প্রতিশোধঃ দ্যা রিভেঞ্জ (পর্ব-৭)

সপ্তম পর্ব
—————————–

“তাথৈ এই তাথৈ” ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকলো বৃষ্টি, তাথৈ তৎক্ষণাৎ ফটোটা লুকিয়ে ফেলে।
“কি রে তুই এখনো রেডি হোসনি? জিজ্ঞেস করে বৃষ্টি।
কেন? রেডি হবো কেন? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে তাথৈ।
তোকে বললাম যে আজ বেরোবো, বাইরে ডিনারে যাবো।
তুই যা, আমার ইচ্ছা নেই।
উঁহু ইচ্ছা নেই বললে তো হবে না, যেতেই হবে, চল চল।
বৃষ্টিতে জোরাজুরিতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও গিয়ে একটা চুরীদার আর পাজামা পরলো, গলায় ওড়না নিয়ে কপালে ছোট্ট একটা টিপ পড়লো আর চুলটা একটু আঁচড়িয়ে পিঠের উপর খোলা রাখলো। এর বেশি সাজলো না তাথৈ, এমনিতেও খুব বেশি সাজে না তাথৈ একে তো না সাজলেও তাকে দেখতে বেশ ভালোই লাগে আর সে যাকে দেখানোর জন্য সাজবে সেই অভয়‌ই তো কাছে নেই এইসব ভেবেই সে বেশি সাজে না,  বৃষ্টি অবাক হলো বললো: হয়ে গেল, এইভাবে বাইরে যাবি?
তাথৈ: হ্যাঁ, এতেই যথেষ্ট।
কিন্তু…
কোনো কিন্তু নয় আমি গেলে এভাবেই যাবো, নাহলে তুই একাই যা।
বৃষ্টি আর কিছু বললো না, দুজনে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে একটা মারুতি স্যুমো দাঁড়িয়ে আছে এবং তার ভিতরে বসে আছে ওদের স্কুলের বন্ধু-বান্ধবী যাদের মধ্যে সুস্মিতা এবং সাম্য ছাড়াও আরও কয়েকজন আছে।
সাম্য তাথৈকে দেখে বললো: কেমন আছো তাথৈ? অনেক বছর পরে দেখা হলো, চিনতে পারছো?
তাথৈ: তুই সাম্য তো?
যাক চিনতে পেরেছো তাহলে।
গাড়িতে একজন নতুন ছেলে ও মেয়ে ছিল বৃষ্টি ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।
সাম্য ড্রাইভার সিটে বসে আছে সে বললো: তাথৈ এসো সামনে বসো। তাথৈ মানা করতে যাবে কিন্তু বৃষ্টি জোর করায় বসতেই হলো। সবাই একটা রেস্টুরেন্টে এলো।
রেস্টুরেন্টে সবাই ঢুকে দেখে প্রতিটা টেবিল জুড়ে অনেকটা ৮-৯ বছরের বাচ্চা ছেলেমেয়েরা য়ভর্তি,বাচ্চারা প্রত্যেকেই  নতুন পোশাক আশাক পরে আছে, তবে ওরা যে খুবই গরীব ঘরের ছেলেমেয়ে সেটা বোঝা যাচ্ছে, ওদের সবার মুখে হাসি সবার সামনে খাবার-দাবার ভর্তি।
সুস্মিতা বললো: এ মা এখানে তো সব টেবিল ভর্তি, চল অন্য কোথাও যাই
সাম্য: না, কেন এখানেই থাকবো, দাঁড়া ম্যানেজারের সাথে কথা বলি। বলে সাম্য একজন ওয়েটারকে বললো ম্যানেজারকে ডাকতে।
ম্যানেজার এসে বললো: সরি স্যার, আজ সবকটা টেবিল বুকড হয়ে গেছে।
সাম্য: এই ভিখারীদের জন্য টেবিল বুকড? কে করেছে?
ম্যানেজার আঙুল দিয়ে কফি কাউন্টারের দিকে দেখালো ,সাম্য তাকিয়ে দেখে সেখানে একটা তাদেরই বয়সী ছেলে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে আর মোবাইলে কি যেন করছে ছেলেটাকে দেখে সুস্মিতা এবং আরেকটা মেয়ে বললো: ওয়াও কি হট রে, দেখ তাথৈ।
তাথৈ: তোদের সব ছেলেই হট লাগে। বলে আড়চোখে ছেলেটার দিকে তাকিয়েই চোখ আটকে গেল তাই দেখে দুটো মেয়ে বললো: কি রে এখন নিজে দেখছিস কেন?
কিন্তু তাথৈএর কানে এখন কোনো কথা ঢুকছে না সে একদৃষ্টে ছেলেটাকে দেখছে, ছেলেটা একটা কালো শার্ট ইন করে পরে আছে যার বুকের কাছে একটা বোতাম খোলা, ফুলস্লিভ শার্ট কিন্তু স্লিভ দুটো হাতের কব্জির একটু উপর পর্যন্ত গোটানো, নীচে কালো জিনস, পায়ে পাওয়ার শ্যু চোখে গগলস্ মাথায় ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুল, সামনের দিকে মাঝখানে সিথি কাটা তারপর দুসাইডে আলাদা ভাবে ব্যাকব্রাশ করা কপালের উপরে চুলটা ঢেউ এর মতো উঁচু হয়ে দুদিকে নেমে পিছনে চলে গেছে, সাথে একেবারে ক্লিন শেভড মুখ ছেলেটার।
এরমধ্যেই বৃষ্টি ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেছে বললো: এই যে মিস্টার, শুনুন।
ছেলেটি এবার মুখ তুলে বৃষ্টিকে দেখলো তারপর বললো: ইয়েস।
এই ভিখিরির বাচ্চাদের জন্য আপনি টেবিল বুক করেছেন?
ছেলেটা একটুক্ষণ চুপ থেকে বললো: হ্যাঁ, আর ওরা ভিখিরি নয়।
ওদের সরিয়ে নিন, আমরা বসবো।
এখনো ওদের খাওয়া হয়নি, হলেই সরে যাবো।
উঁহু এখনই ছাড়ুন
সেটা সম্ভব নয়।
আপনি জানেন আমি কে?
এইসময় ম্যানেজার হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এসে ছেলেটাকে বললো: স্যার প্লিজ, আপনি…
ছেলেটা কথা শেষ করতে না দিয়ে বললো: আমি যখন টেবিল বুক করেছিলাম তখন কি আপনি ক্লজ দিয়েছিলেন যে যদি কোনো বড়োলোকের অশিক্ষিত অহংকারী আদরের দুলালী এলে আমাকে টেবিল ছাড়তে হবে? দেননি তো? দিলে আমি টেবিল বুক করতাম‌ই না, কিন্তু এখন যতক্ষণ না ওদের খাওয়া শেষ হচ্ছে ততক্ষণ আমি টেবিল ছাড়বো না।
“ইউ আর ইনসাল্টিং মি” দাঁত কড়মড় করে বললো বৃষ্টি।
এবার সাম্য এগিয়ে গেল বললো: এই শুনুন, অনেকক্ষণ থেকে আপনার বকবক সহ্য করছি, এখন চুপচাপ ওই ভিখিরিগুলোকে নিয়ে কেটে পরুন নাহলে আপনার কোনো আইডিয়া নেই আমি কি করতে পারি?
“আপাতত তিনটে কাজ করতে পারেন, খাবার প্লেট হাতে নিয়ে খেতে পারেন, অপেক্ষা করতে পারেন, অন্য কোথাও যেতে পারেন, কোনটা করবেন সেটা আপনাদের ডিসিশন।
সুস্মিতা বললো: সাম্য, বৃষ্টি ছাড় অন্য কোথাও চল।
না, এখানেই থাকবো এরা যখন সরবে না তখন এদের প্লেটগুলো ছুঁড়ে ফেলে দেবো। বলে সাম্য পাশের একটা টেবিল থেকে বাচ্চাদের সামনে থেকে একটা প্লেট তুলে ফেলতে গেল কিন্তু প্লেট ধরার আগেই ছেলেটা বা-হাতে সাম্যর কবজি ধরে হাতটা একটু তুলে একটু চাপ দিল ফলে কব্জিটা বাকি হাতের থেকে নীচের দিকে বেঁকে গেল, এবার ডানহাতে চশমাটা খুলে এক পা এগিয়ে সাম্যর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো: আর কখনো যদি কারো মুখের সামনে থেকে খাবার তুলে ফেলার চেষ্টা করতে দেখি তাহলে হাতটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবো।বলে একটা হাল্কা ধাক্কা দিল যার ফলে সাম্য কয়েক পা পিছিয়ে এল, ছেলেটার চোখ মুখে রাগ আর ঘৃণার অভিব্যক্তি স্পষ্ট।
ছেলেটার গলার আওয়াজ শুনে তাথৈ আরও অবাক হয়, এই আওয়াজ সে কদিন আগেই শুনেছে, মন্দিরের পিছনে বটগাছের তলায়, নিজেকে বিপদ বলে পরিচয় দিয়েছিল, এটা সেই ছেলেটা… কিন্তু গলার স্বরের থেকেও তাথৈএর যেটা দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সেটা হলো ছেলেটার মুখ, চশমা খোলার পরে ছেলেটার পুরো মুখটা দেখতে পাচ্ছে আর মুখের আদলটার তার অতি প্রিয় একজনের সাথে মিল আছে তার থেকেও যেটা তাথৈকে ভাবাচ্ছে সেটা হলো ছেলেটার পোশাক পরার ধরন, বুকের কাছে শার্টের একটা বোতাম খোলা, স্লিভদুটো কব্জির একটু উপর পর্যন্ত গোটানো এগুলো সব‌ই তার অতি পরিচিত অন্যান্যদের চোখে খুবই সাধারণ এগুলো, কিন্তু তাথৈএর চোখে এগুলো কোথাও যেন আলাদা, তার পরে ছেলেটার চশমা খোলার স্টাইল, মাথাটা একটু ঝুঁকিয়ে ডান হাতের তর্জনী ভাঁজ করে মধ্যমা এবং বুড়ো আঙুল দিয়ে চশমার ফ্রেমটা ধরে খুললো এভাবেই আরেকজনকে বহুবার চশমা খুলতে দেখেছে তাথৈ যার জন্য এতবছর সে অপেক্ষা করে আছে ,যাকে সবাই মৃত বললেও তার মন মৃত মানতে রাজী নয় তার অভয়।
সাম্য আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু ওদের গ্ৰুপের আরও একটা ছেলে এসে ওকে টেনে বাইরে নিয়ে গেল, বৃষ্টি আগুনে দৃষ্টি দিয়ে বেরিয়ে গেল, শুধু তাথৈ যেতে যেতেও ছেলেটাকে দেখতে থাকে, ছেলেটা তখন এক‌ই ভাবে চশমার ফ্রেমটা ধরে চোখে পরে নিল। বাইরে এসে সাম্য গজরাতে লাগলো “আজ শালাকে ছাড়বো না, মেরেই ফেলবো, আমার গায়ে হাত দেওয়া” যে ছেলেটা সাম্যকে ধরে বাইরে নিয়ে এসেছিল সে বললো : দাঁড়া আরও ছেলে ডাকছি।
গ্ৰুপে আরো একটা মেয়ে ছিল সে বললো: কি দরকার, চল না অন্য কোথাও যাই।
সাম্য: না, ওকে শিক্ষা না দিয়ে যাবো না, কাল তাথৈএর জন্মদিন, এই রেস্টুরেন্টটা শহরের নামী রেস্টুরেন্ট তাই ওর জন্যই এখানে আসা, আর এখানেই ও খাবে।
তাথৈএর অবশ্য এসব কথা কানেও ঢুকছে না সে তখন অন্যমনস্ক হয়ে ওই অচেনা ছেলেটার কথা ভাবছে… কিন্তু ছেলেটা সত্যিই অচেনা কি?
একটু পরেই লাইন দিয়ে বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলো বেরিয়ে এল সাথে দুজন স্যুট-বুট পরা, চোখে কালো চশমা দেওয়া লোক লোকদুটোর যে ভীষণ মাসল্ সেটা বোঝা যাচ্ছে আর সবার পিছনে ছেলেটা, আর তখনই চারটে বাইকে ৭-৮ জন মস্তান টাইপের ছেলে রেস্টুরেন্টের সামনে এলো ওদের দেখে সাম্য আর অপর ছেলেটা এগিয়ে গেল কিছু কথা হলো ওদের মধ্যে তারপর ওরা এগিয়ে এল। বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলো তখন দুটো স্যুমো গাড়িতে উঠতে শুরু করেছে।
সাম্য হুংকার দিল: কি রে আমার হাত নাকি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিবি? তা এখন পালাচ্ছিস কেন? দম শেষ?
ছেলেটা একবার ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখলো কিন্তু ওর সাথে যে দুজন লোক এগিয়ে আসতে গেল, হাত তুলে ওদের থামিয়ে বললো: তোমরা প্রতিটা বাচ্চাকে সেফলি ওদের বাড়িতে পৌঁছে দাও।
কিন্তু বস্
যা বললাম করো, ওদের আমি হ্যান্ডেল করে নেবো, যাও।
ইয়েস বস। বলে বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোকে গাড়িতে তুলে চলে গেল, এবার ছেলেটা সাম্যদের দিকে ফিরলো একই ভাবে চোখ থেকে আবার চশমাটা খুলে শার্টের পকেটে রেখে বললো: আপনারা সত্যিই লড়াই চান?
লড়াই নয় বে আজ তোর হাত-পা ভেঙে এখানেই ফেলে রাখবো।
রেস্টুরেন্ট কিন্তু এখন খালি আছে আপনারা গিয়ে নিজেদের টাইম এনজয় করতে পারেন।
মস্তান ছেলেদের একজন বললো: কেন বে? ভয় লাগছে?
না, কিন্তু আমি লড়াই চাইছি না তাই।
এবার সাম্য তাথৈকে দেখিয়ে বললো: ওই মেয়েটাকে দেখছিস? ও আমার গার্লফ্রেন্ড তাথৈ, ওকে আমি খুব ভালোবাসি ওকে ট্রিট দিতে এনেছিলাম কিন্তু তুই ওর ইভিনিংটা নষ্ট করেছিস, এর শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে। বলে সাম্য আক্রমণ করলো কিন্তু সাম্যর ঘুষিটা ছেলেটা এড়িয়ে গেল, এবার বাকি ছেলেগুলো‌ও একসাথে আক্রমণ করলো। বৃষ্টি, তাথৈ, সুস্মিতা এবং ওদের সাথে থাকা অপর মেয়েটা দেখতে থাকলো এই অসম লড়াই একদিকে সাম্য আর ওর ৭-৮ জন বন্ধু আর অপরদিকে একা ওই অচেনা ছেলেটা, সাম্য আর ওর বন্ধুরা যেটা করছে সেটাকে লড়ার চেষ্টা বলা গেলেও ছেলেটা যেটা করছে সেটাকে খেলা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না সে অনায়াসে প্রতিটা প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতিটা আঘাত এড়িয়ে যাচ্ছে নয়তো হিত দিয়ে প্রতিহত করছে বদলে কারো হাত ধরে একটু মোচড় দিয়ে গালে থাপ্পড় মারছে বা কাউকে পিঠে ধাক্কা মেরে ফেলে দিচ্ছে তো কাউকে ঠেলে আরেক ছেলের গায়ে ফেলে দিচ্ছে, কিন্তু কাউকেই গুরুতর আঘাত করছে না একটু পরেই সাম্য আর ওর বন্ধুরা এখানে ওখানে ছিটকে পরে গেল, ছেলেটা তখন সবাইকে বললো: আশা করি এবার শখ মিটেছে?
উত্তরে সাম্য উঠে দাঁড়িয়ে বললো: তোকে আজ খুন করবো। বলে ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেল কিন্তু ছেলেটা সাম্যর ঘুষিটা হাত দিয়ে প্রতিহত করে সাম্যর মুখে প্রথমবার ঘুষি মারার জন্য উদ্যত হতেই তাথৈ বলে উঠলো: না… তারপর ছেলেটার সামনে এসে হাত জোড় করে বললো: প্লিজ ওকে আর ওর বন্ধুদের ছেড়ে দিন, এখানে রক্তারক্তি করবেন না, আমি ওদের হয়ে ক্ষমা চাইছি, আসলে কাল আমার জন্মদিন তাই ওরা আমার জন্য একটা ট্রিটের ব্যবস্থা করেছিল, আর সেটা ব্যাহত হ‌ওয়ায় একটু বেশি রিয়্যাক্ট করে ফেলেছে, প্লিজ ওকে আঘাত করবেন না।
ছেলেটা এবার সাম্যকে ছেড়ে বললো: মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে। তারপর আবার পকেট থেকে চশমা নিয়ে চোখে পরে নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল, তাথৈ একটু পিছনে গিয়ে বললো: আপনি কে? মানে আপনার নামটা?
প্রশ্নটা শুনে ছেলেটা গাড়ির দরজা খুলতে যাচ্ছিল প্রশ্ন শুনে ঘুরে দাঁড়ালো, তাথৈ আবার বললো: প্লিজ এখন এটা বলবেন না যে আপনার নাম বিপদ, আপনার আওয়াজ শুনে চিনলাম, সেদিন মন্দিরের পিছনে এই পরিচয় দিয়েছিলেন, আজ আসল নামটা বলবেন কি?
ছেলেটা বললো: বিপদ পরিচয়টাই থাকুক না, সেদিন আপনি আমার জন্য বিপদে পড়েছিলেন আর আজ আপনার বয়ফ্রেন্ড ও তার বন্ধুরা বিপদে পড়লো, কাজেই আপনাদের জন্য ওই পরিচয়টাই থাকুক।
তাথৈ: প্লিজ আপনার আসল নামটা বলুন।
ছেলেটা: আপনার বয়ফ্রেন্ড হয়তো পছন্দ করছে না যে আপনি তাকে ছেড়ে আমার সাথে কথা বলছেন, আর তাছাড়া আমার পরিচয় জেনে আপনার কোনো লাভ‌ও নেই কাজেই আপনার বয়ফ্রেন্ডের কাছে যান।
তাথৈ বলতে যাচ্ছিল যে সাম্য ওর বয়ফ্রেন্ড নয় কিন্তু তার আগেই ছেলেটা গাড়িতে উঠে দরজার বন্ধ করে দিয়েছে, তাথৈ আর কিছু বলতে পারলো না, ছেলেটা চলে গেল, তাথৈএর মুখ থেকে একটা নাম উচ্চারিত হলো…. অভয়।
রাতে সাম্যর গাড়ি করেই তাথৈ আর বৃষ্টি বাড়ি ফিরলো, গাড়ি গেটে থামতেই তাথৈ গাড়ি থেকে নেমে হনহন করে ভিতরের দিকে হাঁটা দিল, সাম্য একটু অবাক হলো,একটু ক্ষুন্ন‌ও হলো, কিন্তু বৃষ্টি এক ছুটে গিয়ে তাথৈকে ধরে বললো: কি রে তুই সাম্যকে ইগনোর করে চলে এলি কেন? ও বেচারা তোর সাথে একটু কথা বলবে বলে দাঁড়িয়ে আছে।
ওর সাথে আবার কি কথা বলবো?
কেন? কাপলস্‌রা যা বলে
তাথৈ অবাক হয়ে বলে: মানে? এসব কি বলছিস তুই?
আচ্ছা বাবা ঠিক আছে তুই একা গিয়ে কথা বল, আমি ভিতরে যাচ্ছি।
এবার তাথৈ জোর গলায় বললো: তোর যা ইচ্ছা তাই কর, কিন্তু ওর সাথে আমার কোনো কথা নেই আর আমরা কাপলস্ ন‌ই। বলে বাড়ির ভিতরে চলে গেল, বৃষ্টি ঘুরে দেখে সাম্য এগিয়ে এসে পাশেই দাঁড়িয়ে আছে তার মুখে জিজ্ঞাসা, বৃষ্টি ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিতে বললো: ও বোধহয় তোর আজকের হারটা সহ্য করতে পারেনি তাই রেগে আছে।
তাথৈ নিজের রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল তারপর অভয়ের ছবিটা বার করে বলতে লাগলো: আমি জানতাম তুমি বেঁচে আছো ,আজকে ওটা তুমিই ছিলে আমি জানি, তোমাকে চিনতে আমার ভুল হবে না… কিন্তু তুমি নিজের পরিচয় দিলেনা কেন? তাহলে কি তুমি আমাকে চিনতে পারোনি? না, সেটা নয় আমি যখন তোমাকে চিনতে পেরেছি তখন তুমিও আমাকে চিনতে পেরেছো তাহলে? তাহলে কেন নিজের পরিচয় না দিয়ে এড়িয়ে গেলে আমাকে?
হঠাৎ তাথৈএর মনে পরলো ছেলেটা সাম্যকে তাথৈএর বয়ফ্রেন্ড বলছিল তাথৈ আবার ছবিটাকে বলতে শুরু করলো: তুমি কি এটা ভেবেছো যে আমি তোমাকে ভুলে সাম্যকে.. সেই জন্যেই নিজের পরিচয় দিলে না, সেদিন‌ও নিজের পরিচয় লুকিয়েছিলে… তুমি এটা কি করে ভাবলে যে আমি তোমাকে ভুলে যাবো? না.. তুমি যদি আমাকে ভুল বুঝেও থাকো তাহলে সেটা ভাঙাবো আমি, তার আগে তোমাকে খুঁজে বার করতে হবে।
তাথৈ ফোন তুলে একটা নাম্বারে কল করলো: হ্যালো মিস্টার গুপ্ত?
বলুন ম্যাডাম।
আপনাকে একজনের সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হবে।
কে?
সে এখন কি নাম ব্যবহার করে জানিনা, তাকে একটা রেস্টুরেন্টে দেখেছি।
কিন্তু..
আমি রেস্টুরেন্টের অ্যাড্রেস আপনাকে টেক্সট করছি আপনি যান আমি ম্যানেজারকে বলে দেবো সে আপনাকে ফুটেজ দেখিয়ে দেবে, তার সাথে অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েও এসেছিল।
ঠিক আছে ম্যাডাম।
ফোন রেখে আবার ছবিটা হাতে নেয় তাথৈ, বলতে থাকে: এবার আমি তোমাকে খুঁজে বার করবোই অভয়, যতই নিজেকে লুকিয়ে রাখো.. আর তারপর আর তুমি আমার থেকে দূরে যেতে পারবে না।

আবছা অন্ধকার ঘরে একটা ছেলে সামনে ঝোলানো পাঞ্চিং ব্যাগে অবিরাম পাঞ্চ মেরে যাচ্ছে, একটু দূরে দেয়ালে একটা ছবি লাগানো আছে যার উপর একটা লাইট ফোকাস করা আছে তাথৈএর ছবি। ছেলেটা বেশ খানিকক্ষণ ধরে পাঞ্চ করে গেল এবং সেটা বক্সিং গ্লাভস ছাড়াই মারছে, একটু পরে থেমে পাঞ্চিং ব্যাগটা ধরে তাতে মাথা ঠেকিয়ে হাঁফাতে লাগলো।
খানিকক্ষণ এইভাবে থেকে ছবিটার সামনে গেল এবং ছবিটাকেই উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো: কাল তোমার জন্মদিন, আরও একটা বছর কেটে গেল, তুমি আর তোমার পরিবার সবকিছু ভুলে অনেক এগিয়ে গেছো কিন্তু আমি পারিনি ১৬ বছর ধরে প্রতিশোধের জ্বালায় জ্বলছি, আজ তোমাকে আবার দেখলাম তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে, তখন ছোটো ছিলাম বুঝিনি তোমাকে আলাদা ভেবেছিলাম তাই আমার বিশ্বাস আমার ভালোবাসা নিয়ে খুব সহজেই খেলা করেছিলে, এখন বুঝি তুমিও তো ওই ভট্টাচার্য পরিবারের‌ই মেয়ে, আলাদা হবেই বা কি করে?
কিন্তু আমি কেন তোমার কথা ভাবছি? তুমি তো বেশ সুখেই আছো সাম্যর সাথে তাই থাকো অভয় আর কোনোদিন তোমার জীবনে তোমার আর সাম্যর মাঝে আসবে না, কিন্তু যেটার জন্য আমি এসেছি সেই প্রতিশোধ আমি নেবোই।
হটাৎ ফোন বেজে উঠলো, কালো মূর্তিটা ফোনটা কানে ধরে ছোট্ট “হুম” শব্দ করলো, তারপর ওদিকের কথা শুনে ফোনটা রেখে আবার ছবির সামনে এলো,বললো: কাল তোমার জন্মদিন আমার তরফ থেকেও গিফ্ট থাকবে তবে সেটা বোধহয় তোমাদের কারোর‌ই পছন্দ হবে না বিশেষ করে বীরেন ভট্টাচার্যের।

কপালে একটা চুম্বনের স্পর্শে ঘুম ভাঙলো তাথৈএর, চোখ মেলে দেখে সামনে তার মা সরমা দেবী বসে আছেন এবং একটু আগে তিনিই তাথৈএর কপালে স্নেহচুম্বন দিয়েছেন।
সরমা দেবী: শুভ জন্মদিন তাথৈ।
থ্যাংক ইউ মা।
ভালো থাক, সুস্থ থাক তোর সব মনোবাসনা পূর্ণ হোক।
এবার হবে, হবেই।
পুরো ভট্টাচার্য পরিবারে সাজো সাজো রব, বাড়ির সবার প্রিয় মেয়ে তাথৈএর জন্মদিন আজ,আত্মীয়রা আসতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই, সবাই তাথৈকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে সন্ধ্যা হতেই অন্যান্য অতিথিরা আসছে, তাথৈ আর বৃষ্টির বন্ধুরাও আসছে, বিরাট বড়ো কেক আনা হয়েছে, তাথৈ নতুন চুরীদার পাজামা পরেছে অসাধারণ সুন্দর লাগছে তাকে, কিন্তু তার মুখে হাসি নেই, কেউ জন্মদিনের অভিনন্দন জানালে একটা শুকনো হাসি হাসছে শুধু।
“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ” একটু অন্যমনস্ক হয়ে ছিল তাথৈ, অভিনন্দন টা পেয়ে তাকিয়ে দেখে সামনে ৬ ফুটের উপরে লম্বা এক মাসলম্যান দাঁড়িয়ে আছে। সে উত্তর দিল: থ্যাংক ইউ।
পাশ থেকে বৃষ্টি বললো: তোর এখন আসার সময় হলো দাদা?
সরি, একটা কাজে আটকে গিয়েছিলাম তাই আসতে পারিনি।
ওদিকে দেখ বৌদি কেমন একা হয়ে আছে।
রকি একবার আড়চোখে বিদিশাকে দেখে নিল কিছু বললো না। কেক কাটার পরে একসময় বৃষ্টি তাথৈকে টেনে বাড়ির ছাদে নিয়ে গেল, তাথৈ কি দরকার জিজ্ঞেস করায় বললো “চল না গিয়েই দেখ”। ছাদে গিয়ে দেখে সেখানে সাম্য দাঁড়িয়ে আছে, বৃষ্টি বললো: সাম্য এই নে কি বলবি বলছিলি, তোর কাছে কিন্তু ধার র‌ইলো। বলে বৃষ্টি নীচে নেমে গেল।
“রঘু আর লাল্টুকে খুঁজে পেলি রকি?” তাথৈএর জন্মদিনের পার্টির মাঝেই ভাগ্নেকে প্রশ্ন করেন বীরেন ভট্টাচার্য।
না মামা, এখনো পাইনি তবে খোঁজ চলছে।
ওদের খুঁজে বার করা দরকার, ওরা কারো কাছে মুখ খুললে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
কিন্তু ওরা যদি নিজেরাই পালিয়ে যায়? শেষের প্রশ্নটা করেন ধীরেন ভট্টাচার্য।
হুমমম, এখন সেটাই মনে হচ্ছে সরকার মরার পরে অনেকদিন আর কিছু হয়নি,এখন আবার। গম্ভীর মুখে বলেন বীরেন বাবু।
কিন্তু ওরা পালাবে কেন দাদা?
কারণ ওরা যা চাইছিল তা পেয়ে গেছে হয়তো…
কি মামা?

তুমি জানোনা? চাপা ধমক লাগান বীরেন বাবু, তারপর একটু থেমে বলেন: ওগুলো ওখান থেকে সরাতে হবে, ওরা ওগুলোর খবর জানে, খুব সম্ভবত ওগুলোর জন্যই পালিয়েছে।
তাইতো, ওগুলোর কথা মাথাতেই আসেনি।
কিন্তু মামা ওরা অনেক বছর ধরে আছে এর আগে কখনো এমন কিছু করেনি যাতে ওদের…
কখনো করেনি বলে কি এখনো করবে না? ওরা শুধু ওটার খবর জানে তাই নয় অনেক বছর থাকার দরুন আরও অনেক খবর জানে সেগুলো যদি কারো কাছে ফাঁস করে দেয় কি হবে ভেবিছিস রকি? না, আর সময় নষ্ট করা যাবে না এক্ষুনি যেতে হবে ধীরেন, আজ রাতেই ওগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে, ড্রাইভারকে গাড়ি বার করতে বল, আগে ওগুলো সরাই তারপর কাল বাকী কাজ সারবো।
একটু পরেই তিনজন বেরিয়ে গেল, কিন্তু তিনজনের কেউ লক্ষ্য করলো না যে তিনজনের এই কথোপকথন আরেকজন শুনছিল…… বিদিশা।
তিনজন বেরিয়ে যেতেই বিদিশা একটু আড়ালে গিয়ে একটা ফোন করে একদম আস্তে আস্তে বলে…. “হ্যাঁ, শোনো বীরেন ভট্টাচার্য, তার ভাই আর রকি কোথায় যেন গেল, কিছু একটা জিনিস লুকোনো জায়গা থেকে সরানোর জন্য, যেটার খোঁজ জানে ওই দুজন”।

ছাদে তাথৈকে সাম্যর সাথে রেখে বৃষ্টি নীচে চলে গেল, তাথৈ এবার একটু রাগী স্বরে বললো: এসবের মানে কি সাম্য?
আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।
কি? আর এখানে এভাবে কেন?
আসলে যেটা বলতে চাই সেটা..
কি বলতে চাস তাড়াতাড়ি বল।
আই লাভ ইউ।
কি? কি বললি? সাম্যর কথাটা ঠিকমতো অনুধাবন করতে পারে না তাথৈ।
আই লাভ ইউ তাথৈ।
একটুক্ষণ সময় নিল তাথৈ উত্তরটা মনে মনে সাজিয়ে নিল বোধহয়। তাথৈকে চুপ থাকতে দেখে সাম্য আবার বললো: কিছু বলছো না? তবে কি তোমার দিক থেকেও সম্মতি বলে ধরে নেবো?
না, গম্ভীর স্বরে উত্তর দেয় তাথৈ তারপর আবার বলে: আমি তোকে কোনোদিন সেভাবে দেখিনি ভাবিওনি, তোকে আমি বন্ধু হিসেবেই দেখেছি তার বেশি কিছু নয়।
কিন্তু কেন? আমার মধ্যে কি খারাপ আছে তাথৈ? আমি সেই ছোটোবেলা থেকেই তোমাকে ভালোবাসি।
কিন্তু আমি বাসি না, আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি।
কে সে? এবার সাম্যর গলাতেও রাগের আভাস।
তোকে বলার কোনো প্রয়োজন বা বাধ্যবাধকতা কোনোটাই নেই আমার। বলে ঘুরে চলে যাচ্ছিল তাথৈ কিন্তু সাম্য দৌড়ে তাথৈএর সামনে এসে ওর পথ আটকায়, ওর মুখে এখন জিঘাংসার ছাপ সে বললো: কেন? কেন তুমি বারবার আমাকে রিফিউজ করো, কেন? স্কুলে থাকতেও তুমি আমাকে ছেড়ে ওই ভিখিরির কাছে যেতে.. কি যেন নাম ছিল হ্যাঁ অভয়, ওই ভিখিরি অভয়ের কাছে যেতে আর আজ‌ও তুমি আমাকে..
চুপ.. গর্জে ওঠে তাথৈ তারপর সমান তেজের সাথে বলে “অভয়ের নামে আর একটা বাজে কথা বললে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না”
সাম্য কিছুক্ষণ চুপ করে তাথৈএর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর বলে: অভয়… তুমি এখনো ওই ভিখিরিকে ভালোবাসো? ওই ভিখিরির জন্য তুমি আমাকে রিফিউজ করছো?…. তারপর তাথৈএর একটা হাত ধরে তাথৈকে কিছু বোঝানোর স্বরে বলে: তাথৈ তাথৈ  ওই অভয় তোমার যোগ্য কোনোদিন ছিল না, আর তাছাড়া ও এখন আর বেঁচে নেই.. তুমি একবার আমাকে বোঝার চেষ্টা করো আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, ওই অভয় তোমাকে কি দিয়েছে যার জন্য ও মরে যাওয়ার পরেও তুমি ওকে ভালোবাসছো? প্লিজ তাথৈ প্লিজ আই লাভ ইউ।
তাথৈ গম্ভীর স্বরে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে বলে: আমার হাত ছাড় সাম্য, দেখ এইসব চিন্তা বাদ দে, তুই অন্য কোনো মেয়ে দেখ..
আমার অন্য মেয়ে চাই না, আমার তোমাকে চাই.. তাথৈ বিশ্বাস করো আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি খুব…।
সাম্য হাত ছাড়, আমার হাতটা ছাড়।
না ছাড়বো না আগে বলো তুমিও আমাকে ভালোবাসো, বলো..।
সাম্য… এক ঝটকায় নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয় তাথৈ তারপর সাম্যর গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারে তারপর বাঘিনীর মতো ফুঁসতে ফুঁসতে বলে: পরের বার আমার হাত ধরা তো দূর, ধরার কথা ভাবার আগে এই থাপ্পড়টা মনে রাখবি, আমি তোকে কোনোদিন‌ও ভালোবাসবো না কারণ আমি তোর থেকে অনেক অনেক ভালো ছেলেকে ভালোবাসি…এবং সেটা অভয়, আর আমি চিরকাল ওকেই ভালোবেসে যাবো, তা ও বেঁচে থাকুক কি না থাকুক।
থাপ্পড়টা শুধু গালে না পুরো শরীরে জ্বালা ধরায় সাম্যর এবার সে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে: কিন্তু কোথায় অভয়? ও এখন কোথায়? মরে গেছে… আর ওকে কে মেরেছে জানো?
তাথৈ অবাক হয়, জিজ্ঞেস করে: কে মেরেছে?
তোমার পরিবারের লোকেরা, তোমার আদরের জ্যেঠুমণি ও তোমার বাপি…. হিংস্র কণ্ঠে উত্তর দেয় সাম্য।
মাথায় বজ্রপাত হলো যেন তাথৈএর, হতবুদ্ধি হয়ে যায় কোনোমতে বলে: মিথ্যে কথা, মিথ্যে কথা বলছিস তুই…
তুমি না মানতে চাও মেনো না কিন্তু এটাই সত্যি তোমার পরিবার ওর আর ওর পরিবারের সাথে যা করেছে তাতে যদি ও বেঁচেও থাকতো তাহলেও তোমাকে ঘেন্না করতো, তোমার মুখ পর্যন্ত দেখতে চাইতো না। বলে হনহন করে চলে গেল, আর তাথৈ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে র‌ইলো।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে বীরেন ভট্টাচার্য ,ধীরেন ভট্টাচার্য আর রকিকে নিয়ে একটা নীল গাড়ি তীব্র গতিতে এগিয়ে চলেছে রাতের বেলা এমনিতেও রাস্তায় গাড়ি চলাচল কম কাজেই গাড়ির স্পিড একটু বেশীই চড়েছে, একটা অন্ধকার গোরস্থানের গেটের সামনে এসে গাড়ি দাঁড়ালো, তিনজন গাড়ি থেকে নামলেন পিছনে আরেকটা গাড়ি এসে দাঁড়াতে সেটা থেকে জগা আরও কয়েকজন নামলো, গোরস্থানের আশপাশটা বেশ ফাঁকা লোকজন তেমন নেই আর এই রাতে তো থাকার কথাও নয়।
গোরস্থানের গেটে লোক নেই দেখে অবাক হন বীরেন বাবু এখানে নিজে প্রভাব খাটিয়ে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পাহারার বন্দোবস্ত করেছেন, অবশ্যই নিজের বিশ্বস্ত লোকদের রেখেছেন তারা জানেনা এখানে কি আছে বা কেন এখানে পাহারা দিতে হবে,কিন্তু তারা এখন নেই অগত্যা নিজেরাই গেট খুলে এগিয়ে যান, কিছুদূর এগিয়ে বামে তারপর কিছুটা গিয়ে আবার ডানে বেঁকে যেখানটায় আসেন সেখানে সারিবদ্ধ ভাবে কবর… প্রত্যেকের হাতে হাই পাওয়ারের টর্চ জায়গাটা থেকে অন্ধকার দূর করেছে… কিন্তু সেই আলোতে সামনে যা দেখলেন বীরেন ভট্টাচার্য তাতে তার মুখের অন্ধকার কোনো কিছুতেই দূর হবে বলে মনে হয় না, চেনার জন্য কয়েকটা কবরে চিহ্ন দিয়ে রেখেছিলেন এবং চিহ্ন দেওয়া প্রতিটা কবর খোঁড়া হয়েছে আর সেগুলোর মধ্যে যা রাখা ছিল সেগুলো নেই কে বা কারা অলরেডি সাফ করে দিয়েছে, তার বদলে তার বিশ্বস্ত পাহারাদার দের লাশ পরে আছে।
হটাৎ দলের গুণ্ডাগোছের লোক আরো একজনকে ধরে আনলো “দাদা দাদা, এই দেখুন একে হাত-পা বেঁধে ফেলে রেখেছিল”
কে করেছে এসব? জিজ্ঞেস করে জগা
লোকটা মিনমিন করে উত্তর দেয়: কজন লোক, মুখ দেখিনি কালো কাপড়ে ঢাকা ছিল তবে ওরা রঘু আর লাল্টুর নাম নিচ্ছিল,আমার হাত-পা বেঁধে মুখে একটা কাপড় ঢুকিয়ে বেঁধে দেয় যাতে আওয়াজ না করতে পারি, আমাকেও মেরে ফেলতো কিন্তু..
কিন্তু কি?
ওদের মধ্যে একজন আপনাকে একটা কথা বলতে বলে গেছে, বলেছে এইজন্যই আমাকে ছেড়ে দিচ্ছে।
কি কথা?
না মানে.. ভয়ে ভয়ে ঢোক গিললো লোকটা।
কি কথা? আবার গর্জে উঠলেন বীরেন ভট্টাচার্য
বলেছে যে “বীরেন ভট্টাচার্য এলে বলবি ওর দিন শেষ হয়ে আসছে, খুব তাড়াতাড়ি মৃত্যু ওর সামনে এসে দাঁড়াবে ক্ষমতা থাকলে আটকে দেখাক”।
গম্ভীর আর রাগী মুখে বললেন: যেভাবেই হোক ওদের দুজনকে আমার চাই… ওদের পরিবারের প্রত্যেককে ধরে আন… ওরা কোথায় আছে জিজ্ঞেস কর না বললে সবকটাকে শেষ করে দে।

ধীরে ধীরে চোখ মেলার চেষ্টা করে রঘু, সারা শরীরে অসম্ভব যণ্ত্রনা প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে বর্তমানে ওদের দুটো হাত একসাথে উপরে করে বেঁধে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে কিন্তু শরীরটা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না সামনে ঝুঁকে পড়েছে, একটা হাল্কা গোঙানির শব্দ পেয়ে পাশে তাকানোর চেষ্টা করে ঘাড়টা অল্প ঘুড়িয়ে দেখে এক‌ইভাবে লাল্টুকেও বেঁধে রাখা হয়েছে এবং ওর মুখ থেকেই গোঙানির শব্দ আসছে, দুজনের কারো শরীরেই পোষাক নেই। একটু একটু করে কদিন আগের রাতের ঘটনা মনে পরে রঘুর।

একদিন আগের রাতে
রঘু আর লাল্টু দুজনেই গিয়েছিল শহরের একটা বেশ্যাপল্লীতে,ওখানে বিজলীর গভীর ক্লিভেজ, প্রায় পুরো উন্মুক্ত পিঠ, চর্বিযুক্ত পেট আর সুগভীর নাভির প্রদর্শনের নাচ দেখছিল ,নেশাটাও হয়েছে জব্বর এমন সময় লাল্টু একটু উঠে বাইরে যায় ইয়ে করতে,কিছুক্ষণ পরে প্রায় ছুটতে ছুটতে আসে বলে: রঘুদা রঘুদা বাইরে একটা জব্বর মাল দেখলাম, বিরাট বড়ো বড়ো দুটো জাম্বুরা বুকে, পাছার দাবনাদুটো‌ও বড়ো।
কি বলছিস বে?
ঠিকই বলছি দাদা চলো তুমি দেখবে, এর আগে দেখিনি মাগীকে…
দুজনে বাইরে আসে, বড়ো দুধ‌আলা মাগীদের প্রতি দুজনেরই লোভ। বাইরে এসে লাল্টু যার দিকে ইশারা করে তাকে দেখে রঘু বুঝতে পারে যে লাল্টু বাড়িয়ে বলেনি, বছর ৩৫ হবে হয়তো মাগীর, একটা কালো স্লিভলেস ব্লাউজ, একটা কালো রঙের পেটিকোট পরে দাঁড়িয়ে আছে খদ্দেরের আশায়, ব্লাউজটা কোনোমতে ধরে রেখেছে জাম্বুরাদুটো যে কোনো সময়ে ব্লাউজ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবে, চর্বিযুক্ত তুলতুলে পেট,একটু মেদ আছে, গভীর নাভি হ ওরা দুজন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে র‌ইলো কিছুক্ষণ।কিন্তু এ কি ওরা দুজন এগোতেই মাগীটা যেন কোথায় হাঁটা লাগালো।
“না আজ এই মাগীকে ছাড়া যাবে না চল আজকে এই মাগীকেই চুদবো” বলে টলতে টলতে পিছু নিল রঘু সাথে লাল্টুও গেল।
এই মাগী দাঁড়া… এই ছিনাল কোথায় যাচ্ছিস? টলতে টলতে দুজনে পিছু নেয় খানিক আগে দেখা মহিলার, কিন্তু মহিলা দাঁড়ানোর বা ফিরে দেখার প্রয়োজনটুকুও মনে করে না, কথা বলা তো দূরস্ত, সে সমানে হাঁটতে থাকে ক্রমে সে বেশ্যাপল্লী থেকে কিছুটা দূরে একটা নির্জন অন্ধকার জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে পরে আর তার পিছু পিছু আসে মাতাল রঘু আর লাল্টু।
“এই তো মাগী দাঁড়িয়েছে, এত ছিনালি কেন মাগী? খুব রস না? আজ তোর সব রস বার করবো।” কথাগুলো জড়ানো কণ্ঠে বলে রঘু, ঠাণ্ডা কণ্ঠে উত্তর দেয় মহিলা: আয় তবে… দেখি তোদের দম।
রঘু আর লাল্টু টলতে টলতে এগোতে যেতেই পিছন থেকে দুজন লোক ওদের ধরে ঘাড়ের কাছে ইঞ্জেকশন দিয়ে একটা তরল পুশ করে সঙ্গে সঙ্গে দুজন এলিয়ে পরে। মোটর গাড়ি এগিয়ে আসে তার থেকে কটা লোক নেমে এসে পিছনে ডিক্কি খোলে তাতে দুটো অজ্ঞান বডি তোলা হয়। মহিলা এতক্ষণ দেখছিল এবার একজনকে বলে: আমি আমার কাজ করেছি এবার আপনাদের পালা.. আশা করি আপনাদের বস নিজের কথা রাখবে?
উত্তরে লোকটা কাউকে ফোন করে তারপর বলে: বস্ উসমান বলছি, কাজ হয়ে গেছে আর..
এটুকু বলে ফোনটা মহিলার হাতে দিয়ে বলে বস্ কথা বলতে চায়, মহিলা ফোনটা কানে দিয়ে “হ্যালো” বলতেই ফোনের ওপার থেকে কথা আসে “গুড জব”।
এবার আপনি আপনার কথা রাখুন।
আপনি ওদের সাথে গাড়িতে উঠুন, চিন্তা নেই ওরা আপনাকে যেখানে নামাবে সেখানে আমার লোক থাকবে বাকি রাস্তা সে নিয়ে যাবে।
আমি কোথায় যাচ্ছি?
এই শহর থেকে দূরে একটা অনাথ আশ্রমে, যেখানে কিছু প্রতিবন্ধী বাচ্চা ছেলে-মেয়ে থাকে তাদের দেখাশোনা করবেন আশা করি এতে আপনার আপত্তি নেই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ফোন কেটে উসমানকে ফেরত দিলে উসমান একটা শাড়ি দেয় মহিলাকে, সেটা পরে গাড়িতে উঠলে গাড়ি স্টার্ট নেয়।

চলবে —————————–



from বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড https://biddutroy.family.blog/2022/12/27/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8b%e0%a6%a7%e0%a6%83-%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be-%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a7%87%e0%a6%9e%e0%a7%8d%e0%a6%9c-%e0%a6%aa-7/
via BanglaChoti

Comments