কাজলদিঘী (৪৫ নং কিস্তি)

“কাজলদীঘি”

BY- জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

৪৫ নং কিস্তি
—————————

চাইল্ড স্পেশালিস্ট কিরে, ওর এখন বেশ ভালো নামডাক হয়েছে। খুব ভালো ডায়গোনেসিস করতে পারে। ডাক্তারদাদা বললো।

ছোটোমা আমার মাথার চুলটা ঘেঁটে দিয়ে স্নেহের হাসি হেসে বললো, বিচ্চু।

এবার মর্গেরটা বল। মিত্রা বললো।

পারিশ্রমিক।

সবাই হেসে ফেললো।

দেবো। আগে বল।

ফেলো কড়ি মাখো তেল। তুমি কি আমার পর।

আবার সকলে হাসে।

আবার আগামী কাল। একদিনে সব হয়ে গেলে বদহজম হয়ে যাবে।

আমি যে থাকব না। সুরো বললো।

তোকে পরে বলবো। এর থেকেও ভালো করে।

খাওয়া পর্ব শেষ। দামিনীমাসি আমার দিকে তাকায় আর মুচকি মুচকি হাসে। সবাই কম বেশি হাসছে। এরই মধ্যে ইসলামভাইকে ইশারায় বললাম, তুমি একবার ওপরে এসো।

আমি ওপরে নিজের ঘরে এলাম। মানিপার্টস থেকে চাবিটা বার করে আলমাড়িটা খুললাম দেখলাম বেশ অগোছালো। তার মানে ঘাঁটা ঘাঁটি হয়েছে। চোরা ড্রয়ারটা খুললাম। মিত্রার জিনিষ গুলো দেখলাম ঠিক আছে। এখানে হাত পরেনি। ফাইলটা মিত্রাকে কালকে রাখতে দিয়েছিলাম, ওটা কোথায় রেখেছে? সকাল থেকে কারা কারা এসেছিল কিছুই বুঝতে পারছি না।

কিরে আসবো। ঘরের দরজায় ইসলামভাই।

এসো।

বন্ধ করবো।

করো।

আমি আলমাড়ি বন্ধ করলাম।

ইসলামভাই একটা সিগারেট বার করে আমার হাতে দিল।

আমরা দু-জনে জানলার ধারে এসে দাঁড়ালাম।

কি হয়েছে বলো। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

মামনি তোকে সব বলবে।

তাহলে তোমায় ডাকলাম কেন।

কাল রাতে তুই সবাইকে ম্যাসাজ করেছিলি। কাল কেউ আসতে পারেনি। তারওপর কাগজে আজ নিউজ বেরিয়েছে তোর নামে। সবাই একটু ভয় পেয়েছে, তোর বুঝি কিছু হয়েছে। সকালে তোর শরীরটাও খারাপ হয়েছিল। একেবারে সোনায় সোহাগা।

অনিমেষদার সঙ্গে তোমার পরিচয় হয়েছে?

হ্যাঁ।

কি বললো?

সকাল থেকে ঝাড় খেতে খেতে প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। কাউকে বোঝাতে পারিনা, আমার থেকে তোর ক্ষমতা বেশি।

হাসলাম।

হাসিসনা, সকালে পার্টির সব নেতারা এসেছিল। বলতে পারিস কোর কমিটি।

সব্বনাশ!

অনিমেষদা সকলকে ডেকে নিয়ে এসেছিল। তোকে দেখে সকলে চলে গেছে। শুধু অনিমেষদা, বিধানদা ছিল, দেখলি তো, তোর সঙ্গে দেখা করে গেল।

আবিদ ফিরে এলো কেন?

আমি কি করবো। সকাল বেলা অনিমেষদার মূর্তি দেখিসনি। তোকে দেখার পর যেন আগুন হয়ে গেল। গম্ভীর হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সেই থেকে নীচ ওপর করে যাচ্ছে। তোর জ্ঞান ফেরার খবর পেয়ে একটু স্বস্তি। মামনিকে সব সময় পাশে নিয়ে ঘুরেছে। ওকে আর ওপরে আসতে দেয়নি।

আমিও সমানে নীচে রয়েছি।

আমার কাছ থেকে সমস্ত জানলো। আমি কিছু লুকোইনি। দামিনীর সঙ্গে আলাদা করে কথা বললো। আমাকে বললো আবিদকে ডেকে পাঠান। অমান্য করি কি করে। আবিদকে সমস্ত ঘটনা বললাম। তোর শরীর খারাপের কথা তখন চেপে গেছিলাম। এখানে এসে সব জানার পর ওকে ধরে রাখা দায়।

অনিমেষদা রতন, নেপলা, আবিদকে, আলাদা করে ডাকল। রতন, নেপলা তবু কিছু বলেছে। আবিদ সরাসরি বলে দিয়েছে, অনিদার পার্মিশন ছাড়া একটা কথাও বলবো না। এতে আপনারা আমাকে জেলে ঢোকাতে পারেন, মেরে ফেলতে পারেন, আপত্তি নেই। অনিদা আমার কাছে সব।

আমি আবিদের কথা শুনে অবাক। তুই কার কাছে কি বলছিস!

আবিদের কথা ছাড়, তোর অর্ক, সায়ন্তন, দ্বীপায়ন, সন্দীপ কেউ মুখ খোলে না। তারপর মামনি বললো। তোমরা বলো আমি বুবুনের সঙ্গে বুঝে নেব। তখন সবাই একে একে বললো। তাও অনিমেষদার বিশ্বাস হচ্ছে না।

তখন অনিমেষদার মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। তারপর বিধানদাকে ফোন করলো। বিধানদা এলো। একে একে সবাই। আবিদ যতক্ষণ ওখানে ছিল ততক্ষণ প্রচুর সাদা পোষাকের পুলিশ ওই বাড়ি ঘিরে ছিল। একটা মাছিও গলতে পারবে না।

অর্ক।

বলতে পারবো না। ওদের সঙ্গে দরজা বন্ধ করে কথা বলেছে অনিমেষদা। তোর ল্যাপটপ দেখেছে। দ্বীপায়ন অপারেট করেছে।

বুঝে গেছি। মুখার্জীর লোক এসেছিল?

খাম দিয়ে গেছে। সিল করা। খোলা হয়নি। অনিমেষদা বলেছে তুই খুলবি। তবে তোর ফোন থেকে নম্বর নিয়ে মুখার্জীর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছে।

ঠিক আছে তুমি যাও। ওদিকটা সামলাও। মিত্রাকে একটু ডেকে দাও। তোমার ব্যবসা?

ডকে উঠে গেছে। ভাবলাম সকাল থেকে বেরবো। তোর এই অবস্থা। তারপর মানুষের ঢল। অনিমেষদার স্ত্রী সুতপা বৌদির কি কান্না বড়দিকে জড়িয়ে ধরে। ঠায় তোর পায়ের কাছে বসে রইলো। আর ডাক্তারদাদাকে বার বার বলছে দেখুন না ও ঠিক আছে কিনা। তখন তোর ঠিক কি হয়েছিলো বলতো?

বলতে পারবো না।

তোর ওপর মনে হয় কেউ ভর করেছিল।

যতো সব বাজে কথা।

অনিদা ও অনিদা। মিলির গলা পেলাম।

ওই দেখো সব চলে এসেছে। দরজা খোলো আগে।

ইসলামভাই দরজা খুললো।

সবাই ঘরের মধ্যে এলো। মিত্রা হাসছে।

কিহলো তুই হাসছিস কেন?

প্রথম রাউন্ড ভালই হলো বল।

ইসলামভাই হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।

শোনো আমরা এখন যাচ্ছি। মিলি বললো।

কেন! তোমাদের সঙ্গে কথাই বলা হলো না।

বাবাঃ তুমি যা ব্যস্ত তোমাকে আজ পাওয়া যাবে না। মিত্রাদি বলে দিয়েছে কাল থেকে অফিসে জয়েন করতে। টিনা বললো।

টাকা পয়সার কথা জিজ্ঞাসা করেছো?

না দিলেও চলবে।

ফ্রি সার্ভিস?

হ্যাঁ।

তুমি একা না তিনজন।

আমরা তিনজন।

তোমাদের অফিস।

সকালে রিজাইন দিয়ে চলে এসেছি।

সব্বনাশ! আমার এ্যাডের কি হবে?

তুমি শুধু এ্যাড এ্যাড করছো কেন বলো তো? আমি, মিলি, অদিতি বুঝে নেব।

মিত্রার দিকে তাকালাম, মিটি মিটি হাসছে। ব্যাপারটা এরকম কিরকম দিলাম বল।

ওদের কোথায় বসাবি?

আমার ঘরে বসবে। সব ফাইল পত্র সনাতন বাবুকে রেডি করতে বলেছি, দেখবো।

ওরা কাল তোর সঙ্গে যাবে, না একা একা?

কাল আমার সঙ্গে যাবে।

হিমাংশুকে ড্রাফট করতে বল।

বলে দিয়েছি।

তাহলে আমার কাজ শেষ। মিত্রা ম্যাডাম আস্তে আস্তে ম্যাম হয়ে যাচ্ছে।

যাচ্ছে মানে তুমি কি বলতে চাও। মিলি ঝগরুটে মেয়ের মতো তেড়ে এলো।

না না মিলি ম্যাডাম ক্ষমা করুণ। আপনারা এখন দলে ভাড়ি।

মাথায় রাখবে কথাটা। কাল থেকে অনেক ঝামেলা করেছো। সব তোলা আছে।

দেবা, নির্মাল্য আমাদের কথা শুনছে আর হাসছে।

দেবা, নির্মাল্যর কি করবি? মিত্রা বললো।

কেনো! ওরাও কি রিজাইন দিয়ে বসে আছে নাকি।

হ্যাঁ। কাল অদিতি, দেবার সঙ্গে ঝগড়া করেছে।

ভেরি ব্যাড।

তুমি না শুনে ভেরি ব্যাড বললে কেন? অদিতি বললো।

তুমি ঝগড়া করেছো বলে। আমরা বুদ্ধিমান প্রাণী, ঝগড়া করবে কেন। বুদ্ধির লড়াইয়ে ঘায়েল করবে একে অপরকে।

সবাই চুপ করে গেল।

দেবা আজ কিছু ভাবতে ভালো লাগছে না। যদি পারি রাতে তোর সঙ্গে ফোনে কথা বলবো। আগামীকাল বরং তুই, নির্মাল্য ওদের সঙ্গেই চলে আয়। বসে কথা বলবো।

ইসলামভাই গেটের সামনে এসে দাঁড়াল।

আবার কি হলো!

অফিসের সব এসেছে।

আমরা যাই বুঝলি। তোকে এখন ধরা যাবে না। দেবাশিস বললো।

আমি হাত দেখিয়ে বললাম, বোস। ঝামেলা করিস না। এদের সঙ্গেও তো একটা মিটিং হবে। থাকতে ইচ্ছে করছে না।

ইসলামভাইয়ের দিকে তাকালাম।

যাও নিয়ে এসো।

ওরে অনেক লোক।

বড়োমা, ছোটোমা মরে যাবে চায়ের ঠেলায়।

মেসিন বসিয়ে দিয়েছি।

বেশ করেছো।

নিয়ে এসো সবাইকে।

মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে পরিতৃপ্তির হাসি হাসছে। সবাই আমাকে দেখছে।

অনিদা সত্যি বোঝাই যাচ্ছে না। তোমার শরীর খারাপ হয়ে ছিল সকালে।

সত্যি কি আমার শরীর খারাপ হয়েছিল?

বলতে পারবো না। যা চোখে দেখেছি তাই বললাম। টিনা বললো।

ওরা সবাই ঘরে এলো। দাদা, মল্লিকদা ওদের সঙ্গে নিয়ে এসেছে। ঘর ভর্তি হয়ে গেল। ওরা মিত্রাকে এসে হাতজোড় করে নমস্কার করলো। কেউ কেউ প্রণাম করতে চাইল। মিত্রা নিল না। দাদাকে দেখিয়ে দিয়ে বললো।

দাদাকে প্রণাম করুণ। দাদা আমাদের গুরুজন।

সার্কুলেশন ম্যানেজার প্রেসের লোকজন ছাড়াও চম্পকদা, সনাতনবাবু এসেছেন।

এ্যাড ডিপার্টমেন্টের আরও চার পাঁচজন।

কিরে তুই ভালো আছিস? চম্পকদা এগিয়ে এলো।

হ্যাঁ।

সকালবেলা যা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি।

টিনাদের দিকে তাকিয়ে। আরি ব্যাশ তোমরাও আছো।

হ্যাঁ চম্পকদা ওদের আটকে রেখেছি। কালকে থেকে এই পাঁচজন আমাদের অফিসে জয়েন করছে। ম্যাডামের রিক্রুট।

দাদা, মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে। ব্যাপারটা এরকম, তুই এটা আবার কি স্কিম করছিস। তোর মাথাটা কি একটুও থেমে থাকবে না!

বাঁচালি। আমি অধস্তন হয়ে কাজ করবো। এই বয়সে আর টেনসন নিতে ভালো লাগছে না। তোকে একটা রিকোয়েস্ট করবো।

বলো।

তুই চাকরিটা থেকে রিটায়ার করাস না।

চম্পকদা এমন ভাবে বললো, সবাই হেসে ফেললো।

ঘরের সবাই ওদের পাঁচজনকে গিলে খাচ্ছে। ভাবটা এরকম, এরা আবার কারা, উড়ে এসে জুড়ে বসলো।

বলুন আপনাদের আসার কারণ।

সুতনুবাবু আমাদের অফিসের লীডার গোছের মানুষ। এই মুহূর্তে প্রেসটা দেখছেন। ওরা সবাই ফুলের বুকে এনেছ। মিত্রার হাতে দিল। উনিই শুরু করলেন।

ছোটোবাবু। কালকের ব্যাপারটা আমাদের কাছে এক অভাবনীয় ব্যাপার। বিগত পঁচিশ বছরে কেউ আমাদের এই ভাবে টাকা দেয়নি। আপনি প্রথম দিলেন।

অন্যায় করলেন সুতনুবাবু।

কেন স্যার!

দেখলেন চম্পকদা আমাকে নাম ধরে ডাকল, আর তুই বলে সম্বোধন করলো। আপনি আমাকে আপনি-আজ্ঞে করছেন। এটা ঠিক নয়। আমি একজন সাধারণ সাংবাদিক। এখনও নিজেকে তাই মনে করি। মিত্রাকে আপনারা ম্যাডাম বলতে পারেন। আমাকে স্যার বলবেন না। স্যার বলতে হলে দাদাকে, মল্লিকদাকে, চম্পকদাকে, সনাতানবাবুকে বলবেন। যারা এই হাউসের সিনিয়ার ব্যক্তি, তারা এই সম্বোধন পাওয়ার যোগ্য, আমি না। এবার বলুন।

সবাই চুপ করে রইলো। কারুর মুখ থেকে কোনও কথা সরে না।

কিরে এই ঘরে এতো ভিড় কেন! এরা কারা?

অনিমেষদা, বিধানদা, প্রবীরদা, অনুপদা, রূপায়নদা ঘরে ঢুকলেন।

সুতনু তুই এখানে! কি করতে এসেছিস?

অনিমেষদা সুতনুবাবুর মুখের দিকে তাকাল।

আমার অফিসের সবাই হকচকিয়ে গেছে। পার্টির দুর্দন্ড প্রতাপ পাঁচ মাথা আমার ঘরে। এই অসময়ে। ওরা ঠিক ঠাহড় করতে পারছে না। ভিড়টা আস্তে আস্তে পাতলা হতে আরম্ভ করলো।

কি চাই তোদের এখানে?

অনিবাবুর কাছে এসেছিলাম।

কিরে তুই ভালো আছিস? বিধানদা এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত রাখলেন।

আমি মাথা নিচু করে সকলকে প্রণাম করলাম।

অনিমেষ ওদের ব্যাপারটা শুনে আগে ভাগাও। বিধানদা বললেন।

তোদের কি কোনও ডিমান্ড আছে।

না।

তাহলে।

কাল অনিবাবু আমাদের কাগজ বিক্রির সমস্ত পয়সা দিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, সকলে সমান ভাগে ভাগ করে নিও। ভাবলাম অনেক টাকা। যদি একটা কো-অপারেটিভ করি ওনার আপত্তি আছে কিনা।

ওর একেবারে আপত্তি নেই। আমি বলছি। টাকাটা যাতে ভালো কাজে লাগাতে পারো সেটা দেখো। গেঁড়াবার ধান্দা কোরো না। ও পছন্দ করে না। যদি আরও কিছু লাগে আমি অনিকে বলে দেব। আর সুতনু তোমাকে দায়িত্ব দিলাম, ওখানে যেন কোনও ঝামেলা না হয়। এটা মাথায় রাখবে।

সুতনুবাবু মাথা নিচু করে বললেন, ঠিক আছে।

ওরা ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে গেল।

কি দেবাশিস। এবার তোমরা অনির সঙ্গে থাকবে তো?

অনিমেষদা, দেবাশিসের দিকে তাকাল।

হ্যাঁ দাদা, আজ সব চুকিয়ে বুকিয়ে দিয়ে এলাম।

বেশ করেছো। তুমি গিয়ে তোমার বৌদিকে একটু ভালো করে চা বানাতে বলো। র চা। বড়দি, ছোটোকে যেন বিরক্ত না করে। আমরা একটু অনিকে নিয়ে বসবো। অমিতাভদা, তুমি, মল্লিক থাকো। মিত্রা।

মিত্রা অনিমেষদার মুখের দিকে তাকাল।

মা তুই নিচে যা। প্রয়োজন পরলে ডাকবো।

মিত্রা দরজার দিকে পা বাড়াল।

শোন মা শোন।

মিত্রা মাথা নিচু করে এগিয়ে এলো।

সকালের কাগজপত্রগুলো কোথায়?

সব দাদার ঘরের আলমাড়িতে।

একবার ভজুটাকে সঙ্গে করে নিয়ে আয়, আমরা দু-জন দেখেছি। এরা দেখেনি। দেখাতে হবে।

মিত্রা বেরিয়ে গেল।

দেখলাম ভজু ছ-টা চেয়ার নিয়ে এসেছে।

এই তো ভজুরাম। চেয়ারগুলো রেখে ছুটে যা, দিদিমনি কাগজগুলো দেবে নিয়ে আয়। আর ওখানে চুপটি করে বসে থাকবি। কাউকে ঢুকতে দিবি না। কেমন।

ভজুরাম দাঁত বার করে হাসলো।

বুঝলে প্রবীর, ছেলেটা এ্যাবনর্মাল। অনির বাহন। এতদিন ওর কোনও চিকিৎসা হয়নি। এখন ডাক্তার সামন্তর ট্রিটমেন্টে আছে। অনি ওকে ওখান থেকে তুলে এনেছে। ও কিন্তু সব বোঝে। ঠিক ঠাক প্রকাশ করতে পারে না।

তাই নাকি! দেখে একেবারে বোঝা যায় না।

অনিকে তোমরা আগে দেখনি।

দেখেছি। আপনার ঘরে আসা যাওয়া করতো। দেখা হলেই ফিক করে হাসতো। ভাবতাম সাংবাদিক।

ও এখনও সাংবাদিক। চিরটাকাল তাইই থাকবে। শুনলে তো নিজের কানে কালকের কাগজ বিক্রির টাকাটা স্টাফেদের দিয়ে দিয়েছে। সুতনু কিন্তু ওই হাউসে আমাদের সংগঠনটা দেখে। কালকের ঘটনা একবার ভেবে দেখ। মালিক হলে পারতো।

সবাই অনিমেষদার কথায় মাথা নিচু করলো।

অমিতাভদা।

দাদা অনিমেষদার দিকে তাকাল।

অর্ক, সায়ন্তনকে একবার পাওয়া যাবে।

ন-টার পর হলে ভালো হয়।

তাই হোক। আমি আজকে এই জটটা খুলে বাড়ি যাব। তাতে মধ্যরাত পর্যন্ত চললেও আপত্তি নেই।

কেন সন্দীপকে একটা ফোন করো না। আমি প্রায় সত্তরভাগ কাজ তুলে দিয়ে এসেছি। যদি ওদের ছাড়তে পারে। তারপর নয় সন্দীপ পড়ে আসবে। মল্লিকদা বললো।

বুঝলে রূপায়ণ এই কটা ছেলে হচ্ছে অনির কোর টিম। অনি ছাড়া এরা মুখ খুলবে না। আমাকে বিধানবাবুকে সকালে যা বলেছে তা হচ্ছে কাঁঠাল খেল পেট ফুললো মরে গেল।

সবার চোখ আমার দিকে।

আরও আছে!

সবাই এ বাড়িতেই আছে। একটা একটা করে ডাকব। দেখতে পাবে।

বড়োমা ঘরে ঢুকলো। হাতে চায়ের পট।

আপনি এলেন কেন! আমি সুতপাকে দায়িত্ব দিলাম।

সবাই আসছে।

দেখলাম একে একে ছোটোমা, দামিনীমাসি, বৌদি ঢুকলো।

অনির জন্য আপনারা সকলে এ বাড়িতে এসেছেন। অনি না থাকলে আপনাদের কাগজে ছবি দেখতাম, টিভিতে দেখতাম। আলাপ কারুর সঙ্গে নেই, তাই যেচে আলাপ করতে এলাম।

এটা বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে গেল। বিধনদা বললেন।

অনিমেষদা তিনজনের সঙ্গে সকলের আলাপ করিয়ে দিল।

রূপায়ণদা, দামিনীমাসির দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি ওনাকে চিনি।

উনি অনির মাসি। অনি ওর জীবনের আঠারো মাস ওনার আশ্রয়ে ছিল। ওই পাড়ায়।

হাউ স্ট্রেঞ্জ! প্রবীরদা বলে উঠলেন।

স্ট্রেঞ্জ নয় প্রবীর। দিস ইজ ফ্যাক্ট। অনির মা, মাসির গায়ে হাত পড়বে, এটা ও সহ্য করতে পারেনি। তাই কালকে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। বলতে পারো ওনারাও টার্গেট ছিলেন। আমি যে বাদ ছিলাম তা নয়। সেটা আজ সকালে ও সেনস্লেস অবস্থায় বলে ফেলেছে। তখন অনিকে ধরে রাখা দায়। আমাদেরই পার্টি কর্মী ওদের গ্রামের পঞ্চায়েত ওর বন্ধু ওরা ধরে রাখল তখন অনিকে।

কি বলছেন অনিমেষদা!

বিধানবাবুকে জিজ্ঞাসা করতে পার।

আমার সব কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে অনিমেষদা। অনুপদা বললেন।

ব্যাপারটা সেরকম। আজ অনির আমার বাড়িতে যাবার কথা ছিল। ওর বৌদিকে নেমন্তন্ন করার জন্য। ও যায় নি আমরা এসেছি।

গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার আমি তোমাদের কথা শুনে ডাক্তারকে ছাড়তে বলি ওকে। ও সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দেয়। ডাক্তারের কীর্তি কাহিনী কাগজে কিছুটা বেরিয়েছে দেখেছো। এবার আরও বেরবে।

আপনি এখুনি একবার রাজনাথবাবুকে ডাকুন। প্রবীরদা বলে উঠলেন।

এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেন প্রবীর। তুমি এখনও সব দেখনি, সব জানোনা।

এটুকু শুনে বিশ্বাস করার কোনও কারন নেই। আমাদের পার্টিতে অন্তর্দ্বন্দ আছে কিন্তু আমরা পার্টির মিটিংয়ে সেটা মিটিয়ে নিই। বাইরের কাকপক্ষী টের পায় না। অনি কিন্তু একা সেই কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছে।

চা খেত খেতে কথা চলছে। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে।

জানো প্রবীর, বড়দি আমাদের পার্টির ছাপান্ন/সাতান্ন সালের কর্মী।

অমিতাভদাও সেই প্রিয়েডের। দাদা মধ্য কলকাতার একটা কলেজের জিএস ছিলেন।

একবার ভেবে দেখ, দাদা ওই প্রিয়েডে ওই রকম একটা কলেজের আমাদের ছাত্র সংগঠনের জিএস, ভাবতে পারো। তাঁদের আশ্রয়ে অনি লালিত পালিত।

অনিমেষদা থামছে না।

সুতপা যেদিন অনিকে ধরে নিয়ে এলো। সেদিন ওর গোঁফ-দাড়ি ঠিক মতন গজায়নি। ও নাকি সুরঞ্জনাকে পরাবে। সুরো তখন ক্লাস থ্রির ছাত্রী। ও ক্লাস টুয়েলভ। ড. রায়ের রেকমেন্ডেশন।

আমি সেদিন হেসেছিলাম। আমার হাসিটা যে কতোবড়ো ভুল তা আজ ও প্রমাণ করে দিয়েছে। তখন থেকে ও আমাদের বাড়িতে যাতায়াত করে। আজও সুরোকে পড়াচ্ছে। ওর নোট লিখে সুরো ফার্স্টক্লাস পেল। সুরো ওকে ভাইফোঁটা দেয়। সেই সুরো কাল থেকে এক গ্লাস জল পর্যন্ত মুখে তোলেনি, অনি কথা না বলা পর্যন্ত।

অনির কি হলো একবার খোঁজ নাও। ড. রায় আমাকে ব্যক্তিগতভাবে তিনবার ফোন করেছেন। তারপর সুতপাকে সঙ্গে করে নিয়ে এখানে এসে হাজির হয়েছেন। অনিকে দেখে উনি বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি, চলে যান।

আজ সকালে এসে যে দৃশ্য দেখেছি সে এক অভাবনীয় দৃশ্য। তখনই বাধ্য হয়ে বিধানবাবুকে ডাকলাম। নিজের চোখে একবার দেখে যান।

আমাকে তো পার্টি মিটিংয়ে তোমাদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

অনিমেষদা একা বলে চলেছে, সবাই শ্রোতা। আমি মথা নিচু করে দাঁড়িয়ে শুনে যাচ্ছি।

বুঝতে পারছি আজ থেকে আমার খেল খতম। টোটাল ব্যাপরটাই অনিমেষদা নিজের হাতে ধীরে ধীরে তুলে নিচ্ছে।

ভজুরাম হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো। পেছনে মিত্রা। একডাঁই কাগজ পত্র। আমার ল্যাপটপ। সব মাথায় করে নিয়ে এসেছে। এমনকি সেই ফাইলটা পর্যন্ত।

ভজুরামের কোনও হেলদোল নেই, আজও ওর পরনে হাফপ্যান্ট হাফ হাতা সার্ট। কাগজপত্র মাথা থেকে খাটে নামিয়ে রাখলো। আমার কাছে এগিয়ে এলো।

অনিদা ডাক্তারদাদা ইঞ্জেকসন দেবে বলেছে।

কেন?

মাথাটা ব্যাথা করছিল বলেছি।

ঠিক আছে দিদিমনি নিচে গিয়ে না বলে দেবে।

ভজুরাম গিয়ে গেটের সামনে বসে পরলো।

কিরে নিচে চল। মিত্রা বললো।

না আমাকে এখানে বসতে বলেছে।

তোকে বসতে হবে না।

অনিমেষদা হেসে ফেললো।

আমি ওকে বসতে বলেছি। ও এখন এই ঘরের পাহাড়াদার।

মিত্রা ফিক করে হেসে চলে গেল।

বুঝলে রূপায়ণ। মিত্রা অনির কলেজের বন্ধু। এক সঙ্গে একই ইয়ারে পড়াশুন করেছে। ওদের দুজনের মধ্যে একটা সম্পর্ক ছিল। তারপর কোনও এক অদৃশ্য কারণে ডাক্তারের সঙ্গে মিত্রার বিয়ে হয়।

বিয়ে বললে ভুল বলা হবে। বলতে পারো মিত্রা, ডাক্তারের ক্যাশ বাক্স। অনি তার বান্ধবীর বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছে। তাতেই এই সব বিপত্তি। আমরা কি এবার অনির পাশে দাঁড়াতে পারি?

অফকোর্স, কেন নয়। প্রবীরদা বলে উঠলো।

এই তুমি আবার ভুল করলে প্রবীর। যাচাই করো, যাচাই করো।

যদি অনি ভুল করে থাকে তাকেও শাস্তি দেবার মনস্থির করো। তুমি নেগেটিভ দিক দিয়ে ভাবছো না কেন? অনিরও কোন স্বার্থ জড়িয়ে থাকতে পারে এর সঙ্গে।

প্রবীরদা চুপ করে গেলেন।

বড়দি এবার আপনারা যান। আমাদের একটু কাজ করতে দিন। আবিদ আর রতনকে একটু থাকতে বলবেন। ওদেরকেও ডাকতে পারি।

ওরা সকলে বেরিয়ে গেল।

অমিতাভদা সিগারেট খেতে পারি। অনিমেষদা অনুমতি চাইলেন।

হ্যাঁ হ্যাঁ খাও। মল্লিক আমার প্যাকেটটা একটু নিয়ে আয়।

এখান থেকে নিন। অনি একটা এ্যাসট্রে দে।

অনিমেষদা আমার দিকে তাকাল।

দাদার ঘরে আছে।

অনিমেষদা ভজুকে ডেকে এ্যাসট্রে আনতে বললো।

ভজু লাফাতে লাফাতে চলে গেল।

আগে অনির কথা শুনবে না। কাগজ দেখবে।

একটা কাজ করলে হয় না অনিমেষদা। প্রবীরদা বললো।

অনিমেষদা প্রবীরদার দিকে তাকাল। বলো।

রাজনাথকে ডেকে পাঠান। ওরও শোনার দরকার আছে। সামনা সামনি সবার কথা শুনি। নাহলে ও অস্বীকার করতে পারে। বলতে পারে ওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তারপর ওকে শোকজ করা হোক। কি উত্তর দেয় দেখা যাক। তারপর সাসপেন্ড। পার্টি সদস্যপদ বাতিল।

কথাটা তুমি ঠিক বলেছো। কালকে রাজনাথের ওপর একটা আর্টিকেল বেরবার কথা ছিল অনিদের কাগজে। যার কপি অনি ওকে জেরক্স করে পাঠিয়েছিল রেজিস্টার পোস্টে। তার কপি এখানে আছে।

লেখাটা যে রাজনাথবাবু পেয়েছেন তার ডকুমেন্টসও আছে। তারপরই কিন্তু এই ঘটনা। আমার একটাই দুঃখ, তোমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তোমরা তা ঠিক ঠিক ভাবে পালন করনি।

প্রবীরদা মাথা নিচু করে রইলো।

বিধানবাবু তোমাদের ওপর নির্ভরশীল। তোমরা ভুল রিপোর্ট দিলে উনি কি করবেন।

প্রবীরদা চুপ করে আছে।

ওই জোনটা তুমি হ্যান্ডেল কোরছো। তোমার আরও বেশি শতর্ক হওয়া উচিত ছিল।

প্রবীর তুমি ওকে ঘার থেকে নামাও। রূপায়ণদা বললেন।

নামাব কি করে! ওখানকার সংগঠনটা নষ্ট হয়ে যাবে।

তা বলে পার্টির ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে এটা কি তুমি চাও। বিধানদা বললেন।

আমাদেরও ওপর তলায় জবাবদিহি করতে হবে।

অনির কাছে যা ডকুমেন্টস আছে তাতে ও আজ না হোক কাল রাজনাথকে শেষ করবেই। আমি আজ আটকে রেখেছি। কাল পারবো না। এটা যদি ভোটের আগে হয় তুমি বিরোধী পক্ষকে সামলাতে পারবে?

প্রবীরদা অনিমেষদার দিকে চমকে তাকালেন। চোখে বিষ্ময়।

এই ফাইলটা অনি গত দশবছর ধরে তৈরি করেছে। শুধু রাজনাথ বললে ভুল হবে। আমাদের আরও অনেক পার্টি কর্মী এতে জড়িয়ে আছে। উইথ ফটো এবং ডাটা। তুমি মিথ্যে বলবে কি করে। সকালে অনেক কষ্টে এই ফাইলটা আমি মিত্রার কাছ থেকে দেখেছি। কয়েকদিন আগে মল কেশটা তুমি দেখেছ, সেদিনই আমাদের বোঝা উচিত ছিল, ঘটনা কোন দিকে মোর নেবে, তোমায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তুমি গা করোনি।

প্রবীরদা ডাঁই করা কাগজ থেকে ফাইলটা টেনে নিলেন। অনিমেষদা আমার দিকে তাকালেন।

তুই একটু বাইরের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়া। একটু পরে ডাকছি।

আমি গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে এলাম। সোজা চলে এলাম ছোটোমার ঘরের সামনে। এদিকটা অন্ধকার। নিচে খুব হই চই হচ্ছে। টিনা, মিলি, অদিতিদের গলা পাচ্ছি। তারমানে ওরা এখনও যায়নি। নির্মাল্য আর টিনার গাড়িটা বাইরের বাগানে। একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে। পাবো কোথায়? মিত্রাকে ফোন করলাম।

বল। খুব নিচু স্বর।

ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলি?

সবাই জানতে পারবে।

দেবার কাছ থেকে একটা সিগারেট নিয়ে ছোটোমার ঘরের কাছে একটু আসতে পারবি।

যাচ্ছি দাঁড়া।

ফোনটা পকেটে রাখলাম। আগামী শুক্রবার পূর্ণিমা। চাঁদটাকে থালার মতো লাগছে। কিন্তু তার আলো ততটা পরিষ্কার নয়। ফ্যাকাশে। আমগাছে নতুন বোলের গন্ধে চারদিক ম ম করছে। মাঝে মাঝে পাখির ডানার ঝটপটানি শুনতে পাচ্ছি।

কিরে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছিস?

সিগারটটা আমার দিকে এগিয়ে দিল।

কার থেকে নিলি?

ইসলামভাইয়ের কাছ থেকে।

আমার দিকে তাকিয়ে।

বললি না।

কি।

এখানে দাঁড়িয়ে কেন?

অনিমেষদা ঘর থেকে বার করে দিয়েছে। কোর কমিটির মিটিং চলছে। পরে ডাকবে বলেছে।

একটা চুমু খাব তোকে?

কেন।

তোকে দারুণ মিষ্টি লাগছে।

পেছন দিকে তাকা। ভজুরাম ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

মিত্রা পেছন ফিরে একবার তাকিয়ে ফিক করে হেসে উঠলো।

অন্ধকার দেখতে পাবে না।

শকুনের চোখ, জানিস না। নিচে সব কি করছে?

তোর গল্প হচ্ছে। তোকে অনিমেষদা কি জিজ্ঞাসা করলো?

এখনও আমার ইন্টারভিউ শুরু হয়নি, হবে। এখন ফাইল দেখা শুরু হয়েছে।

তোর সব অরিজিন্যাল আমার কাছে, ওখানে সব জেরক্স আছে।

ওই ফাইলে সব অরিজিন্যাল ছিল!

সন্দীপ তোকে জানায়নি। অরিজিন্যালগুলো অন্য ফাইলে রেখে জেরক্স গুলো রেখে দিয়েছে। তুই জানতে পারবি। আজ সকালে ভয়ের মারে অরিজিন্যাল ফাইলটা আমাকে দিয়ে গেছে।

কি শয়তান দেখ।

সব তোর মতো হয়ে যাচ্ছে।

হাসলাম।

অনিমেষদা আমাকে সকালবেলা জিজ্ঞাসা করলো, মামনি অরিজিন্যাল কোথায়? আমি বললাম জানি না। বুবুন জানে। ব্যাশ চুপ।

কোথায় রেখেছিস?

আলমাড়িতে।

অর্করা কি বলেছে রে?

শুধু গল্প বলেছে। তোর মোবাইলের ম্যাসেজের কথা কিছুই বলেনি।

তুই।

আমি চুপচাপ।

সন্দীপ।

গোবেচারা মুখ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর বললো আমি এর বিন্দু বিসর্গ কিছুই জানি না। অনি রাত্রিবেলা রিপোর্ট লিখে দিল। আমি কম্পোজ করে ছেপে দিলাম।

শুয়োরটার কথা জিজ্ঞাসা করেনি?

বলেছে কেউ চেনেই না। সায়ন্তন মুখের ওপর বলে দিয়েছে, কোনও ইমেজ দেখাতে পারবো না অনিদার পার্মিশন ছাড়া।

তুই কালকে ওকে আমাশা রুগী বলেছিস? মিত্রা হেসে ফেললো।

হ্যাঁ।

বেচারা সবার সামনে রাগের চোটে বলে দিয়েছে। অনিমেষদা, বিধানদার সে কি হাসি।

দ্বীপায়ন কি তনুর পাঠান ইমেজগুলো দেখিয়েছে।

হ্যাঁ। ও তোকে বলতে ভুলে গেছি। তনু বেশ কয়েকবার ফোন করেছে। একবার দাদার সঙ্গে বাকি আমার সঙ্গে কথা বলেছে। ও মনেহয় শনিবার আসছে। সঙ্গে আরও অনেক কিছু নিয়ে আসবে। ও বলেছে মিত্রাদি তুমি একেবারে ভাববে না। অনি ছেড়ে দিলেও আমি সারা পৃথিবীতে রাষ্ট্রকরে দেব ওর গুণকীর্তন। জানিস তনু খুব কাঁদছিল।

টিনারা বাড়ি গেল না?

থাকবে। মিলি, টিনা থাকবে। দেবা চলে যাবে, কাল সকালে আবার চলে আসবে।

শোবে কোথায়?

তোকে ভাবতে হবে না, আমি তুই একসঙ্গে শোব।

তোর বাড়ির খবর নিয়েছিলি?

নিয়েছি মানে! কালকে একবার ফোন করেছিলাম। সকালে বুড়ীমাসি এসে হাজির। তুই রবীনের ফোনেও ম্যাসেজ পাঠিয়েছিস! সকালে ম্যাসেজ দেখে বুড়ীমাসিকে নিয়ে হাজির। তোকে ওই অবস্থায় দেখে সে কি কান্না। শয়তানটার শ্রাদ্ধ শান্তি করে তবে শান্তি। কোনও প্রকারে বাড়ি পাঠিয়েছি।

অনিমেষদা জেনেছে?

বুড়ীমাসির পেট থেকে অনেক কিছু বার করেছে।

অনিদা। ভজুরাম চেঁচিয়ে ডাকল।

যা আমার ডাক পড়েছে। বড়োমাকে বল না কিছু খাবার পাঠাতে। খিদে পেয়েছে।

বলছি। তুই যা। সাবধান।

হাসলাম।

ঘরে ঢুকেই সবার চেহারা লক্ষ করলাম। সবাই বেশ উত্তেজিত। বিশেষ করে প্রবীরদার চোখ-মুখ লাল। বুঝলাম সবাই মিলে প্রবীরদাকে চেপে ধরেছে। প্রবীরদাও ছাড়নেবালা পার্টি নয়।

কথা শুনেই বুঝতে পেরেছি। নেগেটিভ গেম খেলে।

দু-দুটো টাকার খনি প্রবীরদার আণ্ডারে। একটা বেশ্যা পট্টি আর একটা আবাসন দফতর। মলের কেশটা তবু হজম করেছে। এইটা কিছুতেই হজম করবে না আমি জানি।

প্রবীরদার সঙ্গে ডাক্তারের লিঙ্ক আছে।

প্রবীরদাই বিধানদাকে দিয়ে অনিমেষদাকে বলিয়ে ডাক্তারকে ছাড়িয়েছে।

অনিমেষদা একবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার মনটা বোঝার চেষ্টা করলো।

প্রবীর তোকে কিছু প্রশ্ন করবে, তুই তার ঠিক ঠিক উত্তর দে।

কি ব্যাপারে বলো?

আমরা তোমার ফাইল দেখলাম। সব সত্যি নয়। প্রবীরদা খুব ঠাণ্ডা কিন্তু উত্তেজনা পূর্ণ গলায় বললো।

বুঝলাম প্রথম রাতেই আমাকে বিড়ালটা মারতে হবে। নাহলে প্রবীরদা গেম বার করে নিয়ে চলে যাবে।

তাহলে সময় নষ্ট করে লাভ কি। কাল আর্টিকেলটা ধরাতে পারবো না, পর্শু সিরিয়াল শুরু করছি। আপনারা তারপর দিন আমার এগেনস্টে কোর্টে কেশ করুন। আমি ইয়োলো জার্নালিজম করেছি। প্রমাণ হলে আমার চোদ্দ বছরের জেল।

এটা কি উত্তর হলো।

আমি প্রবীরদার চোখে চোখ রেখেই অনিমেষদার সঙ্গে কথা বলছি।

যা বলার বলে দিলাম। নেক্সট যদি কিছু জানার থাকে বলতে পারেন।

তুমি রাগ করছো কেন। প্রবীরদার গলা মুহূর্তে বদলে গেল।

এটা কি রাগের কথা হলো। আপনি চার্জ করলেন আমি চার্জড হলাম।

কথা বলতে বলতেই পকেট থেকে মোবাইল বার করলাম।

সবাই আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে। রিং হচ্ছে।

ইচ্ছে করে ভয়েজ অন করে মুখার্জীকে ফোনে ধরলাম।

হ্যালো।

মুখার্জী খুব জোড় হেসে উঠলো।

কি খবর, শরীর ভালো আছে।

কেন, খারাপ হয়েছিল নাকি?

শুনলাম।

এখন ঠিক আছি।

আপনি খেলাটা খুব জোড় জমিয়ে দিয়েছেন।

সকালে অনিমেষদার সাথে কি কথা হয়েছে?

গলাটা পরিচিত মনে হচ্ছে না। অপরিচিত ঠেকছে।

আমার লোক যে আপনার পেছনেও আছে সেটা কাল রাতে বলেছি।

মাথা গরম করছেন কেন।

রাজনাথবাবুর এ্যাকাউন্ট শিল করেছেন।

করেছি।

ডিটেলস পাঠিয়েছেন।

খামে আছে। আপনার কথা মতো শিল করা।

ঠিক আছে, পরে আপনার সঙ্গে কথা বলছি।

আরে রাখবেন রাখবেন না।

বলুন।

আমার কিছু জানার আছে।

কি জানতে চান বলুন?

ওপর থেক খুব প্রেসার আসছে।

যে চেয়ারে বসে আছেন ওটা প্রেসার নেওয়ার জন্য। না নিতে পারলে রিজাইন দিন।

এই আপনি রাগ করছেন।

অপেক্ষা করুণ পর্শুদিন থেকে রিলিফ দিয়ে দেব।

বাঁচলাম।

যেখানে যেখানে প্রসেসিং করতে বলেছিলাম, করেছেন?

না হলে বাঁচবো কি করে।

কোনও রেজাল্ট এসেছে?

এখনও পর্যন্ত আসেনি। মনে হচ্ছে আর ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে পেয়ে যাব।

আর খবর?

আমাকে ট্রান্সফার করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

ওটাও রাজনাথবাবুর ঘারে চাপিয়ে দেব। চুপচাপ থাকুন।

ঠিক আছে।

ফোনটা কেটে রেকর্ডিং সেভ করলাম।

প্রবীরদার চোখে চোখ রাখলাম। চোখ দুটো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসবে।

বিধানদা।

বিধানদা আমার দিকে ফ্যাকাশে চোখে তাকাল।

আপনার দুটো হাতই পঙ্গু হয়ে গেছে। কেটে বাদ দিন।

তুমি কি বলতে চাও। প্রবীরদার গলার স্বরটা গম গম করে উঠলো।

আগুনের দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকালেন।

বিধানদা, প্রবীরদার দিকে ঠাণ্ডা চোখে তাকালেন। প্রবীরদা মাথা নিচু করে নিলেন।

প্রবীরদা দশবছর আগে আপনি আপনার গ্রামের পঞ্চায়েত ছিলেন। এখন সেই গ্রাম শহর হয়ে যাচ্ছে। তখন আপনি জমি বাঁচাও কমিটির লিডার হিসাবে খুব খ্যতি লাভ করেছিলেন। পার্টিতে একটা ভালো পোর্ট ফলিও জোগাড় করে নিয়েছিলেন, আপনার উত্তরণ সেখান থেকে, আর আজ আপনি পার্টির একজন বড়োমাপের নেতা, মন্ত্রী। সেই সময়কার কথা আপনার কিছু মনে আছে?

প্রবীরদা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।

ভাবছেন দশবছর আগে আমার গোঁফ দাড়ি বেরোয়নি এ খবর পেলাম কোথায়?

দাঁড়া দাঁড়া তুই কি প্রবীরকেও জড়াবি নাকি। অনিমেষদা বললেন।

না। জড়াব না। তবে প্রবীরদা যদি আর একটু পা পিছলে যান, নিজেই জড়িয়ে পরবেন।

আমি প্রবীরদার দিকে তাকালাম।

কি প্রবীরদা আমি মিথ্যে কথা বলছি?

তুমি সত্যি কথা বলছো। সেটা প্রমাণ হয় কি করে।

শুনলেন তো রাজনাথবাবুর ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট শিল করিয়েছি।

উনি এসব ব্যাপার পাত্তা দেবেন না। সব ব্যাপারটা মুখ মুছে নেবেন। আপনি পারবেন না। উনি মজ্জফরপুর থেকে এসে এখানে পার্টির নেতা হলেন। কি করে? আপনার বিধানদার প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে।

না। উনি ভালো সাংগঠক।

কখনও গিয়ে গণিকা পল্লীতে ঘুরে দেখে এসেছেন আপনাদের সংগঠনের চেহারাটা।

প্রবীরদা চুপ।

ডাকুন ডাক্তার আর রাজনাথ বাবুকে। আপনাদের সামনেই ওদের আসল স্বরূপটা দেখিয়ে দিচ্ছি।

কিরে প্রবীর কি করবি? বিধানদা বললেন।

আপনি বললে ডেকে পাঠাতে পারি।

ডাক ফয়সালা আজকে এখানেই করবো। বিধানদা বললেন।

আমি অনিমেষদার দিকে তাকালাম।

আচ্ছা আমার একটা প্রশ্নের উত্তর তুমি, বিধানদা দিতে পারবে।

বল।

তোমাদের একজন সাংসদের এ্যাকাউন্টে কত টাকা থাকতে পারে।

পার্টির রুলস অনুযায়ী এক পয়সাও না। তবে পারিবারিক সম্পত্তি আমরা ধরি না। উনি পার্টির হোলটাইমার। সমস্ত খরচ পার্টি বহন করবে।

রাজনাথবাবুর যে তিনটে এ্যাকাউন্ট শিল করিয়েছি। সেখানে মিনিমাম একশো কোটি আছে। পর্শুদিন এই তিনটে এ্যাকাউন্ট থেকে কাছাকাছি এককোটি তোলা হয়েছে।

অনিমেষদা, বিধানদা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।

প্রবীরদা আপনি জানেন?

আমার জানার কথা নয়।

বিধানদা আপনি জানেন?

তুই যা বলছিস মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

আমি কিন্তু গল্প বলছি না। হাতে ডকুমেন্টস নিয়ে কথা বলছি।

দেখাতে পারবি?

পারবো।

কিরে প্রবীর তুই সেদিন বললি ডাক্তার সৎ লোক আজ কি দেখছিস?

প্রবীরদা বিধানদার দিকে তাকিয়ে।

তোর কথার ওপর অনিমেষকে বলে ডাক্তারকে ছাড়লাম। তারপর রাজনাথ। তোরা কি ভেবেছিস? তোদের ওপর পার্টির দায়িত্ব দিলে পার্টি দু-দিনে লাটে উঠে যাবে।

সব বাজে কথা।

মিত্রা হাসতে হাসতে গেটের সামনে এসে দাঁড়াল। আসতে পারি।

ঘরের আবহাওয়া মুহূর্তের মধ্যে তুমুল পরিবর্তন হয়ে গেল। সবার হাসি হাসি মুখ। দাদা, মল্লিকদা গম্ভীর।

আয়। মিত্রা ডাকল।

দেখলাম টিনা, মিলি। সবার হাতে ট্রে। ওরা ভেতরে এলো।

অনিমেষদা হাসতে হাসতে বললেন। অ্যাতো খেতে পারবো না।

বৌদি বানিয়েছে।

দে তাহলে।

ওরা সবার হাতে প্লেট ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল।

খাবার পর্ব চললো। খেতে খেতে কথা হচ্ছে। আমার কাছ থেকে বিধানদা, অনিমেষদা ডাক্তারের কথা শুনতে চাইছে। আমি বললাম আস্তে দাও। সব শোনাব। তোমরা দেখতে চাইলে ডকুমেন্টস দেখাব। প্রবীরদা গুম হয়ে আছে।

অনুপদা, রূপায়নদা চুপচাপ।

প্রবীরদা ফোন করলো। আমাদের খাবার পর্ব শেষ হতে না হতেই রাজনাথবাবু, ডাক্তার এসে হাজির। বুঝতে পারলাম কাছাকাছি ছিল এরা।

সঙ্গে দুজন লোক। চিনতে পারলাম না।

দুজনকে দেখেই মাথাটা গরম হয়ে গেল। ডাক্তারের মুখ ফুলে ঢোল। ভজু দুটো চেয়ার নিয়ে এলো। খাওয়া শেষ। দরজা বন্ধ হলো।

অনিবাবু আপনি কাজটা ভালো করলেন না এরজন্য আপনাকে ভুগতে হবে।

রাজনাথবাবু ধমকের সুরে বললেন।

দুম করে মাথাটা গরম হয়ে গেল।

মুহূর্তের মধ্যে আমার চেহারার যে পরিবর্তন হলো সেটা ঘরের সবাই লক্ষ্য করলো।

আপনার মতো দশটা এমপির জন্ম আমি একা দিতে পারি।

আমার ওইরকম তারস্বর চিৎকারে সকলে প্রথমে একটু থতমতো খেয়ে গেল।

কাল রাতেই আপনাকে এনকাউন্টারে মারতাম। শুধু আমার একটা ভুলে তা হলো না। তাহলে আজ আপনি আমার ঘরে বসে এই বক্তব্য রাখতে পারতেন না।

এতবড়ো ক্ষমতা আপনার।

দেখলেন না আপনার ডেকে আনা কুত্তাগুলোকে কিরকম ভাবে মেরেছি। ছবি দেখেন নি আজকের কাগজে।

ওদের সঙ্গে আমার কোনও রিলেসন নেই।

সঙ্গে সঙ্গে ফোন তুললাম। ভয়েজ অন করা।

হ্যালো।

অর্ক।

হ্যাঁ।

কাজ শেষ।

হ্যাঁ দাদা।

তুই সায়ন্তন একবার আমার বাড়িতে আয়।

আচ্ছা দাদা।

কি ডাক্তার, শুক্রবার সকালবেলা ভাআইপি স্যুটকেশ নিয়ে রাজনাথবাবুর বাড়িতে কি করতে গেছিলেন। গাড়ির নম্বরটা বলে দেব।

আপনি মিথ্যে কথা বলছেন। রাজনাথবাবু চেঁচিয়ে উঠলেন।

মুচকি হাসলাম।

সবার সামনে আমাকে ফাঁসাতে চাইছেন।

আমি ডাক্তারের চোখ থেকে চোখ সরালাম না।

কতটাকা রাজনাথবাবুকে দিয়েছিলেন?

এক পয়সাও দিইনি।

তারমানে এসেছিলেন। কিছু দেননি এই তো?

আমি যাই নি?

ভিডিও ক্লিপিংস দেখাব।

ডাক্তার চুপ।

একজন সাংসদের কাছে উনি আসতেই পারেন। রাজনাথবাবু বললেন।

তাহলে এতক্ষণ তরপাচ্ছিলেন কেন? রাজনীতিটা আপনার থেকে খুব কম বুঝি এটা ভাবছেন কেন?

রাজনাথবাবু আমার ঠাণ্ডা গলার স্বর শুনে থমকে গেলেন।

কি প্রবীরদা এখানেই থামবো না আরও এগোব? আপনি যা বলবেন।

প্রবীরদা মাথা নিচু করলো।

বিধানদা, রাজনাথবাবুর দিকে কট কট করে তাকিয়ে আছে।

তুই ক্রস কর, আমি নোট ডাউন করাচ্ছি। অনুপ সব লেখ। এটাই মিনিট বুক হিসাবে ট্রিট হবে। অনিমেষদা বললো।

বিশ্বাস করুণ দাদা, সব ষড়যন্ত্র। রাজনাথবাবু হতাশ চোখে আমার দিকে তাকালেন।

রাজনাথবাবু আপনি টোডিকে চেনেন?

না।

ডাক্তার আপনি?

না।

মিত্রাকে চেনেন?

হ্যাঁ।

কে হয় আপনার?

ডাক্তার মাথা নিচু করে রয়েছে।

আপনার বৌ টোডির বিছানায় শুতো, আপনি জানতেন?

কি বাজে কথা বলছিস তুই! অনিমেষদা চেঁচিয়ে উঠলো।

কি ডাক্তার বাজে কথা, না ঠিক কথা? মিঃ ব্যানার্জীর দিকে তাকিয়ে বললাম।

বাজে কথা।

ছবি বার করি সবার সামনে। পেছনে আপনার সই আছে।

ডাক্তারের মাথা নিচু।

আপনার মুখের অবস্থা এরকম হলো কি করে? ক্ষতটার বয়স এখনও চব্বিশঘণ্টা হয়নি।

দু-জনেই চুপ করে রইলো।

কাল চৌধুরীবাড়িতে বরাত জোরে বেঁচে গেছেন দু-জনে। নাহলে ওখানেই খেল খতম করে দিতাম। দৌড়ে পালাতে গিয়ে লাইনে পড়ে মুখের হাল এই করেছেন। লোকাল থানায় মিথ্যে ডাইরীও করেছেন আমার নামে। রাজনাথবাবু তখন আপনার পাশে ছিলেন। তখন জানতেন না, বড়ো খেলাটা আমি অনেক আগেই খেলে ফেলেছি।

রাজনাথবাবু, ডাক্তার মাথা নিচু করে আছে।

সবাই আমার মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে।

রাজনাথবাবু মেয়েগুলো তাদের বয়ানে আপনার আর ডাক্তারের নাম বলেছে। প্রশাসন আপনারা চালান। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে আপনাদের থেকে আমার ক্ষমতা বেশি। আপনার পেটোয়া লোকেরা চাকরি করে। চাকরি বাঁচাতে আজ আপনার হয়ে বলবে, কাল আমার হয়ে বলবে।

কি বলতে চাও তুমি? রাজনাথবাবু গঁ গঁ করে উঠলো।

ভদ্রভাবে কথা বলুন। শালীনতার সীমানা আপনি ছাড়িয়ে যাচ্ছেন।

রাজনাথবাবু থমকে গেলেন।

যে মেয়েগুলোকে নিয়ে আপনি কাজ করছিলেন। তাদের সাপ্লায়ার আমার রিক্রুটার। যে হিজরেটা মেয়েগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। সে আমার হাউসের সাংবাদিক।

আমার চোখেমুখে ক্রুর হাসি ফুটে উঠলো।

এরমধ্যে দুটো মেয়ে ছিল যারা সবে মাত্রা ফ্রি-ল্যান্সার হিসেবে আমাদের কাগজে লেখালিখি করতে শুরু করেছে। মাথায় রাখবেন ওটা আমার টোপ। আপনি গিলেছেন। এবার বুঝেছেন আপনার মতো দশটা এমপির কেন জন্ম দিতে পারি।

কেউ যেন অনিমেষদা, বিধানদার গালে সপাটে একটা থাপ্পর মারলো।

দাদা, মল্লিকদা উঠে দাঁড়াল। অনিমেষদা ইশারায় বললেন, বসুন।

প্রবীরদা উঠে আসুন ডাক্তার আর রাজনাথের ছবি দেখবেন আসুন।

আমি টেবিলের ওপর থেকে মানি পার্সটা তুলে নিলাম।

ভেতর থেকে চাবিটা বার করে আলমাড়ি খুললাম। খামটা বার করতেই দাদা চেঁচিয়ে উঠল।

তুই সত্যি দেখাবি নাকি!

কেন দেখাবো না। প্রবীরদা এতক্ষণ রাজনাথবাবুকে সাপোর্ট করছিলেন। রাজনাথবাবু বললেন সব অসত্য বলছি। আমি ষড়যন্ত্র করছি। দেখে যাক।

গালা বন্ধ করা খামটা বার করলাম।

দরজায় ধাক্কা পরলো। আমি এগিয়ে গেলাম। দেখলাম অর্ক, সন্দীপ, দ্বীপায়ন, সায়ন্তন। গেটের বাইরে বাড়ির সবাই দাঁড়িয়ে আছে। সবার মুখ শুকনো। ওদের চারজনকে ভেতরে ঢোকালাম। গেট বন্ধ করলাম।

দ্বীপায়ন।

দাদা।

আমার মোবাইল থেকে ম্যাসেজগুলো ল্যাপটপে ঢেলে প্রিন্ট দাও। অর্ক তোমাকে হেল্প করছে।

সন্দীপ।

বল।

তোর ল্যাপটপে সায়ন্তনের চিপটা ঢুকিয়ে ট্রান্সফার কর।

দাদা আমার ল্যাপটপে সব আছে সায়ন্তনেরটাও আছে অর্করটাও আছে। দ্বীপায়ন বললো।

দ্বীপায়ন কাল মুখার্জী যে চিপটা দিলো সেটা কোথায়?

আমার কাছে। কাউকে দেখাইনি।

তুমি নিজে দেখেছো?

দ্বীপায়ন মাথা নিচু করলো।

তার মধ্যে এদের দুজনের ছবি আছে, ভালো করে দেখতো।

দ্বীপায়ন মাথা দোলাচ্ছে। আছে।

ওটাও দেখিয়ে দাও এনাদের। ফস্টি নস্টির সময় নিজেদের ছবিটা কেমন দেখতে লাগে দেখুক।

অনিমেষদার দিকে তাকালাম তোমরাও দেখো। আমি একটু আসছি।

তুই যাবি না এখন। প্রবীরদা বললো।

ভয় নেই বাইরে অনেক দর্শক, তাদের চাহিদাটা একটু মিটিয়ে আসি।

এখুনি আয়, তারপর এদের দু-জনের মজা দেখাচ্ছি।

আমি ঘরের দরজা খুলে বাইরে এলাম।

দরজা আবার বন্ধ করে দিলাম।

মিত্রা এগিয়ে এলো। আমার পাঞ্জাবী খামচে ধরলো। চোখে মুখে চাপা উত্তেজনা।

কিরে তুই চেঁচাচ্ছিলি কেন?

আমি হাসলাম।

বড়োমা, ছোটোমা, বৌদি এগিয়ে এলো।

দূরে টিনা, মিলি, নীপা, সুরো দাঁড়িয়ে।

ওইদিকে ইসলামভাই, নিরঞ্জনদা, রতন, আবিদ, অনাদি, চিকনা, বাসু।

কিরে কি বলছে শয়তান দুটো। ছোটোমা বললো।

কিছু না। ওরা ওদের কথা বলছে। সবাই বাঁচতে চায়।

দাঁড়া বাঁচাচ্ছি। বৌদি এগিয়ে গেলো।

তুমি কোথায় যাচ্ছ?

একবারে কথা বলবি না। অনেক বার বেড়েছে ওরা।

বৌদি দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেল।

আমি ইসলামভাইকে ইশারায় ডেকে নিচে নেমে এলাম।

নামতে নামতে অরিত্রকে একটা ফোন করলাম। ভয়েজ অন করা আছে।

বলো দাদা।

কাজ মিটেছে?

হ্যাঁ।

খুব টেনসনে আছিস মনে হচ্ছে?

থাকবো না। তুমি আমাকে ইনভিজিবল ম্যান করে রেখে দিয়েছ।

তুই আমার ট্রাম্প কার্ড।

হো হো করে হেসে ফেললো অরিত্র।

হাসলি যে।

তোমার কাছে কে ট্রম্প কার্ড, কে টেক্কা বোঝা মুস্কিল।

তোকে যে যে দায়িত্ব দিয়েছিলাম করেছিস?

সব।

গুড। আচ্ছা তোর সঙ্গে যখন কথা বলবো তোর গলা যাতে এরা বুঝতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে পারবি।

কেন পারবো না মেয়েদের গলা বানিয়ে নেব।

পারবি?

প্র্যাক্টিশ করে নিচ্ছি।

কর। নেক্সট টাইম তোকে রিং করলেই তুই মেয়েলি কন্ঠে কথা বলবি। আর না করলে বুঝবি পজিসন আমার অনুকূলে।

আচ্ছা।

তোকে কি নামে ডাকবো বল।

এটাও তোমাকে বলে দিতে হবে।

ওই মেয়েটার নামে।

এই তো তুমি চাটতে শুরু করে দিলে। তাই ডেকো।

কি যেন নামটা?

রাত্রি।

আর একটা কে ছিলো যেন?

খুশী।

রাত্রি, খুশী, বাবা তুই কবে সকাল হবি বলতো।

এদের ভাল নাম আছে।

কি?

পরে বলবো। খুশীকে অর্ক ইঁট পেতেছে।

কিরে মাল ফাঁস হয়ে যায় নি তো?

একেবারে না।

হাসলাম। রেডি থাকিস।

ঠিক আছে।

নিচে নেমে বাগানে এলাম। ওরা সবাই আমার কথা বলা শুনলো।

ওপরে ফাটাফাটি শুরু হয়ে গেছে। বৌদি তারস্বরে চেঁচাচ্ছে। বুঝতে পারছি অনিমেষদা, বিধানদার সঙ্গে একচোট হচ্ছে। মহিলা সমিতির রাজ্যসম্পাদক বলে কথা।

ইসলামভাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।

বাসু একটা সিগারেট বার করে আমার হাতে দিল।

ইসলামভাই।

বল।

দামিনীমাসি, ডাক্তারদাদা কোথায়?

নিচের ঘরে।

কি করছে?

কি আবার করবে বসে আছে। কার ভাল লাগে বল।

ঠিক।

অনাদির দিকে তাকালাম।

কাল সকালে কখন যাবি?

শেষ না দেখে যাব না।

পাগলাম করিস না। ওখানে অনেক কাজ পরে আছে।

তোর হিসাবের দরকার, হিসাব নিবি।

অনাদির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম।

হ্যাঁরে অনি, ওই মুখফোলাটা ডাক্তার। চিকনা আমার দিকে তাকিয়ে বললো।

হ্যাঁ।

শালাকে একবার আমাদের ওখানে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে চল না।

কেন তুই আচ্ছা করে আড়ং ধোলাই দিবি।

খড়গাদায় ঢুকিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেব, খুঁজেই পাওয়া যাবে না।

ছাগল।

ইসলামভাই হাসছে। কারসঙ্গে কথা বললি?

শুনলে তো ট্রাম্পকার্ড।

ওর পরে আর কজন আছে?

ওটাই লাস্ট লাইন।

ওকে কি মেয়ে সাজিয়েছিলি?

না।

তাহলে?

কাজ শেষ হোক, বলবো।

লক্ষ্মী কোথায়?

ইসলামভাইয়ের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালাম। তাহলে কি? স্বাভাবিক গলায় বললাম।

কেন লক্ষ্মীর কি হয়েছে!

ও শুক্রবার বাড়ি গেছে, এখনও ফেরে নি।

মাসিকে জিজ্ঞাসা করো।

মাসি বাড়িতে লোক পাঠিয়েছিল। ও বাড়িতে যায়নি।

রতন মাসিকে ডাক।

রতন বিকেলে খবর নিয়ে এসেছে। ও তোর কাছে আছে।

তাহলে সব যখন জেনে ফেলেছো তখন আমায় জিজ্ঞাসা করছো কেন?

আমি তোর কাছ থেকে কি করে খেলতে হয় শিখছি।

পারবে না। আমি মুহূর্তে মুহূর্তে প্ল্যান চেঞ্জ করি।

আমি বড়দিকে বলতে বাধ্য হয়েছি। তুই একমাত্র বড়দির কাছে ঠিক থাকিস।

আমার মা যে। মা কষ্ট পাবে, এটা চোখে দেখতে পারবো না।

এবার বল লক্ষ্মী কোথায় আছে?

আমি ইসলামভাইয়ের দিকে তাকালাম।

কিরে ও স্বীকার করেছে। দামিনীমাসির গলা।

আমি পেছন ফিরে দামিনীমাসির দিকে তাকালাম। মাসি মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাগানের চারিদিকে আলো আঁধারি অন্ধকার। চাঁদের সুরভি ঝড়ে ঝড়ে পরছে। আমি এগিয়ে গিয়ে মাসিকে জড়িয়ে ধরলাম। মাসি মুখ তুলে তাকালো। চোখের পাতা ভিঁজে গেছে।

কিগো সবাই ওপরে গেল তুমি গেলে না?

মাসি মাথা নিচু করলো।

লক্ষ্মী আমার বোন। ওকে একটা ছোট্ট কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। ও করেছে।

এখন খবর নিয়ে দেখ ও চলে এসেছে।

মাসি আমার বুকে মাথা রাখলো।

ওর কিছু হয়নি?

তুমি কথা বলবে ওর সঙ্গে।

ওর ফোন সুইচ অফ।

ঠিক আছে, তুমি কথা বলো।

আমি ফোনটা পকেট থেকে বার করে ডায়াল করলাম। সবাই আমার দিকে বিষ্ময়ে তাকিয়ে আছে। মুখ দিয়ে কারুর কোনও শব্দ বেরচ্ছে না। যেন দম বন্ধ হয়ে আছে সবার।

রিং হতেই ভয়েজ অন করলাম।

অনিদা তুমি কেমন আছো?

কেনোরে!

তোমার শরীর খারাপ শুনলাম?

আমি ভালো আছি।

কাজ শুরু হয়েছে?

হয়েছে। তুই কোথায়?

এই তো ঘরে ঢুকে হাত মুখ ধুয়ে একটু শুয়েছি।

কোনও অসুবিধে হয়নি?

একেবারে না। দাদাটা কি ভালো গো।

কোনও টর্চার করেনি?

না গো না। রাজার হালে ছিলাম। অনিদা।

কিরে।

মাসি আমার ওপর ভীষণ খেপে গেছে। বাড়িতে লোক পাঠিয়েছিল। আমাকে আচ্ছা করে দেবে।

আমার কথা বলবি।

তুমি মাসির বাঁধা নাগর।

তাহলে, কিরকম পটিয়েছি বল।

লক্ষ্মী হাসছে।

নে মাসির সঙ্গে কথা বল।

মাসির সঙ্গে! না না আমাকে শেষ করে ফেলবে মাসি।

আমি তো বলছি করবে না।

লক্ষ্মী চুপ করে রয়েছে।

তোরা সবাই চলে এসেছিস?

হ্যাঁ।

কারুর কোনও অসুবিধে হয়নি।

একেবারে না। একটা ভুল হয়েগেছে।

আবার কি ভুল করলি।

শালাকে হাতের কাছে পেয়েও ছেড়েদিলাম।

ঠিক আছে পরেরবার ভুল করিস না। তোর মোবাইলটা চালু করে দে। এটা ভাইব্রেসন মুডে রেখে দে। ও কি তোর কাছাকাছি আছে?

না, দাদা এখুনি বেরিয়ে গেল।

ওর সঙ্গে আবার ইন্টু মিন্টু করিসনি তো?

ধ্যাত তুমি যে কি না।

আর দুটো।

দাদার সঙ্গেই গেছে।

ঠিক আছে তুই মাসির সঙ্গে কথা বল।

মাসির হাতে ফোনটা দিয়ে আমি বসার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম। ঢুকেই দেখি ডাক্তারদাদা টিভি দেখছে। নিউজ চ্যানেল। আমাকে দেখে মুচকি হাসলো।

চলবে —————————



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/AKFcRSG
via BanglaChoti

Comments