প্রতিশোধঃ দ্যা রিভেঞ্জ (পর্ব-১৯)

ঊনবিংশ পর্ব
—————————–

অভয়… তাথৈ অভয়ের অবস্থা দেখে চিৎকার করে ওঠে অভয় তাকিয়ে দেখে সাম্য জোরপূর্বক তাথৈকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, অভয় কোনোমতে খুঁড়িয়ে ওকে বাঁচাতে ছোটে ,ওকে আসতে দেখে সাম্য পিস্তল চালায় কিন্তু তাথৈ ওর হাতে আঘাত করায় লক্ষ্য মিস করে, সাম্য মিস করলেও অভয় করে না সাম্য মাটিতে লুটিয়ে পরে।
তাথৈ আর অভয় মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে থাকা ধীরেন বাবুর কাছে যায়, তার এখন মৃতপ্রায়।
বাপি.. তাথৈ আবার ধীরেন বাবুর কাছে বসে কাঁদতে কাঁদতে ডাকে। ধীরেন বাবু চোখ খোলেন, তার ঠোঁট নড়ছে যেন কিছু বলার চেষ্টা করছেন আস্তে আস্তে আওয়াজ বেরোয়: অ…ভ..য়।
অভয়ের পুরো শরীর রক্তে মাখামাখি আগের কাটা জায়গা থেকে আবার রক্তপাত শুরু হয়েছে তার উপরে নতুন আঘাত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আস্তে আস্তে এসে ধীরেন বাবুর কাছে আসে ওনাকে ধরে তোলার চেষ্টা করে বলে: একটু সহ্য করে থাকুন আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি, তাথৈ ওনাকে ধরে তুলতে চেষ্টা করো।
না.. অনেক কষ্টে কথাটা বলেন ধীরেন বাবু, একটু ঢোঁক গিলে আবার বলতে থাকেন: অন্তত.. আমার মেয়েকে বাপির খুনির সাথে থাকতে হবে না।
বাপি…
অ…ভ…য় আমার অপরাধের শাস্তি আমার মেয়েটাকে দিও না।
ধীরেন বাবু এসব কথা পরে হবে, আপাতত হাসপাতালে চলুন।
আমার সময় শেষ, আমার মেয়েটাকে দেখো। আর কথা বলতে পারলেন না ধীরেন বাবু মৃত্যুর কোলে ঢলে পরলেন, তাথৈ চিৎকার করে নিজের বাবার মৃতদেহের উপরে কান্নায় ভেঙে পরলো।
অভয় তাথৈএর পাশে গিয়ে ওকে সান্ত্বনা দিতে থাকে, এমন সময় কয়েকটা পায়ের আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকাতেই অভয় কপালে একটা জোরে আঘাত পেয়ে ছিটকে পরে হাত থেকে পিস্তলটা পরে যায়,  দেখে জগা দাঁড়িয়ে আছে আর আঘাতটা ওই করেছে পিস্তলের গ্ৰিপের তলা দিয়ে, কপালে কেটে রক্ত বেরোতে থাকে, এমনিতেই অভয় আগের রক্তপাতে কিছুটা দুর্বল তারপরেও তাড়াতাড়ি উঠতে যায় কিন্তু আবার থুতনিতে জগার ঘুষি খেয়ে ছিটকে পরে।
অভয়.. তাথৈ তাড়াতাড়ি ওর কাছে আসে, দুজনে দেখে জগার পিছনে আরো কয়েকজন পিস্তল তাক করে দাঁড়িয়ে আছে, জগা কথা বলে: তুই দাদাকে মারতে এসেছিলি এবার কি করবি? সেদিন বাণিজ্যনগরীতে আমাদের অপমান করেছিলি আজ তোকে মেরে প্রতিশোধ নেবো, দাদার আদেশ তোকে আর ওই তাথৈকে দুজনকেই শেষ করতে। বলে পিস্তল উঁচিয়ে ট্রিগার টিপতে যাবে কিন্তু তার আগেই অভয় হাতের কাছে একটা ছোট ইটের টুকরো পেয়ে সেটা জগার কপালে ছুঁড়ে মারে জগা আবার কপালে হাত দিয়ে পিছনে সরে যায় আর অভয় জগার হাতে এক লাথি মারে ফলে জগার পিস্তল ছিটকে পরে তখনই একটু দূর থেকে পরপর কয়েকটা পিস্তলের আওয়াজ হতে থাকে এবং জগার পিছনে যারা ছিল তারা মাটিতে লুটিয়ে পরতে থাকে।
কয়েকজন লোক পিস্তল হাতে ওদের ঘিরে ফেলে জগাও আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে এরা যে ওর নিজের দলের লোক নয় সেটা আর বলে দিতে হয় না। অভয়‌ও তাকিয়ে আছে, তাথৈ ওর কাছে ঘেঁষে অভয়কে শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
রয়। অতি পরিচিত কণ্ঠ শুনে চমকে ওঠে অভয়, আমিরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুখে হাসি ফোটে, আস্তে আস্তে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে যায় আমির‌ও এগিয়ে আসে যেন কত বছর পর দুই বন্ধুর দেখা হলো এমনভাবে দুজনে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে।
তুমি ঠিক আছো? ব্যাগ্ৰভাবে জিজ্ঞেস করে অভয়।
তুমি কেমন আছো, কোথায় ছিলে এতদিন, তোমার ফোন বন্ধ কেন? এক নিশ্বাসে প্রশ্ন করতে থাকে আমির।
অভয় উত্তর দিতে যাবে এমন সময় একটা ধস্তাধস্তির আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখে জগাকে চেপে ধরে আছে দুজন আর জগা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে, আমির হুকুম দেয়: বশির দেখছো কি ওকে এখনি শেষ করো
দাঁড়াও। অভয়ের দৃঢ় কণ্ঠ, হাত ছাড়ো ওর।
দুজন হাত ছেড়ে দেয়, জগা অগ্নিদৃষ্টিতে অভয়কে যেন জ্বালিয়ে দিতে চায়, অভয় বলে: কি বলছিলি আমাকে মারবি তারপর তাথৈকে মারবি, যা ওর গায়ে হাত দিয়ে দেখা যদি ক্ষমতা থাকে ওকে টাচ করে দেখা। বলে জগার চোয়ালে এক ঘুষি মারে জগা কয়েক পা পিছিয়ে যায় কিন্তু এগিয়ে এসে এবার অভয়কে এক ঘুষি মারে, সঙ্গে সঙ্গে অভয়ের দলের লোকেরা পিস্তল উঁচু করে কিন্তু অভয় ওদের থামায়, তারপর আবার জগা মারতে এলে ওর হাতটা ধরে মোচড়িয়ে নিজে জগার পিছনে গিয়ে কোমরে এক লাথি মারে জগা হুমড়ি খেয়ে নীচে পরে, অভয়‌ও খোঁড়াতে থাকে, শরীরে আঘাত থেকে রক্তপাত চলছে, এবার আমিরের দিকে  হাত বাড়ায় সে, আমির বোঝে কি চাইছে, সে নিজের পিস্তলটা এগিয়ে দেয়, পরপর পিস্তলের  কয়েকটা কানফাটানো আওয়াজের সাথেই জগার দেহটা নিথর হয়ে যায়।
দুর্বল শরীরে আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না কিন্তু পরে যাওয়ার আগেই আমির এসে ধরে নেয়, শুনতে পায় অভয় বলছে: আমির যে করেই হোক সরমা দেবী মানে তাথৈএর মা কে ভট্টাচার্য বাড়ি থেকে বার করে আনতে হবে।
হয়ে যাবে, চিন্তা কোরো না।
তারপর অভয় আস্তে আস্তে তাথৈএর কাছে যায় ও তখন আবি নিজের বাবার মৃতদেহের কাছে বসে কাঁদছে, অভয় ওর পাশে বসে কাঁধে একটা হাত রাখে, তাথৈ সঙ্গে সঙ্গে অভয়কে জড়িয়ে ধরে অভয়ের কাঁধে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পরে।

শ্মশানে যে ইলেকট্রিক চুল্লিতে ধীরেন বাবুর দেহ জ্বলছে তার সামনে তাথৈ আর সরমা দেবী বুকফাটা বিলাপ করছেন, তাথৈএর ফোন থেকে ওনাকে ডেকে বাড়ির বাইরে এনে এখানে আনতে অবশ্য কোনো অসুবিধা হয়নি, এখানে এসে মেয়েকে দেখে আর তআর সাথে স্বামীর মৃতদেহ দেখেই ভেঙে পড়েন তিনি, যতই স্বামী বেঁচে থাকতে মারধর করুক স্বামী তো, এতগুলো বছর একসাথে সংসার করেছেন, মা মেয়ের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে অভয় ,কপালে কাটা জায়গায় ব্যান্ডেজ লাগানো, গায়ের জামাটা খুললে আরো অনেক কেটে যাওয়ার চিহ্ন পাওয়া যাবে, সে গম্ভীর মুখে থাকলেও তার চোখেমুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট, এই কষ্ট তাথৈএর জন্য তাকে কাঁদতে দেখার কষ্ট যদিও সে নীজেও ধীরেন ভট্টাচার্যকে মারতে চেয়েছিল হয়তো মারতো‌ও কিন্তু এখন তাথৈকে ওর বাবার জন্য কাঁদতে দেখে ওর সত্যিই ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ধীরেন বাবুর চিতা ভস্ম নদীতে বিসর্জন দেওয়ার সময় অভয় তাথৈএর সাথে যায়, বিসর্জন দেওয়ার পরে অভয় তাথৈকে বুকে টেনে নেয়, তাথৈও অভয়ের বুকে নিজের মুখ লুকিয়ে কেঁদে ভাসাতে থাকে।
রয়ের বাড়িতে বাগানের কাজ করছিল বিদিশা, সেই কখন আমির বেরিয়ে গেছে কোথায় গেছে কেন গেছে কিছু বলে যায়নি, কখন ফিরবে সেটাও না, এদিকে অমৃতাদেবী তাকে প্রশ্নে জর্জরিত করতে থাকেন প্রথমে রয়ের আর তারপর আমিরের ওরা কোথায় গেছে, কি করছে কখন ফিরবে ইত্যাদি, বলাবাহুল্য কোনোটার উত্তর‌ই বিদিশার কাছে নেই, ভাসা ভাসা উত্তর দিয়ে বাইরে বাগানে বেরিয়ে আসে সে।
বাগানে একটা ফুলগাছে জল দিচ্ছিল বিদিশা তার এখন সত্যিই চিন্তা হচ্ছে রয়ের জন্য ছেলেটা কোথায় গেল? যতই সে আমিরকে সান্ত্বনা দিক যে ওর কিছু হয়নি কিন্তু ওর নিজের মনেও ভয় বাড়তে থাকে বীরেন ভট্টাচার্য যে ধরনের লোক তাতে নিজের শত্রুকে যদি হাতে পান তাহলে ছেড়ে দেবেন না এটা হলফ করে বলা যায়। তার জন্য কত কিছু করেছে রয় তাকে রকির কবল থেকে উদ্ধার করেছে অতীনের হাতে মরা থেকে বাঁচিয়ে এনেছে, একটা আশ্রয় দিয়েছে সব থেকে বড়ো কথা নতুন জীবন শুরু করার রাস্তা ও কারণ দিয়েছে আর আজ সেই নিঁখোজ।
আনমনে এইসব‌ই চিন্তা করছিল বিদিশা, মাঝে কয়েকবার আমিরকে ফোন করেছিল কিন্তু আমির ধরেনি এতে চিন্তা ও ভয় দুটোই বেড়ে গেছে। হটাৎ একটি পরিচিত কণ্ঠে পরিচিত ডাক শুনে চমকে ওঠে বিদিশা
হ্যালো বিউটিফুল। বিদিশা তাকিয়ে দেখে রয় দাঁড়িয়ে আছে তার মুখে হাসি থাকলেও সেটা যেন হতাশার, নিজের কষ্টকে লুকোনোর। “রয়” বলে হাতের জলের ক্যানটাকে নীচে রেখে এক ছুটে এসে অভয়ের গলা জড়িয়ে ধরে “কোথায় ছিলে তুমি, তোমার মাথায় চোট লাগলো কিভাবে?”
বলছি, আগে বলো তুমি কেমন আছো?
আমি ঠিক আছি কিন্তু.. সব বলবো আগে মায়ের সাথে দেখা করে আসি।
বৌদি.. তাথৈ যে এখানে বিদিশাকে দেখে অবাক হয়েছে সেটা বোঝাই যায় শুধু তাথৈ নয় সরমা দেবীও বিদিশাকে দেখে অবাক হয়েছেন তেমনি বিদিশাও ওদের দেখে অবাক হয়েছে, সে অভয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।
তোমাকে সব বলবো, আর তাথৈ তোমাকে বলেছিলাম না আমার সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য তোমার পরিচিত একজনকে বিপদে পরতে হয়েছিল।
কিন্তু সেটা যে বৌদি সেটা বলোনি তুমি।
হুমম তা বলিনি।
রয়, এই তাহলে তোমার সেই নিজস্ব কথা যেটা তুমি কাউকে বলোনি?

সেটা বলতে পারো।
অভয়… বাইরে কথাবার্তার আওয়াজ শুনে অমৃতাদেবী এবং বিন্দু মাসি বেরিয়ে এসেছেন, অভয় গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে।
কোথায় ছিলি তুই, ওরা বলছিল তুই মিটিংয়ে গেছিস কিন্তু তোর ফোন কেন বন্ধ আর তোর কপালে ব্যান্ডেজ কেন? অভয়ের গায়ে নতুন জামা তাই তিনি শরীরের চোটগুলো দেখতে পেলেন না।
মা… মা আমি ঠিক আছি, আমার ফোনে চার্জ শেষ এবার সেদিন তাড়াহুড়োতে বেরিয়ে গিয়েছিলাম তাই চার্জার নিতে ভুলে গেছি।
কিন্তু তুই অন্য কারো ফোন থেকে আমার সাথে কথা বলিসনি কেন?
সেটা হয়নি মিটিংয়ের পরে খুব ক্লান্ত ছিলাম আর তাছাড়া নেট‌ওয়ার্কের প্রবলেম করছিল।
কিন্তু বাবু তোর কপালে কি হয়েছে? কথাটা বললেন বিন্দু মাসি।
অভয় এবার মাকে ছেড়ে বিন্দুমাসিকে জড়িয়ে ধরে বলে: ও কিছু না একটু ছোট্ট চোট লেগেছে।
বাবু.. অমৃতাদেবী ডাকেন কিন্তু তার দৃষ্টি তাথৈ আর সরমাদেবীর দিকে।
সরমা দেবী এগিয়ে আসেন তারপর দু হাত জোড় করে বলেন: একসময় আমরা পরস্পরের খুব ভালো বান্ধবী ছিলাম, কিন্তু আমার ভাসুর আর স্বামী তোমাদের সাথে যা করেছে সেটার ক্ষমা হয়না জানি কিন্তু তবুও আমি ক্ষমা চাইছি।
কিন্তু তোমার গায়ে সাদা থান কেন? আর তোমার সিঁথি খালি কেন?
কারণ আমার স্বামী তার পাপের সাজা পেয়েছেন, তিনি আর বেঁচে নেই।
সরমা দেবীকে এভাবে দেখে এই প্রশ্নগুলো বিদিশার মনেও জেগেছিল এখন উত্তর শুনে সে আমিরের দিকে তাকায়, আমির ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালে সে তাথৈএর কাছে গিয়ে তাকে সান্ত্বনার ভঙ্গিতে কাঁধে হাত দেয়, তাথৈ বিদিশাকে জড়িয়ে ধরে।
তোমার স্বামী যখন সাজা পেয়েছেন তখন তো আর কিছু বলার নেই আমার, এসো তোমরা ভিতরে এসো।
আমার আরেকটা অনুরোধ আছে, যদি রাখো।
কি বলো?
আমার মেয়েটা তোমার ছেলেকে খুব ভালোবাসে ওকে যদি তুমি… নিজের ছেলের ব‌উ করো।
অমৃতাদেবী তাথৈএর কাছে আসেন, তাথৈও দুহাত জোড় করে বলে : আমার বাবার জন্য আমি..
তোমার বাবা যা করেছেন সেটা তার সাথেই চুকে গেছে, কাজেই তার জন্য তোমাকে ভাবতে হবে না।
তুমি কি রাজী ওকে..আবার প্রশ্ন করেন সরমা দেবী।
শুধু আমি না অভয়ের বাবাও রাজী ছিলেন ওকে ঘরে আনার জন্য, পরিস্থিতির জন্য কাজটা দেরী করতে দেরী হয়েছে আর কিছু না। তাথৈ প্রণাম করতে যেতেই অমৃতাদেবী তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।
ওনারা ভিতরে চলে যাওয়ার পরে আমির অভয়কে জিজ্ঞেস করে: কি হয়েছিল বলোতো?
অভয় সব কথা খুলে বলে, আমির‌ও সব বলে এটাও বলে বশির‌ই ওকে বাঁচিয়েছে।
আমাকে কি করে খুঁজে পেলে?
তোমার গাড়িটা ওভারব্রিজ থেকে নীচে ফেলে দেয় ওরা ফলে আগুন লেগে যায় বা লাগিয়ে দেয় কিন্তু ওতে তোমাকে না পেয়েও আমি ভেঙে পড়লেও বিদিশা মানতে রাজী হয় না ও বারবার বলতে থাকে তুমি বেঁচে আছো, তাই তোমার খোঁজ চালাতে থাকি।
তারপর?
স্টেশনে বাথরুমে কয়েকজনের অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়ার খবর পাই তখনই ধারণা হয় ওটা হয়তো তোমারই কাজ আর তুমি হয়তো ফিরছো তার পরের সব স্টেশনে লোক থাকে যে কোনো অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই জানাতে।
বুঝলাম, তারপর?
তারপর একজন বলে একটা স্টেশনে একজনের উপর দশজনের মতো অ্যাটাক করেছে কিন্তু পেরে উঠছে না তখন আর বুঝতে অসুবিধা হয় না যে ওটা তুমি কারণ একা দশজনের সাথে লড়ার মতো খুব কম লোক‌ই আছে, আর তোমাকে লড়তে তো আমি নিজের চোখে অনেকবার দেখেছি তখনই আমি বেরিয়ে পড়ি আর বশিরকেও ডেকে নিই।
ধন্যবাদ, তোমরা না গেলে হয়তো আমার আর তাথৈএর লাশটা ধীরেন বাবুর পাশে পরে থাকতো।
এবার কি করবে? আমির জিজ্ঞেস করে।
বীরেন ভট্টাচার্যকে শেষ করবো আবার কি।
বস উনি এবার‌ও ভোটে দাঁড়াচ্ছেন, জিতলে সিএম হয়ে যাবেন। বশির জানায় অভয়কে।
কিন্তু উনি জিতবেন না, জেতা তো দূরে থাক ওনাকে ভোটে দাঁড়াতেই দেবো না, তবে তার আগে আরো একটা কাজ করতে হবে।
কি বস?
মাহমুদ আর উসমানকে খুঁজে বার করতে হবে, আমি মাহমুদকে বলেছিলাম বীরেন ভট্টাচার্যের আগে ওদের শেষ করবো, তুমি পারবে বশির ওদের খুঁজে বার করতে?
ওদের খোঁজ পেয়ে যাবেন।
গুড।
বশির চলে যাচ্ছিল, অভয় ডাকলো: বশির শোনো।
হ্যাঁ বস বলুন।
আমিরকে বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ। বলে বশিরকে জড়িয়ে ধরে অভয়, এতে বশির যেন বিষ্ময়ে হতবাক এবং অভিভূত হয়ে যায়।

বীরেন বাবু আপনি বরং এখন কিছুদিন পরিবারের দিকে নজর দিন, এবার নাহয় ইলেকশনে নাই দাঁড়ালেন। কথাটা শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন বীরেন ভট্টাচার্য, নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে সামনে বসা লোকটার কলার ধরে চেয়ার থেকে তুলে বললেন: এই চ্যাটার্জি বীরেন ভট্টাচার্য কি করবে আর না করবে সে বিষয়ে আপনাকে জ্ঞান দিতে হবে না, বীরেন ভট্টাচার্য সেটাই করে যেটা সে নিজে ঠিক করে।
এই চ্যাটার্জি হলেন বীরেন ভট্টাচার্যের রাজনৈতিক দলের আরেকজন নেতা, বয়স আন্দাজ ৫৫ কি ৫৬ হবে, মাথায় ইতিমধ্যে টাক পরে গেছে, গায়ের রঙ শ্যামলা, গায়ে সাদা পাঞ্জাবি আর পাজামা, হাতের আঙুলে একাধিক আংটি। এবার ইলেকশনে বীরেন বাবু জিতলে তিনি সি‌এম হবেন তিনি নিশ্চিত‌ও ছিলেন যে তিনিই জিতবেন কিন্তু বর্তমানে এআরসি তার কবল থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় তার মনে ভয় ঢুকে গেছে তার উপরে তার ডানহাত স্বরূপ ভাই ধীরেন বাবু আর বাম হাত স্বরূপ বিশ্বস্ত অনুচর জগা মারা যাওয়ায় পুরোপুরি একা হয়ে গেছেন, এই অবস্থায় যেকেউ হলে ইলেকশনে দাঁড়ানোর আগে ভালো করে ভেবে নিত, কিন্তু তিনি বীরেন ভট্টাচার্য ভাঙবেন তবু মচকাবেন না, ক্ষমতা অর্জনের সুযোগ থাকলে তিনি সেটা কিছুতেই ছাড়বেন না, এদিকে যদি বীরেন বাবু ইলেকশন থেকে সরে দাঁড়ান তাহলে সিএম সবার চান্স সবথেকে বেশী এই চ্যাটার্জি বাবুর তাই তিনি সাহস করে কথাটা বলেই ফেললেন এতে যে বীরেন বাবু এতটা ক্ষেপে যাবেন সেটা তিনি আন্দাজ করতে পারেননি।
মিনমিন করে তিনি বলেন: বীরেন বাবু আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন? আমি তো আপনার জন্যই বলছিলাম আপনার ভাই আর জগা একসাথে মারা গেলেন এখন আপনার মনমেজাজ..
আমার মন মেজাজ ঠিক আছে তার চিন্তা আপনাকে করতে হবে না, আর এটা ভাববেন না যে আমি কিছু বুঝিনা, আপনি কেন আমাকে সরে যেতে বলছেন খুব ভালো করে জানি।
চ্যাটার্জী ভয়ে ঢোঁক গিললেন, কিন্তু কোনো কথা বলতে পারলেন না।
বীরেন বাবু বলে চলেন: আমি ইলেকশনে দাঁড়াবো, জিতবো এবং সিএম এর গদিতে বসবো, দেখি কে আমাকে আটকায়?
কি…কিন্তু দলের অনেকেই আপনার বিরুদ্ধে, তারা চায়না যে এবার আপনি ভোটে দাঁড়ান।
যারা চায়না তাদের সব কটাকে নিয়ে আমার সাথে মিটিং ফিক্স করুন, তারপর আমি দেখছি, বুঝেছেন?
হ্যাঁ, আমি ব্যবস্থা করছি, কিন্তু দলে কানাঘুষো চলছে এআরসি আপনার বিরুদ্ধে আছে আর এআরসির ক্ষমতা কারো অজানা নেই তাই আগে ওর ব্যবস্থা করুন। চ্যাটার্জি বাবু উঠে বেরিয়ে গেলেন।
মামা, চ্যাটার্জি কথাটা ভুল বলেনি, এআরসির কথাটা ভুললে চলবে না কিন্তু? এবার রকি মুখ খোলে।
ভুলিনি রকি, এবার একটা এস্পার ওস্পার করতেই হবে কিন্তু আবার ওকে বস্তির বাইরে আনবো কিভাবে?
আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে।
কি প্ল্যান?
তোমার মনে আছে যখন ও আমাদের হাতে বন্দী ছিল তখন মাহমুদকে থ্রেট করেছিল যে পালাতে পারলে ওদের দুই ভাইকে আগে শেষ করবে, আমি শিওর এখন ও ওদের দুইজনকে খুঁজছে।
আমি বুঝেছি তোর কথা, ভালো আইডিয়া কিন্তু ও কি টোঁপটা গিলবে?
গিলবে, একবার ও বাইরে আসুক আর ফিরতে পারবে না।
কিন্তু যদি ও না আসে?
ও না এলে ওর পোষা কুকুরটা তো আসবে, ওকেই ধরবো কান টানলেই মাথা আসবে।
অতটা সোজা নয়, আগে একাই আমাদের চোখে ধূলো দিয়ে পালিয়েছে আর এখন তো ওর সাথে ওর পুরো দল থাকবে।
এছাড়া আর কোনো উপায় আছে তোমার কাছে?
বীরেন বাবুকে চুপ করে থাকতে দেখে রকি আবার বলে: একটু রিস্ক তো নিতেই হবে মামা আর তাছাড়া তুমিই তো বললে এবার একটা এস্পার ওস্পার করতেই হবে।
ঠিক আছে, তবে খুব সাবধানে এগোবি ও কিন্তু খুব ডেঞ্জারাস এক কাজ কর দলের সবাইকে নিয়ে যা।
দরকার নেই মামা।
যা বলছি শোন।
না মামা এতে ওর সন্দেহ হবে, আমি বেছে বেছে লোক নিয়ে নেবো।
শুধু একটাই কাজ বাকি যেভাবেই হোক এআরসির কাছে উসমান আর মাহমুদের লুকোনোর জায়গার হদিশ পৌঁছে দিতে হবে।
হয়ে যাবে, ও নিয়ে চিন্তা করিস না,তবে তোকে আরেকটা কাজ করতে হবে।
কি?
চ্যাটার্জি তো মিটিং ফিক্স করবে তারপর আমার সামনে সবাই রাজী হলেও পরে পিছনে ছুরি মারার সুযোগ খুঁজবে।
তাহলে কি করতে হবে?
ওদের সবার উপরে ২৪ ঘন্টা নজর রাখার ব্যবস্থা কর।
কিন্তু কেন?
যাতে এআরসি বা অন্য কেউ ওদের ভয় বা লোভ দেখিয়ে আবার আমার বিরুদ্ধে না নিয়ে যেতে পারে।
চ্যাটার্জীকেও?
হ্যাঁ।
ঠিক আছে আমি দেখছি।
আরেকটা কাজ বোধহয় তুই ভুলে যাচ্ছিস
কি মামা?
বিদিশা, ওর কোনো খোঁজ পেলি?
না, তবে আমি নিশ্চিত সেদিন অতীনের হাত থেকে এআরসি‌ই ওকে বাঁচিয়ে নিয়ে গেছে।
ওকে কোথায় রেখেছে খুঁজে বার করে শেষ করে দে।
ওই বস্তিতে নিজের বাড়িতেই ওকে রেখেছে আমি নিশ্চিত আগে এআরসিকে খতম করি তারপর বস্তিতে ঢুকে বিদিশাকে পুঁতে রেখে আসবো।

নিজের রুমে বিছানায় শুয়ে বুকের উপর ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছিল অভয় হটাৎ একটা পায়ের আওয়াজ পেয়ে দেখে তাথৈ এসেছে চা নিয়ে।
আসো,
এই নাও তোমার চা।
তুমি নিজে এলে না তোমাকে কেউ পাঠালো?
কেন আমি নিজে আসতে পারি না?
অবশ্যই পারো। অভয় তাথৈএর হাত থেকে পেয়ালা নিয়ে সেটা পাশে রেখে তাথৈএর হাত ধরে নিজের পাশে বসালো।
কিছু বলবে? তাথৈ জিজ্ঞেস করে, ওর মুখ শুকনো শুকনো, চোখের নীচে জলের দাগ, নিশ্চয়ই কাঁদছিল।
অভয় কিছু বলছে না দেখে তাথৈ আবার জিজ্ঞেস করে: কিছু বলবে?
কেন, না বললে আমার পাশে বসবে না?
না না সেটা কেন কিন্তু বাড়িতে বড়োরা আছে।
সেইজন্য? নাকি আমার উপর রেগে আছো।
তোমার উপর রেগে থাকবো কেন?
তোমার বাপির জন্য?

আসলে মুখে যতই বলি যাই বলি বাপি তো।
আমার জন্যই আজ তোমাকে এত কষ্ট পেতে হচ্ছে, সেদিন যদি আমার বাবার পরিবর্তে আমি মারা যেতাম তাহলে হয়তো..
অভয়.. তাথৈ কথাটা শেষ করতে দেয় না অভয়ের মুখ চেপে ধরে। তোমাকে হারিয়েও যে কষ্ট পেতাম না এটা কি করে ভাবলে? তোমাকে হারালে হয়তো আমিও মরে যেতাম। তাথৈ অভয়ের বুকে মাথা রাখলো অভয় আলতো করে তাথৈএর মাথায় হাত বোলাতে থাকে।
আর কখনো এরকম বলবে না, বাবাকে হারিয়েছি এখন তোমাকে হারাতে পারবো না। তাথৈ প্রায় কেঁদে ফেলে কিন্তু নিজেকে সামলে নেয়।
তাথৈ, চা দিতে গিয়ে ওখানেই বসে গেলি, এদিকে আয় মা। সরমা দেবীর ডাকে দুজনেই চমকে ওঠে।
আসছি মা‌। তাথৈ উঠে যেতে চায় কিন্তু অভয় আবার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। দুজনেই শোনে বিন্দুমাসির গলা: আহা এখানে আবার ওর কি কাজ, ওদের কথা বলতে দাও না।
কি করছো, মা চলে আসবে, ছাড়ো। তাথৈ হাত ছাড়িয়ে চলে যায়।
একটু পরে আমির ঘরে ঢোকে, অভয়ের জিজ্ঞাসু দৃষ্টির উত্তরে বলে: খবর আছে একটা।
সেটা তো বুঝতেই পারছি, নাহলে আর ওনাকে ছেড়ে আমার কাছে কেন?
আমির প্রথমে হতভম্ব আর তারপর বুঝতে পেরে লজ্জায় ওর দুটো কান লাল হয়ে যায় বলে: না সেরকম কিছু নয়।
দেখো ভায়া, আমাকে শেখাতে এসো না এসব আমার জানা আছে তবুও তোমার ভাগ্য ভালো।
আমির চুপ করে থাকে মুখে লাজুক হাসি নিয়ে, অভয় বলে চলে: আমি সত্যিই খুব খুশি তোমাদের জন্য, বিদিশা অনেক কিছু হারিয়েছে এবার হয়তো ওর পাওয়ার সময় এসেছে।
আমি কোনোদিন ভাবিনি এরকম হবে, কিভাবে যেন হয়ে গেল।
ওটা হয়েই যায়, প্ল্যান করে ভালোবাসা হয় না।
তোমার আর তাথৈএর কিভাবে হয়েছিল?
সে আরেক কেস, বললাম না তোমার ভাগ্য ভালো তাথৈএর মতো মেয়ের পাল্লায় পরলে আর দেখতে হতো না।
আমি এই ঠিক আছি।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস তোমরা সুখী হবে।
আমি পুরো চেষ্টা করবো ওকে সুখী রাখার।
আচ্ছা এবার বলো কি খবর এনেছো?
বীরেন ভট্টাচার্য ভোটে দাঁড়াচ্ছে কিন্তু পার্টির অনেকেই চায়না তাই..
তাই উনি কি করেছেন? ওদের হুমকি দিয়েছেন?
একটা মিটিং ডেকেছিলেন সেখানে সেটাই করেছেন নিশ্চয়ই।
খুব ভালো এটাই চাইছিলাম, এতে আমাদের সুবিধাই হবে।
ওনাদের মেরে ফেললে কি সুবিধা হবে?
মারবেন না।
তুমি শিওর?
মেরে ফেললে প্রবলেম বাড়বে তাই এখনই মারবেন না কিন্তু আমি নিশ্চিত ওদের সবার উপর নজর রাখা হবে।
তাহলে কি হবে এবার?
বীরেন ভট্টাচার্যের দলে ওনার পরেই যার জায়গা তার নাম যেন কি.. চ্যাটার্জি বলে কেউ তাইনা?
হ্যাঁ, বীরেন ভট্টাচার্যের পরেই ওনার জায়গা, যদি কোনো কারণবশত বীরেন বাবু সরে যান তাহলে উনি‌ই নেক্সট দাবীদার।
উনিও মিটিংয়ে ছিলেন নিশ্চয়ই?
হ্যাঁ।
একবার চ্যাটার্জীর সাথে কথা বলতে হবে, দরকার আছে।
তুমি নিজে যাবে?
উঁহু, ফোনেই কথা বলবো।
উনি শুনবেন?
শুনবেন, চ্যাটার্জী কোথায় আছে খোঁজ নাও।

নিজের একাধিক ফ্ল্যাটের একটা ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে একাকী বসে ছিলেন চ্যাটার্জী বাবু, মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে একাকী থাকার জন্য এখানে আসেন তিনি আজ‌ও তাই এসেছেন আর বীরেন বাবু তাকে একপ্রকার হুমকি দিয়েছেন তিনি ভালো করেই জানেন বীরেন ভট্টাচার্য কেমন লোক, মানুষ খুন করা ওর কাছে জলভাত।
কত আশা করেছিলেন যে ভাইয়ের মৃত্যুর পরে বীরেন বাবু আর ভোটে দাঁড়াবেন না এবং তিনি হবেন পরবর্তী সিএম অথচ এখন…  বীরেন বাবুর জয় ঠেকায় কে? কেন যে এআরসি ওকে মারছে না কে জানে?
সামনে টেবিলে রাখা হুইস্কির বোতল থেকে কিছুটা গ্লাসে ঢেলে এক চুমুক দিলেন চ্যাটার্জী বাবু, কি করা যায় ভাবছেন এমন সময় ফোন বেজে উঠলো, বেজায় বিরক্ত হলেন তিনি, এখন আবার কে ফোন করলো?
হ্যালো, কে বলছেন?
চ্যাটার্জী বাবু?
একটা অচেনা পুরুষ কণ্ঠ শুনতে পান চ্যাটার্জী বাবু, তিনি বলেন: বলছি আপনি কে?
এআরসি।
নামটা শুনেই নেশা ছুটে যায় তার “এ…আর..সি মানে…মানে’
মানে মানে করার কিছু হয়নি আমি এআরসি বলছি।
কিন্তু আপনি আমার নম্বর..
জোগাড় করার উপায় আছে।
কিন্তু আমাকে ফোন করার কারণ..
কারণ আছে বলেই ফোন করেছি, আমি আপনার সাথে একটা ডিল করতে চাই।
ডিল.. কিরকম ডিল?
আমি জানি আপনি এবার ইলেকশনে জিতে সিএমের গদিতে বসতে চান কিন্তু বীরেন ভট্টাচার্য থাকতে সেটা সম্ভব নয় কি তাইতো?
হ্যাঁ.. মানে আপনি কিভাবে?
কিভাবে জানলাম সেটা বড়ো কথা নয়।
আপনি কি চাইছেন বলুন তো?
তার আগে আমি কি দিতে পারি সেটা বলি?
কি?
আমি আপনাকে সিএমের গদিতে বসাতে পারি।
চমকে উঠলেন চ্যাটার্জী বাবু তিনি ঠিক শুনছেন তো? কোনোমতে তোতলাতে তোতলাতে বলেন: কি…কিন্তু কিভাবে.. বী..বীরেন বাবু তো।
ওনাকে আমি সামলে নেবো কিন্তু আপনাকে সাহায্য করতে হবে।
কি..কি সাহায্য?
আপনাকে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে।
উনি জানতে পারলে আমাকে শেষ করে দেবেন।
সেই সুযোগ উনি পাবেন না এটা আপনাকে আশ্বস্ত করছি।
কি করতে হবে?
উনি আপনাদের দলের বেশ কয়েকজনকে মিটিংয়ে ডেকেছিলেন, খুব সম্ভবত আপনাদের সবাইকে হুমকি দিয়েছেন তাইতো?
হ্যাঁ,
এবার শুনুন আপনাকে কি করতে হবে,  আপনি শুধু সময় মতো তাদের এবং তাদের পরিবারকে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে উস্কানি দেবেন যাতে তারা পুরোপুরি বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে হয়ে যায়।
কিন্তু কেউ কি আমার কথা শুনবে?
আপনার অনুগতদের দিয়েই শুরু করবেন, তারা তো নিশ্চয়ই শুনবে।
আর বাকিরা?
তারাও করবে সে ব্যবস্থা আমি করবো।
কিন্তু এর বিনিময়ে আপনি কি চান?
আপনার সাথে সুসম্পর্ক, আমরা কেউ একে অপরের শত্রু ন‌ই তাই বন্ধু হতে ক্ষতি কোথায়? আপনি সিএম হয়ে আমাকে সাহায্য করবেন বিনিময়ে আমি আপনাকে তবে আপাতত আমাদের দুজনের এক‌ই শত্রু বীরেন ভট্টাচার্য, এবার বলুন আপনি রাজী কি না?
কিন্তু আপনি যে আমাকে ঠকাবেন না তার প্রমাণ কি?
এআরসি কখনও কথার খেলাপ করে না, আপনি যতক্ষণ আমার বন্ধু থাকবেন ততক্ষণ আমি আপনার কোনো ক্ষতি করবো না কিন্তু যদি শত্রুতা করেন তখন আমিও পিছু হটবো না।
আমি কি এখনই শুরু করে দেবো?
না, আমি ফোন করে জানিয়ে দেবো, গুড নাইট।
কাজটা কিন্তু সহজ নয়? অভয় ফোনটা রাখার প্রায় সাথে সাথেই প্রশ্নটা করে আমির।
কোন কাজটা?
ওই যে সবাইকে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়ার।
উপায় আছে আমির।
কি উপায়?
বলবো ,তবে আগে যে কাজে যাচ্ছি সেটা সেরে আসি।
কাজ? আমরা যাচ্ছি তোমার সেই বন্ধুর সাথে দেখা করতে, কি যেন নাম অমিয়।
হ্যাঁ।
কিন্তু ওর কাছে কি কাজ?
কিছু না, এমনই বন্ধুর সাথে দেখা করে আসি।

অফিস থেকে বেরিয়ে সামনের চায়ের দোকানে একটু চা খেতে ঢুকলো অমিয়, ঢুকে দেখে সামনে বেঞ্চিতে একজন তার‌ই বয়সী ছেলে বসে আছে তাকে সে চেনে কি যেন নাম.. আমির, অমিয় এগিয়ে গেল।
চিনতে পারছেন? মিস্টার আমির?
পারছি অমিয় বাবু।
আপনি এখানে?
আপনার সাথেই দেখা করতে।
আমার সাথে কেন? শুনে বেশ অবাক হয় অমিয়।
দরকার আছে রে গাঁড়ল তাই আসতে হলো, হটাৎ পিছনে তৃতীয় ব্যক্তির আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে অমিয়, দেখে আরেকজন দাঁড়িয়ে আছে এ‌ও তার‌ই বয়সী তবে এর মুখটা ভীষণ চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু ঠিক মনে পড়ছে না।
ওরকম হাঁ করে কি দেখছিস গাঁড়ল? আবার এই “গাঁড়ল” কথাটা শুনে ধা করে মনে পরে যায়, এই কথাটা একজন‌ই ওকে বলতো..
অভয়.. তুই.. তুই..
যাক চিনতে পারলি তবে। অভয় এসে নিজের ছোটোবেলার বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে‌।
তুই কোথায় ছিলি এতদিন? কি হয়েছিল তোর সাথে?  আমার সাথে যোগাযোগ করিসনি কেন? বল উত্তর দে এক নিঃশ্বাসে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে অমিয়।
অভয় একটু হেসে বলে আস্তে আস্তে ভাই আগে শান্ত হয়ে বস সব বলছি তার আগে পরিচয় করিয়ে দি‌ই এই হচ্ছে আমির আর আমির এর কথা তো বলেছি এ হচ্ছে অমিয় আমার স্কুলের বন্ধু।
হ্যাঁ আমি ওনাকে চিনি আগে কথা হয়েছে। বলে অমিয়।
তখন আমার কথাতেই ও তোকে আমার কাছে যেতে দেয়নি।
তার মানে তাথৈ ঠিক বলেছিল যে তুই ওই বস্তিতে থাকতি?
এখনও থাকি।
আমার সাথে দেখা করিসনি কেন? আমি কি তোর..
আমি তোর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ভাই কিন্তু আমি তখন দেখা করলে তুই আর তোর পরিবার বিপদে পরে যেত তাই দেখা করিনি।
কিন্তু তুই এতদিন কোথায় ছিলি, আর কাকীম কেমন আছেন?
অভয় সব বলতে থাকে, অমিয়র পরিবারের সবার খবর নেয় বহুবছর পরে দুই বন্ধু আবার হাসি ঠাট্টায় মেতে ওঠে, এবার অবশ্য আমির‌ও ওদের সঙ্গে থাকে আমির আর অমিয়র মধ্যে বেশ ভাব হয়ে যায়।
একসময় অভয় বলে: তুই এখনো বৃষ্টিকে পছন্দ করিস তাই না?
বৃষ্টির সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, আর তাছাড়া আমার কাছে আমার বন্ধুর মূল্য অনেক বেশী, ওরা তোর সাথে যা করেছে তার পরে তো..
আমি জানি তুই এখনো বৃষ্টিকে পছন্দ করিস, আর ও এখন তোর সাথে যোগাযোগ রাখছে।
তুই কিভাবে জানলি?
তাথৈ বলেছে।
তাথৈ? তুই আবার ওর সাথে?
হ্যাঁ, অভয় সব কথা ওকে বলে। শুনে অমিয় বেশ খুশীই হয়েছে বোঝা যাচ্ছে বলে:, যাক অবশেষে তোরা এক হলি।
এবার তুইও বৃষ্টিকে ক্ষমা করে দে।
অমিয় চুপ করে থাকে, কথা বলে না, অভয় বলে চলে: তুই ওর সাথে কথা বল, যদি মনে হয় ও বদলাবে না তাহলে তো কিছু করার নেই কিন্তু যদি মনে হয় যে ও বদলাতে পারে বা বদলাতে চাইছে তাহলে তোর উচিত ওকে একটা সুযোগ দেওয়া।

মসজিদে নামাজ শেষ করে বাইরে এসে জুতো পড়ছে মাহমুদ চারিদিকে সতর্ক এবং সন্ত্রস্ত দৃষ্টি যেন কোনো কিছু বা কারোর ভয় পাচ্ছে, এবার উসমান বেরিয়ে এল ওর চোখেমুখেও ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। দুই ভাই আস্তে আস্তে একটু দূরে রাস্তার পাশে ফুটপাত সংলগ্ন করে রাখা নিজেদের জিপের দিকে এগোতে থাকে, হটাৎ উসমানের সন্দেহ হয় যে কেউ ওদের উপর নজর রাখছে, সে দ্রুত চারপাশের লোকদের উপর দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয় সব কিছু স্বাভাবিক তবুও সন্দেহটা যায় না।
কি দেখছো ভাইজান? দাদাকে প্রশ্ন করে মাহমুদ।
কেন জানি মনে হচ্ছে কেউ আমাদের ফলো করছে।
কথাটা শুনে মাহমুদ ও একবার চারিদিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়, বলে: কেউ তো চোখে পরছে না হতে পারে এটা তোমার মনের ভুল।
হতে পারে তবে সতর্ক হয়ে থাকা ভালো, আমরা এআরসির সাথে শত্রুতা করেছি আর ও বীরেন বাবুর কবল থেকে বেঁচে বেরিয়ে এসেছে এবার আবার ও অ্যাটাক করবে।
কিন্তু রকি ভাই তো বললেন যে উনি আমাদের সুরক্ষা দেবেন।
এআরসির ক্ষমতা কত তুই জানিস না নাকি? তোর মনে হয় ওর সামনে বীরেন বাবু বা রকি নিজেদের ছেড়ে আমাদের কথা ভাববে?
আমার এখন তো মনে হচ্ছে আমরা ভুল করেছি।
আমারও সেটাই মনে হচ্ছে, চল তাড়াতাড়ি পা চালা। দুই ভাই হাঁটার গতি বাড়ায়, জিপের কাছে গিয়ে উঠতে যাবে দেখে আরেক বিপত্তি কিভাবে যেন জিপের একদিকের সামনে এবং পিছনের টায়ার পাংচার হয়ে গেছে, জিপের উল্টো দিকে গিয়ে দেখে একদিকের না জিপের সবকটা টায়ার‌ই পাংচার হয়ে গেছে।
ভাইজান এটা কিভাবে হলো? শঙ্কিত কণ্ঠে প্রশ্ন করে মাহমুদ।
আমরা ফেঁসে গেছি, এটা জেনে বুঝে করা হয়েছে।
এবার কি হবে?
পালা‌। বলে উসমান দৌড়াতে যাবে কিন্তু পারে না মসজিদের সামনে অনেক গরীব নিঃস্ব লোক বসে থাকে যারা ভিক্ষা করে দিন কাটায়, তাদের মধ্যেই বেশিরভাগ এখন পাল্টে গেছে হাতে পিস্তল নিয়ে ওদের দুইভাইকে ঘিরে ধরে বেশী না এই ৭-৮ জন, দুইভাই বিস্ফারিত চোখে ওদের দেখতে থাকে তারা বোঝে তাদের পালানোর সব রাস্তা বন্ধ।
কি ভেবেছিলি? এত সহজে পালিয়ে বেঁচে যাবি? প্রশ্নটা শুনে দুই ভাইয়ের নিঃশ্বাস ভয়ে প্রায় আটকে যাওয়ার অবস্থা, এই আওয়াজ তারা চেনে এটা আমিরের আওয়াজ, দুই ভাই শঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে যে ৭-৮ জন ওদের ঘিরে রেখেছে তারা পিছু হটছে আর দুজন তাদের দিকে এগিয়ে আসছে, একজন আমির আর অপরজন নিঃসন্দেহে এআরসি ওরফে রয় যদিও সে চোখে গগলস্ পরে আছে মুখ একটা কালো স্কার্ফ দিয়ে ঢাকা গায়ে কালো জ্যাকেট যার হুডিটা মাথায় ঢাকা দেওয়া আছে, মুখ দেখা না গেলেও এই গগলস্ এই জ্যাকেট তাদের চেনা এটা এআরসি।
আর কোনো রাস্তা না দেখে দুই ভাই হাত জোড় করে মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসে পরে এবং কেঁদে ফেলে, “আমাদের ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা করে দিন বস”, “আমরা আর এরকম করবো না, আমাদের একটা সুযোগ দিন” দুইভাই কাঁদতে কাঁদতে আমির আর রয়ের পা জড়িয়ে ধরে, কিন্তু যখন আমির কথা বললো তখন পরিষ্কার বোঝা গেল যে এতে ওদের মন গলবে না। আমির কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু হটাৎ দুই ভাই উঠে দাঁড়িয়ে হাসতে শুরু করে যাকে বলে অট্টহাসি, একসময় হাসি থামিয়ে উসমান বলে: কি ভেবেছিলি আমরা এইভাবে প্রার্থনা করবো? আমি জানতাম তোরা আসবি আমাদের খুঁজতে।
কি বলছো ভাইজান? মাহমুদ সত্যিই অবাক হয়।
হ্যাঁ, ভয় পাস না মাহমুদ ওরা আমাদের কিচ্ছু করতে পারবে না বরং আজ এখানে ওরা দুজনেই শেষ হবে।
উসমানের কথাটা শেষ হতে না হতেই প্রায় ১৫ জন লোক ওদের সবাইকে ঘিরে ফেলে এমনকি যে ৭-৮ জন প্রথমে উসমান আর মাহমুদকে ধরেছিল তাদের‌ও এবং প্রত্যেকের হাতে অটোমেটিক পিস্তল ফলে আমির ও তার লোকেদের নড়াচড়া বন্ধ করতে হলো তারা অসহায়ের মতো পিস্তল ফেলে দাঁড়িয়ে র‌ইলো। এবার উসমানের দেখাদেখি মাহমুদ‌ও হাসতে শুরু করে “কি রে আমির, কি রে এআরসি.. মারবি না আমাদের? হ্যাঁ?” “মার… এখন মার আমাদের”

একটা জিপের আওয়াজ পেয়ে আমির ও রয় ঘুরে দেখে রকি এসেছে, আমির ও রয়ের চোখাচোখি হয় এবং দুজনের ঠোঁটের কোণে একটা হাসির রেখা দেখা দেয়। জিপ থেকে নেমে রকি ওদের দিকে এগিয়ে আসে।
রকি ভাই এই নিন আপনাদের আমানত। সহাস্যে কথাটা বলে উসমান
এআরসি.. রকির গলায় আনন্দের সীমা অতিক্রম করেছে ফাইনালি, আবার আমরা মুখোমুখি সেদিন ঠিক মতো আলাপ হয়নি।

চলবে —————————–



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://ift.tt/ayX9L0o
via BanglaChoti

Comments