প্রতিশোধঃ দ্যা রিভেঞ্জ (পর্ব-২)

দ্বিতীয় পর্ব
—————————–

বড়ো শিবমন্দির, পূজোর আয়োজন হচ্ছে, বাইরে লোকের ভিড় তার মাঝে সিকিউরিটি গার্ডদের কড়া নজর, শহরের নামকরা ব্যাক্তি বীরেন ভট্টাচার্য আসছেন সাথে আসছেন তার ভাই ধীরেন ,দুই ভাইয়ের দুই স্ত্রী এবং দুই ভাইয়ের বড়ো দিদি বৈশালী দেবী আর দুই ভাইয়ের দুই মেয়ে বৃষ্টি ও তাথৈ।

বীরেন ভট্টাচার্য শহরের একজন গণ্যমাণ্য ব্যাক্তি, শুধু যে একজন বড়ো বিজনেসম্যান তাই নয়, বর্তমানে ভোটে জিতে মণ্ত্রীও হয়েছেন, শহরের লোক তাকে যতটা সম্মান করে তার থেকে বেশি ভয় করে, তিনি যেখানে থাকেন সেখানে সবাই তাকে যমের মতো ভয় পায়, সবাই জানে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরোধিতা করা মানে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনা, সহজে কেউ তাকে ঘাটায় না কারণ বীরেন ভট্টাচার্য যার পিছনে লাগেন তাকে একেবারে মাটিতে মিশিয়ে দেন।
মন্দির চত্বরে তার গাড়ি আসতেই লোকজন ভয়ে সরে যায়, জায়গা ছেড়ে দেয়, তার পিছনে আরো কয়েকটা গাড়ি প্রথমে কয়েকজন বডিগার্ড নেমে এলাকাটা ভালোভাবে পরখ করে নেয় তারপর একে একে বীরেন ভট্টাচার্য ও তার পরিবারের লোকজন নেমে আসে এবং মন্দিরের দিকে এগিয়ে যায়।
মন্দিরের ভিতরে যতক্ষণ ভট্টাচার্য পরিবার থাকবে ততক্ষণ অন্যান্য সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ, তবুও লোকজন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে পূজো শেষে আজ বীরেন ভট্টাচার্যের ভাইঝি তাথৈ নিজে হাতে সবাইকে প্রসাদ বিতরণ করবেন। অনেক নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে তারাই ভিড় নিয়ণ্ত্রন করছে।
পূজো শুরু হয়েছে একে একে ভট্টাচার্য পরিবারের সবাই শিব লিঙ্গের উপর দুধ ঢালছে, ফুল-বেলপাতা দিচ্ছে এমন সময় নিরাপত্তারক্ষীদের টপকে এক শতছিন্ন কাপড় পরা, নোংরা উসখো-খুসকো চুল বোঝাই পাগলী গোছের মহিলা মন্দিরে উঠে এলো তারপর বিকট অট্টহাসি হাসতে লাগলো আর বলতে লাগলো “পূজো করে কিচ্ছু হবে না, তুই মরবি কেউ বাঁচাতে পারবে না” সবাই চমকে উঠলো
পাগলী আবার বলে উঠলো “যতই বাবার মাথায় জল ঢাল তোর পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়েছে, তোর পাপের ক্ষমা নেই, তুই মরবি, তোর পরিবারের সবকটা পুরুষ মরবে” এটা এক সন্তান হারা মায়ের অভিশাপ, এইসময় নিরাপত্তারক্ষীরা দৌড়ে এল কিন্তু পাগলীকে ধরার আগেই সে দৌড়ে পালিয়ে গেল, বীরেন ভট্টাচার্য সহ উপস্থিত সবাই থতমত খেয়ে গেল।
পূজো শেষ হবার মুখে এমন সময় মন্দিরের গেটের কাছে কিছু গণ্ডগোলের আওয়াজ আসতে লাগলো, ধীরে ধীরে তা বাড়তে শুরু করে, পূজো শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন বীরেন ভট্টাচার্য ,নিজের প্রধান বডিগার্ডকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে, বাইরে ঝামেলা কিসের?
উত্তরে বডিগার্ড বললো: বাইরে কয়েকজন সাধু গোছের লোক এসেছে, মন্দিরে ঢুকতে চায়, কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দেওয়ায় তারা ঝামেলা করছে।
শুনে গেটের কাছে এগিয়ে গেলেন বীরেন ভট্টাচার্য, কিন্তু তিনি পৌঁছনোর আগেই নিরাপত্তারক্ষীর দল মারধর শুরু করেছে কয়েকজন সাধুর আঘাত লেগে রক্তপাত হচ্ছে, বীরেন ভট্টাচার্য এসে তাদের বললেন: আপনারা পরে ঢুকবেন এখন আমার পরিবার পূজো দিচ্ছে। কথার মাঝেই পুরো ভট্টাচার্য পরিবার গেটের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে, একজন সাধু ফুঁসে উঠলেন “বাবার মন্দিরে সবাই সমান আমরা এখনই ঢুকবো, আপনি পূজা সেরে নিন তারপর আমরা করবো”
বললাম তো এখন হবে না, চুপচাপ সরে যান নাহলে…
বীরেন ভট্টাচার্য… চিৎকার করে উঠলেন সেই সাধু খুব অহংকার হয়েছে না? মনে রেখো বেশি অহংকার পতনের মূল, তোমার‌ও পতনের সময় এসে গেছে সপরিবারে বিনাশ হবে, আর তোমার বিনাশ করবে যে সে আসছে… মৃত্যুর কোল থেকে মৃত্যুঞ্জয় হয়ে আসছে সে তোমার মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে, সমূলে বিনাশ হবে তুমি, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমার শেষ সময় আসন্ন, আমার কথাটা মনে রেখো। এই বলে সেই সাধু তার সকল।সাধু সাথীদের নিয়ে মন্দির চত্ত্বর ছেড়ে চলে গেলেন।
বীরেন ভট্টাচার্য পরিবার সহ আবার মন্দিরের ভিতরে চলে এলেন, কিন্তু এখন আর কারো মুখে প্রসন্নতা নেই বিশেষ করে তিন মহিলার মুখে তাদের মুখে ভয়ের ছায়া স্পষ্ট, মন্দির চত্ত্বরে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
পূজোর পরে প্রসাদ বিতরণ হচ্ছে বিতরণ করছে তাথৈ এবং বৃষ্টি দুই বোন, হঠাৎ তাথৈ দেখলো একটু দূরে সেই পাগলীটা দাঁড়িয়ে আছে যে খানিকক্ষণ আগে তার জ্যেঠুমণি কে শাপশাপান্ত করছিল, কিন্তু তাও সে কিছুটা প্রসাদ একটা শালপাতার থালায় নিয়ে এগিয়ে গেল পাগলীটার দিকে পাগলীটার কাছে গিয়ে বললো নাও খাও ঠাকুরের প্রসাদ, পাগলীটা যেন খুব খুশী হলো থালাটা হাতে নিয়ে তাথৈ এর দিকে তাকিয়ে বললো: তুই খুব ভালো, তুই খুব সুখী হবি খুউউব সুখী হবি কিন্তু তার আগে পাপীদের বিনাশ হবে
তারপর একটু থেমে আবার বললো: সে আসছে তোকে নিয়ে যেতে…
তাথৈ হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো: কে আসছে আমাকে নিয়ে যেতে?
পাগলীটা আবার বললো: এলে চিনতে পারবি.. বলে আবার দৌড়ে পালিয়ে গেল।
তাথৈ একটু অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে র‌ইলো, কি বলে গেল পাগলীটা?
বীরেন ভট্টাচার্য ও তার পরিবার এখনো মন্দিরে আছেন সন্ধ্যা আরতি করে ফিরবেন নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন, বৈশালী দেবী বললেন: হ্যারে বীরেন তখন ওই পাগলী আর ওই সাধু কিসব বলে গেল?
বীরেন ভট্টাচার্য একটু বিরক্ত হলেন বললেন: তুমি এইসব নিয়ে বেকার চিন্তা করছো
বেকার চিন্তা নয় রে বীরেন অনেক সময় লোকের অভিশাপ লেগে যায়।
কিন্তু বীরেন ভট্টাচার্য কে ছোঁয়ার সাহস কোনো অভিশাপের হবে না বিশেষ করে এক পাগলী আর এক ভিখারী সাধুর অভিশাপ, তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।
বৈশালী দেবী যদিও চুপ করে গেলেন কিন্তু তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে যে চিন্তাটা যায়নি।
হটাৎ বীরেন ভট্টাচার্য বলে উঠলেন আরে তাথৈ মা কোথায় ধীরেন?
এবার সবাই খেয়াল করলো তাথৈ আশেপাশে কোথাও নেই বীরেন ভট্টাচার্য হাঁক পাড়লেন বৃষ্টি মা
বৃষ্টি তখন সেই মন্দিরে আসা তার বাবার বন্ধুদের ছেলেমেয়েদের সাথে গল্প করছিল, বাপের ডাক শুনে দৌড়ে এলো
ডাকছো ড্যাডি?
তাথৈ কোথায়?
তাথৈ তো এখানেই ছিল, আশেপাশেই আছে
মানে? কোথায় তাথৈ? এক্ষুনি ডেকে আনো আমার সামনে
আনছি ড্যাডি বলে বৃষ্টি উঠে তাথৈকে খুঁজতে চলে গেল।

মন্দিরের পিছনে একটা বড়ো বাগান আছে আম জাম অশ্বথ্ব বট গাছে ভরা তার মধ্যে একটা বটগাছের কাছে বটগাছের গোঁড়ায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাথৈ তার দুচোখে জল, এত বছর পরেও গাছটা ঠিক চিনতে পেরেছে তাথৈ, এই গাছের তলাতেই সে আর অভয় বসে গল্প করতো তাথৈ অন্ধকারে ভয় পায় এটা বুঝতে পেরে এখানেই তার হাতদুটো ধরে বলেছিল “ভয় নেই আমি আছি তো”। তাথৈএর চোখ থেকে জল গাল বেয়ে পড়ছে “কেন চলে গেলে অভয়? কেন? কেন তোমার তাথৈকে একা রেখে চলে গেলে?”
হটাৎ তার মনে পরলো কিছুক্ষণ আগে পাগলীটার কথা “তুই সুখী হবি… সে আসছে তোকে নিয়ে যেতে”
কিন্তু তার সুখ তো অভয়ের সাথে.. তবে কি তবে কি অভয়…
হঠাৎ একটা পায়ের আওয়াজ কানে এলো তাথৈ এর, চমকিয়ে উঠলো সে চারদিকে দেখলো কিন্তু কাউকে দেখতে পারলো না কিন্তু শুনতে পারলো আওয়াজটা ক্রমেই তার দিকে এগিয়ে আসছে, এবার ভয় পেল তাথৈ বললো: কে? বৃষ্টি তুই?
কিন্তু কোনো উত্তর নেই, হটাৎ তাথৈ পিছন ফিরে দৌড়াতে গেল আর তখনই কিসে একটা হোঁচট খেল কিন্তু পরে গেল না পরে যাওয়ার আগেই একটা শক্ত হাত পিছন থেকে তার একটা হাত ধরে ফেললো.
অভয়… তাথৈ এর মুখ থেকে বেরিয়ে এল, যদিও সেটা এতটাই আস্তে যে অন্য কারো শুনতে পাওয়ার কথা নয়, সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ঘুরে দেখলো একটা ছেলের দাঁড়িয়ে আছে তার হাতটা ধরে, ছেলেটির গায়ে কালো জ্যাকেট, জ্যাকেটের চেন খোলা এবং ভিতরে যে গেঞ্জিটা দেখা যাচ্ছে সেটাও কালো, সাথে কালো জিন্স, মাথায় টুপি, মুখটা নাকের একটু উপর থেকে গলা পর্যন্ত রুমাল দিয়ে বেঁধে ঢেকে রেখেছে, আর চোখে কালো গগলস্, তাথৈ বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে র‌ইলো ছেলেটির দিকে ছেলেটিও পাল্টা তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে।
এবার ছেলেটা হাতটা ছেড়ে গম্ভীর স্বরে বললো “দেখে চলতে পারেন না এক্ষুনি তো পড়ে গিয়ে আঘাত পেতেন”
আপনার জন্যই তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম উত্তর দিল তাথৈ
আচ্ছা মেয়ে তো আপনি, আপনাকে পরে যাওয়া থেকে বাঁচালাম আর আপনি আমাকেই ব্লেম করছেন?
থ্যাংক ইউ
ওয়েলকাম। বলে ছেলেটি চলে যাচ্ছিল
আপনি কে? জিজ্ঞেস করলো তাথৈ
“বিপদ” দাঁড়িয়ে ঘুরে উত্তর দিল ছেলেটি
মানে?
আপনি‌ই তো বললেন যে আমার জন্য আপনি পরে যাচ্ছিলেন তার মানে আপনার জন্য তো আমি বিপদ
আসলে আপনার পায়ের আওয়াজ শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম
আপনি তো খুব স্পেশাল মেয়ে দেখছি কেউ বিপদের পায়ের আওয়াজ পায় না অথচ আপনি পেয়েছেন।
নিজেকে আমার বিপদ বলে নিজের‌ই বিপদ বাড়াচ্ছেন, আমার জ্যেঠুমণি কোনো বিপদকেই আমার কাছে পৌঁছাতে দেন না তার আগেই আমার থেকে দূরে সরিয়ে দেন।
ঠিক যেভাবে ওনার বিরুদ্ধে কথা বলা লোকেদের এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন? ছেলেটির গলার স্বরে রাগ আর ঘৃণা ফুটে উঠলো।
তাথৈ একটা উত্তর দিতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগে মন্দিরের দিক থেকে বৃষ্টির “তাথৈ এই তাথৈ” ডাক শুনে সেদিকে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি আসছে, সে তাথৈ এর কাছে এসে বললো “কি রে তুই এখানে কি করছিস? ওদিকে ড্যাডি তোকে খুঁজছে”
তাথৈ বললো: এই যে দেখ না এই ছেলেটা… বলে ছেলেটাকে দেখাতে গিয়ে ফিরে তার কথা আটকে গেল, সেখানে কেউ নেই
বৃষ্টি আবার বলে: কি রে কি দেখছিস? কোন ছেলেটা?
কিছু না, চল।

শ্মশানে একটা চিতা জ্বলছে দাউদাউ করে, ইলেকট্রিক চুল্লিতে প্রচণ্ড ভিড় তাই কাঠের চুল্লিতেই জ্বালানো হয়েছে, এক পাগলী অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে, পাগলীটার তিনকূলে কেউ নেই তাই পুলিশ লাওয়ারিশ লাশ বলে চালিয়ে দিচ্ছিল কিন্তু হটাৎ কজন লোক এসে লাশটা দাবি করে প্রথমে দিতে না চাইলেও পরে দিতে বাধ্য হন ইনস্পেকটর সরকার কারণ উপর মহল থেকে অর্ডার এসেছিল,যদিও দিয়েও কোনো ক্ষতি হবে না তাই আর মাথা ঘামান নি, চিতা থেকে একটু দূরে কালো জ্যাকেট, কালো জিন্স পরা যুবকটি একদৃষ্টিতে চিতার লেলিহান শিখার দিকে তাকিয়ে ছিল তার চোখের কালো গগলসের কাঁচেও যেন আগুন লেগেছে, মুখে ইস্পাত কাঠিন্য।
হটাৎ তার পিছনে আরো একজন এসে দাঁড়ালো, সামনের ছেলেটা একটু ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো তারপর বললো: খোঁজ পেয়েছো আমির?
আমির: পেয়েছি, এই শ্মশানেই আপাতত আছেন কিন্তু ওনারা এখান থেকে যেতে চাইছেন না।
ঠিক আছে চলো,আমি গিয়ে কথা বলছি।
কিন্তু ওনাদের সামনে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? গতকাল‌ই ওনারা সবার সামনে বীরেন ভট্টাচার্যকে অভিশাপ দিয়েছেন।
সেইজন্যই যাওয়া দরকার আমির।

ঘাটের কাছে একটু ফাঁকা জায়গায় কয়েকজন সাধু বসে কলকে টানছিল, হটাৎ দুজন তাদের দিকে আসছিল একজন খানিকক্ষণ আগেই এসেছিল অপরজন নতুন,  তাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে একজন সাধু বললেন: বলেছি না এখান থেকে আমরা যাবো না, শ্মশানঘাটটা তোদের একার না
নতুন আসা ছেলেটা সেই সাধুর সামনে বসে বললো: এই জায়গাটা যদি আমার হতো তবে এখান থেকে আপনাদের সরানোর ক্ষমতা কারো হতো না, কিন্তু এটা আমার নয় সেই জন্যই চলে যেতে বলছি।
ছেলেটার গলার স্বরে কিছু একটা ছিল যেটা সাধুটাকে অবাক করে, তিনি শান্ত স্বরে বললেন: এখান থেকে কেন যাবো? সবাইকেই তো এখানেই আসতে হবে।
ছেলেটা: ঠিক কিন্তু আপনাদের এখানে আসার সময় এখনো আসেনি আর আমি চাইনা সেটা এত তাড়াতাড়ি আসুক।
সাধু তাকিয়ে র‌ইলেন ছেলেটার দিকে
ছেলেটা আবার বললো: গতকাল আপনি একজনকে অভিশাপ দিয়েছেন,
সাধু: তাতে কি? ওই অহংকারী ওটার‌ই যোগ্য
ছেলেটা: আপনার একটু আগে আরো এক পাগলী তাকে এক‌ই অভিশাপ দিয়েছিল, ওই যে ওখানে তার চিতা জ্বলছে, ভেবে দেখুন সে একটা পাগলীকেও ছাড়ছে না।
সাধুজী একটু মৃদু হেসে বললেন: আমি বুঝতে পেরেছি তুই কে, তুই পারবি তুই সফল হবি ওই পাপীর পাপের সাম্রাজ্যের বিনাশ করতে
ছেলেটা: আমাকে সফল হতেই হবে, কিন্তু এবার আপনারা এখান থেকে চলে যান
সাধু: আমরা যাবো না আর তুই আমাদের চিন্তা ছেড়ে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যা
কিন্তু সাধুজী
কোনো কিন্তু না, আমাদের আশীর্বাদ তোর সাথে থাকবে কিন্তু একটা কথা মনে রাখবি রাক্ষসের বিনাশ করতে করতে নিজেই যেন ওর মতো আরেকটা রাক্ষস না হয়ে যাস।
মনে থাকবে সাধুজী। ছেলেটা উঠে চলে গেল।
পিছন থেকে ছেলেটার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে সাধু অস্ফুটস্বরে: তোকে তো আসতেই হতো, তোর জন্যই তো সে অপেক্ষা করে আছে
পিছন থেকে আরেকটা সাধু বললো: কে গুরুদেব? কে ওই ছেলের জন্য অপেক্ষা করে আছে?
প্রধান সাধু: ভালোবাসা, যাকে উপেক্ষা করতে চাইলেও পারবে না ও, সেই ক্ষমতাই ওর নেই।
শ্মশানের বাইরে একটা কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে সেটার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে ছেলেটা তার সঙ্গীকে বললো: ওদের খোঁজ নিয়েছো?
আমির: নিয়েছি, ছজন ছিল ওরাই গাড়িতে পিষে গিয়েছিল ওই পাগলীকে
ওরা এখন কোথায়?
বীরেন ভট্টাচার্য একটা নতুন হোটেল তৈরী করছে তার‌ই কনস্ট্রাকশন সাইটে আছে
ঠিক আছে, বীরেন ভট্টাচার্যকে প্রথম ধাক্কা দেওয়ার সময় এসে গেছে। দুজন গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়িটা স্টার্ট নিল।
একটা হোটেল তৈরির কাজ চলছে, তার‌ই কনস্ট্রাকশন সাইটে একটা কালো গাড়ি ঢুকলো আরো কয়েকটা গাড়িও এসে গেছে একটু আগে সেটা থেকে উসমান আর তার দলের বেশ কয়েকজন নেমে এসেছে এবার কালো গাড়িটা থেকে নামলো আমির এবং তার লিডার ছেলেটি
আমির: ওরা সব এখনো এখানেই আছে উসমান?
হ্যাঁ, ভাইজান সবকটা এখন মাতাল হয়ে আছে
“ভালো জায়গা বেছেছে ওরা” লিডার ছেলেটির মুখে একটু হাসি দেখা যায় তারপর আবার বলে “কোথায় আছে ওরা?
এইযে এইদিকে আসুন, উসমান পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে। ততক্ষণে সন্ধ্যা পার হয়ে রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে, হোটেলটি অনেকটা জমি জুড়ে হচ্ছে তাই আশেপাশের অনেকটা জায়গাই এখন সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ, কোথাও কোনো লোক নেই তার‌ই মাঝে অন্ধকারে কয়েকটা কালো ছায়ামূর্তি প্রেতের মতো এগিয়ে চলেছে তাদের শিকারের দিকে।
কনস্ট্রাকশন সাইটের একটা খোলা জায়গায় গোল হয়ে বসে আছে কয়েকটা লোক, মাঝে একটা এমার্জেন্সী লাইট জ্বলছে তার আলো খুব বেশি ছড়ায়নি, লোকগুলো একসাথে বসে মদ খাচ্ছে আর নিজেদের মধ্যে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলছে, বোঝাই যাচ্ছে আজ ওদের মনে খুব ফূর্তি, ওদের‌ই একজন টলতে টলতে উঠে দাঁড়ালো
আড্ডার একজন জিজ্ঞেস করলো: কোথায় যাচ্ছিস?
উঠে যাওয়া লোকটা উত্তর দিল: একটু মুতে আসি। লোকটা টলতে টলতে চলে গেল বাকীরা আবার মদ্যপানে মজে র‌ইলো, ওদের থেকে একটু দূরে প্রস্রাব করতে গিয়ে ছিল প্যান্টের চেন সবে খুলেছে এমন সময় সামনে একটা কালো মূর্তি এসে দাঁড়ালো, এক‌ই সময় লোকটার পিছনেও একটা মূর্তি চলে এসেছে এবং মাতাল লোকটিকে কিছু বলার অবকাশ না দিয়েই পিছনের জন মাতাল লোকটির মুখ চেপে ধরেছে এবং সামনের জন দু-পায়ের মাঝে পুরুষাঙ্গে সজোড়ে লাথি মারে একটা। একটা গোঙানির আওয়াজ কানে আসে বাকি লোকগুলোর, মাতাল হলে কি হবে সঙ্গে সঙ্গে তারা সতর্ক হয়ে গেল, সবাই উঠে আলাদা আলাদা হয়ে নিজেদের সঙ্গীকে খুঁজতে লাগলো।
একটা একতলা বাড়ির সামনে একটা নীলরঙের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, গাড়ির নম্বর দেখে শহরের যে কেউ বলে দেবে যে এটা বীরেন ভট্টাচার্যের গাড়ি, আর বাড়িটা আসলে তার‌ই বাগানবাড়ি এখানে মাঝে মাঝেই রাতের দিকে মেয়েমানুষ নিয়ে ফূর্তি করতে আসেন বীরেন বাবু যেমন আজ এসেছেন, আজকের মেয়েমানুষটা আর কেউ নয় তার‌ই হয়ে কাজ করা একজনের ব‌উ।
বাগানবাড়ির ভিতরে একটা ঘরে বিছানায় শুয়ে আছেন মণি সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে, মণির বর্তমান বয়স ৪৫ বছরের আশেপাশে, শ্যামলা গায়ের রঙ, পেটে অল্প একটু চর্বি আছে, তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন উপরে সিলিং থেকে ঝোলা ঘুরন্ত পাখার দিকে তাকিয়ে শরীরটা কাঁপছে কারণ তার শরীরের উপর উঠে তার যোনিতে নিজের পুরুষাঙ্গ ঢুকিয়ে রতিক্রিয়ায় ব্যস্ত বীরেন ভট্টাচার্য, বীরেন বাবুও সম্পূর্ণ নগ্ন, তার সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে তবুও তার থামার লক্ষণ নেই, বেশ কিছুক্ষণ পরে হটাৎ বীরেন বাবুর মুখ থেকে আরামদায়ক শব্দ বেরিয়ে এল এর একটু পরে তিনি মণির শরীরের উপর থেকে উঠে এলেন একটা জোড়ে নিঃশ্বাস ফেললেন তারপর নিজের পাজামা-স্যাণ্ডো গেঞ্জি পরে তার উপর একটা পাঞ্জাবী পরতে পরতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন, মণি তখনও বিছানায় এক‌ই ভাবে হাত-পা ছড়িয়ে নগ্ন অবস্থায় শুয়ে আছে তার দু-চোখ থেকে জলের ধারা বয়ে গেল সে জানে এ তার পাপের শাস্তি, এ থেকে তার মুক্তি নেই যে পাপ সে করেছে আজ থেকে ১৫ বছর আগে, তার‌ই শাস্তি সে ভোগ করে চলেছে, মণির চোখে যেন তার অতীত জীবনের ঘটনা ভেসে উঠলো….
মদন মণিদের‌ই পাড়ার ছেলে, মণির সাথে মদনের পরিচয় ছিল ধীরে ধীরে তা প্রেমে পরিবর্তিত হয় যদিও মণির বাড়ি থেকে মদনকে মানতে চায়নি কারন এক তো মদন কি কাজ করে তা কেউ জানে না তার উপরে মদনের মদের অভ্যাস, কিন্তু মণি সেসব গ্ৰাহ্য করেনি, বাড়ির অমতে পালিয়ে বিয়ে করেছিল মদনকে, পালিয়ে এসেছিল দূর সম্পর্কের এক দাদার কাছে, আশ্রয় নেয় দাদার বাড়িতে,দাদা রুদ্র রায় চৌধুরী, বৌদি অমৃতা আর তাদের একমাত্র ছেলে অভয় এই তিনজন নিয়েই দাদার সংসার, দাদা-বৌদি দুজনেই ধার্মিক, সদাচারী এবং সাত্ত্বিক প্রকৃতির মানুষ, দাদা-বৌদি দুজনের মুখেই সবসময় হাসি লেগে থাকে কখনো অসৎ পথ হয়েছেন বা কখনো কাউকে ঠকিয়েছেন একথা তাদের অতি বড়ো নিন্দুকেও বলতে পারবে না, পরোপকারী সদা শান্ত মানুষটিকে পাড়ার সবাই পছন্দ করেন, আর পছন্দ করবেই না কেন সবাই জানে দরকারে যদি রুদ্রবাবুর কাছে যাও তো উনি সাধ্যমত সাহায্য করবেন, রুদ্রবাবু এবং ওনার স্ত্রী দুজনেই পরোপকারকে নিজেদের ধর্ম মনে করেন, এবং এই শিক্ষাই তারা তাদের একমাত্র ছেলে অভয়কেও দেন।
মা- বাবার মতো অভয়‌ও একজন সৎ চরিত্রের ছেলে, সজ্ঞানে কাউকে ঠকানোর কথা সে চিন্তাও করে না, বাবা-মার দেওয়া শিক্ষা সে সর্বদা  মেনে চলতে চেষ্টা করে, অভয় যত বড়ো হতে লাগলো রুদ্রবাবু তার আচার ব্যবহার দেখে তত খুশী হতে থাকেন, তিনি বুঝতে পেরেছেন তার ছেলে মেধাবী হিসেবে অসাধারণ তো বটেই সাথে একজন মানুষের মতো মানুষ হচ্ছে।
বোনের পালিয়ে বিয়ে করা মন থেকে মেনে না নিলেও বোন আর ভগ্নিপতি কে তাড়িয়ে দেননি রুদ্র বাবু, কিছুদিন পরে দাদার বাড়ি ছেড়ে কিছুটা দূরে একটা বাড়ি ঠিক করে নিজেদের মতো থাকতে শুরু করে মণিরা, মদন একসময় এলাকার উঠতি প্রোমোটার বা গুণ্ডা বীরেন ভট্টাচার্যের সাথে কাজ করতে শুরু করে, এরপর মণির কোলে আসে তার আর মদনের ছেলে বিকি, ভালো ভাবেই দিন কাটছিল মণির, কিন্তু একসময় বীরেন বাবুর নজর পরে রুদ্রদার জমির উপর ওখানে তিনি প্রোমোটিং করে বিল্ডিং বানাতে চান, অনেক কষ্ট করে নিজের চেষ্টায় বেশ কিছুটা জমি কিনে তাতে একটা বাড়ি বানিয়ে পরিবার নিয়ে থাকতেন রুদ্রদাদা, বাড়ির চারিদিকে অনেক ফুল গাছ লাগিয়ে চমৎকার সাজিয়েছিলেন বৌদি, স্বভাবতই জমিটা বীরেন বাবুকে দিতে অস্বীকার করে রুদ্রদা ফলে বীরেন ভট্টাচার্য রেগে যায়, তারপর একরাতে মদন তাকে বলে বীরেন ভট্টাচার্য অনেক টাকা আর একটা ফ্ল্যাট দেবে বলেছে যদি তারা বীরেন ভট্টাচার্য কে সাহায্য করেন রুদ্র রায় চৌধুরী ও তার পরিবারকে খুন করতে, দু-পরিবারের মধ্যে খাবারের আদান-প্রদান ছিল‌ই, মণির কাজ ছিল এক রাতে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে তিনজনকে খাইয়ে দেওয়া, প্রথমে রাজী না হলেও পরে টাকা আর ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাজী হয়ে যায় মণি, একরাতে কিছুটা পায়েস রান্না করে তাতে বিষটা মিশিয়ে দাদার বাড়িতে দিয়ে এসেছিল মণি, সেই তার শেষ দেখা দাদা-বোদি আর অভয়কে।
এরপর কথামতো টাকা আর একটা ফ্ল্যাট দিয়েছিল বীরেন ভট্টাচার্য কিন্তু সেই টাকা মদ আর জুয়ায় ওড়াতে সময় লাগেনি মদনের, একসময় ফ্ল্যাটটাও বিক্রি করে দিতে হয় এবং শেষে আবার হাত পাততে হয় বীরেন ভট্টাচার্যের কাছে তবে এবারও বিনিময়ে মদনের থেকে কিছু চেয়েছিল বীরেন ভট্টাচার্য, সে মণিকে ভোগ করতে চেয়েছিল বলাইবাহুল্য মদন রাজী হয়ে যায়, মণিকে মদন‌ই এই বাগানবাড়িতে নিয়ে এসে বীরেন ভট্টাচার্যের বিছানায় সঁপে দেয় সেই শুরু, সেই থেকে এত বছর ধরে মণিকে ভোগ করে আসছে বীরেন ভট্টাচার্য প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও ছেলে বিকির কথা ভেবে সহ্য করতো ধীরে ধীরে সয়ে যায় একবার তো পেটে বাচ্চাও চলে এসেছিল কিন্তু বীরেন বাবু শুধু যে বাচ্চাটা নষ্ট করেছিল তাই নয় ভবিষ্যতে যাতে এধরনের ঝামেলা না হয় তার পাকাপাকি ব্যাবস্থাও করেছিল, বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার কথাও ভেবেছে মণি কিন্তু ছেলে বিকির মুখটা মনে হতেই আর সাহস হয়নি, ছেলের মুখটা মন পড়তেই সম্বিত ফেরে মণির উঠে কাপড় পরে নেয়।
মণিকে ভোগ করার পরে বীরেন ভট্টাচার্য বেরিয়ে আসলেন বাইরে বসার ঘরে যেখানে এখন তার ড্রাইভার ও মদন বসে গ্লাসে মদের পেগ বানিয়ে খাচ্ছে, বীরেন বাবু ওদের পাশে বসলেনড্রাইভার কাম বিশ্বস্ত অনুচর জগা তাকেও একটা গ্লাসে পেগ বানিয়ে দিল, সেটা হাতে নিয়ে একটু চুমুক দিয়ে তৃপ্তিসূচক আওয়াজ করে বললেন: বুঝলে মদন, তোমার ভাগ্যটা ভালো এরকম একটা ব‌উ পেয়েছো আজ থেকে তো দেখছি না, কিন্তু এখনো স্বাদ একটুও কমেনি এক‌ইরকম আছে।
মদন নামের রোগা লোকটা নোংরা দাঁত বার করে যে হাসিটা দিল সেটা দেখে যে কেউ ঘেন্নায় মুখ ফিরিয়ে নেবে, মদন বললো: আজ্ঞে, আপনিই তো সব আপনি খুশি থাকলেই আমরা খুশি। এমন সময় বীরেন বাবুর মোবাইল বেজে উঠলো, ফোনটা কানে দিয়ে একটু পরেই গম্ভীর হয়ে গেলেন বীরেন বাবু ফোন রাখার আগে একটা মাত্র শব্দ বললেন তিনি “আসছি”, তারপর জগাকে বললেন “এক্ষুনি বেরোতে হবে চল” জগা আর বীরেন বাবু উঠে চলে গেলেন, বীরেন বাবুর মুখ দেখে মদন আর কিছু জিজ্ঞেস করতে সাহস পেল না।

চলবে —————————–



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/wIalREt
via BanglaChoti

Comments