নিজেরে হারায়ে খুঁজি [অধ্যায় ১ (পর্ব ২)]

❝নিজেরে হারায়ে খুঁজি❞

BY- Nandana Das

অধ্যায় ১

পর্ব দুই
—————————–

আমাদের ইকার বাসী দের জীবনে এমন ছোট ছোট ঘটনাই অনেক অনেক বেশী আমাদের আনন্দ দেয়। রোজকার আদর , ভালোবাসা ই মনে হয় জীবনের সব। স্বামির কথা অনুযায়ী ইকারা মেয়েরা সব সময়েই চলে আমিও চলি। কিন্তু ভালবাসার বিনিময়ে। আর  সব বাড়িতেই ইভানের মতন বাড়ন্ত বাচ্চাদের নিয়ে সমস্যা হয়ত হয়। ওই বয়সের ছেলেরা একটু জেদী হয়। নিজেদের নারী ওরা পছন্দ করতে শুরু করে। যদিও আমার ইভান কে দেখে মনে হয় না ও এখনো সেই রকম কোন পছন্দ করেছে বলে। কারন স্কুল বা খেলা বা বন্ধুদের সাথে সাইকেল বিহারের পরে ও কোন রকম বাইরে থাকে না বললেই চলে। বাড়িতে চলে এসে জকির সাথে খেলা কিম্বা ভাই বোন দের সাথে থাকা, এটাই ও পছন্দ করে। মাঝে মাঝেই মালিয়া কে নিয়ে চলে যায় দাদুর বাড়ি। সেখানে দুই ভাই বোনে , নিজের লাগানো গাছ বা সব্জি পাতির দেখা শোনা করে ফিরে আসে। ছুটির দিনে দুটো বিয়ার নিয়ে চলে যায় মাছ ধরতে ব্ল্যাক লেক এ। আমাদের বাড়িতে ইভান ই একমাত্র যে ব্ল্যাক লেক এ সাঁতার কাটে ভয় হীন হয়ে। মালিয়ার ও ভয় নেই। সেও খুব সাহসী মেয়ে একটা। জানিনা আমার মেয়ে হয়েও এতো সাহসী ও কি ভাবে হল। দাদার সাথে পাল্লা দিয়ে মাছ ধরে। আর পড়াশোনা তেও মালিয়া সব থেকে ভালো।

রবিবারে ঠিক হয়েছিল, ক্যারোল, ইভান কে গাড়ীর চাবি দেবে। সকালেই আমার কথায় এবং আমার সামনেই ক্যারোল, ইভান কে চাবি দিল গাড়ীর। ক্যারোলের ইচ্ছে ছিল না। এই গাড়ি টা বেশী পুরোন নয়। বছর চারেক হবে। আমি ইভান কে বললাম,

–       সোনা, আমি কিন্তু তোর ড্যাডের থেকে চাবি নিয়ে দিলাম। সবার আগে নিজের, তারপরে গাড়ির খেয়াল রাখবি। ফিরে আসবি তাড়াতাড়ি।

চাবি পেয়ে ইভান বেশ খুশী হল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ওর বাবাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খেয়ে নিল। আর যাবার আগে আমাকেও একবার জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে নিল। পাগল একটা। ওর বাবার চিন্তা গাড়ী নিয়ে সাথে ছেলে নিয়েও। কিন্তু ভয় তো লাগবেই। সে কি আমার ও লাগছে না? কিন্তু না ছাড়লে ইভান ইকারা পুরুষ হবে কি ভাবে? মালিয়া আর কীট দাদার পিছন পিছন কিছু টা দৌড়ে গেল। মনে হচ্ছে ইভানের থেকেও এই দুটোর আনন্দ বেশী। পিন্টো জকির কাছে ছিল, বাকি দাদা আর দিদি কে দেখে সেও ছোট ছোট পায়ে পিছনে দৌড়োল। আমি কাচার জামাকাপড় গুলো কে একটা বাকেটে নিয়ে ব্ল্যাক লেক এর দিকে এলাম। কাচতে হবে। আমার মা আমাকে সাহায্য করবে। যদিও পিন্টোর কাপড় আমি রোজ ই কাচি। ইভান ও ইভানের কাপড় কেচে নেয়। তাও বিশেষ কিছু কাপড় আমার জন্যেই পরে থাকে তা আমি জানি।

আমি ব্ল্যাকের ধারে বসে সাবান গুলে , কাপড় গুলো কে ভিজিয়ে পাশে সরিয়ে রাখছি। ততক্ষনে , মালিয়া , কীট আর পিন্টো ফিরে এসে খেলছে সামনেই। ক্যারোল আমাদের ডাবল শট ব্যারেল গান টা পরিষ্কার করছে বসে বসে, আমার থেকে কিছু টা দুরেই। লাইসেন্স ক্যারোলের নামেই। পাঁচ বছরের পুরোন এই গান দেখে ইভান ও একটা পিস্তল নিয়েছে। ক্যারল ছেলেকে শিখিয়েছে গান চালানো। এখানে বন্যজন্তুর আগমন মাঝে মাঝেই হয়। তাই ইকারাবাসী দের কাছে বন্দুক চালানো টা খুব সাধারন ব্যাপার। যদিও আমরা নিতান্তই অপারগ না হলে প্রান নি না কোন বন্য জন্তুর। চালাতে আমিও পারি। সব বাড়িতেই এমন দু একটা লাইসেন্সড গান পাওয়া যাবে। আন লাইন্সেন্সড গান হয়ত আরো বেশী। আমি দেখছি সবাই কেই তাকিয়ে। আমার চোখে একটা শান্তির সাথে একটা প্রছন্ন গর্ব। ভাবছি এই এতো বড় সংসার টা আমার, শুধুই আমার।

কাপড় ধোয়া হয়ে গেলে আজকে কাজ আমার ইভানের ওয়াগন টা পরিষ্কার করা। কীট আর মালিয়ার ঘর পরিষ্কার করা। আমাদের ঘর টা ক্যারোল বলেছে সাহায্য করবে পরিষ্কার করতে। আর ক্যারোল গান টা পরিষ্কার করে, ওর পছন্দের তন্দুরি বানাবে। অনেক মাংশ কিনে এনেছে ও সকালেই। সেগুলো কে নিজেই ম্যারিনেট করে রেখছে। এটা ব্রুনো রা করতে পছন্দ করে। অনেক ফ্যামিলি পিকনিক এ দেখেছি সিনিয়র ব্রুনো ও নিজেই কিচেন সামলাতে পছন্দ করতেন। মাংশ আর সাথে অনেক বিয়ার। ব্ল্যাকের জলের তলায় একটা বড় বালতি তে সেই বিয়ার গুলো কে ডুবিয়ে রেখেছে ক্যারোল আর ইভান মিলে। প্রাকৃতিক ভাবে ঠান্ডা থাকবে। আমিও নেব আজকে বিয়ার। সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত হয়ে দুপুরে ব্ল্যাকের ধারে বসে বিয়ার নিতে নিতে পরিবারের সাথে সময় কাটানোর ব্যাপারে আমি বেশ লোভী।

ইভানের ঘর টা পরিষ্কার করে ফেললাম। বিছানার চাদর টা বদলে দিলাম ওর। ওর বই পত্র গুলো কে গুছিয়ে রেখে দিলাম। সেটা গোছাতে গিয়ে দেখলাম, একটা আডাল্ট ম্যাগাজিন ওর বই এর শেলফ এ। হাসি পেয়ে গেলো। ছেলেটা আমার বড় হয়ে গেছে। ক্যারোল কে বলতে হবে ব্যাপার টা। ওর পিস্তল টা কে বাইরে বের করে এনে ক্যারোল কে দিলাম, যাতে পরিষ্কার করে দেয় ভালো করে। ওয়াগনের দেওয়াল গুলো কে ভালো করে ভিজে কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করার পরে পুরো মেঝে টা কেও পরিষ্কার করে দিলাম আমি। তারপরে এক এক করে সব গুলো ঘর পরিষ্কার করে দিলাম। মায়ের ঘর টাও সাফ করার পরে, ক্যারোল কে বলে দিলাম খাবার বানাতে। পিন্টো কে দুধ খাওয়ানোর সময়ে দেখলাম, ক্যারোল তন্দুরির জন্য কয়লা চাপাচ্ছে উঠোনে। আর সাথে আমাকে দেখছে। ও দেখে আমি যখন দুধ খাওয়াই। সেই ছোট থেকে দেখে ও আমাকে এই সময়ে। ইচ্ছা নিজেও একটু মুখ দেবার। রোজ রাতেই দেয় ও মুখ আমার বুকে। ছেলে খাবার পরে অবশিষ্ট টা ও খেয়ে শেষ করে।

যদিও আমার মাঝারী তন্বী ফিট শরীর। আমার ওজন কোন দিন ও চুয়ান্ন পঞ্চান্ন কেজির উপরে যায় নি। মারাত্মক দৌড়োতে পারতাম আমি। স্কুলে পড়াশোনায় বেশ খারাপ ছিলাম, কিন্তু দৌড়ে প্রথম হতাম আমি। ক্যারোল কত বার আমাকে ধরতে গিয়ে ধরতে পারে নি। বলত হরিন এর মতন দৌড়ই আমি। এই ৩৫ বছর বয়সেও অল্প বয়সী দের মতন আমার শারীরিক গঠন। বুকের মাপ বেড়ে গেলেও বা পাছার মাপ বড় একদম ই না। কিন্তু ইভানের সময় থেকেই বুকে দুধের কোন কমতি নেই। বলতে গেলে আমার বুকের দুধ সেই ১৭ বছরে এসেছে, কিন্তু চার বাচ্চার এই সময় কালে এখনো বুক থেকে দুধ আমার কোন দিন বন্ধ হয় নি। ইভানের পরে মালিয়া, তারপরে কীট, এখন পিন্টো। মা হিসাবে আমার গর্ব হয়।

যাই হোক ইভান ফিরে এলো দুপুরের আগেই। আমি তখন সবে মাত্র মালিয়া কে স্নান করিয়েছিলাম। ও এখনো নিজের যত্ন নিতে শেখেনি। খুব সুন্দরী ও। বাদামী চুল আর কালো চোখের ও। সাজিয়ে দিলে মনে হয় কোন পরী আমার সামনে দাঁড়িয়ে। ভালো করে ওকে আজকে চুল ধুয়ে দিলাম আমি। আমি নিজের চুল ধুতে যাব তখন হাজির হলো ইভান। আমি ছুটে গেলাম। ছেলে ঠিক আছে নাকি দেখতে। ইভান কে সামনে দাঁড় করিয়ে একে একে হাত পা পিঠ আমি দেখছি, আর বাড়ির সব থেকে বড় ব্রুনো, ছেলেকে না দেখে, গাড়ির হেলথ চেক করতে শুরু করল। উফ আর পারি না। ছেলের থেকে গাড়ী টা আগে হলো? ইভানের কোন ব্যাপার নেই। ওর চোখে একটা গর্ব। নিজের টাকা দিয়ে, কিছু কালো মুরগীর মাংশ কিনে এনেছে। দামী মাংশ, আমাদের খাবার সামর্থ্য নেই। কিন্তু অল্প হলেও কিনে এনেছে আজকে ও। ভাল লাগল, যখন বলল,

–       এই টা আমি তোমাদের জন্য কিনে এনেছি।

আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে নিলাম। নাহ ছেলের উপরে ভরসা করাই যায়। ওর বাবা ওকে বলল স্নান করে নিতে আর বিয়ার গুলো কে তুলতে ব্ল্যাকের জল থেকে। ইভান খুশি হয়ে স্নানে চলে গেলো। আমি তখনো স্নান করিনি। ভাবলাম ওর পিঠে আর পায়ে সাবান লাগিয়ে দি । বেশ করে ওকে সাবান লাগিয়ে দিয়ে আমিও স্নান করে যখন, লাঞ্চ করতে এলাম, সুর্য্য পশ্চিমে ঢলা শুরু হয়ে গেছে।

অনেক মাংশ তন্দুরি করেছিল ক্যারোল। আর জকিও আমাদের সাথে তন্দুরি খেল। অনেক টা করে খেলাম আমরা। সাথে বিয়ার। আমার মা যে মা সেও দুটো বিয়ার খেয়ে নিল। আমার তিন নম্বর চলছে। আর বাবা ছেলেতে মিলে একটা পেটি মনে হয় খেয়ে ফেলেছে। ইভান কে আবার জলের তলায় নামতে হবে অন্য পেটি টা তুলতে। আমি রাজী নই। যদিও বিয়ার কিন্তু হালকা নেশা তো হয়। না না আমি আমার ছেলেকে পাঠাব না নীচে। আমার এই চিন্তা গুলো ইভান একদম পছন্দ করে না। ও ভাবে আমি ওকে বাচ্চা ছেলে ভাবছি। রেগে যায় ও। কিন্তু আমি কি করব? ও তো সবে আঠেরো বছরের ফুটফুটে একটা ছেলে। লম্বা না হয় ক্যারোলের মতন হয়েছে, কিন্তু তাই বলে ও তো বড় হয়ে যায় নি। খেলাধুলা করে বলে না হয় একটু হাপালো চেহারা। তার মানে ওর উপরে বিয়ার খাওয়া অবস্থায় ২০ ফুট জলের নীচের থেকে বিয়ারের ক্যান তুলে আনতে দেওয়া যায় না।
ওর বাবা যেন ওকে একেবারে চব্বিশ পঁচিশ বছরের ছেলে ভাবছে। না আমার ছেলে এখনো অতো বড় নয়। আমি ক্যারোলের দিকে রেগে তাকাতেই, ক্যারোল ইভান কে বলে দিল,

–       তুই থাক, আমি নিয়ে আসছি। তোর মা তোকে ছাড়তে চাইছে না, বিয়ার খেয়েছিস না?

ইভান যথারীতি আমার দিকে তাকিয়েই বুঝল আমি মানা করেছি ওর বাবা কে ওর জলের তলায় বিয়ার আনতে যাবার ব্যাপারে। কট্মট করে চেয়ে রইল আমার দিকে আর জেদ ধরে বসল। বলল,

–       না আমি ই যাব।

ইভানের জেদে ওর বাবা এবারে কিন্তু রাগ করল না। ছেলের ভালোর জন্য বাবা মা কে কত ঝুঁকতে হয়, সন্তান রা তা জানেও না। ক্যারোল খুব সুন্দর ভাবে ইভান এর কপালে চুমু খেয়ে বলল,

–       তুই ছাড়া আমাদের কে দেখবে বলত পরে? আচ্চা আজকে তোকে আমার ব্যারেল গান টা তে চার রাউন্ড ফায়ার করতে দেব কেমন? এখনো তোর বাবা পারবে এই সব করতে। যেদিন পারবে না, সেদিনে তো আমার এই সোনা ছেলে টা আছেই। তাই না? আমার সোনা ছেলে!!

আমি হাঁ করে দেখছিলাম আমার স্বামী কে। বাবা, ছেলের উপরে এমন কেয়ারিং দেখে কোন ইকারা মা খুশী না হবে শুনি? নিশ্চই ক্যারোল ছেলেকে, বিয়ের পরে বলবে না অন্য জায়গায় থাকতে। কি হয় সবাই মিলে থাকলে?  ছোট্ট একটা পরীর সাথে বিয়ে দেব আমার ইভানের। ওরা সুখে থাকবে আর মা হয়ে আমি সেটা দেখব। বিয়ের পরেই যে কষ্ট আমি পেয়েছিলাম, আমার ছেলের বউ কে সেই কষ্ট একদম দেব না। নিজের মেয়ের মতন খেয়াল রাখব আমি তার। আমার ইভানের বউ, কত নিজের সেটা কি বলে বোঝানো যাবে? ইকারা দের বাবা রা একটু গোঁয়ার, নিজের ছেলেকে মনে করে জন্ম থেকেই পুরুষ। আমার একদম পছন্দ না ব্যাপার টা। কত ইকারা ছেলে বেকার সাহসীকতা দেখাতে গিয়ে বন্য জন্তুর হাতে প্রান দিয়েছে তার কোন ইয়ত্ত্বা নেই। আমি তো রোজ ভয়ে থাকি ইভান কে নিয়ে। ইকারা পুরুষ দের জেদ অনেক বেশী। আর মেয়েরা ততটাই সহনশীল।

ক্যারোল বিয়ার আনতে উঠতেই, ইভান রেগে গেল আমার উপরে। ততক্ষনে প্যান্ট টা খুলে, টি শার্ট টা খুলে খালি গায়ে শুধু শর্টস টা পরে ঝাঁপ দিয়েছে ক্যারোল জলের তলায়। ইশ আমার স্বামী টা এখনো কি বলিষ্ঠ!  কে বলবে একচল্লিশ ছুঁয়ে ফেলল জুনিয়র ব্রুনো। আমি ওকে জুনিয়র বলি বিয়ের পর থেকেই। আসলে বিয়ের পরে আমরা মানে সিনিয়র আর জুনিয়র ব্রুনো, আমার শাশুরী মিলে মাস ছয়েক একসাথে থেকেছিলাম এই বাড়িতেই। তারপরে ইভান পেটে আসার পরে ওনারা চলে যান অন্য একটা জায়গায় আমাদের এই বাড়ি ছেড়ে দিয়ে। তার বছর খানেক পরেই ওনারা ইন্ডিয়া চলে গেছিলেন ইস্কন এ।

এমনি তেই বিয়ারের নেশায় আমি একটু অন্যরকম, তারপরে ক্যারোলের অমন শরীর দেখে একটু বেসামাল হয়ে পরলাম আমি। বোঁটায় কোন হালকা ইচিং হলো কি? নাকি আমার নীচে টা ভিজে গেল বিশ্রী ভাবে। চেয়ে রইলাম জলের দিকে, যতক্ষন না ইভান দড়ি তে টান পেয়ে দৌড়ে গেলো বাবাকে তুলতে জল থেকে।

বাবা ছেলে দুজনেই বেসামাল। আমি সব কিছু গুছিয়ে নিলাম। আমার মা পিন্টো কে নিয়ে ঘরে ঢুকে গেল। সন্ধ্যে হয়ে আসছে। তাপমান কমে যাবে হুহু করে এবারে। ব্ল্যাকের জলতলের উপরে ঘন কুয়াশার চাদর বিছিয়ে যাবে ধীরে ধীরে। অন্যান্য দিন সন্ধ্যে টা ইভান আমাদের সাথেই টিভি দেখে কাটায় আমাদের ঘরে। কিন্তু আজকে যেন খুব তাড়াতাড়ি হচ্ছে সন্ধ্যে। এই তো রোদ ছিল, এতো তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে হয় না তো? এই রকম কড়া রোদের পরেই ব্ল্যাকের জলতলের উপরে কুয়াশা জমতে দেরী হয়। ইভান আট টার দিকে যখন নিজের ওয়াগন এ শুতে যায় এক কাপ কফি নিয়ে তখন ওয়াগনের সামনেই বড় সার্চ লাইট টা জ্বালায় ও। চারিদিক ঘুরিয়ে দেখে নেয় একবার। তখনই দেখি হালকা কুয়াশা জমতে শুরু করেছে ব্ল্যাকের উপরে। এখন তো সাড়ে ছটা ও বাজে নি। এতো তাড়াতাড়ি কুয়াশা জমতে শুরু করল নাকি। ওরা বাবা ছেলে কি কিছুই বুঝতে পারছে না?
আমি তাড়াতাড়ি করছি, সব গুছিয়ে বিছানা গুলো কে করে দেব এবারে। ডিশ গুলো কে ধুয়ে , মাংশের হাড়ের সাথে আরো ফেলে দেবার জিনিসপত্র, একটা প্যাকেট এ করে বাইরের ডাস্টবিন এ রেখে এলাম আমি। আমাদের ঘরের বিছানা গুলো আমি ঠিক করে নিলাম। ঠাণ্ডা হাওয়ার রেশ আমি পেতে শুরু করেছি। চুল শুকিয়ে গেছে আমার। উড়ছে সেই হাওয়ায় হালকা হালকা। কেমন একটা মন কেমন করা ঠান্ডা হাওয়া। সোজা ফুসফুসে ঢুকে যাচ্ছে যেন। তাকিয়ে দেখলাম সামনের দিকে, বাবা আর ছেলে দুজনাই খালি গায়ে পাশা পাশি বসে আছে ব্ল্যাকের দিকে তাকিয়ে। এক ই রকম শরীর দুজনের। ফরসা, সারা গায়ে পিঠে লাল লাল ছোপ। এটা নাকি ব্রুনো দের পারিবারিক দাগ। কোমরে মাত্র একটা শর্টস। আমি এগিয়ে গেলাম ওই দিকে হাতে ক্যারোলের একটা গরম জামা নিয়ে। দ্রুত সন্ধ্যে হচ্ছে।

কুয়াশার ধোঁয়া বাড়ির ভিতরেও এবারে চলে এলো প্রায়। আমি দ্রুত এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে। জকি কে দেখলাম আমার ঠিক পিছনে পিছনে ও আসছে। লেজ টা নীচের দিকে। একটু ঘাবড়েই গেলাম আমি এখন। যতদুর জানি, জকি ভয় পায় না সহজে। লেপার্ড এসেছিল একবার আমাদের বাড়িতে। কিন্তু জকি যে ভাবে সামনে দাড়িয়েছিল, পাহাড়ি নেকড়ে গুলো ও ওই ভাবে মোকাবিলা করতে পারত না কোন দিন ওই রকম একটা শক্তিশালী লেপার্ডের। একটা মাস দুয়েকের বাছুরের সমান জকির উচ্চতা। ইভান আর জকি দাঁড়ালে ইভানের প্রায় কোমর ছুঁয়ে ফেলে জকির পিঠ। ভয় পাবার কথা তো নয়। আজকে ও ভয় পেল কেন হঠাত?

ক্যারোল কে জামা টা দিয়েই ও পরে নিল সেটা। আমি দৌড়ে গেলাম ইভানের ওয়াগনের দিকে। ইভান কে গরম জামা দিতে হবে এবারে। জকি আমার পিছনে পিছনেই এল। ইভানের বিছানা টা করে দিলাম। জকির জন্য একটা মোটা কম্বল বিছিয়ে দিলাম ওয়াগনের মেঝেতে। ইভানের গরম জামা নিয়ে বেরিয়ে এসে দেখলাম, ক্যারোল উঠে পরেছে ঘরে যাবে বলে। বেশ হাসি মুখ। মানে ও এই সহসা আবহাওয়া বদলে যাওয়া টা বুঝতেই পারেনি। বুঝলাম অনেক গুলো বিয়ার নেওয়া হয়ে গেছে ওর। আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,

–       তোমার ছেলে রেগে আছে তোমার উপরে। সামলাও। ওর ধারনা তুমি ওকে অপমান করেছ।

আমি হাসলাম শুনে ক্যরোলের কথা। জানি ইকারা মায়েরা ছেলেদের ব্যাপারে নাক গলায় না। বা ইকারা স্ত্রী রাও স্বামীদের কোন কাজ কর্মে হস্তক্ষেপ করে না , যতক্ষন না সেটা কোন অপরাধ বলে মনে করা হয়। কিন্তু আমার কাছে আমার পরিবারের থেকে বেশী আবেগময় ব্যাপার আর কিচ্ছু নেই। জীবনে আমার পরিবার, আর এই ব্রুনো দের ছাড়া আমার কিচ্ছু ভালবাসিনি। আমার স্বামী সন্তান ছাড়া আমার কাছে বেশী আপন আর কিচ্ছু নেই। কাজেই ইকারা নারী হলেও, আমি আমার পরিবার আর সন্তানের জন্য পুত্র এবং স্বামীর অনেক ব্যাপারেই হস্তক্ষেপ করি। এতে আমার স্বামী কোন রাগ করে না। বা ভাবে না তার পুরুষত্বের উপরে আমি সন্দেহ করছি। আসলে ভালবাসা থাকলে এইগুলো বুঝে নেওয়া যায়। আমাকে ইভান কেও বোঝাতে হবে। যে ওর উপরে আমি সন্দেহ করছি না। শুধু ওকে ভালোবাসি আমি। জানি এই বয়সের ছেলেরা মায়ের ভালোবাসা বুঝতে পারে না। জুনিয়র ব্রুনো ও বোঝেনি আমাকে বিয়ের করার সময়ে। জানিনা হয়ত ক্যারোলের বাবা মা বোঝাতে পারেনি সেটা। কিন্তু আমি হাল কেন ছাড়ব। ইভান কে শেখাতে হবে হয়তো ও পুরুষ, কিন্তু সন্তান। হয়ত ও আরো পুরুষালী হবে, কিন্তু ও স্বামী হবে ও বাবা হবে। ভালোবাসা বুঝতে পারা দরকার। আমি জানি ও কুড়ি বছরের হয়ে গেলে আমি আর কিছুই বলব না। তখন ও চিন্তা হবে আমার ওর জন্য। কিন্তু ওকে মানুষ করতে পুরুষ করতে সেই চিন্তা, সেই ভয় কে আমাকেই জয় করতে হবে।  কিন্তু তার আগে আমার ছেলের মতন অমন একটা সর্বাঙ্গ সুন্দর ছেলেকে কোন ইকারা নারী, পুরুষ হিসাবে গ্রহন করার আগে, তাকে মনে প্রানে ইকারা পুরুষ হিসাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমার ই। আমি মিষ্টি করে হাসলাম ক্যেরোলের কথায়। ক্যারোল কে ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললাম,

–       তুমি ঘরে চল। পিন্টো কে মায়ের কাছ থেকে নিয়ে বিছানায় শোয়াও। টিভি দেখ আমি আসছি, ইভানের সাথে কথা বলে ওকে সাথে নিয়ে।

চলে গেলো ক্যারোল টলতে টলতে। এদিকে কুয়াশা ব্ল্যাক লেকের জল থেকে ধীরে ধীরে উঠে এসেছে আমাদের উঠোনে। কি ঘন সাদা কুয়াশা! এ আবার কি? ইভান বসে আছে গোঁজ হয়ে। আমি ওর পিছনে গিয়ে ওর গায়ে চাপিয়ে দিলাম ওর গরম জামা টা। সাড়া দিল না ইভান। ও জানে আমি এসেছি। আমি ওর পাশে বসলাম। গরম জামা সুদ্দু ওকে জড়িয়ে ধরলাম আমি। ওর কাঁধের কাছে জামা টা সরিয়ে গভীর চুমু খেলাম আমি। বললাম,

–       কি ব্যাপার আমার সোনা ছেলে এতো রেগে আছে আমার উপরে? বাবার কাছে গাড়ীর চাবি নিয়ে দিলাম। আমার ছেলে আমাদের জন্য দামী মাংশ এনেছে, সেটা গর্ব করে সবাই কে বললাম, আর এই একটা ছোট্ট কারনে আমার ছেলে আমার উপরে রেগে?

তাতেও ইভান সাড়া দিলো না। আমি ওকে দেখলাম, সুন্দর মুখ টা লাল হয়ে আছে। জোরে জোরে শ্বাস পরছে ওর। বুঝলাম ইগো হার্ট হয়েছে ওর। অনেক সময়ে মা কে সেই ইগো স্যাটিস্ফাই করতে হয়, ছেলেকে বাগে আনার জন্য। আমিও দেরী করলাম না, বললাম,

–        বেশ আমি সরি। আমার ছেলেকে আমি বিয়ার খাবার পরে জলের তলায় নামতে দিই নি, সেই জন্য আমি সরি। তুই শুনলি কেন আমার কথা? না শুনলেই পারতিস? তখন আমি দুঃখ পেতাম। তুই তো আনন্দে থাকতিস। দ্যাখ সোনা, তুই কষ্ট পাচ্ছিস আমার সহ্য হয় না। আর পর থেকে তুই শুনিস না কথা। আমি কষ্ট পেলেও মেনে নেব। তোকে কম ভালো তো বাসতে পারব না তোর মতন। এখন যেমন তুই আমাকে দেখছিস ও না।
এতো গুলো কথা বলে আমি চুপ করে রইলাম। দেখছিলাম ও কি বলে। ইভান কোন কথা বলল না। হয়ত বুঝল আমার উপরে একটু বেশী ও রেগে গেছে। সরে এলো ছোট বেলার মতন আমার কাছে। আমার কাঁধে মাথা টা এলিয়ে দিলো। এতো কুয়াশার ঘনত্ব বেড়ে গেছে যে আমি ছেলের মুখ টাই দেখছি শুধু। আমার হাত টা ও নিজের হাতে নিয়ে আছে, সেই হাত টুকুও দেখতে পারছি না বলতে গেলে। আমি ওর কপালে আবার চুমু খেলাম। ও আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমিও আনন্দে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার কোলে মাথা লোকালো ও ছোট বেলার মতই। বলল,

–       সরি মা। আর তোমার উপরে রাগ করব না।
–       উম্মমাহহ আমার সোনা ছেলে। আমি তো তাই ভাবছি, আমার ছেলে আমার উপরে রেগে থাকে কি করে? উম্ম। একটু মায়ের আদর খেতে ইচ্ছে হয়েছিল, তাই না রে দুষ্টু?
–       উম্মম্মম।

বলে আমাকে কোল টা ও জড়িয়ে ধরল দু হাতে। পিছনে থেকে জকি আমার কাঁধের পাশ দিয়ে মুখ টা বাড়িয়ে দিল। আমি ইভানের হলুদ চুলে হাত বোলাচ্ছিলাম। মাঝে মাঝেই খোলা পিঠে চুমু খাচ্ছিলাম মুখ টা নিচু করে।

–       গরররররররররররর গরররররররর…

আওয়াজ টা জকির গলা থেকে আসছে কারণ ও আমার কাঁধে ওর মুখ দিয়ে বার বার ঠেলছে। প্রথমে ভাবলাম, ইভান কে আদর করছি তাই জকির রাগ হচ্ছে। অনেক সময়েই ও এমনি করে গররররর করে আওয়াজ করে ইভান কে আদর করলে। কপট রাগ দেখায় ও। জকি কে আদর করে দিলে একটু কিন্তু ও থেমে যায়। সেটা বুঝেই আমি মুখ দিয়ে ইভানের পিঠে চুমু খাচ্ছি আর হাত দিয়ে জকির গলায় আদর করে দিচ্ছি। কিন্তু আজকে যেন থামছেই না। আর বারংবার আমাকে ঠেলছে। আমি ইভানের দিকে তাকালাম। ওর কাছেও জকির এমন আচরণের কোন উত্তর নেই। কিছুক্ষন টানা গরররররর আওয়াজ টা পেয়ে ইভান উঠে পরল । ইভান আর আমার মাঝে জকির মুখ টা। দুজনাই তাকালাম ওর দিকে। বিশ্রী ভাবে মুখ টা রেগে দাঁত গুলো বের করে আছে জকি ব্ল্যাকের দিকে তাকিয়ে। মৃদু গরররররররররর আওয়াজ টা থামছে না ওর। এই আওয়াজ টা আমরা দুজনাই চিনি। মারাত্মক ভয়ের সাথে রাগের বহিপ্রকাশ এটা ওর।আর লেজ টা একেবারে গুটিয়ে দুই পায়ের ফাঁকে ঢুকে গেছে জকির।

শুধু মাত্র জকির ভয়ার্ত গর্জনের আওয়াজ ছাড়া মনে হলো চারদিক মারাত্মক শান্ত। ব্ল্যাকের উপরে পাখিদের ঘরে ফেরার কলতান, বিশাল হ্রদের ছোট ছোট ঢেউ পায়ের নীচে আছড়ে পরার শব্দ, দূরে গাড়ীর হর্ন, আমাদের উঠনে সব গাছে বাসা করে থাকা, লক্ষ লক্ষ পাখিদের কিচিরমিচির যারা এই ব্ল্যাক লেকের প্রাণ, এই সব যেন কিচ্ছু নেই আর। একটা অখন্ড নিস্তব্ধতা।

ইভান আমার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন। খানিক একেবারে নিস্তব্ধ থাকার পরে, ভীষণ নীরবতার মাঝে বুঝতে পারলাম আমি, জোরে জোরে হাওয়া টানা শব্দ। লক্ষ ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ। পাশেই জকির গরররররররর আওয়াজ টা যেন ধীরে ধীরে একটা তীব্রতা পাচ্ছে। সহসাই জকি লেকের উল্টো দিকে দৌড় দিল আমাদের বাড়ির সদর দরজার দিকে অসম্ভব চিৎকার করতে করতে। ইভান উঠে দাঁড়িয়ে তীব্র বেগে দৌড়ল নিজের ওয়াগনের দিকে। আর আমি লেকের একেবারে সামনেই দাঁড়িয়ে বাড়ির দিকে মুখ করে তখন। প্রচণ্ড ভয় লাগল আমার। চিৎকার করে ক্যারোল কে ডাকলাম আমি।

–       ক্যারোল ক্যারোল !!!!!!!

এক মুহুর্তে অনেক গুলো ঘটনা ঘটল। আমি লেকের উল্টো দিকে বাড়ির দিকে চেয়ে দেখলাম, কুয়াশা নেই আর। কালো হয়ে বিশাল জায়গা জুড়ে কিছু একটা উড়ে আসছে। একটু কাছে আসতেই বুঝলাম লক্ষ লক্ষ পাখী উড়ে আসছে আমাদের দিকে। যেটা আধ মিনিট আগেও ছিলো সামান্য একটু জায়গা জুড়ে সেটা সামনে চলে এল সহসাই। ডানা ঝাপটানি তে কুয়াশা সরে গেছে একেবারে। বিহ্বল হয়ে গেছিলাম আমি। আমার পা সরছিল না। এমন অদ্ভুত কান্ড আমি আগে ইকারা তে দেখেছি বলে মনে পরে না। কোন দিকে যাব বুঝতে পারছিলাম না। বাম দিকে ইভান আছে ওয়াগন এ আর ডান দিকে পুরো পরিবার। কেমন একটা অবশ হয়ে গেছিল আমার শরীর, প্রকৃতির এই রকম ভয়ঙ্কর খেলায়। এতো পাখী ছিল কোথায়? দেখলাম শুধু আকাশ পথেই নয়, মাটির কাছাকাছি ও ওরা উড়ছে। এতো নীচে দিয়ে উড়ছে ওরা কোন মরন ভয়ে? ধাক্কা খাচ্ছে এদিকে ওদিকে। পরে যাচ্ছে। কেউ মারাও যাচ্ছে। কিন্তু সামনের দিকে যেন ওদের যেতেই হবে। পিছনে কোন যমদূত আসছে কে জানে। জকি তীব্র চিৎকার করতে করতে ছুটে এলো আমাদের দিকে। সেটা দেখে আমার সমগ্র শরীর অবশ হয়ে গেল। কি করব? ওরা যে আর হাত কয়েকের দুরত্বে।

ঠিক সেই সময়েই  ইভান ওয়াগন থেকে বেরিয়ে এসে আমাকে জাপটে ধরে শুয়ে পরল ওই নুড়ির উপরেই আমার মাথা টা চেপে ধরে। না হলে ওদের নখে মারাত্মক আঘাত লাগত আমার। বুঝলাম লক্ষ লক্ষ পাখী আমাদের বাড়ির উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে লেকের দিকে। ইভানের হাতে ওর পিস্তল টা। ক্যারোল বেরিয়ে এসেছে ডাবল ব্যারেলের গান টা নিয়ে। মারাত্মক আওয়াজ হচ্ছে পাখীদের। যে আওয়াজ টা ভাললাগে সকালে সন্ধ্যে বেলায়,এখন সেটা শুনে বুকে হিম হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সব পাখী রাই আর্তনাদ করতে করতে লেকের দিকে উড়ে চলেছে। মনে ওদের মৃত্যু ভয়। কিছু পাখি তো একেবারে আমার চুল ছুঁয়ে উড়ে যাচ্ছে লেকের দিকে। মাথা নিচু করে কোন রকমে ইভান কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি আমি। ইভান আমার মাথা তুলতে দিচ্ছে না। আমার মাথার মধ্যে একটা হাত দিয়ে ও চেপে আছে। কোনরকমে মাথা একটু তুললেই বুঝতে পারছি ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি রা উড়ে আসছে।
বাইরের কোলাহলে ঘর থেকে ক্যারোলের সাথে কীট আর মালিয়া ও বেড়িয়ে এসেছে। মা ও বেরিয়ে এসেছে। চিৎকার করছি ওদের কে ঘরে যেতে বলে। কিন্তু বাইরের এই আর্তনাদে কেউ আমার কথা শুনতে পারছি না। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেছি আমি। আমাদের ঘরের সামনেই, আলো দেখে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখী ঘরে ঢোকার চেষ্টা করছে। ক্যারোল হাত দিয়ে বন্দুকের নল দিয়ে ওদের কে সরিয়ে দিচ্ছে। জকি একেবারে আমার আর ইভানের কাছে এসে পরিত্রাহি চিৎকার করছে। ওর আওয়াজে এমন ভয় আমি কোন দিন অনুভব করি নি। ততক্ষনে মনে হয় চারদিকে ইকারা পুরুষ রা নিজেদের বন্দুকে গুলি ভরে ফায়ার করতে শুরু করেছে। বিচ্ছিন্ন ভাবে ভেসে আসা গুলির আওয়াজ পেলেও ক্যারোল বা ইভান কোন ফায়ার করল না।

ক্যারোল কীট আর মালিয়া কে নিয়ে, আমাদের স্টর্ম শেল্টার এ ঢুকিয়ে দিলো কোন রকমে। তার পরে মা আর পিন্টো কে নিয়ে ও ওই শেল্টার এ ঢোকাল। এতো পাখি আর পতঙ্গ এর ভিড় আমাদের উঠোনে যে ক্যারোল কে এক ফুট এগোতেও রিতিমতন হাত চালাতে হচ্ছিল।
আমি তো ভাবতে পারছি না, কি হচ্ছে। সুনামী? কিন্তু তাহলে তো লেকের দিক থেকে সবাই ছুটে আসবে। কিন্তু উল্টো দিকে ছুটে চলেছে সবাই। জলের দিকে যাচ্ছে কেন? এদিকে ক্যারোল আমাকে আর ইভান কে ডাকছে শেল্টার এ যাওয়ার জন্য। ইভান আমার মাথা চেপে তখন ও ধরে আছে। আমি ইভান কে ইশারা করলাম শেল্টার এ নিয়ে যেতে আমাকে। ভীর বাড়ছে পাখীদের। সাথে নানা রকম পতঙ্গের ও ভিড়। আমার লক্ষন ভালো ঠেকছে না একদম। এই রকম ব্যাপার তো আমি কোন দিন ও দেখিনি। শুনিও নি আমাদের কোন ইকারা ইতিহাসে। পাখী গুলো এখানে সেখানে ধাক্কা খাচ্ছে মারাত্মক। উঠন জুড়ে ধাক্কা খাওয়া পাখীদের দেহ ছড়িয়ে রয়েছে।

–       আউ

আমার গায়ে , ইভানের গায়ে পাখীদের দেহ খসে খসে পরছে। আমার পিঠে পাখী দের নখের আঘাত লাগছে। আমার জামা ফুঁড়ে ওদের নখ যেন বসে যাচ্ছে পিঠে। অন্যান্য সময় হলে জকি মুখে করে তুলে সরিয়ে দিত বা খেয়ে নিত। আজকে যেন ওর সে রকম কোন ইচ্ছেই নেই। ভয়ে পরিত্রাহি চিৎকার করছে জকি। লাফাতে লাফাতে খপ করে ধরে নিচ্ছে মুখে সামনে আসা কোন পাখী কে। আতঙ্কে লেজ একেবারে গুটিয়ে নিয়েছে জকি। প্রচণ্ড ভয় লাগছে আমার। ইভানের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ওর চোখে মুখেও আতঙ্ক।ইভান আমাকে কোনরকমে তুলে নিয়ে শেল্টার এর কাছে পৌঁছে দিতেই ক্যেরোল আমাকে ভিতরে টেনে নিল। আমি ইভানের হাত টা ধরে রইলাম। ইচ্ছে ইভান ও চলে আসুক শেল্টার এ। ইভান এলো না। ওর ওয়াগনে যাবে কিছু জিনিস নিতে। জকি কেও আনতে হবে। ও বলল আমাকে,

–       মা আমি আসছি চিন্তা কোর না একদম । জকি কে নিয়ে আসছি। ও চলে গেল কোথায় দেখি।
–       যাবি না ইভান। আমার দিব্যি তুই এখানে এসে ঢুকে পর।

ভয়ে আমার প্রান টা বেরিয়ে যাবে এবারে। ও শুনল না আমার কথা। ভালো লাগে না। ইকারা ছেলে রা এমনিই অবাধ্য হয়। ক্যারোল বন্ধ করে দিল শেল্টার এর শাটার টা। ঠিক সেই সময়েই দুম দাম করে বেশ জোরে দু তিনটে আওয়াজ হলো। মনে হল বোম ফাটল কোথাও। আর সাথে সাথেই কারেন্ট চলে গেলো। ক্যারোল বলল,

–       বুঝতে পেরেছিলাম।

আমি ভয় গেছি খুব। বললাম ওকে,
–       কারেন্ট কেন গেলো?

ক্যারোল বেশ চিন্তার সাথে জবাব দিলো,

–       যাবার ই কথা। এখানেই এতো পাখী। ভাব সাব স্টেশনে ওই রকম ফাঁকা জায়গায় কত পাখী জড়ো হবে? শর্ট সার্কিট হয়েছে কোন বড়সড়। কি জানি এই সব মিটে গেলেও তিন চারদিন পাওয়ার এলে হয়।

যখন বিপদ আসে একসাথেই আসে। ইকারা বাসীর অভ্যেস আছে বিপদের। যত সময় যাচ্ছে আমার ভিতরের ভয় টা কমে সন্তানদের চিন্তা বাড়ছে। ছোট্ট দুটো জানালা আছে, শেল্টার এর ভিতরে। ঝড়ের সময়ে আমরা ঢেকে রাখি জানালা দুটো স্টিলের শাটার দিয়ে। জানালা দুটো ছোট আর মারাত্মক শক্ত রড দিয়ে গার্ড করা বাইরের দিকে। ক্যারোল কে বললাম, বেঁচে থাকা মাংস নিয়ে চলে আসতে। অল্প শাটার তুলে বেরিয়ে গেল ক্যারোল। আর আমি মালিয়া আর কীট কে জড়িয়ে ধরে রইলাম। আর জানালার ছোট শাটার খুলে দেখতে লাগলাম। বাইরে পাখীদের ভিড় যেন বেড়েছে। কুয়াশা কেটে গেছে পাখীদের ডানা ঝাপটানো তে। ধুপ ধাপ আওয়াজ আমাদের শেল্টার ওয়াগনের ছাদে। পাখীদের আহত বা নিহত দেহ খসে পরার আওয়াজ। সেই ফাকেই ক্যেরোল নিয়ে চলে এলো একটা বিশাল বাকেট এ করে বেঁচে থাকা তন্দুরী। সাথে টর্চ আর রেডিও টা নিয়ে এলো। আমি খাবার আনিয়ে নিলাম, কি জানি যদি আজকে বের হতে না পারি এখান থেকে। এখন আমার কাজ হবে ইভান কে নিয়ে আসা এখানে। জানালা দিয়ে দেখলাম, ইভানের ওয়াগনের শাটার দিয়ে আলোর ছটা। মানে ও আলো জ্বালিয়েছে। জানালা দিয়ে চিৎকার করলাম আমি,

–       ইভান, সব ঠিক আছে তো? ইভান ইভান!! ইভান!!

চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।কেন যে কোন কথা শোনে না ছেলেটা। ভাগ্যিস ছুটে এসে তখন আমাকে নিয়ে মাটিতে চেপে ধরল না হলে এমন বিহ্বল হয়ে গেছিলাম আমি, নিশ্চিত ভাবে আহত হতাম আমি। আমার আওয়াজ মনে হয় ইভান শুনেছে। আওয়াজ পেলাম খুব দূর থেকে

–       হ্যাঁ মা আমি ঠিক আছি। এই সব কমলে আমি আসছি। সিনিয়র ব্রুনো ঢুকেছে শেল্টার এ?

এই বিপদের মাঝেও হাসি পেয়ে গেল আমার। ভাবলাম ঠিক ই। এ বাড়িতে এখন সিনিয়র ব্রুনো, আমার স্বামী ই। ক্যারোলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ক্যারোল ও হাসছে। চিৎকার করলাম শাটার দিয়ে মুখ বাড়িয়ে।

–       হ্যাঁ, তুই সাবধানে থাক। শাটার খুলিস না এখন। জকি ঠিক আছে?
–       ওকে মম।

কিছুক্ষন পরে আবার শুনলাম ও বলছে,

–       হ্যাঁ জকি ঠিক আছে এখন।

উত্তর টা পেয়ে আমার একটু ভালো লাগল। পিন্টো কে মায়ের কোল থেকে নিজের কোলে নিলাম। আহারে ছেলেটা আমার ভয় পেয়ে গেছে। কীট কে আর মালিয়া কে বুকে টেনে নিলাম। এক হাত বাড়িয়ে মায়ের হাত টা আমি হাতে নিলাম। ক্যারোল আমাদের সবাই কেই জড়িয়ে ধরল উপর থেকে। ইশ ইভান টাই নেই আমার কাছে। একবার ও শেল্টার এ এসে ঢুকুক, এবারে পাকামো করলেই আমার কাছে বকা খাবে ও। না বাবা আর ছাড়ব না আমি ওকে।

জানিনা কতক্ষন ওই ভাবে কেটেছে আমাদের। শেল্টার টা ছোট একটু আমাদের সবার জন্য। কিন্তু এটাই বেস্ট। কারন লাগোয়া বাথরুম আছে। ইভানের ওয়াগন টা বড় হলেও, কোন বাথরুম নেই। ক্যারোল বানিয়েছিল এটা সেই ভাবেই। একবার শীতে ভয়ঙ্কর তুষার ঝড় হয়েছিল প্রায় তিন চার দিন। প্রায় তিন ফুট তুষারে চাপা পরে গেছিল ইকারা শহর। তখন সবে কীট আমার পেটে এসেছিল। চারদিন ছিলাম সবাই মিলে এই শেল্টার এই। কিন্তু এই রকম জীবন হানি হয় নি। পাখীদের কি হলো আবার? সবাই মিলে লেকের দিকে ছুটে আসার কি হলো। কিছুর ভয় পেয়েছে নাকি? আমার মনে এই সমস্ত কথা চলছে আর বাইরের ঘটনার আতঙ্কে আমরা সবাই বসে আছি একে অপর কে ধরে। সময় এখন রাত্রি নটা। হাড় হীম করা ঠান্ডা এখন। মনে হচ্ছে আমাদের শেল্টার এ পাখীদের দেহ পরার আওয়াজ কমল। ধুপ ধাপ আওয়াজ টা বেশী পাই কারন এই ওয়াগন গুলো স্টিলের। আওয়াজ টা একটু বেশি ই আসে। বাইরের শনশনানি আওয়াজ টা ও কমল। ঠাণ্ডার তীব্রতা বলে বোঝাতে পারা যাবে না। ক্যারলের নিয়ে আসা কম্বল গুলো দিয়ে ছেলে মেয়ে গুলো কে ঢাকলাম আমি। বাইরে অখণ্ড নীরবতা। একটা বাতি জ্বাললাম। দরজা টা না খুলে, জানালার শাটার গুলো কে খুললাম আমি। ক্যারোল ততক্ষনে খবর শুনতে রেডিও টা চালিয়েছে।

বাইরের নীরবতার উপরে ভরসা করে আমি ইভান কে ডাক দিলাম।

–       ইভান !! ইভান !!! চলে আয় এখানে। দেরী করিস না আর। সব থেমেছে।

বাইরের আর আওয়াজ নেই। ইভান সহজেই শুনল মনে হয় আমার কথা। ও সাড়া দিল,

–       মা আমি ঠিক আছি। আসছি, আমি আর জকি। তুমি বেরিও না। ড্যাড কে বল বড় গান টা নিয়ে বেরোতে।

ক্যারোল শুনতেই পেল। ও চেঁচিয়ে ইভান কে বলল

–       ঠিক আছে আমি বেরোচ্ছি। তুই ও তোর পিস্তল টা নিয়ে বের হয়ে আয়।এমুনেশন যা আছে নিয়ে নে সাথে। ভয় নেই আমি বেরোচ্ছি।
ওদিক থেকে আওয়াজ এলো,

–       ওকে ড্যাড।

রেডিও ও চালিয়ে দিয়েছিল ক্যারোল। খবর শুনতেই। ততক্ষনে খবর ও শুরু হয়েছে। একটি মেয়ে খবর পড়ছিল। সম্ভবত, এটা আটলান্টিস শহরের ওয়েভ্লেন্থ এ খবর টা হচ্ছে। ইকারা র খবর ও বলে এখানে। বুঝতে পারছিলাম না কি বলছে। ঠিক ঠাক ধরে নি স্টেশন টা। নব টা একটু ঘোরাতেই আওয়াজ টা পরিষ্কার এল এবার। শুনতে পেলাম বলছে মেয়েটি পাখী দের উৎপাতের কথা। মাঝখান থেকে শুনতে শুরু করলাম।

–       সবাই কে বলা হচ্ছে ঘর থেকে না বের হতে। কোন শক্ত শেল্টার এর ভিতরে ঢুকে পরতে। অজস্র জীবন হানি হয়েছে। আটলান্টিস এর রাস্তা রক্তে লাল। নালা দিয়ে জলের বদলে রক্তের স্রোত। ছাদ থেকে রক্ত টপিয়ে পরছে। রাস্তায় চলতে থাকা গাড়ি গুল রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছ।

অ্যাঁ? পাখীদের এমন কান্ডে রাস্তা রক্তে লাল হবে কেন? শুনি তো ভালো করে,

–       বার বার বলছি সবাই কে শেল্টার এর ভিতরে থাকতে। সরকার থেকে এইড আসতে সময় লাগবে এখনো। শুধু আটলান্টিস বা ইকারা নয়, পুরো ট্রিভিয়ার সমস্ত বড় শহরেই এই আক্রমন হয়েছে।

আক্রমন? কীসের আক্রমন? ওদিকে বলেই চলছে মেয়েটি রেডিও তে,

–       দেখতে একটি লাল পিঁপড়ে একটা পূর্নাংগ মানুষের আকৃতির হলে যেমন হয় ঠিক তেমন দেখতে। খুব সাবধান। চারটি পায়ের একটির আঘাত ও যথেষ্ট হাতির শুঁড় ছিঁড়ে ফেলতে। ভয়ঙ্কর দ্রুতগামী। ছোট শব্দ ও অনেক দূর থেকে শুনে ফেলে। পঙ্গপালের মতন শহর কে দখল করে ফেলেছে এরা। হয়ত পুরো ট্রিভিয়াই এদের দখলে চলে গেছে।  লোহা কে ভয় পায়। জল কে ভয় পায়।  আপনারা সাবধানে থাকুন। আমি সময়ে সময়ে আপনাদের আপডেট দিতে থাকব।

কীসের কথা বলল রেডিও তে? এরা কারা?  ততক্ষনে বাইরে বেরিয়ে গেছে ক্যারোল। বুক টা আমার ভয়ে শুকিয়ে গেল। ওদিক থেকে ইভান ও তো বেরিয়ে আসবে। বাইরে টা অস্বাভাবিক শান্ত কেন? এতোক্ষনে তো ওদের চলে আসার কথা শেল্টার এ। হে ভগবান!!!!! আমি পিন্টো কে মায়ের কাছে দিয়ে বেরিয়ে এলাম শেল্টার এর বাইরে। বেরিয়ে এসে যা দেখলাম তাতে আমার বুক উড়ে গেল। ভয়ে আমি ওখানেই থ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছি। দেখলাম ইভান আমাদের দিকে আসতে আসতে যেন থমকে দাঁড়িয়ে গেছে। আর ক্যারোল ও ইভানের দিকে যেতে যেতে যেন থমকে গেছে। ইভান নিজের ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বাবা কে একদম শব্দ করতে মানা করছে। আর অন্য হাতে পিস্তল টা ধরা। কেন না, ক্যারোলের পিছনেই একটা অদ্ভুত আকৃতির প্রানী। ক্যারোল এর থেকে খুব বেশি হলে মিটার দুই দূরে।

রেডিও র আন্যাউন্স মনে পরল, পিঁপড়ে র মতন দেখতে মানুষের মতন বড় কোন প্রানী আক্রমন করেছে। প্রানী দুই পায়ে দাঁড়িয়ে আছে সামনের দুটো পা কে হাতের মতন তুলে। বেশ লম্বা লম্বা আর শক্তিশালী হাত পা। ওদের জোরে দৌড়তে পারার কারন টা বুঝলাম আমি।

আমি থরথর করে কাঁপছিলাম। আমাকে যে দুজন কেই বাঁচাতে হবে। ওদের দুজনের একজনের কিছু হয়ে গেলে আমি আর বাঁচব না। মনে পরল রেডিওর কথা গুল। এক থাবা তে হাতির শুঁড় ছিঁড়ে ফেলতে পারে পোকা গুলো। ভয়ে মনে হলো আমার শরীরের প্রতিটা অঙ্গ আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। আমার ভয় পাওয়ার বাকি ছিল আরো। ভয় তখন পেলাম যখন দেখলাম, ইভানের পিছনে ওয়াগনের ছাদে একটা ওই রকম প্রানী ওঁত পেতে রয়েছে পিছন থেকে ইভানের উপরে ঝাপাবে বলে। ওয়াগনের উপরের প্রাণী টা যেন ঝাঁপিয়ে পরবে সেই ভাবে দেখছে ইভান কে। ইভান পিছনের টা কে দেখতে পাচ্ছে না। ক্যারোল ইভানের দিকে চেয়ে আছে আর ইভান ক্যারোলের দিকে। দুজনে দুজনের পিছনের টা কে দেখতে পেয়েছে। তাই দুজনেই দুজনের দিকে চুপ থাকার ইশারা করছে। কেমন একটা আওয়াজ হচ্ছে দুটো পিশাচের কাছে। অনেক মানে অনেক, লাখ লাখ কোটি কোটি পোকা একসাথে কিলবিল করলে যেমন আওয়াজ হয় তেমন ই আওয়াজ টা। আমিও নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে। গা গুলিয়ে উঠছে আমার। ব্রহ্মতালুর কাছে একটা সুরসুর ভাব। খুব ভয় পেলে আমার হয় এমন।  ভাবছি,

–       হে শক্তিশালী প্রভু আমাকে শক্তি দাও। আমার জীবনের সব থেকে কাছের দুটো মানুষ কে বাঁচানোর ক্ষমতা আমাকে আমাকে। একজন আমাকে মা বলে আর একজনের সন্তানের মা আমি। হে ঈশ্বর!!!!

নীচে পরে থাকা একটা চ্যাপ্টা স্টিলের পাত তুলে নিলাম আমি হালকা নীচু হয়ে। ভাবছি নিজের প্রান যায় যাক, এদের একজন কেও আজকে আমি কিছু হতে দেব না। ঠিক সেই সময়ে ইভানের পিছনের টা নড়াচড়া শুরু করল, মনে হল ঝাঁপাবে। আর আমি বুঝে গেছি, একবার ইভান কে হাতের কাছে ও পেলে এক লহমা তেই সব শেষ করে দেবে। আর সময় নেই আমার হাতে। হাতের স্টিলের পাত টা নিয়ে দৌড়ে গেলাম আমি যতটা সম্ভব। জানিনা কি করে সম্ভব হলো, ওই প্রানী টা ইভান কে পিছন থেকে আক্রমন করলেও ততক্ষনে আমি পৌঁছে গেছিলাম, আর সজোরে চালিয়ে দিয়েছিলাম প্রাণি টার মাথা লক্ষ্য করে। কোন একটা নরম কিছু তে যেন ধারালো পাত টা বসে গেল। আর পাতের শেষ ভাগ টা ওয়াগনে লেগেই একটা আওয়াজ হলো।

ঢং………………………

আমি আসলে ঝাঁপ দিয়েছিলাম ইভান কে বাঁচাতে। ইভান বসে পরেছিল। আমি তো পরে গেছিলাম তখন, আর ইভান ওর বাবার পিছনে থাকা প্রানী টার মাথা লক্ষ্য করে পিস্তলের গুলি টা চালালো। যখন আমি চাইলাম ওদের দিকে দেখলাম ওর বাবা একেবারে থ হয়ে দাঁড়িয়ে পরেছে। পিছনের প্রানী টা মরে পরে আছে। ইভান একেবারে সঠিক ভাবেই গুলি টা চালিয়েছিল প্রানী টার মাথা লক্ষ্য করে। আর নেই মনে হয় আশে পাশে । আমি উঠে বলতে যাব এবারে চল সবাই মিলে, ঠিক তখন ই একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম, মনে হলো হাজার ভোমরা খুব দূরে গুনগুন করলে যেমন আওয়াজ হয় ঠিক তেমন আওয়াজ। আমার বলা শুরু হলো না, কিন্তু ইভানের ওয়াগনের মাথা থেকে একটা ঠিক ওই রকম প্রানী লাফ দিল একেবারে আমার উপরে। আমি তো শুয়ে আছি পরে গিয়ে।  ঠিক তেমন আওয়াজ টা আবার পেলাম। অনেক অনেক পোকা কিলবিল করার শব্দ। ঘেন্নায় আমার সর্বাংগ গুলিয়ে উঠছে। আর একটা কি বিশ্রী গন্ধ। ওই শয়তান টা আমাকে না মারলেও এই গন্ধে আমি মরে যাব এবারে।

ভয়ে চোখ বুজে ফেললাম আমি। জানি মৃত্যু আমার অবশ্যম্ভাবী। আর কিছু পরেই হয়ত আমার মাথাটা ধড় থেকে আলাদা করে দেবে এই পিশাচ টা। তার আগে চাইছিলাম ব্রুনো রা ঢুকে যাক শেল্টার এ। ঠিক সেই সময়েই বাঘের মতন আওয়াজ করে জকি লাফ দিল প্রানী টার উপরে। কোথায় ছিল কে জানে? মায়ের বিপদে যেন দেবতার মতন আবির্ভাব হলো ওর। জকির সারা গায়ে জল। মনে হলো লেক থেকে উঠে এলো জকি। আর সাথে সাথেই ইভানের পিস্তল চলল – গুড়ুম। আমি চোখ বুজে ছিলাম। মনে হলো প্রানী টা আমার উপর থেকে সরে গেল। আমি চোখে খুলতেই দেখলাম, ইভান লেকের দিকে দৌড় দিল আর পিছনে জকি। আমার উপরে থাকা প্রানী টাও ওই দিকেই দৌড়ল। ইভানের গুলি টা বোধ করি লাগে নি ওর মাথায়। পায়ে লেগেছে, আর তাতেই প্রানী টার দৌড় দেখার মতন। জলে ঝপাং করে তিনটে আওয়াজ হলো পরপর…

ঝপাং… ঝপাং…………………………………………………ঝপাং।

বুক টা আমার খালি হয়ে গেল। ততক্ষনে ক্যারোল আমাকে পাগলের মতন টানছে শেল্টার এর দিকে আর আমি লেকের দিকে নিজেকে টানছি। আমি ইভান কে ছাড়া শেল্টার এ যাবই না। প্রান গেলে যাক। আমার ছেলেকে আমি এই নরখাদক দের কাছে ছেড়ে দিয়ে কোন মতেই শেল্টার এ যেতে পারব না ……………। চিৎকার করে উঠলাম আমি,

–       নাআআআআআআআআআ… আমাকে ছেড়ে দাওও ও ও। ওগো আমার ইভান কে ওরা মেরে ফেলবে গো। আমি যাবই।

যুদ্ধ করছি আমি ক্যারোলের সাথে। আমাকে ও আটকে রাখে দিয়েছে। আমি ক্যারলের হাত নখের আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত করছি। চিৎকার করছি পাগলের মতন।

–       না আ আ আ আ আ আ আ আ আ আ আ । ইভান !!!!! ইভা আ আ আ আন ফিরে আয় সোনা!!!!!  ইভাআআআআআন!!!!!!!!!!!!!!

কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম আমি।
–       আআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআ

চলবে —————————–



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/mPfun06
via BanglaChoti

Comments