দিল।

কি আছে বললে, তোর প্রেসার কুকার ফেটে যাবে না তো। অনাদি বললো।

আমি কাঞ্চন কেস বলবো।

বলবি।

অনিদা বলো এটা শোনা হয়নি। নীপা বললো।

দেখো কিরকম ছত্তিশ পাটি বের করেছে। খুব সখ না—চিকনা বললো।

ওখানে চলো ছত্রিশ পাটি দেখাব।

ওখানে কেন এখানে দেখা।

উঠবো।

ওঠা উঠি কেনো, বসে বসে তো বেশ হচ্ছে।

সবাই হাসে।

বুবুন বল না।

আমি চিকনার দিকে তাকাই।

চিকনা মাথা নীচু করে বললো, বল। ম্যাডাম যখন শুনতে চাইছে।

অনাদি হেসে ফললো।

তোর মাটি কাটার গল্প বলি।

বল না। পঞ্চায়েত হবো দুটো পয়সা কামাব না তা হয়—

শুনলি শুনলি অনি।

আর আমি ধানে দুটাকা বেশি চাইলে, বলে গ্রামসভা বসাব।

এটা অন্যায়, এটা আমি মানতে পারছি না। অনাদি এটা ঠিক নয়, ও ওর ব্যাবসা করবে। সে দুটাকা বেশি নিক আর কম নিক। আমি বললাম।

সেটা খাতায় লেখে না। গেঁড়ায়। ওটা বলছো না তো। নীপা চেঁচিয়ে উঠলো।

তুই আমাকে তেল কেনার পয়সা দিস। আমি যে এদিক ওদিক যাই। বিড়ি খাওয়ার পয়সা দিস।

তেল না থাকলে তুমি ইসলামভাই-এর বাইক নিয়ে যাও। তুমি ওই পাড়ায় কি করতে যাও। অনিদাকে বলবো।

চিকনা ছুটে গিয়ে নীপার পা ধরে।

তোর পায়ে ধরি তুই বলিস না। তুই যে ঘর শত্তুর বিভীষণ জানতাম না।

সবাই জোরে জোরে হাসছে।

আমি ঘর শত্রু বিভীষণ। দাঁড়াও তোমায় দেখাচ্ছি।

কিরে নীপা বলতো একটু শুনি গিয়েই গ্রামসভা বসাব। অনাদি বললো।

তুই আবার আগুনে ঘি ঢালছিস কেন। চিকনা অনাদির দিকে ঘুরে বললো।

মিত্রা হেসে আমার কোলে মাথা দিয়েছে।

বুবুন একিরে, কি থেকে কি বেরচ্ছে।

দাঁড়া আরও বেরবে।

চিকনা আমাদের দুজনের কাছে এসে বসলো। বিশ্বাস কর অনি সব মিথ্যে। তুই গেলে আমি তোকে সব বলবো।

মিনতিকে খুঁজে পেয়েছিস। আমি চোখ নাচিয়ে বললাম।

বাসু মুচকি মুচকি হাসছিল। এবার জোরে হেসে উঠলো।

বিকেল হলেই সঞ্জুদা, চিকনাদা নেই। কোথায়? ফোন করো, শুধু বলবে আসছি দাঁড়ানা। নীপা বললো।

এই কেশটা কতোদিন চলছে নীপা।

বলোনা বলো, বলতে পারছো না। নীপা চিকনার দিকে তাকাল।

চিকনা মুচকি মুচকি হাসছে।

আমি এখানে আসার পর থেকে বেশি হচ্ছে।

হ্যাঁ, আমি সব খবর রাখছি। সঞ্জুদা পালের গোদা।

তুই বিশ্বাস কর অনি, নীপা মিছে কথা বলছে।

ঠিক আছে সঞ্জু আসুক।

তুমি কাকে বলবে, সঞ্জুদাও ওইরকম। তুমি স্যারকে বলে আসার পর, মিনতিও এখন রেগুলার এ্যাপো করছে।

ওরে বাবা, তুই থাম নীপা। আমার হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেল। মিত্রা বললো।

কি বুঝছো টিনা। আমি টিনার দিকে তাকালাম।

সব বুঝেছি অনিদা, তুমি আর খুঁচিও না। পেটে খিল ধরে গেছে।

চিকনা আমার আর মিত্রার সামনে বসে। আমি চিকনার দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকালাম।

তুই বিশ্বাস কর অনি।

মিনুকে তুই তুলে আনিস বাড়ি থেকে?

হ।

এনে সঞ্জুর কাছে গ্যারেজ করে দিস?

হ।

তারপর দুজনকে পাহারা দিস?

চিকনা লজ্জা পেয়েগেল, মাথা নীচু করে ঘাড় দোলাল।

আবার বাড়িতে দিয়ে আসিস?

চিকনা হাসে।

সঞ্জু তোকে তেলের পয়সা দেয়?

না।

কেন?

ডিউ স্লিপ।

সবাই হাসছে।

মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুই ওর পেট থেকে কথা বার করে ফেললি?

ওর প্রেম করার দম নেই, মেয়ে দেখলে দশহাত দূর থেকে পালায়।

একমাত্র তুই বুঝেছিস, নীপাটা কিরকম করলো বল। চিকনা বললো

তুই ওকে বলিসনি কেন?

ও স্যারকে বলে দেবে।

নীপা তোকে মাইনে দেয় না?

শুধু খাটিয়ে মারে বলে কিনা ব্যবসা মন্দা।

ঘোর অন্যায়। আমি যে নীপাকে বলেছিলাম।

প্রতিদিন কুড়িটাকা দেয়। বাবাকে গিয়ে টাকা দিয়ে আসে। আমাকে দেয় না।

তুমি টাকা ওড়াবে।

দেখছিস কিরকম টট্টরি।

আমি, মিত্রা হাসি।

ম্যাডাম তুমি বলো না নীপাকে প্রতিদিন পাঁচটা টাকা বেশি দিতে।

মিত্রা কোনও কথা বলে না শুধু হাসে।

দেবাদের গাড়িটা গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলো।

অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো, বাবুরা এলেন।

আবার হাসিতে সকলে ফেটে পরলো।

দেবা গেট দিয়ে ঢোকার মুখেই আমাদের দেখেছে। দেখলাম পেছনের সিটে আর একজন বসে। মিত্রাকে একটা কনুইয়ের খোঁচা মারলাম।

কিরে!

দেখ পেছনের মালটাকে চিনতে পারিস কিনা?

মিত্রা ভালো করে দেখে আমার দিকে তাকিয়ে ঘার দোলাল, চিনতে পারছে না।

দেবা, মৈনাক নামলো। নির্মাল্যকে বললো এগুলো ভেতরে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা কর।

দুজনে কাছে এলো।

উঃ কি টাফ জব। দেবাশিস বললো।

অদিতি মুচকি মুচকি হাসছে।

হাসছো কেন অদিতি?

অনিদা বলেছে ডিম ফুটিয়ে মুরগি তৈরি করে আনলে।

ও তো বলে খালাস।

মৈনাক একবার আমাকে দেখে একবার মিত্রার দিকে তাকায়।

আমি মৈনাকের দিকে তাকিয়ে হাসলাম।

শালা হারামী চোখ মেরে মেরে আমার রেটিনা শুকিয়ে গেল, আর তুই মালটাকে তুলে নিলি।

টিনা, মিলি মনে হয় আগে কখনও দেখেনি। ওরা ঠিক বুঝতে পারছে না।

ওই জন্য তোর চোখে কাঁচের গ্লাস, আমি বিন্দাস। আমি বললাম।

মৈনাক কাছে এসে উবু হয়ে বসলো।

মিত্রাকে পুরো আপেল লাগছেরে অনি।

কবে কিসমিস ছিল।

দেখ অনি দেখ, মিত্রা আমাকে চিনতে পারছে না। কিরকম ভাবে তাকিয়ে আছে।

তোর পরিচয়টা ছোট্ট করে দিই মনে পড়ে যাবে।

মিলি ইশারা করে বললো, বলো বলো।

তুই ওদের চিনিস।

মৈনাক পেছন ফিরে ওদের দেখলো।

না।

আগে তোর পরিচয় দিই, তারপর ওদেরটা দেব।

তোর কি এখনও বয়স হয়নি।

কোথায় হলো?

মৈনাক মুচকি মুচকি হাসছে।

দেখ সবাই তোর পরিচয় দিতে বলছে।

তোকে অলংকার ঝাড়তে হবে না।

সবাই মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসছে।

দেবা তুই বলে দে।

ওতো আর একজন। মৌনাক বললো।

কেন!

ফোন করে বললো, অনির বিয়ে চলে আয়। তারপর ফোন অফ।

আমি ফোন করি পাই না। তারপর কোনক্রমে পেলাম। বললো, নিউমার্কেটে মাংসের বাজার।

ভেবে দেখ, অনির বিয়ে নিউ মার্কেটের মাংসের বাজার। কিরকম খার লাগে।

সবাই হাসছে।

মিত্রার দিকে তাকালাম, আসতে করে বললাম, তোর মনে পরে সেই প্যান্টের চেন খোলা, বাচ্চাটা খামচে ধরেছে।

ভ্যাট। মৈনাক বলে উঠলো।

মিত্রা হাসতে গিয়ে বিষম খেলো। মিলি, টিনা ছুটে এলো।

কি হলো মিত্রাদি!

মিত্রা হাত দেখাচ্ছে। তোরা থাম থাম। আমি ঠিক হয়ে যাব।

সবাই এগিয়ে এসেছে।

ওরে বাবারে আমি আর হাসতে পারছি না।

মিত্রা ওদের নিয়ে একটু তফাতে সরে গেল। মৈনাক আমার পাশে বসলো।

মৈনাক হাসছে। বাচ্চা বাচ্চা মেয়েগুলোর সামনে প্রেসটিজ ঝুল করে দিস না।

আমরা যখন থার্ড ইয়ার ওরা তখন ইলেভেন টুয়েলভ।

সব আমাদের কলেজের!

সবাই।

খালি ওটা নয়। ওটা এবার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হবে। নীপার দিকে আঙুল তুলে বললাম।

একটা অট্টহাসির রোল উঠলো মিত্রাদের ওখান থেকে।

কিরে তোদের আবার কি হলো!

আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। মিত্রা হাসতে হাসতে চোখ টিপলো।

ঝেড়ে দিয়েছিস?

মিত্রা মাথা দোলাচ্ছে।

মৈনাক বিষ্ময়ে আমার দিকে তাকাল।

তুই মাইরি এখনও সেরকম আছিস। শোন আমি আসার পথে নীরুকে ফোন করলাম, বলে আমরা বেরিয়ে পড়েছি। ওরা এসে পরলো বলে।

তুই তো পুরো কেলো করে দিলি। আমি বললাম।

কিরে বুবুন। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।

মৈনাক আমার দিকে তাকাল, তোকে মিত্রা এখনও সেই নামে ডাকে।

হাসছি। মৈনাক, নীরুকে ফোন করেছিল, ওরা এসে পরলো বলে।

ওরা এতো জোর হই হই করে উঠলো ভেতর থেকে বড়োমা, ছোটোমা, বৌদি বেরিয়ে এলো।

মিত্রারা ছুটে চলে গেল।

চল ওঠ। দেবাশিস বললো।

কোথায়!

বড়োমা, ছোটোমার সঙ্গে পরিচয় করবি না।

দেবা মৈনাককে ছোটোমাদের সঙ্গে পরিচয় করাবার জন্য টেনে নিয়ে গেল।

চিকনা কাছে এসে বললো, গুরু কেশটা কি বলতো একটুখানি শুনেছি।

কিসের!

ওই যে তোর নতুন বন্ধু মৈনাক না কি যেন নাম।

আমি হেসে ফেললাম।

আরে বল না, এখুনি সব চলে আসবে।

চিকনা ঠিক বলেছে অনি। আমাদের শোনা হয়নি। অনাদি বললো।

আমি হাসছি।

হাসিসনা বল না।

দেখলাম মৈনাককে নিয়ে ওরা ভেতরে যাচ্ছে।

একটা সিগারেট দে।

একটা না পুরো প্যাকেটটা দিচ্ছি।

চিকনা উঠে দাঁড়িয়ে তারাহুড়ো করে পকেট থেক প্যাকেটটা বার করে দিল।

বল বল।

আমি হাসছি।

হাসিসনা বল না।

আমি একটা সিগারেট ধরালাম। হুস করে ধোঁয়া ছেড়ে বলতে আরম্ভ করলাম।

সেদিন বসিরহাটে মৈনাকের এক আত্মীয় বাড়ি গেছিলাম। ফিরছি বিকেলের বাসে। থ্রিসিটে বসেছি। জানলার ধারে একজন মহিলা, কোলে একটা বাচ্চা। ভদ্রমহিলার বয়েস বেশি নয়। কুড়ি/বাইশ হবে। আমি মৈনাককে বললাম, মাঝখানে বসবি না ধারে।

ব্যাটা গালাগাল দিল। একটু ছোঁয়া পাব তাতেও তোর হিংসে হচ্ছে।

মরগে যা আমি তো ঘুমবো।

মাঝখানে মৈনাক সাইডে আমি। বাসটা ফাঁকা ফাঁকা। অনেকটা জার্নি। তাই বাসে ওঠার আগে দুজনেই তলপেট খালি করে নিলাম। এবার গিয়ে সিটে জমিয়ে বসলাম। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়েছে। বাসের ভেতরে একটা মাত্র লাইট জ্বলছে। দুজনেই ঘুমিয়ে পরেছি।

হঠাৎ মৈনাক হাঁই হাঁই করে চেঁচিয়ে উঠলো। ঘুম ভেঙে গেলো।

কিরে কি হয়েছে!

মৈনাক চুপ।

ভদ্রমহিলা যিনি জানলার ধারে বসেছিলেন তিনি মুচকি মুচকি হাসছেন। বাচ্চাটা ভদ্রমহিলার কোলে বেশ ছটফট, ছটফট করছে। আধা অন্ধকারে দেখলাম মৈনাক নেন্টুর জায়গাটা ধরে বসে আছে।

আমি ভাবলাম ভদ্রমহিলা কি ওর নেন্টু টিপে দিল নাকি। মৈনাক একবার ভদ্রমহিলার দিকে তাকায় একবার বাচ্চাটার দিকে তাকায়। বাচ্চাটা তখনো হ হ করছে। চুপ করে গেলাম।

বাস থেক এসপ্লানেডে নেমে মৈনাককে জিজ্ঞাসা করলাম, কিরে কি হয়েছিল তখন? তুই চেঁচিয়ে উঠলি কেন? ভদ্রমহিলা কি তোর গোপন জায়গায় হাত দিয়েছিল?

মৈনাক গম্ভীর। অনেক বার জিজ্ঞাসা করার পর বললো, কি হারামী বাচ্চারে।

আমি বললাম, কেন! কি হয়েছে?

শালা আমার নেন্টু ধরেছিল।

তারমানে!

আজ জাঙ্গিয়া পরিনি। এতটা জার্নি ভেবেছিলাম পাছা গরম হয়ে যাবে।

তুই খালি পাছায় প্যান্ট পরেছিলি!

হ্যাঁ।

চেন খোলা ছিল!

হবে হয়তো।

চুল ধরে খামচা মেরেছে!

হ্যাঁ।

ওই জন্য তুই চেঁচিয়ে উঠলি!

মৈনাক মুখ ভেটকে বললো, কতগুলো চুল ছিঁড়েছে জানিস। শালা….

আমাকে আর শেষ করতে হলো না। ওরা তিনজনে হাসতে হাসতে মাটিতে শুয়ে পরলো।

বাসু হাসতে হাসতে বলে উঠলো ওরে অনি আমরা কি জিনিষ তোর এই বন্ধুরা এক একজন এক এক দিকে দিকপাল।

চিকনা হাসতে হাসতে বেদম কেশে উঠলো।

মিত্রা আবার ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে।

ছুটে আমার কাছে এলো।

ও হাসছে।

তুই এদের বলেছিস নিশ্চই।

কি করবো শুনতে চাইলো।

চিকনা তখনো খং খং করে কাসছে।

সত্যি, মৈনাকটা কিরে।

ম্যাডাম আপনি থামুন, আর বলতে হবে না। বাসু বলে উঠলো।

ফোনটা বেজে উঠলো।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/4k1M7d9
via BanglaChoti

Comments